#কলা_পাতায়_বাঁধিব_ঘর
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৬(অন্তিম_পাতা)

আসন্ন প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পারলেই একটা সুন্দর জীবনের দেখা মেলে।
সামিহা, সপ্ত দুজনের নামের সাথে মিল রেখেই ছেলের নাম রাখা হলো সারিম।
শরীর কাঠামো গুলুমুলু, মেজাজ শান্ত প্রকৃতির। তবে খুব বেশি রাগ হলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তোলা সারিমের কাজ। বাবা-মা,দাদা-দাদি, একমাত্র ফুফিসহ নানার বাড়ীর সকলের প্রাণ।
নাবিল এখন স্কুলে পড়ে। মাঝেমাঝে স্কুল থেকে ফিরেই বায়না করে সারিম বাবুকে দেখতে আসার।
আঠারো মাস বয়সের সারিম ছোট মামাকে কাছে পেলেই তার চুল টে’নে ধরে। নাবিল ব্যথা পেলেও খিলখিল করে হাসে। তার হাসি দেখে সারিম ও ঠোঁট এলিয়ে হাসে।

সারিম আসার পর থেকেই রাউফুনের হাসপাতালে মন বসেনা। মন এক ছুটে বাড়ি আসতে চায়।
তবে ভালোভাবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য আয় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আয়ের উৎস তো আর পায়ে ঠে’লে দেওয়া যায়না। তবে আগের তুলনায় রোগী দেখার সময় একঘন্টা কমিয়ে এনেছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে।

★★★

রাত আটটার পরই রাউফুন বাড়ি ফিরলো। ঘরে আসার সময় মায়ের কোলে সারিমকে দেখে এসেছে। সারিম বাবাকে দেখে দুহাত বাড়িয়ে দিলেও রাউফুন কোলে নিলোনা। দাদির কোলে সারিমকে রেখেই আগে ফ্রেশ হতে আসলো। সে কখনো হাসপাতাল থেকে ফিরেই ফ্রেশ না হয়ে সারিমকে স্পর্শ করেনা।
সারিম গাল ফুলিয়ে দু’হাত গুটিয়ে দাদির কোলে বসে রইলো। সে বাবার কোলে যাবেনা। রাগ করেছে। বাবা কেনো বাসায় এসেই তাকে কোলে নেয়না?

রাউফুন ফ্রেশ হয়ে সারিমকে কোলে তোলার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো। সারিম মুখ ঘুরিয়ে দাদির কোলে মুখ গুঁজে দিলো। বাচ্চা হলেও অভিমান করতে বেশ পটু। রাউফুন ছেলের অভিমান দেখে হেসে ফেললো। পুষ্প একগ্লাস লেবুর শরবত এগিয়ে দিলো রাউফুনের দিকে।
গ্লাস খালি করে সারিমকে শুনিয়ে শুনিয়ে পুষ্পকে বকা’বকি করলো,
-“এতক্ষণ লাগে শরবত নিয়ে আসতে? কাল থেকে আমার জন্য শরবত আনার দরকার নেই। তোমার শরবত তুমিই খেও।”

সারিম দাদির বুক থেকে মুখ তুলে বাবার দিকে রাগী চোখে তাকালো। স্পষ্ট কিছুই বলতে পারছেনা। তবে গাঁইগুঁই করে ঠিকই বাবাকে শাসাচ্ছে। তার গাঁইগুঁই করার অর্থ “আমার আম্মুকে বকছো কেনো? আমিও তোমায় বকে দিলাম।”

পুষ্প পাশে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসলো। রাউফুন ও হাসছে। বাসায় কেউ কাউকে ধমক দিয়ে কথা বলতে পারেনা। তখনই সারিম সবাইকে তার ভাষা দ্বারা বকে দেয়। রাউফুন কিটকিটিয়ে হেসে জোর করে সারিমকে কোলে তুলে নিলো। প্রথমে রাগ দেখালেও বাবার আদরের কাছে হার মানলো। রাউফুনের প্রতিটি চুমুর পরিবর্তে চিকন ঠোঁট জোড়া দিয়ে রাউফুনের মুখে লালা ছুঁইয়ে দিলো।
রাউফুন মেকি রাগ করার ভান করে নাকমুখ কুঁচকে বলল,
-“আমি চুমু দিচ্ছি আর তুমি বাবার মুখে লালা ছড়াচ্ছো?”

সারিম পিটপিট চোখে বাবার কথা শুনলো, কি বুঝলো জানা নেই। বাবার হাসিহাসি ঠোঁট জোড়া দেখে সেও হাসলো। ছোট ছোট কচি হাত জোড়া পরম আবেশে ঝাপটে ধরলো রাউফুনের গলা। ঘাড়ে মাথা এলিয়ে শান্ত হয়ে রইলো সারিম। রাউফুন ছেলেকে কোলে তুলে হাঁটাহাঁটি করলো।

★★★

সুন্দর জীবনে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করেন।
দীর্ঘদিন যাবত সারিমের জ্বর সেরে উঠছেনা। জ্বর,ঠান্ডা লেগেই থাকছে। রাউফুন ডাক্তার দেখাচ্ছেনা এমন নয়। তবে কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছেনা। ব্যাপারটা নিয়ে পুষ্প, রাউফুন দুজনেই চিন্তিত। একমাত্র সন্তানের অসুস্থতায় দুজনের মন মেজাজই বেশ একটা ভালো নেই।
আজ আবার সারিমকে ডাক্তার দেখিয়ে এনেছে। ডাক্তার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ব্যাপারটি মস্তিকে খেলে যেতেই শরীরের রক্ত হীম হয়ে আসলো রাউফুনের।
দ্রুত ছেলের চিকিৎসায় উঠেপড়ে লাগলো। কয়েকদিন নিজের রোগী দেখা, সার্জারী সব বাদ দিয়ে ছেলের ডাক্তার দেখানো নিয়েই আছে।
কয়েকজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে একের পর এক সব রিপোর্ট মিলে যাচ্ছে। সব জায়গায় একটি বিষয়ই স্পষ্ট। হাসিখুশি রাউফুন নিস্তেজ হয়ে পড়লো।
বাড়িতে পুষ্প কিংবা মা বাবা কাউকেই কিছু জানালোনা।
হাসপাতালের ছোটাছুটি শেষে রাতে বাড়ি ফিরলো। নিত্যদিনের মতো আজও ছেলেকে আদর করে রাতের খাবার খেতে বসলো।
পুষ্প লক্ষ্য করলো আজ রাউফুন যেনো খেতে চাইছেনা। জোর পূর্বক কেউ যেনো তাকে খাবার গিলতে বাধ্য করছে।

★★★

গভীর রাতে যখন সবাই চোখদুটো আর শরীরটাকে বিশ্রাম দিতে ব্যস্ত। তখন রাউফুনের চোখজোড়া জাগ্রত। পাশে শুয়ে থাকা স্ত্রীর দিকে একবার তাকিয়ে বুকের উপর শুয়ে থাকা ছেলের মুখের দিকে তাকালো। রাউফুন ছোটবেলায় শেষ কবে কেঁদেছে জানা নেই। আজ গরম জলে চোখজোড়া ভিজে উঠলো। দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে কান স্পর্শ করলো। বুকের উপর থাকা ছেলেটাকে আরেকটু চেপে নিলো বুকে। একহাত স্ত্রীর মাথায় রাখলো। রাউফুন ভেবে পেলোনা দুর্বল মনের পুষ্পকে কিভাবে জানাবে ছেলের এতবড় অসুখের কথা।

ইদানীং রাউফুনের উষ্কখুষ্ক চেহারা, অস্বাভাবিক গজে ওঠা দাঁড়ি, ভঙ্গুর চেহারা, চোখের নিচের কালো দাগ পুষ্পকে ভাবিয়ে তুললো। রাউফুনকে এখন আর আগের মতো হাসিখুশি আমেজে দেখা যায়না। কিছু নিয়ে যেনো দৌঁড়াদৌঁড়ি করে। দেরি করে বাসায় ফিরে। পুষ্প নিশ্চিত রাউফুন কিছু একটা লুকাচ্ছে তার কাছে। জিজ্ঞেস করেও আশানুরূপ কোনো ফল পেলোনা। রাউফুন জানালো সব ঠিক আছে।

বাংলাদেশে ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি শিশু মা’রা যাচ্ছে। সাধারণ কিছু উপসর্গ থেকে হতে পারে মরনব্যাধি ক্যান্সার। যেসকল উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
শরীরে ব্যথা, ফোলা ফোলা ভাব, দীর্ঘদিন ধরে ঠান্ডা-জ্বর, মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরানো, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, ক্লান্তি কিংবা অস্বাভাবিক ঘাম হওয়া, হঠাৎ রক্তপাত হওয়া।
এসকল উপসর্গ দেখা দিলেই যে ক্যান্সার হয়েছে এমন ভাবনা ভাবার কোনো কারণ নেই। ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সাধারণ কিছু হলে সেরে যাবে, গুরুতর সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। এসকল সাধারণ বিষয় থেকেই জটিল রোগ বাসা বাঁধে। এক বছরের পর থেকে শিশুদের রক্তে ক্যান্সার হতে পারে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ মাত্র ২০-২২ জন। ঢাকার বাহিরে চট্টগ্রামে মাত্র একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যান্সার চিকিৎসা উন্নত হলেও শিশু ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা বাংলাদেশে চালু হয়নি।
প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা’রা যাচ্ছে। কেউ টাকাপয়সার অভাবে চিকিৎসার অভাবে, কেউ কেউ অনুন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় সঠিক রোগ শনাক্ত করতে না পেরে আরও জটিল সমস্যা বাঁধিয়ে মা’রা যাচ্ছে।
বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে ক্যান্সার রোগের সঠিক চিকিৎসায় শিশুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। এখন আর ক্যান্সারকে মরণঘাতী রোগ বলা হয়না। বাচ্চারা সুস্থ হয়, তবে তার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের অভাবের পাশাপাশি চিকিৎসা সরঞ্জামেরও অভাব রয়েছে। তাছাড়া সব ঔষধ বাজারে সহজলভ্য নয়, যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো অনেক ব্যয়বহুল।
দেশের একজন সেবক হয়ে ক্যান্সারের অনুন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত রাউফুন। তাই সে দেশে ছেলেকে রেখে বিপদ বাড়াতে চায়না। বাবার সাথে পরামর্শ করে সারিমকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলো। সেসব নিয়েই দৌঁড়ঝাপের উপর আছে। রাউফুন আর তার বাবা ঠিক করলেন তার মাকে আর পুষ্পকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময় নিকটে আসলে সবকিছু জানানো হবে। এই মুহূর্তে তারা ভেঙে পড়লে রাউফুনের পক্ষে সব সামলানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। সে কাকে সামলাবে? এই মুহূর্তে নিজেকে সামলানো জরুরি। অন্যদের সামলানোর মতো মানসিক অবস্থা এখন তার নেই।
সারিম লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত। যা একধরনের ক্যান্সার।
এই রোগের চিকিৎসায় আড়াই-তিন বছর সময় লেগে যায়।

সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময় যখন একসপ্তাহ বাকী তখন পুষ্প আর রাউফুনের মাকে সবটা জানানো হলো। তাদের পাশাপাশি সব আত্মীয় স্বজনরা জানলো।
রোকসানা বুকে চাপড়ে নাতির জন্য কাঁদছেন। রিশা শশুর বাড়ি থেকে কাঁদতে কাঁদতে এখানে এসেছে। পুষ্প খবরটা শোনার পর থেকে গুমোট হয়ে রইলো। সে না কাঁদছে, না কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। এই মুহূর্তে রাউফুন চিন্তায় পড়ে গেলো। যদি পুষ্পর অবস্থা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে, তবে দুদিকের সমস্যা মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

রাতে একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলো পুষ্প,
রাউফুন দেরি করলোনা। তার পাশে দাঁড়িয়ে ঘাড়ে ভরসার হাত রাখলো। পুষ্প ঘাড় কাত করে সেই হাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রাউফুন বলল,
-“নিজেকে গুমোট করে রেখোনা। ভেতরের ভারটাকে হালকা করো। আমাদের দুজনকেই এখন শারীরিক, মানসিক দুদিকেই শক্ত থাকতে হবে। তুমি এমন করে থাকলে আমার জন্য সব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।”

এবারে নিজেকে দমিয়ে রাখলোনা পুষ্প। রাউফুনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। খামচে ধরলো পিঠ। হাউমাউ করে কাঁদলো,
-“আমার মোমের পুতুলটাকে কেনো আল্লাহ এত বড় শাস্তি দিচ্ছে? কি দোষ আমার নিষ্পাপ বাচ্চাটার? আল্লাহ ওর জীবনের বিনিময়ে আমাকে দুনিয়া থেকে নিয়ে যাক। আমি কিভাবে থাকবো আমার পুতুলটাকে ছাড়া। আল্লাহ কেনো আমার কাছ থেকেই সবকিছু কেঁড়ে নিতে চান?”

রাউফুনের নিঃশব্দ কান্নায় পুষ্পর চুল ভিজলো। গলা ঠিক করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
-“আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে কেঁড়ে নেননা। এই যে সারিম? সে কিন্তু আল্লাহর দেওয়া উপহার। আমরা সাময়িক একটায় পরীক্ষায় পড়েছি। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে, আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। তিনি কাউকে নিরাশ করেননা।”

পুষ্পর কান্নায় সারিমের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠেই বাচ্চাটা কান্নাকাটি শুরু করে। আজ তিনজনেই কাঁদছে। সন্তান কাঁদছে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আর বাবা-মা কাঁদছে সন্তান হারানোর ভয়ে।

★★★

সিঙ্গাপুরে সারিমকে সাথে নিয়ে পুষ্প আর রাউফুন এসেছে। পুষ্পকে রেখে আসেনি। বাংলাদেশে না থেকে যতদিন পারে সন্তানের সাথে সময় কাটাক।
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে সারিমের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হলো। রাউফুনের একাউন্ট, ব্যাংক-ব্যালেন্স সব শেষ। এবারে রাউফুনের বাবা নাতির জন্য সম্পত্তির অনেকটা অংশ বিক্রি করে দিলেন। মানুষ বাঁচলে একদিন সম্পত্তি হবেই৷ সারিমের নানা সাহায্য করতে চাইলেও রাউফুন বলল “যদি আমরা পরে বিপদে পড়ি, তখন অবশ্যই আপনার সাহায্য নেবো বাবা। টাকাগুলো বাঁচিয়ে রাখুন, পরবর্তীতে কাজে লাগবে।”

★পরিশিষ্ট★
সারিমের অবস্থা এখন অনেকটাই উন্নত। ভালোকিছু প্রত্যাশা করা যাচ্ছে। ডাক্তাররা জানালেন খুব শীঘ্রই সারিম পুরোপুরি রিকোভার করবে।
সংসার জীবনের কয়েকবছর পর আজ রাউফুন জিজ্ঞেস করলো,
-“আমার সাথে সুখে আছো?”
পুষ্প অপলক চেয়ে থেকে বলল,
-” আমাকে সব পরিস্থিতিতে সামলানোর ক্ষমতা একমাত্র তোমার আছে বলেই আল্লাহ আমাদের দুজনকে এক করেছে। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ আমার সুখ তোমাতে নিহিত করেছে, সেখানে আমার একটি ছোট্ট কথায় কি আসে যায়?
দুনিয়ার সমস্ত নারীদের চেয়ে আমি নিজেকে সবচেয়ে সুখী নারী দাবী করি।”

রাউফুন উদাসীন গলায় বলল,
-“এই যে আমাদের এখন আর আগের মতো অতটা স্বচ্ছল জীবন নেই, নিজের চাহিদা গুলো কমিয়ে নিতে হচ্ছে? তুমি কি পারবে আমার সাথে এমন জীবন কাটাতে?”

পুষ্প মৃদু হেসে বলল,
-“তুমি কে? আমি কে? সারিম কে? কার জন্য করছো সব? আল্লাহ আমাদের এখনো অনেক ভালো রেখেছে। হ্যাঁ হয়তো ছেলের চিকিৎসার জন্য আগের মতো ব্যাংক-ব্যালেন্স নেই, কিন্তু তাতে কি আমাদের সুখ একটুও কমেছে? তুমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখো আল্লাহ এমন সুখী জীবন কজনকে দান করেছেন?
তোমার সাথে সারাজীবন কাটাতে হলে যদি একটা কলাপাতার ছাউনির নিচেও দিনপার করতে হয়, আমি পারবো। পরিস্থিতি আমাকে সবরকম পরিবেশে সবকিছু মোকাবিলা করার শক্তি দিয়েছে।”

রাউফুন সামান্য হাসলো। তবে সেই হাসি দীর্ঘক্ষণ রইলোনা।
-“কলা পাতার ছাউনির তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। একটু বাতাসেই শেষ।”

পুষ্প যেনো আজ জেতার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে। সে বলল,
-“দালানকোঠার নিশ্চয়তা কতটুকু? কয়েক সেকেন্ডের ভূমিকম্পে সব শেষ হতে কতক্ষণ?
আমায় তো জিজ্ঞেস করলে। এবার বলো তুমি সুখী তো?”

রাউফুনের ঠোঁটে চওড়া হাসি দেখা গেলো।
-“যার একজন বুঝদার স্ত্রী রয়েছে, সে অসুখী হয় কিভাবে?”
তখনই বাবা মায়ের মাঝখানে সারিম আসলো। ছোট ছোট হাতে দুজনের আঙ্গুল ছুঁয়ে আদো আদো বুলিতে শুধালো,
-“আমলা হাঁততে দাবো। তলো তলো।”

দুজনে বাঁধা দিলোনা। তাদের জীবনের ছোট্ট সুখটিকে খুশি করতে তিনজোড়া পা সামনে এগোলো।
সারিম পুরোপুরি সুস্থ হলেই বাংলাদেশে ফিরবে তিনজনে।

#সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here