#খুনসুটি_প্রেম

writer : সুরমা
part: 8

কিন্তু মিতুর এই পেট ব্যাথার রোগটা হবার পর থেকে সে আরো বেশি মিতুকে সময় দেয়া শুরু করেছে। মিতুকে সময় মত ওষুধ খাওয়ানো যেনো তার গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি। প্রতি সপ্তাহে ডাক্তারের কাছে চেকআপ করাতে নিয়ে যাওয়া।

রাকিব মিতুর সব দিক দিয়ে খেয়াল রাখার চেষ্টা করছে।রাকিব পারলে সব সময় মিতুকে নিজের চোখের সামনে রাখতে চায়।রাকিব আর আগের মতো কাজ করে না।বেশির ভাগ সময় মিতুর পাশেই থাকে।

জানপাখি,,
-হু
-চলো আজ তোমার টেস্টের ডেট।
-আমি আর যাবো না।আমার কি হয়েছে বলোতো?প্রত্যেক সপ্তাহে টেস্ট,ওষুধ। এসব আমার একদম ভালো লাগছে না।
-এমন করো কেন?আজকেই লাস্ট
-এটা তুমি আরো আগেও কয়েকবার বলেছো।আমি যেতে পারবো না।
-প্লীজ,আজ সত্যি লাস্ট।আর বলবো না।প্লীজ চলো না।প্লীজ,
রাকিব মিতুর দিকে করুন দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকে।বেচারি মিতুরেই বা আর কি করার।বাধ্য হয়েই যেতে হলো।সেদিন টেস্টের দুদিন পর মিতুর রিপোর্ট আসে।রিপোর্ট আসার পর থেকে রাকিবের আচরণে মিতু বেশ অবাক হতো।টেস্টে কি এসেছে কিছুই মিতুকে বললো না রাকিব।

মিতু অনেকবার জানতে চাইলেও রাকিব কিছু বলে নি।শুধু বলে তেমন কিছু না।ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।

মিতু একদিন খেয়াল করলো তার টেস্টের রিপোর্ট গুলো রাকিব লুকিয়ে রাখে এবং অফিসে যাবার সময় সাথে করে নিয়ে যায়।সব সময় রাকিব এক কাজ করে।একবারের জন্যও কাগজ গুলি নিজের থেকে দূরে রাখে না।ব্যাপারটাকে বেশ সন্দেহ জনক মনে হলো মিতুর কাছে।

দুপুর বেলা মিতু বিছানায় শুয়ে আছে।এমন সময় হঠাৎ রাকিব বাসায়।সাধারণত এই সময় রাকিবের অফিসে থাকার কথা।কিন্তু এখন রাকিব যখন তখন বাসায় চলে আসে।দুঘন্টা অফিসে থাকলে বাকি সময় সবটা বাসায় থাকে।মিতু বিছানায় শুয়ে আছে।রাকিব রুমে ডুকে কোনো কথা না বলে আলমারিতে ফাইলটা রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয়ে আসে।

তখনও মিতু একি অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে।রাকিব এসে মিতুর পেটে নিজের মাথাটা রেখে গুটিসুটি মেরে একদম বাচ্চাদের মতো শুয়ে পড়ে।

রাকিবের এই কাজে মিতুর এখন আর অবাক লাগে না।কারন কয়েকদিন যাবত রাকিব এমন আরো অনেক অদ্ভুদ রকমের আচরণ করে।রাকিবের কাজে মিতুর কখনও মনে রাকিব বাচ্চা আবার কখনও মনে হয় সে নিজেই একটা বাচ্চা।

মিতু কোনো কথা না বলে রাকিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

-জানপাখি
-হু
-তুমি আমাকে কখনও তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিবে নাতো?
-কি আশ্চর্য রকমের কথা বলো তুমি?তোমাকে আমি দূরে সরাতে যাবো কেন?এই তোমার মাথায় কি চলছে বলোতো?হঠাৎ দূরে যাওয়ার ককথা আসছে কেন?নাকি অফিসের কোনো শাকচুন্নিকে তোমার ভালো লেগেছে।যার জন্য দূরে সরে যাওয়ার কথা বলছো।
-টুনির মা,তুমি এসব কি বলছো?তেমন কোনো ব্যাপার নয়।আমিতো এমনি জিজ্ঞাসা করছিলাম।
-আমি বুঝেছি তেমনটাই।নয়তো তুমি এসব বলছো কেন?আগেতো কোনোদিন এসব কথা বলো নি।তুমি আমার সতিন আনার কথা চিন্তা করছো নাতো?ভ্যা ভ্যা ভ্যা।
-ও আল্লাহ!এই মেয়ে জীবনেও আমাকে বুঝবে না।আমি কি ভাবলাম আর এ কি বলছে।কান্না থামারে বইন,আর কোনোদিন বলবো না।তোমার সাথে কেন যে আমি এসব বলতে আসি আল্লাহ জানে।
-এখন আমাকে আবার বইন বানানো হচ্ছে?আমি তোর কোন জনমে বইন ছিলাম।এখন বুঝেছি।নিশ্চই কোনো শাকচুন্নিকে আনার ধান্ধায় আছিস।তাইতো এখন আমাকে বইন বানিয়ে ফেলেছিস।ভ্যা ভ্যা ভ্যা
-প্লীজ আমার সোনাটা,বাবুইটা,লক্ষীটা,কান্না বন্ধ করো।আমি তেমন কিছু চিন্তা করি নি।আমার ভুল হয়েছে।আর বলবো না।এবার কান্না থামাও। আম্মু যদি আজকেও এসে শুনে তো আমার রক্ষে নেই।ঐ দিনের থেকে তিনগুন বেশি পানিসমেন্ট দিবো।থামো প্লীজ।আমাকে দেখে কি এটা মনে হচ্ছে যে আমি তোমাকে রেখে অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করবো
-তোকে বিশ্বাস নেই।তুই একটা লুচু ছেলে।মেয়ে দেখলে আর হুশ থাকে না।মনে নাই,একদিন পার্টিতে তোর বসের বউকে দেখে সুন্দর বলেছিলি।
-সেতো সুন্দর ছিল বলেই সুন্দর বলেছিলাম।
-তার মানেতো তোরও অন্যের বউয়ের উপর নজর আছে।নয়তো বুঝলি কেমনে সে সুন্দর।
-চুপ,চুপ,আর কোনো কথা নয়।এমনি ভালো লাগছে না এখন আবার তোমার এই ডিসগাসটিং মেটার গুলা। অহ!একটু ভালো করে বুঝলেও না আমাকে।
-তুমি আবার আমায় বকছো?ভ্যা ভ্যা ভ্যা
-যা বাবা,আমি আবার বকা দিলাম কখন?
-টুনির বাবা,তুমি সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাও।তুমি একটা ভুলো বর।আমাকে মাত্রই বকা দিয়েছো,ভ্যা ভ্যা ভ্যা
-আচ্ছা সরি,আর হবে না।এবার থামো।
-ভ্যা ভ্যা ভ্যা

মিতুতো ন্যাকা কান্না করেই যাচ্ছে।এদিকে রাকিব আর কোনো উপায় না দেখে ঝট করে মিতুর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট দুটি মিলিয়ে দেয়।কতোক্ষণ তারা এভাবে ছিল কারো জানা নেই।কিন্তু যতক্ষণে রাকিব মিতুকে ছাড়লো ততক্ষণে দুজনের চোখ দিয়েই পানি চলে এসেছে।

রাকিব মিতুর দুগালে হাত দিয়ে মিতুর দু চোখে কিস করে,,,,

-জানপাখি,যতদিন বেঁচে থাকবো একে অপরের জন্য বেঁচে থাকবো।আমাদের স্বয়ং আল্লাহ এক করেছে। আল্লাহ ছাড়া কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।মিতুকে রাকিবের সব সময় প্রয়োজন।মিতুকে ছাড়া রাকিবের একটা মুহুর্তও চলবে না।

জানপাখি,তুমি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছো।আমার প্রত্যেকটা মুহুর্তে তোমাকে প্রয়োজন।তোমার ভেজা চুলের পানিটা আমার প্রয়োজন প্রতিটা সকালে জেগে উঠার জন্য।তোমার উষ্ণ এই গোলাপি ঠোঁটের ছোঁয়াটা প্রয়োজন সারাদিনের কাজ করার এনার্জির জন্য।দিনশেষে তোমার কোলটা প্রয়োজন একটু শান্তিতে শুয়ার জন্য।আমার প্রত্যেকটা সেকেন্ডে তোমাকে প্রয়োজন নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য।তোমাকে ছাড়া আমার পক্ষে এক সেকেন্ডও বাঁচা সম্ভব না।কথা দাও,সব সময় আমার পাশে থাকবে।কখনও আমাকে একা করে চলে যাবে না।

রাকিব মিতুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।মিতু এর আগে রাকিবকে কখনও এতোটা ভেঙ্গে পড়তে দেখে নি।মিতুরও চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।কিন্তু সেই পানিটা রাকিব দেখার আগেই মুছে ফেলে।

-তুমি যা চিন্তা করছো তা কোনোদিনও হবে না টুনির বাবা।আমি,না তোমাকে ছেড়ে যাবো,না কোনো শাকচুন্নিতে তোমার কাছে আসতে দিবো।আমি মরে গেলেও পেত্নির মতো তোমার ঘাড়ে চেপে বসে থাকবো।

মিতুর কথা শুনে রাকিব মিতুর মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে।

-খবরদার যদি আর কখনও মৃত্যুর কথা বলছো।আমরা বেঁচে থাকবো একে অপরের জন্য।সারাটা জীবন একে অপরের পাশে থাকবো।রাকিব মিতুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মিতুর নরম শরীরটা একদম নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে।মিতুর মনে হচ্ছে রাকিব হয়তো এখন পারলে তাকে নিজের ভেতরে ডুকিয়ে ফেলবে।

সন্ধার দিকে মিতু আলমারি গুছাতে গিয়ে সেই ফাইলটা নজরে পড়ে।মিতুর খুব জানার আগ্রহ জাগে।কি এমন জিনিস আছে এই রিপোর্ট গুলোর মধ্যে যা রাকিব এভাবে নিজের কাছে রাখে।যা মিতুকেও দেখতে দেয় না।মিতু অধীর আগ্রহে ফাইলটা হাতে নিতেই রাকিব রুমে চলে আসে।মিতু ফাইলটা না দেখেই রেখে দেয়।

রাকিব রুমে ডুকে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলে মিতু ফাইলটা হাতে নিয়ে রিপোর্ট গুলো দেখে ফেলে।মিতু রিপোর্ট দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। মিতুর একটা অভারীতে সিস্ট হয়ে ব্লক হয়ে আছে আর আরেকটা অভারীতে অনেক গুলো টিউমার হয়েছে আর তার মধ্যে একটা টিউমার ক্যান্সারের আকার ধারণ করতে চলেছে।মুহুর্তেই দুনিয়াটা এলোমেলো হয়ে গেলো মিতুর।না চাওয়ার সত্যেও মিতুর বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে।

মিতু অনেক কষ্টে নিজেকে স্থির করে নিলো।ফাইলটা আগের জায়গায় রেখে দিলো।মিতু রাকিবকে বুঝতে দিলাে না যে মিতু সব জেনে গেছে।

চলবে😍😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here