#কমরেড_শায়লা ৪র্থ পর্ব
৪.০২.২০১৯
সুপ্রিয় কমরেড যারা পড়ছেন। অদূর ভবিষ্যতের কমরেডদের দিকনির্দেশনার জন্য আমি আমার এই অটোবায়োগ্রাফি তথা ব্যক্তিগত জার্নাল লিখে রেখে যাচ্ছি।
এখন বিবাহ পরবর্তী রাত একটা। এখনো আমার তথাকথিত স্বামী আদতে নারীবিদ্বেষী সেই অত্যাচারী পুরুষজাতির অন্যতম সদস্য বাসায় ফেরেনি।
বাসায় ফেরেনি মানেই নিশ্চয়ই সে কোথাও লটপট করে বেড়াচ্ছে। বাসায় বিবাহিত স্ত্রী রেখে এসব করে বেড়ানোই হচ্ছে অত্যাচারী পুরুষের স্বভাব!
আমি চোয়াল শক্ত করে অনলাইন পোর্টালে একটি কলাম লিখতে যাচ্ছি এখন। উপযুক্ত শিরোনাম খুঁজে পাচ্ছিনা, কী দেয়া যায়?
“এবার দুশ্চরিত্র ডাক্তারের প্রতারণার শিকার হলেন এক সাহসী নারী”
হুহ বাবা! পূর্বঅভিজ্ঞতা বলে শিরোনামে ডাক্তার পুলিশ এসব শব্দ দেখলেই পাবলিক খাবে ভাল।
এবার কই যাবে বাছা! ঠ্যাঙ্গানো হবে জায়গামত!
একশ মাইল গতিতে লিখে চললাম ল্যাপটপে।
ঘটনায় মালমশলা ঢাললে সবাই আগ্রহ নিয়ে পাঠ করবে! বাসার সংগ্রামী কমরেড নববিবাহিতা স্ত্রীকে জনৈক ডাক্তার কত উপায়ে নারী নির্যাতন করেন তার বিশদ বিবরন আবেগ দিয়ে লিখতে হবে। পাঠক পাঠ করে ক্রুদ্ধ হবে,চোখে জল আসবে!
লিখে চলেছি আমি। আমার প্রবল মনযোগ দিয়ে লেখালিখির মাঝে পৃথিবীর একমাত্র ভাল পুরুষ, মহাপুরুষ, আমার আব্বা ফোন দিলেন।
কানে ফোন রেখে টাইপ করা চালিয়ে গেলাম। খট খট খট..
“…. গত রাত দুইটায় সদ্যবিবাহিত স্ত্রীকে “মাননীয়া” ডাকপূর্বক অপমান এবং হেনস্তা করিয়া পরদিন সকাল হতে উধাও এবং সারা রাত বাসায় ফেরেন নাই হাসান নামক জনৈক ডাক্তার। ধারনা করা হচ্ছে…. … মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তার নববিবাহিতা স্ত্রী কমরেড শায়লা আমাদের “নারীর আলোকে জানান আর কতকাল আর কতকাল বিপ্লবী কমরেডরা স্বামী কর্তৃক প্রতারণার স্বীকার হবে?..
দ্রুত টাইপিং চলছে

-কেমন আছিস মা?
ল্যাপটপে লিখতে লিখতেই জবাব দিলাম, ভাল।
-জামাইর আজকে নাইট ডিউটি ছিল, তোর ফোন নাম্বার না থাকায় ফোন করতে পারেনি!

-অ.. এ্যাঁ? কী ছিল?
বিষম খেলাম যেন!

আব্বার কথা শুনে ল্যাপটপে ঝড়ের গতিতে টাইপ রত আমার হাতখানা যেন ট্রাফিক সার্জেন্টের কঠিন এক লাঠির বাড়ি খেয়ে একটা ছোটখাটো হার্ডব্রেক কষল। এতক্ষন ধরে জনৈক অসচ্চরিত্র ডাক্তার হাসান কর্তৃক স্ত্রীকে নির্যাতনের সুবিস্তারিত ভয়ংকর রগরগে বর্ণনা দিয়ে ল্যাপটপে যা যা লিখেছিলাম গম্ভীর মুখে সব মুছতে লাগলাম!

.

৫.০২.১৯

খালুর পত্রিকা অফিসে আমার ন্যাড়া মাথা নিয়ে আমার আড়ালে বিস্তর হাসাহাসি হচ্ছে।
একজনকে গতকাল ছড়া কাটতে শুনেছি
বেলু মাথা চার আনা
চাবি দিলে ঘুরেনা!
আহা ওরা যদি জানত আজ আমার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কত শত কমরেড শায়লা ন্যাড়া মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফুফাতো বোন নাজমার কলেজে গিয়েছিলাম আজ সকালে। ওকে বুঝাচ্ছিলাম যাতে আমার মত সেও মাথা ন্যাড়া করে ফেলে।
-নাজমা তুই কি মনে করিস না যুগে যুগে নারীদের চুলের শিকলে বেঁধে রাখার কারনেই নারীজাতির এত পশ্চাদপদতা?
কমরেড নাজমা চোখ মুখ শক্ত করে বলল
-অবশ্যই কমরেড শায়লা আপা!
-তুই কি মনে করিসনা মাথায় লম্বা চুল থাকা মানেই অত্যাচারী পুরুষের অধীনতা স্বীকার?
-অবশ্যই!
-তোর কি মনে হয়না এই শিকল আজ ভাঙা দরকার?
নাজমা যেন আবেগে কেঁদে ফেলবে
-নিশ্চয়ই কমরেড শায়লা!
আমি হাতের আড়ালে লুকিয়ে রাখা রেজরটা বের করে গম্ভীর হয়ে বললাম
-আয় আজ এক্ষুনি তোর মাথাটা ন্যাড়া করে দিই!
এতক্ষন ধরে জ্বি জ্বি করতে থাকা কমরেড নাজমার মুখের রং পলকেই বদলে গেল
-কমরেড শায়লা, ইয়ে মানে আপু আমি একটু টয়লেটে যাব!
-খামোশ! মাথা ন্যাড়া করবি কিনা বল!
নাজমা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,আপা মাথা ন্যাড়া করলে আব্বা আমাকে ঘর থেকে বের করে দিবে! আমি কই যাব।
বলেই হাউমাউ কান্না!
আমি বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। নাজমাকে এখনো আমি সত্যিকারের কমরেড বানাতে পারিনাই!

মাথা ন্যাড়া করার কারনে পত্রিকার স্ম্পাদক কর্তৃক আজ সরকারের জনৈক এমপির সাক্ষাৎকার নেয়া হতে আমাকে অব্যাহতি দিয়ে একটা প্রজেক্ট ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রজেক্টের নাম “বাংলাদেশে গলদা চিংড়ি চাষের ভবিষ্যত”।
এরচে পুরুষজাতির ভবিষ্যত নিয়ে লিখতে দিলেও তো হতো! গলদা চিংড়ির ভবিষ্যত একটা গবেষনার জিনিস হলো?

সারাদিন আমার অনেক হ্যাপা ছিল। সন্ধ্যেয় বাসায় ফিরে হালকা কিছু খেয়ে এক ঘুমে রাত কাবার করার পরিকল্পনা। যদিও গভীর ঘুমেও আমি কমরেড শায়লা যেকোন ধরনের আক্রমন প্রতিহত করতে সদা সর্বদা প্রস্তুত।
বাসার দরজার লকের দুটো চাবি। একটা আমার কাছে। একটা ছ্যাঁচড়ার কাছে।
আমার মালিকানাধীন গৃহাংশের যাবতীয় জিনিসপত্র আমি বিশেষ উপায়ে সাজিয়ে রেখেছি। কেউ আমার জিনিসপত্র গভীর আগ্রহে ঘাটাঘাটি করলেই আমি,ব্ল্যাকবেল্ট, কমরেড শায়লা,এক নিমিষে বুঝে ফেলব। আর তখন একজন পরনারীর সীমানাধীন সম্পত্তি অবৈধভাবে হাতানোর অভিযোগে কঠিন একটা অবৈধ দখলদারি সংক্রান্ত মামলা ঠুকে দেয়া যাবে!

যা বুঝতে পারছি আমাদের “পুরুষ হটাও” আন্দোলনকে সব পত্রিকার প্রথম পাতায় নিয়ে আসতে অতি দ্রুত আমার আরো কিছু কার্য সম্পাদন করা দরকার।
কিন্ত ছ্যাঁচড়াকে বাগে পাচ্ছিনা। হাতের কাছে না এলে একটু আরাম করে পিটানোও যাচ্ছেনা। পিটাতে একটা অজুহাত লাগবেতো! আচছা একটা ফেইক আইডি খুলে ছ্যাঁচড়ার চারিত্রিক সনদটার পরীক্ষা করা যায় না? প্রোফাইল ছবিতে কোন বিদেশি নায়িকার ছবি দিলে?
অফিসে কাজের ফাঁকে আমি ফেসবুকে একটা ফেইক আইডি ঝুলালাম। ইকবাল হাসান লিখে সার্চ দিতেই বেটার দাঁত কেলানো ছবিটা চলে এলো সাথে সাথে । একটা লুতুপুতু বার্তা পাঠিয়ে দিতে দিতে ছ্যাঁচড়ার ছবিটা দেখতে লাগলাম। দেখতে দেখতে মনে হলো ছ্যাঁচড়ার চেহারা আসলে হালকা পাতলা কাঁঠাল পাতা চিবোতে থাকা পাঠা ছাগলের মত! সে যাক আগামী দুইদিনের ভেতরে এই যে বিটকেলে হাসিটা ওটার একটা দফারফা হয়ে যাবে,ভায়া! হুহু। এখনো তো জানোনা বাবা,কত ধানে কত শায়লা!

.

৬.০২.১৯

কড়া একটা আন্দোলন চাই আমার! শ্লোগান চাই,বাংলার কমরেড এক হও এক হও!
আমার গ্রুপের পাঁচ হাজার সদস্যা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তারা আমার দিকে তাকিয়ে আছে দ্রুত কিছু একটা করা দরকার। বিশ্বকে বাসযোগ্য করতে সমস্ত নারী বিদ্বেষী,অত্যাচারী, দুশ্চরিত্র পুরুষকে সরাতে হবে। রাজপথে ভয়াবহ আন্দোলন চলবে! আমিই হবো সেই আন্দোলনের কান্ডারী! তাইতো বিবাহ নামের হুতাশনে আত্মবলিদান দিয়েছিলাম! ফেসবুকলাইভ টেলিকাস্টে অনুগত পাঁচ হাজার কমরেড সজল চোখে দেখেছে আমার সেই আত্ম বলিদান!

আর সেই আমি, কমরেড শায়লাকে, কিনা এখন বাংলাদেশে গলদা চিংড়ি চাষের ভবিষ্যত জানতে মৎসবিদ মনসুর আহমেদের এপয়েন্টমেন্ট এর জন্য ছোটাছুটি করতে হচ্ছে! এটা কোন কথা!

আজকে সকালে ছ্যাঁচড়া আমার বালিশের নিচে একটা চিরকুটে একটা কবিতা লিখে গেছে,এই মাত্র বালিশ উল্টাতেই চোখে পড়ল।
“চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য!”

কবিতা পড়েই আমার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। হাত মুষ্টিবদ্ধ! এই কবিতা দিয়ে এখন নারী নির্যাতনের মামলা ঠুকে দেয়া যাবে। এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কবিতার মাধ্যমে আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে,আমার ন্যাড়া মাথাকে হেয় করা হয়েছে। আমি আজই মামলা করব।

মামলা করার নিমিত্তে বিকেলে থানায় গেলাম। যথারীতি মামলাতো নিলইনা। তার উপর আমার ন্যাড়া মাথার দিকে সবাই বারবার দৃষ্টিনিক্ষেপ করছিল। আমি ভ্রুক্ষেপ না করে এএসপি, অত্যাচারী পুরুষ সমাজের আরেক অনন্য প্রতিনিধি, সুজনের সাথে দেখা করলাম। সুজন আমাদের পরিচিত। এর আগেও দু একবার মামলা করতে এসেছিলাম। থানার ওসি ঝামেলা পাকিয়ে আমাকে পাঠায় সুজনের অফিসে। কীভাবে কীভাবে যেন সে আমার বাবাকে চিনে। তারপর হতে প্রতিবার মামলা করতে এলে তার সাথে আমার ঝগড়া হয়,ঝগড়া হাতাহাতির পর্যায়ে যাওয়ার মুহূর্তে সে আব্বাকে একটা করে ফোন দেয়। আর আব্বা এসে আমার হাতে পায়ে ধরে আমাকে বাসায় নিয়ে যান। আজকে আর সেটি হচ্ছেনা! আজকে আমার মামলা সে নিতে বাধ্য। উপযুক্ত প্রমাণ সহ নিয়ে এসেছি।
সুজন চা পান করছিল মাথা ন্যাড়া জিন্স টপস পরিহিত একজন মানুষকে তার রুমে প্রবেশ করতে দেখে একটু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো!
-কে আপনি ভাই? এই কে আছিস.. এখানে পাগল ঢুকলো কী করে!
আমি বিরক্ত হলাম। ন্যাড়া মাথা,টপস আর জিন্সে আর যাই হোক আমাকে পাগল মনে করার কোন কারন নাই! আর আমাকে ভাই ডাকা মানে আমাকে অত্যাচারী পুরুষ সমাজের কাতারে ফেলা! আমি শীতল দৃষ্টিতে সুজনের দিকে তাকালাম
-সুজন, আমি শায়লা।
দীর্ঘ একটাক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে সুজন হো হো করে হেসে ফেলল
-শায়লা! এ কী অবস্থা তোমার! চাচা বলছিল তোমার বিয়ে হয়েছে দুইদিন আগে। সত্য নাকি?

আমি জবাব না দিয়ে গম্ভীরমুখে কবিতাটা সুজনের হাতে তুলে দিলাম। আর মনে মনে কল্পনা করলাম, একদিন এই হারামজাদার অধিষ্ঠিত জায়গায় একজন সংগ্রামী কমরেড নারী থাকবে,কনস্টেবল,আর্দালী,পিওন,দারোয়ান সর্বত্র বিচরন করবে আমার সংগ্রামী কমরেডরা! আর এদের স্থান হবে রান্নাঘরে! ভাবতেই চোখ ভিজে আসে!
-মামলা ঠুকে দাও। আমার স্বামী ছ্যাঁচড়াটা নিয়মিত চিরকুট কবিতা লিখে আমাকে হয়রানি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে!
– হাজব্যান্ড তার ওয়াইফকে রোমান্টিক চিরকুট লিখবে কবিতা লিখবে গান লিখবে। কবিতা গান না লিখে কি প্রেসক্রিপশন লিখবে? কবিতা লেখা,এটা কি মামলা করার জিনিস!
-অবশ্যই। এটা একধরনের হ্যারাসমেন্ট, বুলিং। আমাকে হেয় করার জন্য,মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার জন্য কবিতাটা লেখা হয়েছে।
– ভাবি,এটাতো উনার লেখা না জীবনানন্দ দাশ নামে একজন কবির লেখা! মামলা করলে আপনার স্বামী এই কথাই বলবেন! তখন কী করবেন?
-জীবনানন্দ দাশ আর ইকবাল হাসান দুজনের নামেই মামলা দিয়ে দাও! দুজনে যুক্তি করে এই কবিতা লিখেছে!
-ভাবি,জীবনানন্দ দাশতো অনেক আগেই পৃথিবী থেকে গত হয়েছেন!
গত!বলে কী! ওহ! এইটা ওই জীবনানন্দ দাশ,ক্লাস এইটের সেই “আবার আসবি ফিরে”?

আমি মাথা চুলকালাম। উত্তেজনায় জীবনানন্দ দাশ নামটা শুনে ভেবে নিয়েছিলাম এই জীবনানন্দ দাশ ছ্যাঁচড়ার কোন বন্ধু হয়ত! কবি জীবনানন্দ দাশ আমার আব্বার প্রিয় কবি। যেহেতু আব্বা একজন মহাপুরুষ জীবননানন্দ দাশও নিঃসন্দেহে একজন মহাপুরুষ।
তাঁকে ছ্যাঁচড়ার বন্ধু আরেক ছ্যাঁচড়া ভাবার জন্য আমি মনে মনে ক্ষমাপ্রার্থীী হলাম।!

পাঠ্যবইয়ের বাইরে লিখিত কোন পুরুষ কবি সাহিত্যিকের কবিতা সাহিত্য পাঠ নেই আমার। আমি শুধু নারী লেখকদের কবিতা সাহিত্য পড়ি।
কারন জগতের প্রায় অধিকাংশ পুরুষ কবি সাহিত্যিকই এক একজন মানসিক বিকারগ্রস্থ! তাদের অধিকাংশের নেকু নেকু কবিতা সাহিত্য রচনার একটাই উদ্দেশ্য কোমলমতী নারীকে ফাঁদে ফেলা।

আমাদের সামনের একটা স্পেশাল মিশন আছে এই সব বিভ্রান্ত, মাথা খারাপ,দুষ্ট কবিসাহিত্যিক নিয়ে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন নারীকে হেয় করে লেখা সকল অশ্লীল কবিতা সাহিত্য রোল করে স্ব স্ব লেখকের গোপন গৃহ দ্বারে প্রবেশ করানো হবে!

সুজনের সাথে আরো কিছুক্ষন বাকবিতন্ডা করে ওর অফিস হতে বেরিয়ে গেলাম। সে আবার আব্বাকে ফোন না দেয়। মনটা কেন জানি খচখচ করছে। কিছু একটা গোলমেলে মনে হচ্ছে।
রিকশায় উঠে খেয়াল হলো,সুজন আজকে আমাকে বারবার ভাবী বলে ডাকছিল! আর প্রেসক্রিপশন লেখার কথা বলল ঘটনা কী?

#কমরেড_শায়লা (৪র্থ পর্ব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here