বাসর রাতের পরের দিন সকালে আপু ছাঁদে এসে অবাক।কারণ যাদের বাসর ঘরে থাকার কথা তারা বাসর ঘরে নয় বরং দুই জন কম্বল মুড়িয়ে ছাদের দোলায় বসে ঘুমাচ্ছে। চলুন একটু অতীতের দিকে যাওয়া যাক।
রবি আর অহনার পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।কাল রাতে তাদের বাসর রাত ছিল।দুই জনের ইচ্ছে তে বাসর রাতে গল্প করবে বলে ছাঁদে আসে।রবির আপুও তাতে সম্মতি দেয়। তবে আপু তাদের বলেছিল ছাঁদে বেশিক্ষণ না থাকতে।
(যারা আমার লেখা বেস্ট ফ্রেন্ড যখন বউ গল্পটা পড়েন নি তারা এটা ভালো করে বুঝবেন না।গল্পটা এক পর্বে আছে।সেটা পড়ে নিলে এটা পড়তে ভালো লাগবে।ধন্যবাদ।)
পরে আপু চলে যায় রবি আর অহনা ছাঁদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।একসময় তারা দোলনায় ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে আপু তাদের ডাকতে আসলে দেখে বাসর ঘরের দরজা বাহির থেকে লক করা।তাই আপু ছাঁদে আসে।কিন্তু এখানে এসে দেখে তারা দুই জন এখনো কম্বল মুড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।
আপুর রাগ ওঠে গেল কিন্তু কেউ এদের এভাবে দেখলে অবশ্যই খারাপ ভাববে।আপু রবি আর অহনাকে ডেকে দিল।দুই জন চোখ খুলে যেন আকাশ থেকে পড়ল। রবি ঘুমের ঘুরে বলেই ফেললো…
–কি ব্যাপার ছাঁদ কোথায় গেছি সোজা আকাশ দেখা যায় কেন?
রবির এমন কথা শুনে আপু হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।অহনা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তারাতাড়ি রবির মুখে দিয়ে ডেকে তুলল।রবি ঘুম ভেঙে স্বাভাবিক হয়ে বুঝতে পারে তারা বাসর রাতটা দোলনায় বসে কাটিয়েছে।আপু রবির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রবি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আপুঃকোনো কথা নাই কেন?তোদের বলেছিলাম এখানে বেশিক্ষণ না থাকতে তোরা তো দেখছি সারা রাত এখানে ছিলি আবার এখন ঘুমাচ্ছিস।
রবিঃআপু আসলে কখন ঘুম চলে আসছে বুঝতে পারি নি।(মাথা নিচু আছে)
আপুঃএখন রুমে যা।এখানে লোকজন দেখলে কত কিছু বলবে।তোরা রুমে যা আমি আসতেছি।
রবি কম্বল নিয়ে নিজের বাসর রুমে চলে এলো।সব কিছু কাল রাতের মতোই রয়ে গেল।সাজানো বাসর ঘরটায় যেন কারো স্পর্শ করা হয় নি।রবির সাথে সাথে অহনাও বাসর ঘরে গেল।রবি অহনাকে বলল….
রবিঃকি করতে গিয়ে কি হয়ে গেল বুঝতেই তো পারি নি।
–তো আমি জানতাম নাকি তুমি এভাবে ঘুমিয়ে যাবে।
রবিঃসেটাই তো সমস্যা। এখন আপু এসে যদি ঝাড়ি মারে তখন কি হবে?
–আমি আপুকে সামলে নেব তুমি চিন্তা করো না।
রবিঃওকে বউ(অহনার গাল টেনে)
আপু দরজার বাহির থেকে বলে ওঠল….
আপুঃআসতে পারি?
–তোমার আসতে কি আর পারমিশন নিতে হবে,যখন ইচ্ছে চলে আসবে।
আপুঃআগে তুই একা থাকতি তাই চলে আসতে পারতাম।কিন্তু এখন তো আর পারা যাবে না।বরং এখন তোর রুমে আসাই যাবে না।
–কি যে বল না আপু…
আপুঃতোরা দুই জন এখনই ফ্রেশ হয়ে খেতে আসবি।
–ওকে।
আপুঃওহ হ্যাঁ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
–কি সারপ্রাইজ?
আপুঃকাছে আয় বলছি।
রবি মনে করলো অহনা যাতে না শুনে কি সারপ্রাইজ তা বলবে।তাই রবি আপুর একদম কাছে চলে গেল।সাথে সাথে আপু বসিয়ে দিল রবির গালে একটা চড়।চড় খেয়ে রবি দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম আপু তার গায়ে হাত তুলল।কষ্টও পেল খুব।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।অহনাও আপুর কাছে আসলো।যদি রবিকে আবার মারে সে ভয়ে।
চড় খেয়ে রবি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে জানে আপু কেন তাঁকে চড় দিল।মাথাটা এমন ভাবে নিচু করেছে যে রবির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ার পরেও আপু সেটা খেয়াল করে নি।চড়টা গালে মারলেও আঘাতটা মনে পেয়েছে।
আপুঃজানি জিজ্ঞেস করবি না চড় টা কেন মেরেছি।শুধু এইটা জেনে রাখ একটা মেয়ে তার তার বাসর রাত অনেকটা স্বপ্নের আর অনেকটা আশা পূর্ণ। যেটা তোরা দোলনায় বসে শেষ করেছিস।খুব বড় একটা সময় তোরা মিস করলি।
এরপর আপু অহনার দিকে চেয়ে চলে গেল।রবি এমন কষ্ট সামলাতে না পেরে ওয়াশরুমে ঢুকে ইচ্ছে মতো কান্না করল আর পানিতে ভেজলো।অহনা বুঝতে পেরেছে রবি খুব কষ্ট পেয়েছে আপুর ব্যবহারে।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর রবি ওয়াশরুম থেকে বের হলো।অহনা রবিকে দেখে ভয় পেয়ে গেল।রবির চোখে গুলোতে যেন রক্ত জমাট বেঁধেছে সেভাবে লাল হয়ে গেছে।অহনা দৌড়ে রবির কাছে গেল।রবির দুই কাঁধে হাত দিয়ে ধরে বললো….
–তুমি ঠিক আছ তো?
রবিঃহুম ঠিক আছি।তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।এই সমাজ এই দেশ নয়তো কত কিছু বলবে।
–তুমি বস আমি কফি বানিয়ে আনছি।
রবিঃআমি কফি খাব না।যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।
–তুমি এক মিনিট বস আমি কফিটা নিয়ে আসি।
রবিঃঅহনা…..
অহনা বুঝতে পারল রবি অহনাকে কফির জন্য যেতে দেবে না।তাই সে বাধ্য হয়ে ফ্রেশ হতে গেল।একটু পর সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো।রবি তখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।ইতোমধ্যে তার জ্বর চলে আসছে।অহনা রবির মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারে জ্বরে রবির গা পুড়ে যাচ্ছে।
–তোমার গায়ে তো জ্বর চলে আসছে।
রবিঃসেটা নতুন কিছু না, ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।বস তুমি।
অহনার হাত ধরে রবি অহনাকে টেনে নিজের পাশে বসাল।আর আস্তে আস্তে রবি অহনাকে বলল….
রবিঃআমি জানি না একটা মেয়ের কাছে বাসর রাতটা নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে কিংবা তারা স্বামীর কাছ থেকে কি চাই।আমি শুধু নিজের টা ভেবে গেলাম তোমারটা মোটেও ভাবিনি সরি অহনা।
–কি বলছ তুমি এসব।শুন সবাই কি চাই তা তারা জানে কিন্তু আমি যা চাই আর যা চেয়েছি তোমার থেকে তা আমি পেয়েছি।
–কি পেয়েছ তুমি?কিছুই পাও নি।বাসর রাত দোলনায় বসে শেষ করে দিলাম।এটা তোমার জন্য অনেক কষ্টের ছিল জানি।যেটা আমি আগে বুঝতে পারি নি।
–আরে কি বল এসব।সত্যি আমি চেয়েছি বাসর রাতটা একটু অন্য রকম হবে। সবার মতো কেন হবে আমার বাসর রাত?আমিও চেয়েছি বাসর রাতে স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে আকাশের তাঁরা গুনতে। যেটা আমি পেরেছি।সবাই কিন্তু এমনটা চাইলেও পারে না।তাদের স্বামীদের শারীরিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেক স্ত্রী বাসর রাত নিয়ে সাজানো স্বপ্ন গুলোর কথা ভুলে যায়।শেষে তারা বাধ্য হয়ে নিজেদের কোনো ভোগের পণ্য মনে করে স্বামীর চাহিদা মেটাতে ব্যস্থ হয়ে পড়ে।আমি কিন্তু মোটেও তেমনটা নয়।মন খারাপ করো না।
রবি অহনার কথা শুনে খুব খুশি হলো।মেয়েটা খুব সুন্দর করে কথা গুলো বললো।আসলেই তো একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছে বাসর রাতে কি চাই তা সব স্বামী জিজ্ঞেস করে না।নিজেদের শারীরিক চাহিদা মেটাতে ব্যস্থ হয়ে পড়ে।কখনো মনে হয় না জিজ্ঞেস করে মেয়েটা আসলে কি চাই।
রবি অহনার কাঁধে হাত রেখে অহনাকে কিছুটা নিজের দিকে নিয়ে এসে বলল….
রবিঃজান আমার মনে হচ্ছে পৃথিবীর স্রেষ্ঠ স্ত্রীদের মধ্যে তুমিও একজন।
–তাই না(নাক টেনে)
রবিঃহুম তাই।চলো নাস্তা করে আসি।
–না তোমাকে যেতে হবে না, তুমি এখানে থেকো আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
রবিঃতুমি নাস্তা আনতে গেলে অনেকে অনেক কিছু বলবে।আর বাসায় অনেক মেহমান আছে।তোমাকে যেতে হবে না।
–তাহলে আপু আসলে আপুকে আনতে বলব।
রবিঃবলতে হবে না।আপু এমনি নিয়ে আসবে।
রবি আর অহনা কথা বলছিল ঠিক ঐ সময় আপু তাদের রুমে এলো।এসে অহনার দিকে চেয়ে বললো…
আপুঃতোমরা খেতে আসবে না?
–আসলে আপু রবির…
অহনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রবি অহনার হাত ধরে ফেললো।অহনা বুঝতে পারল রবি চাই না তার জ্বরের কথা আপু জানতে পারুক।তাই তো আপুকে দেখতে রবি বিপরীত দিকে ঘুরে গেল।
আপুঃকি হয়েছে ওর?(অহনাকে জিজ্ঞেস করল)
–জ্বর আসছে তাই বলছি ওর খাবারটা এখানে নিয়ে আসি।
আপুঃতোমাকে আনতে হবে না তুমি বস আমি তোমাদের খাবার নিয়ে আসছি।
আপু খাবার আনতে চলে গেল।এই দিকে রবি অহনার দিকে তাকিয়ে আছে।অহনা মাথা নিচু করে ফেললো কারণ রবি চেয়েছিল তার জ্বরের কথা আপু না জানুক কিন্তু অহনা বলে দিল।
রবিঃমাথা নিচু না করে আমার দিকে তাকাও বলে যখন দিছ তখন আর কিছু করার নেই।কাছে এসো।
অহনা রবির আরেকটু কাছে গিয়ে বসল।রবি অহনার বাম হাত ধরে বললো….
রবিঃতা এখন কি পড়াশোনা করবে নাকি ছেড়ে দেবে?
–তুমি যেটা ভালো মনে কর তাই হবে।
রবিঃতাহলে পড়াশোনা চালিয়ে যাও। আর আমিও জব করবো সাথে পড়াশোনাও চলবে।
–তুমি জব খুঁজবে?
রবিঃআমি জব খুঁজব কেন, জব নিজে আমাকে খুঁজে নেবে।
–মানে ঠিক বুঝলাম না।
রবিঃআমাদের একটা ব্যবসা আছে।আপু আর আমি সেটা দাঁড় করিয়ে ছিলাম।তো এখন আমি কিছু টা সময় সেখানে দেব ভাবছি।বসে বসে আর কত খাব বল।
–তাহলে তো খুব ভালো।
আপুকে খাবার আনতে রবি বেলকনিতে চলে গেল।রবি আপুকে এড়িয়ে চলছে মাত্র একটা কারণে সেটা হচ্ছে তার চেহারা দেখলে আপু বুঝতে পারবে সে অনেক সময় ধরে ভিজেছে।আপু রবির দিকে চেয়ে চলে গেল।রবি আবার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। অহনা এক প্লেটে খাবার গুলো নিলো।নিজে না খেয়ে রবির মুখে তুলে দিল।ঠিক রবিও তাই করল।কাঁপা কাঁপা হাতে অহনাকে খাইয়ে দিল।রবি কয়েক লোকমা খেয়ে পানি খেয়ে নিল।শরীরে জ্বর রেখে তো আর খাওয়া যায় না। অহনাকে খাইয়ে দিল।
খাবার শেষ হলে অহনা ঔষধ বের করলো।অহনা জানতো ঔষধ কোথায় রাখা আছে।রবিকে ঔষধ খাইয়ে দিল।রবি আবার কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়ল মাথাটা যেন খুব ভারী হয়ে আছে তার।
অহনা খাওয়ার পরে প্লেট গুলো নিয়ে বের হতে যাবে তখন আপু আসলো।অহনার হাত থেকে প্লেট গুলো নিয়ে বললো…
আপুঃশুন অহনা সে আমার একটি মাত্র ভাই কখনো তাঁকে ফুলের আঘাতও করে নি। কিন্তু কাল চড় মারলাম। তুমি ওর কথায় বা আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি তার হয়ে তোমাকে সরি বলছি।
–আরে আপু কি বলেন এসব?আমরা তো এমনটা চেয়েছি।সত্যি বলছি সবার মতো বাসর রাত করতে আমরা চাইনি।
আপুঃহুম।আর শুন ঔষধ খাইয়ে দিও তাঁকে।তোমাদের কিছু লাগলে আমাকে বলবে।আর একটু পর সবাই বের হয়ে যাবে বাসা থেকে তখন তুমি যেখানে ইচ্ছে যেতে পারবে এখন একটু সাবধানে থেকো।
–ওকে আপু।
আপু চলে গেল।অহনা দরজা বন্ধ করে রবির পাশে এসে শুয়ে পড়ল।কম্বল গায়ে দেওয়া পরেও রবি যেন কাঁপছে।শেষে অহনাও কম্বলের মধ্যে ঢুকে গেল।রবি অহনাকে জড়িয়ে নিলো।হারিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে….
রবির ফোন বেজে ওঠতে অহনা ফোনটা নিয়ে স্কিনে তাকিয়ে দেখে রাশেদ ফোন দিছে।রবির ঘুম ভেঙে যাবে ভেবে অহনা ফোন কেটে দেয়।পাঁচ মিনিট পর আবার ফোন দিলে অহনা ফোনটা সাইলেন্ট করে দেয়।অহনা রবিকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে যায়।
আপু দরজা ধাক্কালে অহনার ঘুম ভেঙে যায়। আপু অহনাকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে বলে মেহমান চলে যাবে আর যাওয়ার আগে অহনাকে একটু দেখতে চাই।
রবি ঠিক আগের মতেই কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।অহনা ফ্রেশ হয়ে সবার সামনে গেল।সবাই অনার প্রশংসা করলো আর সবাই বিদায় নিলো।অহনা মায়ের কাছে গেল।সাথে আপুও ছিল।মায়ের পাশে বসে কিছু সময় কথা বলল।
রবির ঘুম ভেঙে গেলে সে বুঝতে পারে জ্বর এখন কমেছে। না ঘুমানো আর দীর্ঘ সময় ভেজার কারণে জ্বর এসেছে। অহনা মায়ের সঙ্গে কথা বলছিল ঠিক সে সময় রবি অহনাকে ডাক দেয়।
To be continue…..
#এক_চিলতে_রোদ।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০১
#RK9023DXWC
#অনুমতি_ছাড়া_কপি_করা_নিষেধ।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।
#গল্পটা_ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।