#এক_দেখায়
#অন্তিম_পর্ব
#লেখনীতে_পুষ্পিতা_প্রিমা

রুশার মা রোজিনা বেগমের প্যানপ্যানানি ভেসে আসছে। নবাবের ঝি নবাবজাদী বন্ধু-বান্ধব পেয়ে জামাইর কথা ভুলতে বসেছে। এটা ওটা।

রুশা মায়ের কথা কানচাপা দিয়ে এক পা এক পা করে এগোলো। রুশার মা এগিয়ে আসল। হাতে শরবতের গ্লাস। রুশা মায়ের হাত থেকে গ্লাস নিল। বলল,

‘ বকো কেন? একটু গল্প করছিলাম আর কি? সারাক্ষণ বকা। এদিকে গেলে ও, ওদিকে গেলেও।

রুশার মা কড়া কন্ঠে বলল,

‘ তুই এটাই ডিজার্ভ করিস। এখন যাহ শরবত দিয়ে আয়।

রুশা বলল,

‘ তোমার এত দরদ, তুমি গিয়ে দিয়ে আসোনা আম্মা ।

রুশার মা হা করে তাকিয়ে থাকলেন মেয়ের মুখপানে।

‘ কি বেআক্কেলের মতো কথা বলল মেয়ে? তোর বর না আমার?

‘ তোমার বরকে আমি তো দেই শরবত। তুমি আমার…………..

রুশা বিকট শব্দে গালিগালাজ শোনার আগে গ্লাস নিয়ে ছুটল। শরবতের খানিকটা মেঝেতে ও পড়ল। রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। উঁকি দিয়ে দেখল, রুমে থাকা ছেলেটা হাতের ঘড়ি খুলছে। রুশা গলা পরিষ্কার করল। কিন্তু ছেলেটার মনোযোগ পেল না। তারপর খানিকটা ইতস্তত বোধ করে বলল,

‘ আসব?

কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলনা তারপর ও। রুশা সরাসরি রুমে ডুকে পড়ল। ছেলেটির সামনে গিয়ে গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘ নিন খান।

‘ নিজ হাতে বানিয়েছ?

রুশা ভড়কে গেল।

‘ আচ্ছা, এক্ষুনি বানিয়ে আনছি।

লোকটা যেতে দিল না । রুশার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে বলল,

‘ নো নিড ইয়োর সিমপ্যাথি। তুমি বানালে খেতাম না।

রুশার মন খারাপ হলো।

‘ সামান্য সামান্য কারণে কি এভাবে কথা বলতে হয়? মানুষ মাত্রই তো ভুল।

ছেলেটা হেসে ফেলল। তবে তার আওয়াজ হলোনা। গ্লাসটি টেবিলে রেখে নিঃশব্দে হেসে ওয়াশরুমে চলে গেল। রুশা দেখল না সেই হাসি। রুশা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আরেহ কিছু বলেন না কেন?

______________

মেজবান বাড়িতে লোকজনের সমাগম। মেহমান ভর্তি পুরো বাড়ি। মা ভাবিকে দু একটা কাজে হেল্প করে বারান্দায় গেল চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে। বাপ, জ্যাঠা,চাচা আর জামাইয়ের গল্পের আসর জমেছে। রুশা চায়ের ট্রে এগিয়ে দিল বাবার দিকে। রুশার বাবা নিলেন না। রুশাকে ইশারা করে বলল, আগে জামাইকে দিতে। রুশা ট্রে এগিয়ে দিল। ছেলেটি নড়েচড়ে মাথা দুলালো। তারমানে সে খাবেনা। রুশাকে জব্দ করতে পেরে বেশ খুশি লাগছে তার। এই মেয়েটাকে রাগাতে বড্ড ভালো লাগে তার।

রুশার বাবা বলে উঠেন,

‘ রায়ান, না ও বাবা। চা খাও। ভালো লাগবে।

রায়ান সৌজন্যের হাসি দিয়ে বলল,
‘ না আব্বা চা খাব না। কিছুক্ষণ আগেই খেয়েছি।

রুশা মুখ মোচড়ালো।
‘ ঢং দেখায় পাজি লোকটা৷
রুশা বিড়বিড় করতে করতে চলে যায়। আবার পিছু ফিরে তাকায়। রায়ান জানত রুশা পিছু ফিরবে। তাই আগে থেকে অন্যদিকে মুখ করে রাখল।

রুশা কান্না পেল। এই লোকটা ইচ্ছে করে তার সাথে এমন করে। আজকে একদম আর ধারেকাছেও যাবেনা সে। হুহহ।

শ্বশুড়বাড়ি থেকে সবাই আসল। শান্তা তো এসেই তদারকি শুরু করল।
‘ তোর বড় জা এসেছে রুশু। যত্ন-আত্মির ত্রুটি রাখিস না বইন।
ফারহান বলল,
‘ তুমি কি কথা একটু কম বলতে পারোনা শান্তা। আশ্চর্য, যেখানে যাবে সেখানেই বকবকানি।
শান্তা ঠোঁটের উপর আঙুল দেখিয়ে বলল,

‘ চুপ থাকেন আপনি। যেখানে সেখানে উকিলতি করতে আসবেন না।

ফারহান ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

‘ আমি তো এমনিতেই রুশা আর রায়ানের বিয়ের উকিল। তাই না রুশা?

রুশা হাসল। বলল,

‘ আমি ও আপনাদের বিয়ের উকিল।

পেছন থেকে পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে আসল।

‘ আমি।

সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। রুশা চোখ কপালে তুলে বলল,

‘ আমি করেছি। আপনি কখন করলেন?

রায়ান রুশাকে কিছু বলল না। সে কথা বলেনা যার তার সাথে। শান্তাকে বলল,

‘ ভাবি তুমি বলো তোমাদের বিয়ের উকিলাতি কে করেছে? আচ্ছা ভাইয়া তুমি বলো। আমার বিয়ের উকিলাতি তুমি করেছ, তোমার বিয়ের উকিলাতি আমি করেছি। অ্যাম আই রাইট অর অ্যাম আই রং?

ফারহান বলল,

‘ রাইট এন্ড রং। তুই ও রুশা ও। কার নাম বলব আমি?

রায়ান তিরস্কার সুরে বলে,
‘ রুশা? এখন রুশার নাম হয়ে গেল? ও কি আসলেই কোনো কাজের?

রুশা মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ না আমি অকর্মা। আর আপনি তার বর। লজ্জা করেনা এভাবে বলতে?

ফারহান বলল,
‘ তোরা এখানে ও ঝগড়া? আমি নেই এরমাঝে। আমি যাই।

শান্তা বলল,
‘ আমিও যাই। তোরা ঝগড়া কর। তোদের তো আর কোনো কাজকাম নাই।

রুশা ভেংচি কেটে বলল,
‘ আহারে তোমার যত রাজ্যের কাজ।

শান্তা হেসে যেতে যেতে বলল,
‘ তোর বাসুরকে জ্বালানো, এটাই আমার মেইন কাজ বুঝলি।

রায়ান বিড়বিড় করে বলল,
‘ আর আমার মেইন কাজ নাই বা বললাম।

রুশা বলল,

‘ কি বললেন?

রায়ান চেহারায় কাঠিন্যেতা ফুটিয়ে বলল,

‘ কিছুনা। তোমার সাথে কিসের কথা?

রুশা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,

‘ আমার ফোন পাচ্ছিনা। আপনি নিয়েছেন না?

রায়ান বলল,

‘ ফোন দিয়ে তোমার কাজ কি? তোমার কাছে ফোন থেকে ও নেই।

রুশা বলল,

‘ বারবার এক কথা বলে খোঁচান কেন?

রায়ান বলল,

‘ খোঁচাব না কেন?

রুশা বলল,

‘ আপনি আমার সাথে একদম কথা বলবেনা।

রায়ান হাসল। বলল,

‘ আমি ও বলিনা।

_____________

এত লোকজনের ভীড়ে রুশাকে আর কোথাও দেখল না রায়ান। খাওয়া দাওয়া হলো। ধীরে ধীরে লোকজন কমল। রায়ান হাই হাই তুলতে তুলতে বলল,

‘ বউটা গেল কই? এই মহারাণীর এত রাগ কেন? উফফ জ্বালা!

শান্তাকে দেখা গেল। রায়ান বলল,
‘ রুশাকে দেখেছ?

শান্তা ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ তোমার বউ তুমি খোঁজ রাখোনা? আমি রাখব?

রায়ান মাথা চুলকে বলল,

‘ আরেহ রাগ টাগ করেছে। একটু ডেকে দাও তাড়াতাড়ি আসতে বলো।

শান্তা মুখ ভাঙাল।

সবাই ঘুমিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ধীরে ধীরে। রুশা রুমের দরজার সামনে গিয়ে থমকে গেল। সে যাচ্ছে কেন? ওই লোকটার সাথে তার তো ঝগড়া হয়েছে ভীষণ। কথায় কথায় তাকে খোঁচায়। রুশা ওড়নার ধরে ঝাড়ল। মুখ মুছল। দরজার দিকে এগোনো হাত নিচে নামিয়ে, আবার ফিরতে পথে হাঁটা ধরতেই হাত মুখ চেপে ধরে কেউএকজন তাকে টেনে ডুকিয়ে ফেলল। রুশা আওয়াজ করলেও তা বের হতে পারল না। দেয়ালে চেপে গেল সে। দেয়ালে এক হাত দিয়ে তার দিকে ঝুঁকে পড়া ছেলেটিকে দেখে তীব্র রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। হাত ছোড়াছুড়ি করে সে বলল,

‘ আপনার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে না? ছাড়েন।

রায়ান হাসল। বলল,

‘ ঝগড়া ছাড়া কি চলে? নাকি বউ ছাড়া?

রুশা বলল,

‘ চলে। শুধু শুধু গায়ে পড়ে ঝগড়া করেন। আবার নিজে নিজে রাগ করেন।

রায়ান হাসল। বলল,

‘ ম্যাডাম ঝগড়া থামান। একটু চোখ দুটো বন্ধ করুন। সারপ্রাইজ আছে।

রুশা বলল,

‘ কি?

‘ বলে দিলে কি সারপ্রাইজ থাকে? চোখ বন্ধ।

রুশার তর সইছেনা। চোখ বন্ধ করে বলল,

‘ খুলি?

রায়ান বেশকিছুক্ষণ পর জবাব দিল,

‘ ইয়াহ, সিউর।

রুশা পিটপিট করে চোখ খুলল। আপনাআপনি চোখ দুটো বড় হলো। মুখ কাঁদোকাঁদো হলো।

‘ আপনি আমার ডায়রিটা কোথায় পেয়েছেন?

রায়ান ঠোঁটের কোণায় মৃদু হাসি ঝুলিয়ে বলল,

‘ আমার প্রোপার্টি। আমার তো পাওয়া উচিত। তাই নয় কি?.

রুশা শুকনো ঢোক গিলল।
‘ পড়ে ফেলেছেন?

‘ উপন্যাস তো লিখোনি যে পড়তে সময় লাগবে। প্রেমকথন লিখেছো কেউ একজনকে ঘিরে। ব্যস পড়া হয়ে গিয়েছে।

রুশা নতবদন হয়ে গেল। কি লজ্জা। আল্লাহ! ছেলেটা সব জেনে গিয়েছে। এখন?

রায়ানের ঠোঁটের কোণায় দুষ্টুহাসি। রুশা চোখ তুলে বলল,

‘ আমি একটু ও ভয় পাইনা। বরং সাহস পাচ্ছি।

রায়ান হেসে ফেলে বলে,

‘ আচ্ছা?

রুশা একটু পিছু হেঁটে বলে,

‘ জ্বি।

রায়ান আর ও এক পা এগিয়ে বলে,

‘ পিছু হাঁটছেন কেন ভীতুর ডিম?

রুশা থমকে গেল। আটকে গেল আবার ও দেয়ালে। রায়ান এবার মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ফিসফিস করে জানতে চাইল ,

‘ কাউকে কখন ও ভালোবেসেছ কি?

রুশা টলমলে চোখে হাসল। বলল,

‘ ভেসেছি তো । বাসি ও । বাসব ও ।

আলগা করে বন্ধ করা জানালার ফটক দিয়ে জ্যোৎস্নার টুকরো টুকরো আলো রাঙিয়ে দিল ঘরটিকে। রুশার কপাল জুড়ে লেপ্টে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো সযত্নে গুছিয়ে দিল রায়ান। ললাটের একপাশে দীর্ঘ ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,

আমি পড়েছি, ডুবেছি,মরেছি এই মেয়েটির প্রেমে এক দেখায়। সত্যি বলছি, এক দেখায়।

সমাপ্ত

বিঃদ্রঃ_ কি লিখেছি নিজেও জানিনা। লেখালেখিতে মন বসছেনা। যার কারণে মন কেমনের বৃষ্টি বোনাস পার্ট লিখতে পারছিনা। হুট করে একদিন লিখে ফেলব। খুব দেরী নেই। হয়ত আজ নয়ত কাল কিংবা পরশু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here