#এক_চিলতে_রোদ।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০২

রবির ঘুম ভেঙে গেলে সে বুঝতে পারে জ্বর এখন কমেছে। না ঘুমানো আর দীর্ঘ সময় ভেজার কারণে জ্বর এসেছে। অহনা মায়ের সঙ্গে কথা বলছিল ঠিক সে সময় রবি অহনাকে ডাক দেয়।

রবির ডাক শুনে অহনা মাকে বলল”মা আপনার ছেলে ঘুম থেকে ওঠে গেছে মনে “মা তখন অহনাকে আসতে বলে।অহনা রবির কাছে এলো।রবি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হচ্ছে তখন।রবি এসে বিছানায় বসতে অহনা রবির কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কি না দেখল।কিন্তু এখন আর জ্বর তেমন একটা নেই।রবি অহনাকে বলল….
রবিঃমায়ের সাথে দেখা করেছ?
–হুম, তোমার ডাক শুনে তো মায়ের কাছ থেকে এলাম।
রবিঃআপু কিছু বলেছে আর?
–আপু তোমার হয়ে আমাকে সরি বলেছে।
রবিঃকিন্তু কেন?
–আপু মনে করেছে আমরা ছাঁদে রাত কাটিয়ে দেওয়ায় আমি কষ্ট পেয়েছি তাই।আমিও আপুকে বলে দিছি সেটা আমার ইচ্ছে ছিল।
রবিঃতো আপু নিশ্চয় আমার কথা আরকিছুই বলে নি।
–হুম বলেছে তো বটে।
রবিঃকি বলেছে?
–আপু বলেছে তুমি একমাত্র ভাই তাই তোমার গায়ে কখনো ফুলের আঘাতও করে নি কিন্তু কাল চড় মেরেছে।আবার কখনো শাসনও করেনি।যে কারণে তুমি বিগড়ে গেছ এখন থেকে আপু আমাকে শাসন করেতে বলেছে।

রবিঃহা হা কথাটাই অর্ধেক সত্যি অর্ধেক মিথ্যা লুকিয়ে আছে খুব ভালো বুঝা যাচ্ছে।
–তু তু তুমি কিভাবে বুঝলে অর্ধেক সত্যি অর্ধেক মিথ্যা লুকিয়ে আছে?
রবিঃআমি জানি আপু বললেও কি বলবে।আর যাই বলুক কখনো আমাকে শাসন করার কথা বলবে না।
–ওমমম তাই তো বলি কেমনে ধরে নিলে অর্ধেক মিথ্যা লুকিয়ে আছে।
রবিঃতা বল তোমার শরীর কেমন?
–হুম ভালো কিন্তু…. আর কিছু না বলে অহনা রবির দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে।রবি বুঝতে পারলো অহনা কথাটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিছে।তাই রবি আবার বলল….

রবিঃআমি বলছি কাল থেকে ভার্সিটিতে যেতে পারবে কি না?সারাদিন বসে বসে কি বা আর করবে?
–ওহ তাই বলো।আমি আরো কি না কি ভাবছি।
রবিঃআমি জানি তুমি কি ভাবছ।এখন চলো নিচে যায় বাসার মানুষ ছাড়া কেউ তো আর নেই না?
–না কেউ নেই মা,আপু আর রিফা আছে।(রিফা কাজের মেয়ে)
রবিঃওকে চলো মায়ের কাছে যাব।আর হ্যাঁ তুমি পড়াশোনা করবে এই বিষয়ে মাকে জানাতে হবে।মা রাজি না হলে হবে না।
–ওকে চলো।

রবি আর অহনা মায়ের রুমে গেল।সেখানে বসা ছিল আপু আর রিফা।রিফা কি যেন গোছাচ্ছে আর আপু মায়ের সাথে কথা বলছে।রবি মায়ের রুমে যেতেই আপু রুম থেকে বের হয়ে গেল।যেটা রবির খুব খারাপ লাগলো।রবি চেয়ে রইল আপুর চলে যাওয়ার দিকে।আপু একবারও পেছনে তাকালো না।সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

রবি আর অহনা মায়ের দুই পাশে বসল।রবি মায়ের ডান পাশে আর অহনা বাম পাশে বসে পড়ল।রবির মা তাদের দেখেই বুঝতে পারল তারা কিছু বলতে চাই।তাই মা জিজ্ঞেস করল….
মাঃকিছু বলবি নাকি?
রবিঃহ্যাঁ মা।
মাঃবল কি বলবি?
রবিঃআমাদের পড়াশোনা তো এখনো শেষ হয় নি তাই ভাবছি আমি ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি পড়াশোনা করব আর অহনাও পড়াশোনা করবে। যদি তুমি অনুমতি দাও তাহলে আমরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।
মাঃআচ্ছা তোরা যা আমি ভেবে দেখছি।

রবি জানে মা এখন আপুর সাথে এটা নিয়ে কথা বলবে আর আপু রাজি হলে মা পড়াশোনা করতে দেবে। আর রাজি না হলে পড়াশোনা করতে দেবে না।রবি আর অহনা নিজেদের রুমে চলে গেল।রুমটা খুব অগোছালো তাই অহনা রুমটা গুছিয়ে নিলো।রবি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রাশেদ পনেরোটা কল দিছে সকাল থেকে।রবির বুঝতে বাকি নেই এখন রাশেদের সাথে দেখা করতে হবে। দেখা করলেও বিপদ না করলেও বিপদ। দেখা করলে কিল ঘুষি খেতে হবে আর দেখা না করলে রাশেদ রবির সাথে রাগ করবে।শেষে দেখা করার সিন্ধান্ত নিলো।তাই রবি রাশেদকে ফোন দিল।প্রথম ফোন কেটে দেওয়াতে রবি বুঝতে পারল রাশেদ তার উপর রাগ করেছে।

দ্বিতীয় বার ফোন দিলে রাশেদ ফোন ধরে আর বলে সে ভার্সিটিতে ক্লাস করছে পরে কথা বলবে।রবি বুঝল তার উপর রাশেদ রাগ করে নি।ক্লাস করছে তাই কেটে দিছে।

রবি চিন্তা করলো আজ তো রাশেদকে ট্রিট দেওয়ার কথা তাহলে বিকালে তার সাথে দেখা করতে হবে।দুপুরে খেয়ে রবি বিশ্রাম নিলো।অহনা আপু আর মায়ের সাথে আছে।রিফা নিজের কাজ করছে।হঠাৎ রাশেদ ফোন দিলো রবি ফোন ধরে বললো বিকালে রাশেদের সাথে দেখা করবে আর ট্রিটটা দিয়ে দেবে।

বিকাল হতেই রবি রেডি হয়ে গেল।অহনা ছিল পাশে রবি কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে বলে রাশেদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। অহনা তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলে।রবি নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসতেই আপু সামনে পড়ে গেল। এবারো আপু রবিকে কিছু না বলে নিজের মতো করে চলে যেতে লাগলো।এবার রবি রেগে গেল।সাথে সাথে আপুর পেছনে তার রুমে গেল।আপু নিজের রুমে গিয়ে বসে পড়ল।রবি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু এখনো আপু কিছু বলছে না।তাই রবি বলে ওঠল…..
রবিঃকি হয়েছে তোমার সেই কাল রাতে চড় মারার পর তো কোনো কথায় বলছ না?
আপুঃকি বলব আমি আর তুই আমার কথা কি বা শুনিস?
রবিঃদেখ আপু তুমি একটু বেশি বলে ফেলছ কাল রাতের ঘটনার পর থেকে তুমি অদ্ভুত আচরণ করতে লাগলে বিষয় টা আমার খুব খারাপ লাগতেছে।আর তুমি জান তোমার সাথে কথা না বললে আমার সারাদিন যেন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়। একটু ভালো করে কথা তো বল।
আপুঃকোথায় যাচ্ছিস?
রবিঃরাশেদ ফোন দিছে তার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। ঐ দিন তোমাকে রাশেদ বলেছিল আমার আর অহনার ব্যাপরটা তাই সে নাকি ট্রিট নেবে।তাই যাচ্ছি।
আপুঃএকা কেন অহনাকে সাথে নিয়ে যা।
রবিঃকালকে বিয়ে করলাম আর আজকে ঘুরতে নিয়ে যাব ব্যাপারটা তোমাদের সমাজ একটু ভিন্ন চোখে দেখবে না?
আপুঃসমাজ বলতে কিছু নেই।সবটা লোক দেখানো।ক্ষমতা যদি তোর হাতে থাকে তাহলে তুই যেটা করবি সেটাই সমাজে স্বীকৃতি পাবে।আর সাধারণ কেউ একটু ভুল করলে সেটা সমাজ অপরাধ ধরবে।তাই সমাজে কথায় নিজেকে চালাতে পারবি না।নিজে নিজের মতো করে চল।
রবিঃতো এখন কি অহনাকে নিয়ে বের হব?
আপুঃহ্যাঁ অহনাকে নিয়ে ঘুরে সন্ধ্যার আগে চলে আসবি।
রবিঃচলো তুমিও যাবে আমাদের সাথে।
আপুঃআরে আমি কেন যাব?তোরা যা আমি যেতে পারব না।আর মা এখানে মাস খানেক থেকে নাকি আবার গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে।
রবিঃতাহলে অহনার সাথে মাকেও নিয়ে যায়?
আপুঃতোর মাথায় বুদ্ধি বলতে কিছু নেই?তোরা একে অপরকে সময় দিতে যাবি রোমাঞ্চ করবি সেখানে আমরা কেন যাব?
রবিঃকিছু বলব না।
আপুঃকিছু বলতে হবে না এখন অহনাকে নিয়ে বের হয়ে ঘুরে আয়।দুই জন দুই জনকে বুঝে নেয় ভালো করে।
রবিঃআচ্ছা বল তুমি এখনো আমার সাথে রাগ করে আছ নাকি?
আপুঃআমি কেন রাগ করব?চড় টা কি আমি খেয়েছি।চড় খেয়েছিস তুই রাগ করার কথা তোর তাহলে আমি কেন রাগ করব?বরং আমার দরকার তোর রাগ ভাঙানোর।
রবিঃতাহলে এতক্ষণ ধরে কথা বল নাই কেন আমার সাথে?
আপুঃএকটু বাজিয়ে দেখলাম আরকি।
রবিঃতুমিও না পার বটে।(হেঁসে)
আপুঃদেখতে হবে না কার বোন?

আপু আর রবি দুই জন হেঁসে ওঠল। রবি আপুকে আবার বলল…

রবিঃতো বল অহনার সাথে আমার বিয়ে দিলে তুমিও কিছু চাইবে বলছিলে আমার কাছ থেকে সেটা কি?
আপুঃপরে চেয়ে নেব যখব তোর দেওয়ার মতো ক্ষমতা থাকবে।চাইলে এখনো দিতে পারিস কিন্তু আমি এখন নেব না।পরে মূল্য যখন তুই বুঝবি তখন বলব আমি কি চাই।
রবিঃওকে সেটা না হয় পরে দেখা যাবে।এখন বল সন্ধ্যায় আসার সময় তোমার জন্য কি আনব?
আপুঃকিছু আনতে হবে না।পারলে মায়ের জন্য কিছু আনিস।
রবিঃমায়ের জন্য তো আনবই তোমার জন্য কি আনব তাই বল।
আপুঃতোর যা মন চাই আনিস।
রবিঃওকে আসছি তাহলে।

আপুঃঅহনাকে নিয়ে যা মনে করে।

রবি আপুর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল।রবি বাইরে বসে অহনা আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।আর আপু গিয়ে অহনাকে রেডি করে নিলো।অহনা রবির সাথে মিলিয়ে শাড়ি পড়েছে।অহনা আর আপু একসাথে গেইটের বাইরে এলো।রবি অহনার দিকে তাকিয়ে যেন হারিয়ে গেল কোনো অজানা কল্পনার রাজ্যে।আপু রবির দিকে তাকিয়ে হাসছে তো বটেই কিন্তু সেদিকে রবির কোনো লক্ষ্য নেই।সে এক পলকে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে।অহনা রবির এমন অদ্ভুত চাহনি দেখে লজ্জা পেলে।কিন্তু আপুর সামনে কিছু বলতে পারছে না।

রবির দেরি হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।আপু রবিকে কি যেন বলছে কিন্তু সেসবেও তার খেয়াল নেই।আপু খুব ভালো করে বুঝতে পারল রবি অহনার মাঝে হারিয়ে গেছে পাশে বোমা পালটালেও সে বুঝতে পারবে না।তাই আপু গিয়ে রবির গায়ে হাত দিতে রবি নড়ে ওঠল আর লজ্জাও পেলো।
দেরি হচ্ছে ভেবে আপু আর কিছু বলল না। রবিকে যেতে বলল।অহনা আর রবি পাশাপাশি হেটে গেইটের বাইরে গেলো।একটু দূরে একটা রিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রবি রিকশাটা ডাক দিল।

দুইজন রিকশায় বসে আছে, রিকশা তার আপন গতিতে চলছে রিকশা ওয়ালা মামাকে বলে দিল কোন জায়গায় রিকশা নিতে হবে।রবি অবাক নয়নে মুগ্ধ চেহারায় তাকিয়ে আছে অহনার দিকে। মন চাচ্ছে অহনার হাতটা একটু ধরতে কিন্তু সাহস যেন ততটুকু নেই।অহানর হাতটা ধরবে বলে একটু হাতটা তুলল তো কেন যেন আবার নামিয়ে ফেলল।অহনা বুঝতে পারলো রবি তার হাত ধরতে চাচ্ছে কিন্তু লজ্জায় পারছে না।অহনা রবির কানে কানে বলল…”বউয়ের হাত ধরতে এত সংকোচ কেন হু”

অহনা নিজেই রবির হাত ধরে বসল।রবি একটু শক্ত করে অনহার হাত নিজের হাতে চেপে ধরল।যেন এই হাত ভুলেও কখনো ছাড়তে না হয়।বাঁধা আসুক কিংবা ঝড়।যাতে ছাড়তে না হয় এই হাত।রবির মন চাচ্ছে রিকশাটা আজীবন এভাবে চলুন পাশে অহনা এভাবে রবির হাত ধরে বসুক।এই চলা যেন শেষ না হয় কখনো, রিকশার চাকা যেন থেমে না যায়।

এক পলকে রবি তাকিয়ে আছে অহনার দিকে অহনা রবির দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসছে যার কোনো আওয়াজ নেই,মুখে আছে কেবল হাসির ছাপ।অহনা রবিকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। অপর হাতটা রবির হাতে রেখে দিলো।

হঠাৎ রিকশা থেমে যেতেই রবি নড়ে ওঠল। সামনে তাকিয়ে দেখে রাশেদ দাঁড়িয়ে আছে।রবির হালকা একটু খারাপ লাগলো রিকশা থেমে যাওয়ায় তবুও কাউকে বুঝতে দিল না।রিকশা ভাড়া দিয়ে হাঁটা শুরু করল তিন জন।রাশেদ একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো সাথে রবি আর অহনা।তারা খাবার অর্ডার করলো তিনজন মিলে পেট পুরে খেল।
রবিঃতাহলে তোর ট্রিট পাওয়া তো শেষ এবার চল বাসায় যায়।
রাশেদঃএকটু ভুল বলছিস ট্রিট পাওয়া তো মাত্র শুরু। আর হ্যাঁ বাসায় আমি একা যাব তোরা নয়।তোরা এখানের পাশের পার্কে গিয়ে ঘুরে আয় ভালো লাগবে।
অহনাঃকথাটা তুমি ভুল বল নি রাশেদ।
রবিঃওকে তুই যা তাহলে আমরা পরে আসব নে।

রাশেদ,অহনা,আর রবি তিনজন একই ভার্সিটিতে একই ক্লাসে পড়ে।তাই ওরা আগে থেকে পরিচিত।

রাশেদ চলে গেল। অহনা আর রবি এখনো রেস্টুরেন্টে বসে আছে।একটু পর অহনা ওয়াশরুমে গেল।সে সময়টায় রবি বিল দিয়ে দিল।রবি বাইরে এসে একটা মেয়েকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

#To_be_continue…….
#RK9023DXWC
#অনুমতি_ছাড়া_কপি_করা_নিষেধ।
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here