||কৈশোরে প্রেম|| ||অংশ: ০৭|| ||১৮+সতর্কতা||

একটা সিগারেট প্রহেলির কোমল ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে পেরে হয়তো সৌভাগ্যবান মনে করছে এখন। নাহিয়ানের হাত থেকে নিয়ে একটা টান দিতেই কাঁশতে লাগে সে। সিগারেট তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে একটানে শেষ করে ফেলে নাহিয়ান। খানিকটা ধোঁয়া উড়ায় তার প্রিয়তমার মুখে। বাকিটা নেশা মেটানো চুম্বনে ঠোঁটের ভাঁজে পুরে দেয়। চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করে প্রহেলি। এত বছর পর প্রথম ছোঁয়া পেয়ে যেন তৃষ্ণা মিটে গেল। মাতোয়ারা হয়ে উঠে প্রতিটা স্পর্শে। নাহিয়ানের ঠোঁটের উষ্ণতায় নিজেকে বারবার হারাচ্ছে। একহাতে প্রহেলির কোমরে চেপে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়। শিউরে উঠছে ভেতরে বাহিরে।

প্রহেলি চোখ খুলে সহসা বলল, “নাহিয়ান তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসো?”

নাহিয়ান মুখ তুলে না। চুমুর পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেয়। হাত কোমর ছেড়ে পেটের উপর নিয়ে আসে৷ প্রহেলি তাকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে আবার বলে, “থামো, কী পাগলামো করছো। একটু বসে কথা বলো না। কাছে পেলেই তোমার এসব শুরু হয়ে যায়।”

নাহিয়ান প্রহেলির ঠোঁটে চেপে ধরে চুমু খেয়ে বলল, “এসবই করব। একদম খেয়ে ফেলব তোকে। চল বাইরে কোথাও যাই, এখানে জমছে না।”

“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি নাহিয়ান। উত্তর দিলে না তো।”

নাহয়ান শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল, “আচ্ছা, তুই আমাকে তুমি করে বলছিস কেন? যদিও প্রথম দিন আমিও তোকে তুমি করে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা তো আর নতুন না। আর নতুন করে কেন এসব প্রশ্ন করছিস?”

“বিয়ে করবি আমায়?”

“চল কালই বিয়ে করব। আর তোর পেটে আমার বাচ্চা দিব। ঠিকাছে তো?”

প্রহেলি প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। ঘাসের দিকে তাকিয়ে থাকে কেবল। মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে এসেছে। তার কেবল মনে হয়, নাহিয়ান তাকে ঠিকমতো বুঝে না। ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

“আচ্ছা শোন, অপি, ইলমা, পূজা এদের কী খবর?”

“তুই জানিস না? ওহ তোর তো যোগাযোগই ছিল না কারো সাথে। অপির তো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন সে তার স্বামীর সাথে ডেনমার্ক থাকে। ইলমা ওই যে শফি স্যারের সাথে সম্পর্ক ছিল তার সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। শুনেছি তার ডিভোর্স হয়ে এখন বাড়িতেই আছে৷ আর পূজা তো ডাক্তারি পড়ছে।”

নাহিয়ানের থেকে জানতে পারে অনেকেই ভালো অবস্থানে আছে। এটা জেনে মনটা খুশি হয়ে যায়। অপির সুখের সীমা নেই, একটা বাচ্চাও হয়ে গেছে। তবে ইলমার সাথে খুব খারাপ হয়েছে।

নাহিয়ানের এভাবে খোলামেলা কিছু করতে এখন আর ভালো লাগে না। কেউ দেখে ফেলার ভয় তাড়া করে বেড়ায় সারাক্ষণ। এদিকে প্রহেলি তাকে বিয়ের কথা বলে নিজেই যেন পথ তৈরি করে দিয়ছে। নাহিয়ান তাকে কোর্ট ম্যারেজ করার কথা বলে ফেলে। প্রহেলি ভাবার জন্য কয়টাদিন সময় নেয়।

নাহিয়ানের প্রতিটা ছোঁয়া তাকে পাগল করে দেয়। এখন যেন কেবল চুমুতে মন ভরে না। আরো কাছে পাওয়ার স্পৃহা জাগে মনে। এই আকাঙ্খায় চুড়ান্ত ভুলের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় প্রহেলি। নাহিয়ানের সাথে কোর্ট ম্যারেজ করতে তৈরি হয়ে নেয়। কোর্ট ম্যারেজের পর সোজা তারা রিসোর্ট যাবে। সেখানে একান্তে দুজনে কিছু সময় কাটাবে। তারপর যে যার মতো বাড়ি ফিরে যাবে।

সকাল থেকে ভয়ে ভয়ে আছে প্রহেলি। মায়ের কাছে অ্যাসাইনমেন্ট আছে বলে সেজেগুজে বাড়ি থেকে বের হয়। কাঁধ বিস্তৃত খোলা চুল। মেরুন রঙের সিল্কের শাড়ি। পিঠ উন্মুক্ত করা ব্লাউজ। কানে ছোট ছোট দুইটা দুল। নাকে ছোট্ট একটা নাকফুল। হালকা করে সেজেছে। আজ সে নাহিয়ানের বউ হতে চলেছে। এটুকু তো লাগেই। ভার্সিটির সামনের গেট দিয়ে ঢুকে নাহিয়ানের সাথে পেছনের গেট দিয়ে বের হয়ে যায়। রিকশায় দু’জন কাছাকাছি বসতেই নাহিয়ান সুযোগ নেয়। তার অবাধ্য হাত দুষ্টুমিতে মেতে উঠে। উন্মুক্ত পিঠে আঁকিবুঁকি করছে। নাক ঘষে দিচ্ছে গালে। কানের উপর কামড়ে দিচ্ছে। প্রহেলি সেই স্কুলের সময়টাকে যেন অনুভব করছে। নাহিয়ান আগের মতোই রয়ে গেছে। রিকশায় বেশ কষ্টে নিজেকে সামলে রাখে সে। কোথায় যেন একটা ভয় কাজ করছে৷ কীসের ভয় সেটা জানে না সে।

নাহিয়ানের এক উকিল বন্ধু কোর্ট ম্যারেজের সকল কাগজপত্র তৈরি করে নিয়ে এসেছে। রিসোর্টের রুমে বসে নাহিয়ান প্রহেলিকে জিজ্ঞেস করে, “কাবিনে কী চাই তোর?”

“আমি আমার কাবিনে তোমাকেই চাই, শুধুই তোমাকে। যাতে কখনো আলাদা হতে হলেও আমি যেন তোমাকেই পাই, অন্য কিছু নয়। তোমাকে নিয়েই আমি বাঁচতে চাই।”, কথাটা বলতে গিয়ে প্রহেলির চোখে জলে ভিজে আসে।

জীবনের অদ্ভুত একটা সম্পর্ক বিয়ে। বিয়ে হওয়ার আগেই ছাড়ার পর কী হবে সেটা ভাবতে হয়৷ নাহিয়ান ক্ষীণ হাসার চেষ্টা করে। একবার মনে প্রশ্ন জাগে কোনো ভুল করে ফেলছে না তো সে! পরক্ষণেই আবার প্রহেলিকে কাছে পাওয়ার সাধ জেগে উঠে। আর কোনো চিন্তাভাবনা না করে রিসোর্টে রুমে বসেই দু’জনে পেপারে সাইন করে দেয়৷ বন্ধুটা তাদের অভিনন্দন জানিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। প্রহেলি বিছানায় বসে আছে। নাহিয়ান এসে তার পাশে বসে। কাঁধ থেকে আঁচল নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় তাকে।

অপ্রস্তুত প্রহেলি বলল, “নাহিয়ান, এসব কী ঠিক হচ্ছে?”

“আমরা এখন স্বামী স্ত্রী, আমাদের মধ্যে এখন সব ঠিক, কোনো কিছু বেঠিক নেই।”, বলেই প্রহেলির শাড়ির কুচিতে হাত দেয়।

প্রহেলি মৃদুস্বরে বলল, “প্রটেকশন এনেছ তো? পরে আবার কনসিভ হয়ে গেলে সমস্যা।”

বুকের উপর থেকে আঁচলটা সরিয়ে নাহিয়ান বলল, “ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি শুধু আজ আমাকে সুখের সাগরে ভাসাও।”

নাহিয়ান মুখ চেপে ধরে বুকের উপর। কেঁপে উঠে শক্ত হাতে বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে প্রহেলি। পেটের মধ্যে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দেয়। দাড়ির খোঁচায় গুঙিয়ে উঠে সে। মাথার চুল খামচে ধরে উলটো দিকে ফিরে যায়। উন্মুক্ত পিঠে চুমুর বর্ষণ করে। প্রহেলিকে পালটে ঠোঁটে স্বাদ নিতে লাগে। অবাধ্য হাত বুকের উপর ছুঁয়ে পেটে নেমে আসছে। ভেতরে বয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার ঝড় আর বাইরে শুরু হয়েছে দৃশ্যমান তুফান। বাইরের সবকিছু চুরমার করে দিচ্ছে। মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়স্থলে ছুটে যাচ্ছে৷ কয়েকটা বড় গাছ উপড়ে ফেলেছে। এটা কেবল তুফান নয় এটা ছিল কঠিন বিপদের পূর্বাভাস যা প্রহেলি বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারেনি।

সেদিনের পর থেকে প্রহেলিকে যখন তখন রিসোর্টে নিয়ে যাওয়া, কখনো কোনো বন্ধুর বাসায় নিয়ে গিয়ে সময় কাটানো নাহিয়ানের অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। এসবের ফাঁকে প্রহেলি তার বাবাকে নাহিয়ানের কথা বলে বিয়ের জন্য রাজী করিয়ে নেয়৷ মাকে রাজী করাতে তার কয়েক মাস লেগে যায়। তাদের রাজী করাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় তাকে। কিন্তু প্রান্ত কোনোমতেই রাজী হয় না। তবে সে মা-বাবার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়। তারা যেখানে প্রহেলিকে বিয়ে দিতে চায় সেখানেই সে রাজী। এর বাইরে কিছু বলার নেই।

পরিবারকে রাজী করানোর বিষয়টা নাহিয়ানকে বলায় বিষয়টাকে হেসে উড়িয়ে দেয়। সসময়ের পরিক্রমায় অনেকটা বদলাতে শুরু করে সে। কাছে পেয়েই জড়িয়ে ধরে আদর করার অভ্যাসটাও তার মাঝে আর থাকে না। অন্যদিকে প্রহেলির শারিরীক গঠনে পরিবর্তন দেখা যায়। দিনদিন ওজন বাড়তে লাগে। দেখতে দেখতেই দুই বছরের মধ্যে অনেকখানি মুটিয়ে যায় সে। নাহিয়ানের ডাক ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়৷ তার নতুন নতুন বন্ধু হয়। ভার্সিটি ও ভার্সিটির বাইরে বিভিন্ন মেয়ে বন্ধুর সাথে ঘুরতে দেখা যায়। কখনো কিছু জিজ্ঞেস করলে বাহানা মেরে দেয়। একদিন হুট করেই সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তার সাথে৷ কোনো উপায় না পেয়ে প্রহেলি বিবাহিত স্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ার জন্য তার দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ে।

বিয়ের কথা শুবে অদ্ভুত স্বরে সে বলল,“বিয়ে! বউ! কীসব বলছো! আমাদের বিয়ে কখন হলো? কী প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”

“মজা করছো আমার সাথে তাই না? আমরা না কোর্ট ম্যারেজ করলাম!”, প্রহেলি অস্ফুটস্বরে বলল।

“ওইটা কেবল একটা পেপার ছিল তোর সাথে শোয়ার জন্য। এমনিতে বললেও হয়তো আমার সাথে শুয়ে যেতি তুই। তোর এমনিতেও অনেক জ্বালা ছিল আমাকে কাছ্র পাওয়ার।”

প্রহেলির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। মনে হচ্ছে যেন চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে৷ চোখের সামনে ঝাপসা দেখছে। এলোমেলো কদম ফেলে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। চোখের জল মুছে মৃদু হেসে নাহিয়ানের সম্মুখে এসে দাঁতে দাঁত চেপে সজোরে চড় বসিয়ে দেয় তার গালে। কখনো ভাবেনি যাকে ভালোবেসেছে তার গায়ে এভাবে হাত তুলতে হবে। কোনো কথা না বলেই বেরিয়ে আসে সে। থরথর করে কাঁপছে শরীর। মাঝ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তারপর কীভাবে বাড়ি ফিরেছিল কিছুই মনে নেই।

সেদিনই নাহিয়ান তাকে শেষ মেসেজ পাঠিয়েছিল। অতীতের পাতা পালটে বর্তমানে ফিরে আসে প্রহেলি।

“তুমি নিজেকে একবার দেখ আর আমাকে দেখ। বডির সাইজ দেখেছ? বিবাহিত মহিলা টাইপ হয়ে গেছ। মনে হয় এক বাচ্চার মা। এই তোমার সাথে আমার এখন ঠিক যায় না। তুমি তোমার মতো কাউকে খুঁজে নিও।”, ঝিলের পাড়ে বসে আরো একবার মেসেজটা পড়ে নেয় প্রহেলি।

অতীত যতটা মধুর ছিল ঠিক ততটাই তিক্ততায় ভরা। আজ সে তার অতীতের স্মৃতিকে এই ঝিলে ডুবিয়েই হত্যা করে যাবে। সিমটা খুলে ভেঙে ফেলে দেয় প্রহেলি। সন্ধ্যা নেমে এসেছে সে খেয়াল নেই তার। নাহিয়ানের কাছে আর যাবে না সে। বাড়ি ফিরতে হবে তাকে। মা-বাবার পছন্দমতোই বিয়ে করবে। সন্ধ্যায় বাড়ি গেলে প্রান্ত রেগে যায়। তড়িঘড়ি করে রিকশা খুঁজতে লাগে। একটা রিকশাও যেতে রাজী হচ্ছে না। মাগরিবের আজান চারদিকে মধুর ধ্বনি তোলে। প্রহেলি মাথায় কাপড় টেনে দেয়। জীবনে যত পাপ করেছে জানে না এই পাপের ক্ষমা কখনো পাবে কী না। তবু এবার খোদার পথে ফিরবে সে। শতবার মাফ চাইবে, কে জানে একবার মাফ পেলে পেতেও পারে।

চলবে…
লিখা: বর্ণালি সোহানা

[বিঃদ্রঃ গল্পের ভালোটা গ্রহণ করবেন, খারাপটা এড়িয়ে চলবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিবেন। মন্তব্য করে উৎসাহ দিবেন। ধন্যবাদ প্রিয় পাঠক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here