গল্পের নামঃ #প্রণয়
#পর্বসংখ্যা_১৯
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত
মারুফের বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে পৃথিশা।সরু চোখে পৃথিশার দিকে তাকিয়ে তার বাজতে থাকা ফোনটার দিকে তাকালো।সেই কখন থেকে ফোনটা অবিরত বেজেই চলছে।পৃথিশাকে হালকা ঝাঁকিয়ে ডেকে তুললো।ঘুম ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়ে মারুফের দিকে তাকালো সে।মারুফ তার ফোনের দিকে ইশারা করলো।
বিরক্তি নিয়ে ফোনটা সুইচড অফ করে রেখে আবারো মারুফের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
পৃথিশার বিরক্তি দেখে হেসে দিলো মারুফ।
মারুফদের বাড়ির সামনে গাড়ি এসে পৌঁছাতেই পৃথিশা কে ডেকে তুলল মারুফ।ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে মারুফের হাত ধরে বাড়ির ভেতরে হাঁটা ধরলো সে।মারুফদের বাড়িতে ঢোকার পর মারুফ ফিসফিসিয়ে পৃথিশাকে বলল, “ওয়েলকাম টু আও্য়ার হোম মিসেস মারুফ আহমেদ!”
পৃথিশা ছোট ছোট চোখ করে হেসে ফেললো।
মারুফের মা তাদের দেখে ছুটে এলেন। মারুফকে বললেন পৃথিশাকে নিয়ে সোফায় বসতে।
রিনা খাতুন পৃথিশাকে মিষ্টিমুখ করালেন।কিছুটা নিয়ম-রীতি মানার পর পৃথিশাকে ঘরে পাঠিয়ে দিলেন তিনি।
মারুফের রুমটা পৃথিশা ঘুরে ঘুরে দেখছে।ধীর পায়ে বারান্দার দাঁড়িয়ে পা উঁচিয়ে নিজের রুমটা দেখার চেষ্টা করলো সে।বারান্দার একপাশটা দেখা যাচ্ছে।বারান্দার একপাশে থাকা বেলি ফুলের গাছটা দেখা যাচ্ছে!
পাশে কারো উপস্হিতিতে পেয়ে পৃথিশা তাকিয়ে দেখলো মারুফ এসেছে।
পৃথিশার দিকে একপলক তাকিয়ে মারুফ জিজ্ঞেস করলো, “এখানে কেন?রাতের বেলা বারান্দায় থাকতে হয় না!”
পৃথিশা অবাক হয়ে হেসে বলল, “আপনি এসব জিনিস মানা শুরু করলেন কবে থেকে?”
মারুফ পৃথিশা গা ঘেসে ফিসফিস করে বলল, “সুন্দরী বউ থাকলে এসব মানা লাগে।”
পৃথিশা মলিন হেসে বলল, “আমাকে সুন্দর মনে হয় কোন দিক দিয়ে? আমি তো ফর্সা না!”
মারুফ রেগে বলল, “আমার কাছে তুমিই বেশি সুন্দর।অন্য কাউকে আমার ভালো লাগে না,আমার তোমাকেই ভালো লাগে!”
পৃথিশা দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো, ঠোঁটে মৃদু হাসি।
মারুফ পৃথিশা কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলল, “অনেকক্ষণ এভাবে ছিলে,এখন ফ্রেশ হয়ে আসো যাও।”
পৃথিশা মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।বাসা থেকে শুধু শাড়িই এনেছে সে।খুঁজে খুঁজে একটা কালো রঙের শাড়ি বের করলো সে।
ছোট থেকেই নাচের জন্য পৃথিশা সবসময় শাড়ি পড়া হতো।তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই স্নান করে শাড়ি পড়ে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলো।
মারুফ পৃথিশাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “এত রাতে গোসলের কি দরকার ছিল?”
পৃথিশা শাড়ির কুচি ঠিক করে বলল, ” এত মেকাপ নিয়ে থাকা যায় নাকি!মুখ ভারী ভারী লাগছিলো।”
মারুফ কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়িয়ে চেঞ্জ হতে চলে গেল। পৃথিশা নিজের ব্যাগ থেকে জিনিসগুলো নামিয়ে দেখতে লাগলো।তারপর ড্রয়ার খুলে মারুফের জামা-কাপড়গুলো একপাশে সরিয়ে নিজের কাপড়গুলো রেখে দিলো। কিছুক্ষণ সেখানে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে ড্রেসিংটেবিলে নিজের কাজলের কৌটাটা রেখে দিলো।
রহমান সাহেব আর সুমিতা বেগমের কথা মনে হতেই মন খারাপ হয়ে যায় তার।ফোন বের দেখে ফোনটা সুইচড্ অফ হয়ে আছে।অন করতেই একটানে কয়েকটা মিসড কলের নোটিফিকেশন আসে।
চিন্তিত মনে নাম্বার চেক করতেই দেখে আশ্রম থেকে ফোন এসেছে অনেকবার।আতঙ্ক নিয়ে কল ব্যাক করে সে।
ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে ফারুকী খালা কান্নারত স্বরে বললেন, “এতক্ষণ ফোন ধরেন নাই কেন আম্মা?”
পৃথিশা ব্যস্ত হয়ে বলল, “আসলে খালা আমার তো আজ বিয়ে ছিল।আপনি জানতেন না?”
ফারুকী খালা বলে, “ও আচ্ছা।আচ্ছা ভালো থাইকেন আম্মা।”
তিনি ফোন কাটার আগেই পৃথিশা বলল, “কিসের জন্য ফোন করেছিলেন খালা?কোন সমস্যা হয়েছে কি?”
ফারুকী খালা থতমত খেয়ে বললেন, “না না তেমন কিছু না।”
পৃথিশা রাগী গলায় বলল, “সত্যি করে বলুন কি হয়েছে?”
ফারুকী খালা করুণ স্বরে বলল, “সায়শী হাসপাতালে ভর্তি গো আম্মা।মাইয়াডা মনে হয় আর বাঁচবো না!”
পৃথিশা ধপ করে খাটে বসে পড়ল।
হতভম্ব গলায় জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে তার?কখন ভর্তি হয়েছে? আমাকে জানাওনি কেন?”
ফারুকী খালা বলল, “আজকে সকাল থেকেই গায়ে জ্বর জ্বর ভাব আছিলো।আমি কতবার বলছিলাম ঔষুধ খাইতে,জিদ কইরা খাইলো।রাতের দিকে গিয়ে দেখি অজ্ঞান হইয়া পড়ে আছে।ধাক্কা দিলেও নড়ে না।এজন্য পরে চিল্লাচিল্লি করে হসপিটালে নিসি। ডাক্তার কইলো ওর নাকি ডেঙ্গু হইসে।”
পৃথিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমি আসছি খালা।কোন হসপিটালে নিয়েছেন?”
ফারুকী খালা হুড়মুড়িয়ে বলল, “না না কি কও।তুমার আজকে বিয়ের প্রথম রাত,আর আজকেই তুমি বাইর হইবা?”
পৃথিশা শক্ত গলায় বলল, “আমি আসছি।তুমি বলো কোন হাসপাতাল?”
ফারুকী খালা তাড়াতাড়ি হাসপাতালের নাম বলে ফোন কেটে দিলো।
পৃথিশা তাড়াতাড়ি নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।কিন্তু মারুফকে না বলে কীভাবে যাবে!আর তার মা-ই কীভাবে বিষয়টা নিবে!
কিছুসময় পর মারুফ বের হয়ে পৃথিশাকে এভাবে হাসফাঁস করতে দেখে বলল, “কি ব্যাপার!এমন করছো কেন?”
পৃথিশা কাঁদোকাঁদো স্বরে মারুফকে সবটা খুলে বললো।মারুফ চুপ করে সবটা শুনলো।
সবশেষে পৃথিশা বলল, “আমি বুবুর কাছে যেতে চাই।আপনি অনুমতি দিন প্লিজ!”
মারুফ কিছু একটা ভেবে বলল, “এতরাতে একা বের হওয়ার দরকার নেই।আমিও তোমার সাথে যাবো।তাড়াতাড়ি রেডি হও।”
পৃথিশা প্রথমে অবাক হলেও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেয়।তারপর অনেকটা লুকিয়েই মারুফের বাসা থেকে বের হয়ে পড়ে।
হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকটা সময় লেগে যায়।কারন এই রাতে গলির ভিতর রিকশা পাওয়া মুশকিল। হাসপাতালে পৌঁছেই পৃথিশা দৌড়ে ভিতরে চলে যায়।রিসেপশন থেকে সায়শীর নাম খুঁজে বের করে নির্দিষ্ট তালায় পৌঁছাতেই দেখে ফারুকী খালা বসে আছে।
পৃথিশাকে দেখেই তার কাছে দৌড়ে আসেন তিনি।পৃথিশা তার কাছ থেকে জানতে পারে টাকার জন্য তারা কিছুই করে নি।আর এত রাতে ডাক্তারও পাওয়া অসম্ভব। তার উপর সরকারি হাসপাতাল।
দিশেহারা হয়ে মারুফকে সবটা বলে সে।
মারুফের জানাশোনা একজন ডাক্তার আছে প্রাইভেট হাসপাতালে।এই রাতের বেলায়ই সায়শীকে অন্য জায়গায় নেওয়া হয়।মারুফের কারনে রাতের বেলায়ই সায়শীর চিকিৎসা শুরু হয়ে যায়।
কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো অন্য জায়গায়।গাড়ির দরজা লাগানোর সময় ভুলবশত ড্রাইভার মারুফের আঙুলে চাপা দিয়ে দেয়। যার ফলে তার হাতের নখ পড়ে গিয়ে আঙুল থেঁতলে গেছে।মারুফ ইচ্ছা করে পৃথিশাকে কিছু বলে নি।বললে দেখা যাবে কেঁদে কেটে বেহাল দশা।
পৃথিশা সায়শীকপ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে কুল পাচ্ছে না।সারাদিনের ক্লান্তিতে চেয়ারে বসে গাঁ এলিয়ে দিলো সে।
চলবে।