#এক_চিলতে_রোদ।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৭

আগুন বসে আছে একটা অচেনা জায়গায়।কেন আসছে এখানে তা জানে না। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে তার বুকে চুরি মেরে দিল……….

আগুন চিৎকার করে ওঠল।আগুনের চিৎকারের শব্দ শুনে নার্স আর তানজি দৌড়ে গেল।তখন আগুন বসে আছে।নার্স আগুনকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করার কারণ কি?

আগুনঃখারাপ স্বপ্ন দেখেছি।কেউ আমাকে চুরি আঘাত করেছে।

আগুনের কথা শুনে নার্স বুঝতে পারল আগুন প্রচুর ভয় পাইছে।এখন আগুনের পাশে থাকতে হবে। আগুন চারপাশে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।বিকালে ঘুমিয়ে ছিল।ওঠে ফ্রেশ হতে চাইলে দেখে পায়ের ব্যথা কমে গেছে।কয়েক দিন পায়ে অনেক ব্যথা ছিল তাই হাঁটতে পারে নি কিন্তু এখন পায়ের ব্যথা একদম কমে গেছে।আগুন পায়ে হেঁটে ফ্রেশ হয়ে এলো।তানজিকে চা দিতে বললো একটু পর সে চা নিয়ে এলো।

খাবার খেতে বসে আগুন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল..
আগুনঃ বাবা আমি কি পড়াশুনা করি নাকি জব করি?

আগুনের কথা শুনে তার বাবা অনেক অবাক হয়ে গেল হঠাৎ এমন প্রশ্ন করবে আগুন তিনি বুঝতে পারেন নি।কথাগুলোর এড়ানোর জন্য তার বাবা আগুন কে বলল..

— তুমি এসব পরে জানবে আগে ডিনারটা করে নাও ভালো মতো রেস্ট নাও ভাল হয়ে যাও তারপর এসব নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।

আগুন বুঝতে পারল তার বাবা তাকে এখন কিছু বলতে চাচ্ছে না তাই সে নিরবে খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল। প্রিয় ডাইরিটা নিয়ে আগুন কাঁপা কাঁপা হাতে লিখে ফেলল “বাবাকে পড়াশোনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করছিলাম কিন্তু তিনি কিছুই বলেন নি কথা গুলো এড়িয়ে চললেন।”

দূর্ঘটনার পর থেকে আগুন বিশেষ কিছু শুনলে তা লিখে রাখে নিজের ডাইরিতে। ঘরে বসে আরো সাত দিন কাটিয়ে দিলো।এখন আর নার্স নেই।বাসায় কাজের মেয়েটা, তার বাবা আর ড্রাইভার থাকে।আগুন এখন পুরোপুরি সুস্থ তবে মাথার দাগটা যায় নি।হয়তো সেটা কখনো যাবেও না।

রাতে খেতে বসে চিন্তা করলো এখন একটু বাইরের জগৎ টা ঘুরে দেখা দরকার। তাই আগুন বাবাকে বললো…

আগুনঃবাবা অনেক দিন তো বাসায় বসে আছি।এখন বাইরের পরিবেশ টা একটু ঘুরে দেখতে চাই।
–না এখনো তোমার শরীর পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।আগে সুস্থ হও তারপর বাইরে যাবে।
আগুনঃআমি এখন ঠিক আছি চিন্তা করো না।আমার আর কোনো সমস্যা হবে না।

আগুনের বাবা বার বার না না না বলে যায় কিন্তু আগুন বাইরে যাওয়ার জন্য অনেক জোর কাঁটায়। শেষে এক প্রকার বাধ্য আগুনের বাবা আগুনকে বাইরে যেতে অনুমতি দেয়।সাথে আগুনের বাবা একটা শর্ত দেয় আগুন কে।সেটা হল আগুন যতক্ষণ বাইরে থাকবে ততক্ষণ তার সাথে তিন জন লোক থাকবে যা জানা দরকার কিংবা যে কোনো জিনিস দরকার হলে তা আগুনের সাথে থাকা লোক গুলোর থেকে নেবে। আগুন চুপচাপ রাজি হয়ে হয়ে গেল।কারণ অনেক জোর করার পরে সে বাইরে যেতে পারবে তাই আর কোনো জোর না করে বাইরের জগৎ টা দেখতে রাজি হয়ে গেল।খাবার শেষ করে রাতে ঘুমিয়ে গেল।

আবারো এক দুঃস্বপ্ন দেখে আগুনের ঘুম ভেঙে গেল।সে স্বপ্ন টাও আগের মতো একটা মেয়ে তাঁকে বেঁধে রেখেছে আর তার হাতে চাকু দিয়ে আঁকছে।অসহ্য ব্যথায় আগুন চিৎকার করে ওঠে ভেঙে যায় ঘুম।পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে নিমিষেই পানি খেয়ে নেয়।অনেক জোরে শ্বাস নিতে থাকে।চারপাশে তাকিয়ে দেখে একটু অন্ধকার। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত দুইটা বাজে।আগুন ওঠে বসল আর বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিছু সময় পর আবার ঘুম পেতে শুয়ে পড়ল।

সকালে তানজির ডাকে ঘুম ভেঙে যায় আগুনের। চোখ মুছতে মুছতে ঘুম থেকে ওঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে তানজি চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আগুন তানজির হাত থেকে চা নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে পড়ে।তানজি আগুনের রুমটা গোছাচ্ছে।বেলকনি থেকে আগুন তানজিকে ডাক দেয়। তানজি গিয়ে আগুনের পাশে দাড়াতে চায়ের কাপটা তানজির হাতে দিয়ে বলে,”বাবাকে বলবি আমি একটু পর বের হচ্ছি।”

তানজি নিচে গিয়ে আগুনের বের হওয়ায় কথা আগুনের বাবাকে বলল।আগুনের বাবা ফোন দিয়ে তিনজন লোককে আনলো।সকাল দশটা হতে আগুন রেডি হয়ে বের হলো।বাবার কাছে গেলো….

আগুনঃবাবা আমি বের হচ্ছি আমার সাথে কারা যাবে?
–তোমার সাথে এই তিনজন লোক যাবে।(হাতে দেখিয়ে)
আগুন লোক গুলোকে দেখে অবাক হয়ে গেল কারণ লোক গুলো এক রকম দেখতে।শুধু চেহারাটা ভিন্ন আর পুরো শরীর এক রকম।আগুন লোক গুলোকে দেখে তার বাবাকে বলল….
আগুনঃলোক গুলোকে দেখে তো আমার কাছে এমনিতেই কেউ আসবে না।
–ওরা তোমার বডিগার্ড। তোমার সিকিউরিটির দায়িত্ব ওদের।
আগুনঃকিন্তু আমি তো সিকিউরিটি চাই না।
–তুমি চাও না বলে আমি তোমাকে বিপদে পড়তে দিতে পারি না।
আগুনঃঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করবে।

আগুন নিজের সিকিউরিটি আর গাড়ি নিয়ে বের হলো।তারা কিছু জায়গায় যাবে বলে সিন্ধান্ত নিলো।বিকাল পর্যন্ত ঘুরে আগুনের খুব ভালো লাগলো।আসার সময় হঠাৎ একটা বাচ্চাকে দেখে আগুনের খারাপ লাগলো।বাচ্চা টা পথে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা খুজতেছে।আগুনের অনেক ইচ্ছে হলো ছোট্ট বাচ্চাটার সাথে কথা বলতে কিন্তু সিকিউরিটি গুলো কথা বলতে দিল না।আগুন মন খারাপ করে বাসায় চলে এলো।সারাদিন শেষে বাসায় এসে কোথায় একটু খুশি হওয়ার কথা সেখানে মন খারাপ করে বসে আছে।

রাতে খাবার টেবিলে বসে অল্প খেয়ে ওঠে গেল।যেটা আগুনের বাবার চোখ এড়ালো না।আগুন নিজের রুমে গিয়ে একটা বই হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ল।যখন ঘুম আসে ঘুমিয়ে যাবে…
হঠাৎ তার রুমে কেউ আসলে আগুন বসে পড়ে দেখে বাবা দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশে।আগুন বাবাকে ভেতরে আসতে বলে।আগুনের বাবা ভেতরে এসে আগুনের পাশে বসলো। আগুন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল…
আগুনঃকিছু বলবে বাবা?
–বলতে চাই কিন্তু কিভাবে যে বলি?
আগুনঃবল সমস্যা নেই।
–ঘোরাঘুরি করার পর থেকে দেখতেছি তোর মন খারাপ রাতেও ভালো করে কিছু খেলি না। কি হয়েছে তোর?
আগুনঃ আরে বাবা কি বলো কিছু হয়নি এমনি মন খারাপ।
— এমনি তো আর কারো মন খারাপ হতে পারে না। কি হয়েছে সেটা বল আমি সলভ করবে দিব।
আগুনঃ একটা পথশিশুকে দেখছিলাম। দেখে খুব খারাপ লাগলো তার সাথে কথা বলতে চেয়েও পারিনি। তাই একটু মন খারাপ।
–এটা নিয়ে মন খারাপ করলে কি হবে?পথে কত পথশিশু থাকে ওদের সাথে তো আর কথা বলতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
আগুনঃহ্যাঁ কিন্তু ওই শিশুটা কেমন যেন অদ্ভুত।
–আচ্ছা এসব নিয়ে মন খারাপ করিসনা ঘুমা। গুড নাইট…

আগুনের বাবা আগুনের রুম থেকে চলে গেল। আগুন আবার সাহিত্যের বই নিয়ে পড়া শুরু করলো। একসময় পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে আগুন বাবার কাছে জেদ ধরল পড়াশোনা করে নাকি জব করে জানতে।আগুনের কেন যেন মনে হচ্ছে সে পড়াশোনা করে।কিন্তু কোনো ক্লাসের বই তার কাছে নেই তাই বুঝতে পারছে না।আগুনের বাবা একসময় আগুনকে বলতে বাধ্য হল…
–দেখ তুই পড়াশোনা করিস।কিন্তু এখন আর করতে হবে না।তুই এখন আমার অফিস দেখশোনা করবি।
আগুনঃকিন্তু বাবা পড়াশোনাটা যদি চালিয়ে যায় তাহলে তো সব থেকে বেশি ভালো হয়। নিজেকে চিনতে পারব আর নিজের কাছের মানুষ গুলোকে চিনতে পারব।

আগুনের কথা শুনে তার বাবা চোখ বড় বড় করে আগুনের দিকে তাকাল।আগুন বুঝতে পারল তার বাবা এসব কথা শুনতে পছন্দ করছে না।রেগে যাচ্ছে তাই আগুন আর কোনো কথা বললো না।
আগুনের বাবা অফিসে চলে গেল আগুন বাসায় বসে বসে একাকিত্ব ফিল করছে।হঠাৎ তার মনে হলো তার মা কোথায়?

আগুন তার বাবাকে ফোন দিল বাসায় আসতে আজ কতক্ষণ লাগবে জানতে চাইলো। তার বাবা বিকাল চার টা হবে বলে ফোন কেটে দিল।আগুন বসে রইল আনমনে।বার বার তার মাথায় ঘুরছে তার পরিবারে আর কেউ নাই কেন?মা, ভাই,বোন কেউ নাই কেন?

সারাদিন টা বিষন্নতার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিল।মন খারাপ করে বেলকনিতে বসে বসে দিনের আকাশ দেখছে আগুন।তানজি এসে চা দেওয়ার কথা বললে আগুন দিতে বলে।চা খেয়ে একটু ভালো লাগে তার তাই উপন্যাসের বই নিয়ে বসে পড়ে।বেশ কিছু সময় বই পড়ে নিজের প্রিয় ডাইরিটা হাতে নেয়।কি কি লিখছে সেখানে একটু পড়ে নেয়।

বিকাল চারটা হতে আগুনের বাবা অফিস থেকে আসে।অনেক ক্লান্ত ছিলেন তিনি সারাদিন কাজ শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নেয়।সাথে আগুনও বসে নাস্তা করে। নাস্তা করা শেষ হলে আগুন বাবাকে বলে….
আগুনঃবাবা তোমার সাথে একটু কথা ছিল।
–বল কি কথা?ফোনেও কি যেন বলতে চাচ্ছিলি?
আগুনঃবাবা আমার মা কোথায়? আর আমার ভাই বোন ওরা কোথায়?

আগুনের কথা শুনে তার বাবা মাথা নিচু করে ফেললো।এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তা তিনি বুঝতে পারেন নি।হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে অবাক তো হলেও সাথে মনও খারাপ করে ফেললেন।আগুন বুঝতে পেরে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু তার বাবা কথা ঘুরাতে দেয় নি।

–শুন তাহলে, জানতে যখন চেয়েছিস না বললে ভুল হবে।
আগুনঃবাবা তোমার কষ্ট হলে বলতে হবে না।
–না কষ্ট হবে কেন?শুন তোর মা আর একটা ভাই ছিল একটা সড়ক দুর্ঘটনায় তারা দুই জন মারা যায়। তোর এসব মনে নেই কারণ তোর পুরো মেমোরি লস হয়ে গেছে।

এই বলে আগুনের বাবা মাথা নিচু করে ফেললেন।আগুন আর বসে না থেকে বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।বাবার কাঁধে হাত দিয়ে বলল…
আগুনঃবাবা মন খারাপ করো না।আমার মতো মনে পড়ে না মা কেমন ছিল ভাই কেমন ছিল।এসব নিয়ে একদম মন খারাপ করো না।
–হুম।আচ্ছা তুই আমার অফিসে যাবি?
আগুনঃআমিও তাই ভাবছি বাসায় একা বসে থাকতে আর ভালো লাগে না।বাইরেও যেতে পারি না।
–তাহলে কাল থেকে অফিসে যাবি।
আগুনঃকিন্তু বাবা আমি আগে পড়াশোনার বিষয়টি শেষ করতে চাই।
–আচ্ছা। তাহলে কাল অফিসে না গিয়ে একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যা।চাইলে আমাদের পাশের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারিস ওখানকার প্রিন্সিপাল আমার বন্ধু হয়।
আগুনঃতাহলে তো ভালোই।সেখানেই ভর্তি হয়ে যায়।
–ওহ হ্যাঁ তিনজন গার্ড সারাক্ষণ তোর সাথে থাকবে।

আগুন জানে বাবা তাঁকে এমনি বের হতে দেবে না তাই সে রাজি হয়ে গেল।পরের দিন সকালে ওঠে ভার্সিটিতে গেল।আগুনের বাবা প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে রাতে কথা বলে সব ঠিক করেছে। আগুন প্রিন্সিপালের রুমে গেল।একটা ফরম পূরণ করল।শেষে সাইন করতে গিয়ে বেঁধে গেল বিপত্তি। আগুন নিজের নামের প্রথম অক্ষর না দিয়ে আর (R) দিয়ে সাইন করে বসল।সে নিজেও অবাক তার নাম আগুন চৌধুরী কিন্তু সাইন করতে গিয়ে এটা কি করল।

ভার্সিটির কাজ শেষ করে আগুন বাসায় চলে এলো।কাল থেকে ভার্সিটিতে যাবে।সারাদিন বিভিন্ন জিনিস কিনতে কিনতে পার করে দিল।বই থেকে শুরু করে কাপড়, জোতা সব। শপিং শেষ করে বের হতে একটা মেয়েকে দেখে আগুনের কেমন যেন পরিচিত মনে হয়।মেয়েটা আগুনকে খেয়াল করে নি।যখনই আগুন গাড়িতে ওঠতে গাড়ির দরজা খুলল তখনই মেয়েটা আগুনকে দেখে।

মেয়েটা অন্য কেউ নয় রিহি ছিল।রিহি আগুনকে এই অবস্থায় দেখে অবাক।কিন্তু কিন্তু বলতে পারছে না।রিহি ঠাঁই দাড়িয়ে রইল কিন্তু আগুন নিজের গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
আগুন চলন্ত অবস্থায় লক্ষ্য করল মেয়েটা আগুনের দিকে তাকিয়ে আছে।আগুনের ইচ্ছে করল মেয়েটার সাথে কথা বলবে।

#To_be_continue…….
#RK9023DXWC
#অনুমতি_ছাড়া_কপি_করা_নিষেধ।
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here