#খুনসুটি_প্রেম

writer : সুরমা
part: 10

-তোমার মাথায় কি বুদ্ধি বলে কিছু নেই?এই সময় পুরান ঢাকা থেকে মীরপুর যাওয়া যাবে না জানো না?রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকবে।সারাদিন গাড়িতেই বসে থাকতে হবে।তুমি একটা অপকর্মের ঢেঁকি।তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না।বলে মিতু ওয়াশরুমে ডুকে যায়।

মিতু ওয়াশরুম থেকে বের হতেই রাকিব মিতুকে জড়িয়ে ধরে।রাকিবের হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরার কারন মিতু বুঝতে পারলো না।কিন্তু রাকিব এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে মিতু নড়তেও পারছে না।মিতুও হাল্কা রাকিবকে জড়িয়ে ধরে।৫ মিনিট পর রাকিব মিতুকে ছেড়ে দিয়ে মিতুকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে মিতুর হাতে অসংখ্য কিস করে।তার পর মিতুর গালে হাত দিয়ে বলে,

-টুনির মা,তোমার একটা ছোট্ট অপারেশ করাতে হবে।
-অপারেশন??

-হ্যাঁ।তেমন কোনো অপারেশন নয়।ছোটকাটো একটা অপারেশন।এই অপারেশনটা করলে তোমার আর কখনও পেইন হবে না।তুমি ভয় পেয়ো না, আমি আছি তো সোনা।

-আমি অপারেশন করাবো না।আমি এমনি ঠিক আছি।অপারেশন আমার ভয় করে।
-প্লীজ লক্ষীটি।না করো না।
-আমি তোমাকে ছেড়ে এখন কোথাও যাবো না।
-আমাকে ছেড়ে যেতে হবে নাতো।আমি সবসময় তোমার হাতটা ধরে রাখবো।তোমার পাশেই বসে থাকবো।আমার জানপাখিটাকে একটুও কষ্ট পেতে দিবো না।

অপারেশনের কথা শুনে মিতু বুকে ব্যথা ফিল করলো।চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে লাগলো।মিতুর বুক ফেটে যাচ্ছে।তার শুধু মনে হচ্ছে সে হয়তো আর বাঁচবে না।

রাকিব মিতুর চোখের পানিটা নিচে পড়তে দিলো না।মিতুর চোখে কিস করলো।মিতুকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো।রাকিবেরও বুক ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু এই মুহুর্তে সে ভেঙ্গে পড়লে মিতুও আর নিজের উপর ভরসা করতে পারবে না।

তাই নিজের বুকে অনেক চেষ্টার পর কষ্টটাকে চাপা দিতে পারলো।মিতু রাকিবের বুকে মাথা রেখেও চোখের পানি ঝরে যাচ্ছে।রাকিব মিতুর মাথাটা তুলে চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বললো,,,

-এই পানিটা অনেক দামি।এতো সহজে এর অপব্যয় করাে না জানপাখি।এক ফোটা পানি এক একটা হিরার চেয়েও দামি।আমি আমার এই পাগলিটাকে কাঁদতে দেখতে পারি না।সহ্য হয় না আমার।আমিতো বলছি আমার কলিজাটার কিছু হবে না।আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।

মিতু রাকিবের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো সারা পৃথিবীর ভয় রাকিবের দুটি চোখ জুড়ে রয়েছে। অথচ সে মিতুকে সাহস দিচ্ছে। মানুষটা অভিনয়টাও ঠিকঠাক করতে পারে না। মিতুর ভয় তো একটাই মিতুর কিছু হয়ে গেলে সে নিজেকে সামলে নিতে পারবে না।

এক সপ্তাহ পর অপারেশন করতে গেলো মিতুর।দুই বাড়ির সবাই উপস্থিত হসপিটালে।রাকিবের চোখে মুখে ভয়ের চাপ।হাত পা গুলো অবশ হয়ে আসছে।

রাকিব ডাক্তারকে অনেক রিকয়েস্ট করলো মিতুর পাশে থাকার জন্য।কিন্তু ডাক্তার রা অনুমতি দেয় নি।রাকিব এক ডাক্তারের পায়ে পর্যন্ত ধরলো।কিন্তু তারা তাদের নিয়ম ভাঙ্গতে পারবে না।

অপারেশনের সময় এক্ট্রা কেউ থাকলে অপারেশনে সমস্যা হতে পারে।এতে রোগীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডাক্তার রাকিবকে অনেক বুঝায়।

অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার আগে রাকিব আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। এতো কান্না শুরু করলো যে সারা হসপিটালের লোক জন ভীড় করে ওকে শান্তনা দিতে শুরু করলো।

মিতুকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার সময় রাকিব কিছুতেই মিতুর হাতটা ছাড়তে চাইছে না।দুই বাড়ির প্রত্যেকটা লোক রাকিবকে বুঝাতে চাইছে কিন্তু রাকিব কারো কথা শুনছে না।

রাকিবের কান্না দেখে হসপিটালে থাকা প্রত্যেকটা লোকের চোখে পানি চলে আসে।রাকিবের মনে হচ্ছে তার কলিজাটা ছিড়ে কেউ অর্ধেকটা নিয়ে যাচ্ছে।

রাকিবের কান্না দেখে মিতু আর নিজেকে স্থির করতে পারছে না।কিছুতেই তার চোখ বাঁধা মানতে রাজি না।মিতু রাকিবকে কখনো এতোটা ভেঙ্গে পড়তে দেখে নি।

হাজার কষ্টের পরও মিতু রাকিবকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো।রাকিবের চোখের পানিটা মুছে দিয়ে রাকিবের কপালে ভালোবাসার পরশ দিলো।

বুকের ভিতরে কান্না চেপে শুস্ক হাসি দিয়ে রাকিবের চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে বললো,

-ছি,তুমি কি বলোতো।সারা হসপিটালের লোকদের সামনে এমন বাচ্চাদের মতো কান্না করছো।লোকে কি ভাবছে।দেখো সবাই কেমন আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।সবাই বিনা টিকিটি সিনেমা দেখছে।
-জানপাখি,তোমার কিছু হলে আমি দম বন্ধ হয়ে মরে….. ।রাকিবের কথা শেষ হওয়ার আগেই মিতু রাকিবকে থামিয়ে দেয়।
-চিন্তা করো না।আমি কোথাও যাবো না।ভেবেছো কি?আমি মরে যাবো আর তুমি আরেকটা বিয়ে করবে?এই মিতু তা হতে দিবে না।আমি এই জনমে কেন অন্য জনমেও তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও যাবো না।সব সময় এই পত্নীটা তোমার ঘাড়ে চেপে বসে থাকবে।

রাকিব মিতুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।মিতুও রাকিবকে জড়িয়ে ধরে।দুজনের চোখেই আজ ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর ভয়।

মিতু রাকিবকে প্রমিজ করলাে যে মিতু ফিরে আসবে।অবশেষে রাকিবকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে বাইরে রাখা হলো।

অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার পর মিতু একজন নার্সকে বললাে রাকিবের দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য তার কাছে যেনো কাউকে সর্বক্ষণ রাখা হয়।

ডাক্তাররা থিয়েটারে ডুকে যায়।রাকিব বাহিরে চটপট করতে থাকে।কিছুতেই সে মনকে স্থির করতে পারছে না।তার শুধুই মনে হচ্ছে কোনো একটা বড় রকমের ক্ষতি হবে।

প্রত্যেকেই মিতুর জন্য দোয়া পড়তে থাকে।রাকিব নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবার মিতুকে ভিক্ষা চায়।তার জীবনে আর কোনো চাওয়া নাই।মিতুকে পেলে সে অন্য সব কিছু হারাতে রাজি।

রাকিব কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্থির হয়ে যায়।দুই পরিবারের সবাই মিলে রাকিবকে স্থির করার চেষ্টা করে।রাকিবের অবস্থাও ভীষণ খারাপ হয়ে যায় এইটুকু সময়ে।

আড়াই ঘন্টা পরে থিয়েটারের লাল বাতি নিভে গেলেই রাকিব দৌঁড়ে থিয়েটারের সামনে এসে দাঁড়ায়।ডাক্তার বের হয়ে আসলে রাকিব ডাক্তারের কাছে এগিয়ে যায়।

-ডাক্তার আমার মিতু?
-অপারেশন সাকসেসফুল।তবে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
-ডাক্তার আমি আমার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই।
-এখন দেখা করা যাবে না।জ্ঞান ফিরলে দেখা করতে পারবেন।অপেক্ষা করুণ।বলে ডাক্তার চলে যায়।

মিতুর অপারেশনের অনেক পরেও মিতুর জ্ঞান ফিরছিল না।ডাক্তাররাও কিছু বলতে পারছিল না। অনেক ব্লাড দিতে হয়ে ছিল মিতুকে।মিতুর অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না।এই খবরটা শুনে রাকিকে আর কেউ কন্ট্রোল করতে পারছিল না। সে পাগলের মত ছুটাছুটি করছিল।

এতে খুব তাড়াতাড়ি রাকিব পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে।রাকিবের এমন অস্থিরতায় ডাক্তাররা বাধ্য হয়ে রাকিবকে ঘুমের ইঞ্জেকশন করে স্যালাইন দিয়ে রাখে।

চলবে😍😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here