#এলোমেলো_হাওয়া
#পর্ব_১৬ (শেষ পর্ব)
লেখনীতে- #অলিন্দ্রিয়া_রুহি

তীহাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তার মন মেজাজ ভালো। মাটির উনুনে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। তার পাশে আঁটসাঁট বসে থাকা তীহার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফোঁটা। কড়াইয়ে গোশতের তরকারি, আমেনা পাশে থেকে আগুন সামলাচ্ছে, বাকীসব কাজ আজ তীহা একা হাতে করেছে। দীর্ঘদিন পর অনেক কাজ করায় তার শরীরে আলস্য ভর করেছে ইতিমধ্যেই, তবুও মনটা ভালো লাগছে। একধরনের প্রশান্তি কাজ করছে ভেতর বাড়িতে। আদ্র দূর থেকে তীহাকে দেখতে পেয়েই তার ভেতরের খবর আঁচ করতে পারলো। মনের আকাশে জমা কালো মেঘগুলো এক এক করে বিদায় জানালো। স্থির চিত্তে সে আগালো রান্নাঘরের দিকে।
আদ্রকে দেখে তীহা এক পলক তাকালো। চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিলো। তার অধরে একটা নাই নাই হাসি। আদ্র বলল, “তরকারির কালারটা দারুণ তো।”
আমেনা বলল, “ভাবী রান্না করছে।”
“হুম, তাই তো আসলাম দেখতে৷ তীহা, তুমি যে এত ভালো রান্না জানো,আগে কখনো বলোনি তো।”
আদ্র’র করা প্রশংসায় তীহা খানিকটা লজ্জাবোধ করল। মিঁইয়ে যাওয়া গলায় বলল, “না খেয়েই জানলেন আমি ভালো রাঁধি?”
আদ্র বিজ্ঞের ন্যায় প্রত্যুত্তর করে, “তরকারির রঙ দেখলেই বলে দেওয়া যায় সেটা সুখাদ্য নাকী অখাদ্য। এর জন্য এত চেটে দেখার প্রয়োজন নেই।”
“বাসায় টুকটাক রান্না করতাম তাও শখের বশে। আম্মু কখনোই কোনো কাজ শেখাতে জোর করেননি। বরং আমি পড়াশোনা ফেলে এটা ওটা করতে চাইতাম বিধায় প্রচুর বকাও খেতাম। টুকটাক সবকিছুই রান্না করতে পারি আমি।”
“তাই নাকী! তবে তো দারুণ ব্যাপার স্যাপার।” বলে তরকারির দিকে হাত বাড়ালো আদ্র। এক পিস গোশত নেওয়ার ইচ্ছে, তীহা বুঝতে পেরে বলল, “আমি তুলে দিচ্ছি। এক মিনিট..”
আদ্র সহাস্যে হাত সরিয়ে নেয়। গোশত তার খুব প্রিয় জিনিস। বাসায় যখনই এটা রান্না হয় আর রান্নার সময়ে যদি সে আশেপাশেই থাকে তাহলে সবার আগে তার তুলে খাওয়া চাই-ই চাই! এমন একটা ব্যাপার। এই মেয়েটা বেছে বেছে আজ আদ্র’র পছন্দের জিনিসটাই রেঁধেছে।
তীহা একটা ছোট্ট বাটিতে তিন পিস গোশত তুলে দিলো। আদ্র এক পিস আমেনাকে খাইয়ে দিয়ে আরেক পিস তীহাকে খেতে সাধলো। তীহা খেলো না, একদম দুপুরেই খাবে- বললে আদ্র রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো। গোশত খেতে অসাধারণ হয়েছে। লবন,মরিচ,সেদ্ধ সবদিক দিয়েই পারফেক্ট, যেন এরচেয়ে বেশি হলেই খারাপ হয়ে যেতো স্বাদটা। আদ্র মনে মনে বলল, “আল্লাহ, এই রান্নাটা যত সুন্দর হয়েছে,তার চাইতেও বেশি সুন্দর করে দিন আমাদের সম্পর্ক টা। এই মেয়েটার সাথে আঁশ মিটিয়ে ঝগড়া করতেও দারুণ লাগবে আমার।”

____

তোমার গর্ভে আমার সন্তান কথাটি বিশ্বাসযোগ্য নয় আমার কাছে। তবুও আমি অপেক্ষা করব। দিন কয়েকের মধ্যেই চেক আপ করাবো তোমার মালোতি। আমাকে কোনো ধরনের ট্র‍্যাপে ফেলার চেষ্টা করলে সেটা একদম ভালো হবে না। যদি তুমি সত্যিই গর্ভবতী হয়ে থাকো,তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, এই বাচ্চাকে নিজের পরিচয় দিয়েই বড় করব। ওর যাবতীয় সমস্ত খরচ আমি বহন করব। কিন্তু তুমি কখনোই আমার স্ত্রী’র পরিচয় পাবে না। এমনকী এই বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখা পর্যন্তই তোমার সময় আছে। এরপর তুমি একদিকে, আর আমি অন্যদিকে। ভুলেও আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবে না। যদি সমাজের কটুক্তি শুনতে হয়, শুনবো। তবুও ওয়াদা দিচ্ছি,বাচ্চাটাকে একটুও কষ্ট দেবো না। আমি পাপী, আমি খারাপ কিন্তু একটা নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা বা কষ্ট দেওয়ার মতো জঘন্য কেউ না। আমার ভেতরেও অনুভূতি আছে। হয়ত ও-ই হবে আমার সমস্ত ভুলের প্রায়শ্চিত্ত।

—-অনিন্য!

কাগজটা হাতের মুঠোয় পুড়ে ফেলল অনিন্য। চিরকুটটা মালোতিকে দেওয়ার জন্য অনেক ভেবেচিন্তে লিখেছিল সে। কিন্তু এটার হয়ত আর প্রয়োজন পড়বে না। মালোতি নিজেই ট্র‍্যাপে ফেঁসে বসে আছে। অনিন্য’র সঙ্গে রাতের পর রাত কাটিয়েছে অথচ তাকে চিনতেই পারল না! অনিন্য’র ভয়ে তার বাবার কাছে গিয়ে কী বড় ভুলটাই না করে বসেছে মালোতি। এখন এটার মাশুল তো মেয়েটাকে দিতেই হবে.. দিচ্ছেও হয়ত কটেজের রুমে। ছেলের বিছানার সঙ্গীকে নিজের বিছানার সঙ্গী করতে এক মিনিট ও ভাববে না আহসান খান। তার মতো লোভী,নিষ্ঠুর এবং নিকৃষ্ট লোক এই পৃথিবীতে আরও আছে কীনা সন্দেহ। এমন একজনকে নিজের পিতার পরিচয় দিতেও বিবেকে বাঁধে অনিন্য’র। আহসান খান নিজে যেরকম খারাপ, সেভাবে অনিন্যকেও খারাপ হিসেবেই গড়ে তুলেছে। যখন চোখ খুললো অনিন্য’র তখন থেকেই আহসান খান তার প্রতিপক্ষ। তীহার ভালোবাসায় অনিন্য যখন সব ছেড়ে ভালোর পথে এগোতে চাইলো, মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন আহসান খান। পাছে ভয় পেলেন, তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনিন্য’র মাধ্যমে না জেনে ফেলে অন্য কেউ! তাই তীহাকে মেরে ফেলার হুমকি ধামকি দিয়ে অনিন্যকে সরিয়ে ফেলেন। অনিন্য যতদিন খারাপ পথে থাকবে ততদিন সে-ও নিশ্চিন্ত থাকবে। ও যদি ট্র‍্যাপে পড়ে, তাহলে সবাইকে নিয়ে পড়বে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আহসান খান কোনোভাবেই ছেলেকে এই পথ থেকে সরিয়ে দিতে চান না। বরং অনিন্য’র জীবনে সমস্ত ঝামেলার সৃষ্টিকারী তার আপন পিতা-ই!
কী অদ্ভুত, তাই না?

বুক চিঁড়ে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসটাকে অনিন্য আঁটকাতে পারে না। তার চোখজোড়া লাল টকটকে বর্ণ ধারণ করেছে। কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে ভীষণ, কিন্তু চাইলেই কী কাঁদা সম্ভব? কান্না করতেও ভাগ্য লাগে,যেটা তার মতো অভাগার কপালে নেই। গাড়ি চলছে কটেজের দিকে। কিছুক্ষণ আগেই ফোন এসেছিল আহসান খানের। মালোতি তাকে সব জানিয়েছে এবং এইজন্যে সে যে মালোতিকে কটেজে এনে আঁটক করেছে,তা জানতে পেরেই অনিন্য রওনা দিয়েছে। তার মনটা বারবার বলছে, “কেন মালোতি কেন! এইটুকু বিশ্বাস ছিল না যে একটা বাচ্চার আমি কিছুই করতাম না! আর না তোমাকেও কিছু করতাম! তুমি কেন গেলে ওই নরপিশাচের কাছে! এখন তুমি চাও বা না চাও এই বাচ্চাটা তো মরবেই। ও কখনোই আমার কোনো দুর্বলতাকে বাঁচতে দিবে না।”

গাড়ির গতি কমে এলো। অনিন্য ভাবনার জগত থেকে বেরোয়। কটেজে পৌঁছে গিয়েছে। শহর পেরিয়ে কিছুটা দূরে অবস্থিত এই কটেজ খুবই নিরিবিলি এবং নির্জন। এখানে এর আগেও বহুবার এসেছে অনিন্য। তার বিভিন্ন কুকীর্তির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিল্ডিংটি। মৃদু শ্বাস ফেলে সামনে এগোয় সে।

দরজায় টোকা পড়েছে। আহসান খান নাকমুখ দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “অনিন্য?”
ওপাশ থেকে জবাব এলো, “আমি।”
আহসান খানের ভাবান্তর হলো না। খুবই ধীরস্থির ভাবে তিনি সিগারেট টানতে টানতে উঠে গিয়ে দরজা খুললেন। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই অনিন্য চমকে উঠল। তার চোখ ছানাবড়া। কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে একটু দূরেই পড়ে থাকা নগ্ন নারী দেহটি পর্যবেক্ষণ করল সে। তারপর এক ছুটে দৌড়ে গেল। মালোতিকে ফ্লোর থেকে তুলে সপাটে থাপ্পড় বসালো গালে। খিস্তি দিয়ে বলল, “এখন তোর শখ মিটেছে?”
মালোতির সাড়াশব্দ নেই। তার চোখজোড়া বন্ধ। অনিন্য’র জ্ঞান ফিরে। খেয়াল হয় ভীষণ ঠান্ডা কিছু ধরে রেখেছে সে। হঠাৎ চোখ চলে যায় গলার কাছটায়। একটা চিকন কালচে দাগ, দাগের চিহ্ন তাজা। যেন ঘন্টা কয়েক পূর্বের। অনিন্য বিশ্বাস করতে পারছে না। তার দু’হাতের আঁজলা থেকে দেহটি ছুটে আবার ফ্লোরে ধপাস করে পড়ল। অনিন্য পেছন ফিরে তাকাল। অস্ফুটস্বরে বলল, “আপনি ওকে মেরে ফেলেছেন!”
প্রত্যুত্তরে আহসান খান বললেন, “এতে চমকানোর কী আছে অনি! তুমি যেন এই প্রথম লাশ দেখেছো?”
অনিন্য ফের বলল, “আপনি ওকে মেরে ফেলেছেন!”
আহসান খান ভীষণ বিরক্ত হলেন৷ বিরক্তি ফুঁটে উঠল তার চোখেমুখে, “এরকম একটা মেয়েকে নিয়ে তুমি রাতের পর রাত ফূর্তি করতে কী করে বলো তো! আমি তো একদমই সুখ পেলাম না। উল্টো কী ধকলটাই না গেল! তাই মেরে দিয়েছি। আমাকে খুশি না করার শাস্তি টা পেল,বুঝেছ?”
যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাবভঙ্গি তার। অনিন্য আক্রোশে ফেটে পড়ল এইবার। ক্রোধান্বিত হয়ে বলল, “ও প্রেগন্যান্ট ছিল!!”
“জানি। তাই তো আরও আগে মারলাম। নইলে ২-৩ দিন ফূর্তি করার ইচ্ছে ছিল।”
“আপনি মানুষ না…. আপনি একটা জানোয়ার, না,জানোয়ারও না। আপনি তার চাইতেও নিকৃষ্ট কিছু।”
আহসান খান হাসলেন। একটা সিগারেট অনিন্য’র দিকে এগিয়ে ধরে বললেন, “কাম ডাউন অনিন্য। এটা নাও। সব স্ট্রেস কমে যাবে।”
অনিন্য’র ইচ্ছে করছে একটা ধারালো কিছু দিয়ে এক কোপে আহসান খানের মাথাটা নামিয়ে ফেলতে। পরক্ষণেই তার মনে পড়ে গেল, যদি আজ তীহাকে নিজের সঙ্গে রাখতো,তাহলে এভাবেই হয়ত তাকেও মৃত্যুবরণ করতে হলো। ভাগ্যিস, তীহাটার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। অনিন্য’র চোখ ভারী হয়ে আসে। তীহা… তীহা তাকে ভুল বুঝে দূরে, বহুদূরে সরে আছে। সে কী আদৌও কোনোদিন জানবে,এই খারাপ অনিন্য’র মনের কোথাও না কোথাও সে ছিল, আছে এবং থাকবে!

“তোমার আচরণ দেখে অবাক হচ্ছি। একটা প্রস্টিটিউটের জন্য এত দরদ মানায় না বুঝলে? তোমার তো আমাকে থ্যাংকস দেওয়া উচিত অনিন্য। ও তোমার জন্য অনেক বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারতো। একটা রক্ষিতাকে বিয়ে করে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়ার চাইতে আমি তোমার পথের কাঁটাটাকে শেষ করে দিয়েছি। বিনিময়ে তোমার রাগ আর আক্রোশ দেখলাম! কী কপাল আমার।” আহসান খান একা একাই স্বগতোক্তি করছেন। অনিন্য’র ঠোঁটের কোণায় আচানক হাসি ফুঁটে উঠল। সে বলল, “বিনিময়ে একটা পুরষ্কার প্রাপ্য আপনি,তাই না?”
“ঠিক তাই।” এতক্ষণ বাদে আহসান খান ধাতস্থ হলেন। আবারও একটি সুখ টান দিলেন সিগারেটে।
ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, “তো কী দিবে আমাকে? ভেবেছো কিছু?”
“অলরেডি একটা উপহার এই গন্তব্যে আসছে।”
“মানে?” ভ্রু কোঁচকালেন আহসান খান। তার কথার জবাব না দিয়ে অনিন্য এলোমেলো হাসে। মালোতির কাছে গেল। নিচু হয়ে মৃত মালোতির মুখখানা তুলে নেয়। মেয়েটা রক্ষিতা,পেটের দায়ে শরীর বিক্রি করত। কিন্তু তাদের মতো খারাপ আর নিকৃষ্ট না। অনিন্য তাকে কখনো বউয়ের স্বীকৃতি না দিলেও একটা সুন্দর জীবন অবশ্য দিতো। সব খারাপ ঠেলে একটু প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছিল ছেলেটা। অথচ দেখো ভাগ্য, অভাগার কপালে সেইটুকুও লেখা নেই।

লম্বা দীর্ঘশ্বাস টেনে বিছানার চাদরটা নেয় অনিন্য। ঢেকে দেয় মালোতিকে সুন্দর করে। আহসান খান দূরে দাঁড়িয়ে ছেলের কাজকারবার দেখছেন। হঠাৎই দরজায় কড়া পড়ল। আহসান খান চমকে উঠলেন। অনিন্য তাকে ডিঙিয়ে দরজা খুলতেই এক দল পুলিশ অফিসাররা ভেতরে প্রবেশ করল। হাত খঁসে আধ খাওয়া সিগারেট পড়ে যায়। আহসান খান অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলেন অনিন্য’র দিকে।

অনিন্য এখানে আসার মাঝ পথেই পুলিশকে ইনফর্ম করেছিল। সে শুধু চেয়েছিল তার বাবাকে ধরিয়ে দিয়ে মালোতিকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিবে৷ মালোতির সব খরচ সে বহন করবে, এবং নিজে সন্তানকে বুকে আগলে বেঁচে থাকবে। কিন্তু হলো না। প্রায়শ্চিত্ত করার এই একটাই সুযোগ হয়ত কপালে লেখা.. কপালের লিখন খন্ডানো কী যায়!

____

আগামীকাল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা আদ্র’র। রাত নয়টা। রাতের খাবার খেয়ে ইতিমধ্যেই ফুপু এবং আমেনা ঘুমোতে চলে গিয়েছে। আদ্র বসে টিভি দেখছে। তীহা চুলগুলোকে খোঁপা করল, মুখে একটু ক্রিম লাগালো। ঠোঁটে লিপজেল দিয়ে আদ্র’র পাশে এসে বসল। আদ্র খেয়াল করে বলল, “এই রাতে সাজগোজ?”
তীহা লজ্জা লজ্জা কণ্ঠে বলল, “এ..এমনি।”
সোজাসাপটা কথার আদ্র সোজাসুজিই প্রশ্ন করল, “তুমি কী আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছো?”
তীহার ফর্সা গাল লালচে হলো। মাথানিচু করে বসে রইলো জবাবহীন ভাবে। আদ্র মিটিমিটি হাসে। চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, “আমাকে ইমপ্রেস করার কিছু নেই মেয়ে। আমি এমনিতেই তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি।”

একটা চ্যানেলে রাত নয়টার খবর চলছে। সেখানে ফলাও করে বলা হচ্ছে বিজনেসম্যান আহসান খান এবং অনিন্য’র নাম। আদ্র’র কথাখানা ছাপিয়ে সেই কথাখানাও তীহার কর্ণকুহরে ঢুকলো। তীহা চমকে তাকাল। দেখতে পেল দুই বাপ-ব্যাটাকে হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিচে লেখা, মালোতি নামের একটি মেয়ের খুনের দায়ে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও বেরিয়ে পড়েছে ব্যবসার আড়ালে চলা বিভিন্ন কালো কাজের বার্তা…
তীহা চোখে অবিশ্বাস নিয়ে চেয়ে রইলো। চ্যানেল পাল্টে যেতেই তার ধ্যান ভাঙে। আদ্র চ্যানেল পাল্টে দিয়েছে। তীহা তার দিকে তাকাতেই আদ্র এক হাতে তাকে কাছে টেনে নিলো। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ধরলো। তপ্ত উষ্ণতায় তীহার মন খারাপ গলে গলে পড়ল। খরগোশ ছানাটির ন্যায় বুকে মিশে রইলো চুপচাপ। আদ্র জিজ্ঞেস করল, “মন খারাপ তীহা?”
তীহা মাথা নেড়ে ‘না’ বলল।
“একদিন না একদিন সবাই সবার কর্মের শাস্তি পায়।”
তীহা প্রত্যুত্তর করল না। আদ্র ভাবলো,তীহার ভীষণ মন খারাপ, তাই তাকে বলল, “তুমি ঘুমাও তীহা। মন খারাপের কিছু নেই।”
তীহা কাচুমাচু কণ্ঠে বলল, “আমরা কী আগামীকাল ঢাকায় যাব?”
“হ্যাঁ,তোমাকে নিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান ছিল এখান থেকে।”
“তাহলে যাবো না ওদিকে?”
“না। গিয়ে কী করব?”
তীহা কাঁপা-কাঁপা কণ্ঠে বলল, “আমি যেতে চাই।”
“সত্যি?” আদ্র অবাক।
“হুম।”
তীহার মুখখানা নিজের হাতের আঁজলায় তুলে আদ্র পুনরায় প্রশ্ন করল, “সত্যি তো? মন থেকে?”
তীহা মাথা দোলায়। কপালে আদ্র’র অধরের স্পর্শ তীহাকে শিহরিত করে তোলে। আদ্র খুব জোরে বুকে জড়িয়ে ধরে তীহাকে। মনে মনে বলল, “এভাবেই আজীবন আগলে রাখবো তোমায়।”
তীহা মনে মনে বলল, “একটা এলোমেলো হাওয়া আমাকে এলোমেলো করে দিয়ে গিয়েছিল। আপনি এসে আমার সব ঠিক করে দিলেন। এইজন্যেই হয়ত বলে, যা যায়,তার চাইতেও বেশিকিছু ফিরে আসে।”

রাত বাড়ছে, দু’জনেই চুপচাপ একে অপরের নিঃশ্বাসের ওঠানামার শব্দ শুনছে। একসময় আদ্র বলল, “তীহা,ঘুমাবে না?”
নিচু কণ্ঠে তীহা বলল, “আপনার ইচ্ছা।”
“আমার তো অন্যকিছু ইচ্ছা।” আদ্র’র দুষ্টু গলা।
তীহা নড়েচড়ে আরও মিশে গেল বুকে। গরম উষ্ণতায় শ্বাস ছেড়ে স্বগতোক্তি করল, “আপনার যা ইচ্ছা আমারও তাই ইচ্ছা…”
আদ্র শুনতে পেয়েও জবাব দিলো না৷ তার হাত দুটি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তীহাকে এক অন্যরকম দুনিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য!

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here