#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_১৯
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
.
.
.
.
এক মুহূর্তও দেরি করলাম না আমি।
দ্রুত কাঠের রেলিং ধরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম।
একবারও পিছনে ফিরে তাকাইনি।
তাকালেই বোধহয় উনার অশ্রুশিক্ত চোখ দেখতে পেতাম।
দেখতে পেতাম আমার জবাবের আশায় উনার অপেক্ষায় থাকা চাহনিটা।
নিচে এসে এক দৌড়ে রুমে চলে গেলাম আমি।
দরজা বন্ধ করে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি উম্মি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
দ্রুত চোখের পানি মুছে ফেললাম আমি।
ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি উম্মি চলে গেছে।
জানালার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম, আমার যে একটু শান্তির নিঃশ্বাস নিতে হবে এখন।
.
রেহান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসেন।
হ্যাঁ রেহান ভাইয়া নিজের মুখে বলেছেন, উনি আমাকে ভালোবাসেন।
সত্যিই কি উনি আমাকে ভালোবাসেন!
কেনো সত্যি হবে না, উনিই তো বললেন।
আচ্ছা বাবাকে কি বলেছেন উনি!
আমাকে ভালোবাসেন এ’কথাই কি বলেছেন!
সেজন্যই কি মা আমাকে কাল সেই কথাগুলো বললো?
চোখ বন্ধ করলেই রেহান ভাইয়ার আমাকে বলা ভালোবাসি কথাটাই শুধু ভেসে আসছে।
আমিও ভালোবাসি আপনাকে রেহান ভাইয়া।
এই যে আপনি, আপনি এবং আপনি!
যদি আত্মা অবিনশ্বর হয়ে থাকে,
তবে আপনি শুধুই আমার!
নরক কিংবা স্বর্গে, কবর কিংবা চিতায়
আপনি শুধু আমারই!
আপনাকে ভালো লাগে, খুব পছন্দ করি, ভালোবাসি!
হয়তো, না বলা প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা আপনি।
এভাবেই আমার দিন চলছে, চলে যাবে মাসের পর মাস।
পাহার সমান কথা বুকে চাপা রয়ে যাবে চিরকাল।
হয়তো ভালোবাসি কথাটা আপনাকে আমি এ’জন্মে আর মুখ ফুটে বলতে পারবো না।
যদি আপনাকে পেয়ে যাই, তবে তো সে আমার ভাগ্য।
কিন্তু যদি না পাই…
তবে হয়তো একদিন পড়ালেখা শেষ হবে।
চাকরি জন্য ছোটাছুটি।
ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কেটে যাবে অনেকটা বছর।
পছন্দ, ভালো লাগা, ‘ভালোবাসা’টার উপর ধুলো জমে যাবে।
হঠাৎ হয়তো বিয়েটাও হয়ে যাবে।
তবুও, কোনো একটা বিকালে, বৃষ্টির দিনে, কখনো মধ্যরাতে, অথবা কুয়াশা ভরা সকালে বুকের মধ্যে কিছু শূন্যতা অনুভব হবে।
এই শূন্যতা আগেও ছিলো, এখনো আছে, হয়তো রয়ে যাবে একটা জনম।
এই শূন্যতার কি কোনো নাম আছে?
হয়তো, কিছু শূন্যতার কোনো নাম থাকেনা!
তবে আমি বলবো—
এই শূন্যতার নাম প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা!
এই অপূর্ণতার নাম প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা!
তখন আমি আপনাকে ছাড়াই একা বেঁচে থাকবো হয়তো, বেলা শেষে ক্ষণিকের জন্য আমার গল্পটা একটু থেমে যাবে।
পাছে স্মৃতির পিছুটান পুরোনো ডায়েরি হাতড়াবে।
তবে সে হতাশা পরে হবে ক্ষন।
এখন তো আমার প্রহর শেষের আনন্দ উপভোগ করা উচিত।
সেই দমবন্ধ করা মুহূর্তটাকে আমার এখন নিঃশ্বাস ভরে উপভোগ করা উচিত।
.
🥀
🥀
🥀
🥀
.
রাতে ডিনার শেষে রেহান ভাইয়াকে খুঁজছি আমি।
বিকেলের পর আর একবারও উনার সাথে দেখা হয়নি আমার।
এই বুঝি উনার ভালোবাসা!
ভালোবাসার মানুষটাকে সুযোগ পেলে কি না দেখে থাকা যায়!
কই আমি তো সুযোগ পেলে উনাকে না দেখে থাকতেই পারিনা।
অপেক্ষায় থাকি কখন উনার সাথে আমার দেখা হবে, অপেক্ষায় থাকাটাও যে চরম পর্যায়ের নেশা।
আজ আমার নেশাটা একটু বেশিই হয়েছে বোধহয়।
.
খাবার খেয়ে চলে এলাম আমার রুমে।
একটাবার উনার দেখা যদি পেতাম তাহলে কি এমন মন্দ হতো!
উম্মিটাও আজকে কাজিনদের সাথে ঘুুমোবে।
যাক গে, ভালোই হলো।
গ্রামের রাতের অন্ধকারটা একা উপভোগ করার ভিন্ন রকম স্বাদ পাবো আজকে।
🥀
গাড়ি চলছে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
কুমিল্লা থেকে ঢাকা মোটামুটি লম্বা রাস্তা।
আমাদেরকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে রেহান ভাইয়ারা চলে যাবেন।
সেই কখন থেকে উনাকে দেখে যাচ্ছি আমি!
আর উনি, একটা বারও আমার দিকে তাকালেন না।
সকাল থেকে মুখ গোমড়া করে রেখেছেন।
কি এমন হয়েছে শুনি!
বার বার লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাচ্ছি আমি উনার দিকে।
আর উনি মুখ কালো করে বাহিরে তাকিয়ে আছেন।
এদিকে আমি যে উনার চোখে চোখ রাখার জন্য ছটফট করছি সেটা কি উনি বুঝতে পারছেন না!
আচ্ছা আমি যে কাল উনার ভালোবাসি বলার পরও কোনো জবাব না দিয়েই চলে এসেছি তাতে কি উনি রাগ কররেছেন!
হ্যাঁ, এজন্যই বোধহয় উনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন না।
ধ্যাৎ উনি কি আমাকে বোঝেন না, আমি কতটা লাজুক।
আমি যে আপনার চোখে আকাশ দেখতে চাই,
আমি আপনার চোখ দেখেই বুঝে নিতে চাই চোখের ভাষার অব্যক্ত আপেক্ষ।
আপনি যেনো ঠিক পাহাড় বেয়ে নেমে আসা অপরুপ ঝর্না ধারা।
আমি আপনার মাঝে পেতে চাই শত বছর বেঁচে থাকার আশা।
আমি একচিমটি সুখ পুঁজি করে আপনাকে ভালোবাসতে চাই অবিরাম।
হঠাৎ যদি আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নেমে আসে, ভিজবো দু’জন বৃষ্টি বাদল দিনে।
আমি আপনার বুক পাঁজরের বা পাশটায় ক্রমশই গেঁথে যেতে চাই,
বেলাশেষে প্রতিটি হৃৎস্পন্দনে ও অকপটে মিশে যেতে চাই।
মনের কথাগুলো খুচরো পয়সার মতো জমা রাখার জন্য একটা সুস্থ হৃদয় চাই,
এবং মন, প্রাণ, উজাড় করে ভালোবাসি বলতে চাই।
কে জানে বলা হবে কিনা কখনও।
আচ্ছা উনি মন খারাপ করে আছেন কেনো!
বাবার সাথে কিছু হয়নি তো!
বাবাও তো বেশ রেগে আছেন দেখছি।
রেহান ভাইয়ার কথা তো জানিনা, তবে এবার বাড়ি যাবার পর যে তাদের সাথে আমার সম্পর্কটা আরো হালকা হবে তা আমি ঢের বুঝতে পারছি।
🥀
🥀
🥀
আজ বাড়ি এসেছি সপ্তাহ্ খানেক হবে।
যা ভেবেছিলাম তাই হচ্ছে, মা বাবা কেউই আমার সাথে তেমন কোনো কথাই বলছে না।
কারন হিসেবে অনেকটা আমার ভাইয়া দায়ি।
ভাইয়া বাড়ি থাকলে মনেহয় এ বাড়িতে উপমা বলতে কোনো মানুষই থাকেনা।
দু’একটা কথা বলছেন তারা তারও অবশ্য কারন আছে।
আমার জন্য নাকি তারা ছেলে খুঁজছেন।
🥀
শুনেছি রেহান ভাইয়ার জন্যও নাকি মেয়ে দেখছে।
মেয়ে দেখার কাজটা অবশ্য মেঝো খালামনিই তোড়জোড় দিয়ে শুরু করেছেন।
আমার এ খবর শুনে খারাপ লাগলেও রেহান ভাইয়ার উপর অগাধ বিশ্বাস আছে।
উনি কি করবেন তা জানিনা তবে কিছু একটা অবশ্যই করবেন।
প্রতিদিনই ভয়ে থাকতে হয় আমাকে।
কখন কি খবর আসে সেই ভয়ে চুপষে থাকি।
রেহান ভাইয়াও যে খালুজি কিংবা খালামনির কথার অবাধ্য হবেন না তা আমি বেশ বুঝতে পারছি।
🥀
🥀
ইদানিং বাড়ির সবাই কেমন যেনো লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলে।
আমি কাছে আসতেই সবাই চুপ হয়ে যায়।
কেমন যেনো বিরক্ত সবাই আমার উপর।
দরজা বন্ধ করে বাবা-মা আর আমার ভাইয়া কারো সাথে ফোনে কথা বলে।
খুব জানতে ইচ্ছে করলেও কোথাও একটা বাঁধে আমার।
থাকুক না তারা তাদের মতো, আমি শুনলেই কি বা না শুনলেই কি।
🥀
🥀
শুনেছি আজ নাকি রেহান ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে যাবে।
এর মাঝে বাবা রেহান ভাইয়ার বিয়ের জন্য অনেক মেয়ের বোয়োডাটাই খালামনির ফোনে দিয়েছে।
তবে তাদের নাকি সেসব মেয়েদের পছন্দই হয়নি।
এখন পছন্দটা খালামনিদের হয়নি নাকি রেহান ভাইয়া ইচ্ছে করেই ফিরিয়ে দিয়েছে তা অবশ্য আমি জানিনা।
রেহান ভাইয়ার ইচ্ছে না থাকা সত্তেও আজ খালামনি জোড় করেই উনাকে….