একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_১৭
##Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
বিদ্ধস্ত মন নিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্যে হাঁটছি আমি।
মামাতো বোনেরা অনেক আগেই ডেকে গেছে আমাকে।
আজ নাকি ছাঁদে বিশেষ কিছু হবে।
কিন্তু আমার মন তো এখন সেদিকে নেই।
মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে—
“এবার রেহানটার একটা ব্যবস্থা করুন”
মনের কথা মনে মনেই ভাবছি, কখন যে ছাঁদের দরজায় এসে পৌছেছি সে খেয়ালই আমার নেই।
দরজা ঠেলে সামনে চোখ যেতেই দেখি ছাঁদের মাঝখানটায় সব কাজিনরা বসে আছে।
কেউ হাসছে কেউ গাইছে আবার কেউ গিটারে সুর তুলছে।
.
রাফি ভাইয়াকে দেখলাম ছাঁদের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছেন।
বিকেলের এই স্তব্ধ পরিবেশটা মুহূর্তেই যেনো কোলাহলে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।
দেখতে অবশ্য খুব একটা খারাপ লাগছে না।
এদের সবার মাঝে বসে পড়লে মন যে আমার নিমিসেই ভালো হয় যাবে তা আমি ঢের বুঝতে পারছি।
দেরি না করে ধির পায়ে হেঁটে হেঁটে ঠিক রেহান ভাইয়া যেখানটায় বসেছেন তার বরারবর সামনে বসলাম আমি।
গিটারের তারগুলি নেড়েচেড়ে মনযোগ সহকারে কি যেনো করছিলেন রেহান ভাইয়া।
আমি এসে বসতেই উনি গিটার থেকে মুখ উঠিয়ে আমার দিকে তাকালেন।
সংঙ্গে সংঙ্গেই চোখ সরিয়ে নিলাম আমি।
আমার ছাঁদে আসার অপেক্ষায়ই বোধহয় ছিলো সবাই।
রাফি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি এদিকেই মুখ করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
রাফি ভাইয়ার চোখের ভাষা পড়ার ইচ্ছে হয়নি আমার কখনই।
কিন্তু উনার ওই চোখে আজ ভিন্ন কিছুর আভাস পাচ্ছি।
ওহুম মোটেও শুদ্ধ না, ঐ চোখে ঘৃণাটাই স্পষ্ট।
মুচকি হেসে চোখ সরিয়ে নিলাম আমি।
নিজেকে মনোবিজ্ঞানী কখনই দাবী করিনা, তবে মানুষের চোখের ভাষা কিংবা মনের ভাষা অনেকটাই বোঝার দক্ষতা আপনা আপনিই শিখে নিয়েছি।
.
সেদিনের অপূর্ণ থাকা গানের লিরিক্সগুলো আজ শেষ করবেন বোধহয় রেহান ভাইয়া।
সবার অনুরোধে উনি গিটারে সুর তুললেন, গলা ঝেড়ে এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।
চোখ বন্ধ করে গাইতে শুরু করলেন।
আমিও হারিয়ে গেলাম উনার গানের সুরে।
মনে হচ্ছিলো গানের প্রত্যেকটা লিরিক্সগুলো যেনো আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলছেন, ওহুম না না গাইছেন।
ঐ যে ঐ গানটা_____
বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দেবো তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারই ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম…
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম…
.
এতটুকু বলেই উনি থেমে গেলেন।
গিটার থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমিও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।
গানের মাঝখানে চুপ করে থাকার কারন খুঁজছি।
ভালোই তো গাইছিলেন উনি, থেমে গেলেন কেনো?
নিচের দিকে তাকিয়ে মাথার চুলগুলো একবার ঝেড়ে নিলেন।
গিটারটা আবার হাতে নিয়ে আমার দিকে পুনরায় তাকালেন উনি।
ঠোঁটের কোনে কেমন রহস্যময় হাসি উনার, না না রহস্যময় বললে বোধহয় ভুল হবে।
ঠিক যেনো ব্যর্থতার হাসি দিলেন, সাথে একটু তাচ্ছিল্য ছিলো হয়তো।
এবার আর চোখ বন্ধ করলেন না উনি।
গিটারের তারের দিকে তাকিয়েই অপূর্ণ গানটা পূর্ণ করলেন।
.
ভালোবেসে আমি বার বার
তোমারিও মনে হারাবো…
এ জীবনে আমি যে তোমার
মরনেও তোমারই রবো
তুমি ভুলোনা আমারই নাম…
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম…
.
বিকেলের স্নীগ্ধ পরিবেশের সাথে গানটা খুব মানিয়েছে।
আচ্ছা উনি গান গাওয়ার সময় আমার দিকে তাকালেন কেনো?
গানের মাঝখানেই বা কেনো থেমে গেলেন উনি?
আড্ডা-গল্পেই প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এলো।
অনেকেই বলছিলো আমাকে কিছু বলতে, কিন্তু আমি কিছুই বলিনি।
মন খারাপের সময় চুপ করে থাকতেই ভালো লাগে আমার।
চুপ চাপ আকাশ দেখতেই বড্ড ভালো লাগে।
মন খারাপের কারনগুলো আকাশে উড়িয়ে দিতেই আমার বড্ড ভালো লাগে।
আচ্ছা রেহান ভাইয়া, আপনি কখনো আকাশ দেখেছেন?
ওই যে বিশাল বড় আকাশ?
আচ্ছা আপনি কি জানেন আমার মনের বিশাল আকাশের পুরো অস্তিত্ব জুড়ে আপনি মিশে থাকেন, আমার প্রতিটি পদক্ষেপে।
আমি আপনাকে এমন ভাবে চাই,
যাকে আমার আগে আপনাকে অন্যকেউ ভালোবাসেনি।
যে আমার আগে আপনার চোখে কেউ আকাশ দেখেনি।
আমি চাই আপনার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ পুরোটাই আমাকে নিয়েই হোক পথচলা।
জীবনের শেষ নিঃশ্বাস আপনার বুকে ত্যাগ করতে চাই।
আমি আপনাকে একান্তই আমার আপন মানুষ হিসেবে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে পাশে চাই।
ভালোবাসা যেমন বুকের বাঁপাশে বাসা বাঁধে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
ঠিক তেমন শতাব্দীর পর শতাব্দী আমি আপনাকে ভালোবেসে যাবো।
ভালোবাসা দিয়ে আপনাকে মনের গহিন ঘোরে বন্দী করবো।
আমি চাই না আমার জীবনে দ্বিতীয় কোনো পুরুষ আসুক।
আমি চাই আপনিই আমার প্রথম এবং শেষ পুরুষ হিসেবে সারা জীবন আপনার ভালোবাসায় আমায় আপনার বুকের খাঁচায় বন্দী করুন।
যেখানে থাকবে না দুঃখ, কষ্ট, বেদনা।
যেখানে আপনার বুকে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবো।
আপনার ভালোবাসায় নিজেকে সত্যিই পরিপূর্ণ মনে হবে সেদিন।
যেদিন আপনি হবেন আমার আত্মার বন্ধন হৃৎস্পন্দন।
🥀
🥀
🥀
খালামনিরা বোধহয় এবার একটু বেশিই সিরিয়াস রেহান ভাইয়ার বিয়ের ব্যাপারে।
উঠতে বসতে শুধু উনার বিয়ের বিষয়েই কথা বলছেন সবাই।
আমি নিরবে সব কিছু শুনছি।
আচ্ছা উনি কি এসব শুনতে পাচ্ছেন না!
নাকি শুনেও কথা আমলে নিচ্ছেন না!
উনার মনে কি আছে, যদি জানতে পারতাম।
🥀
সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের বাহিরে যেতেই রেহান ভাইয়াকে বাবা-মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখে আমার মনে ভয় ডুকে গেলো।
আবার কি কিছু হয়েছে নাকি!
রেহান ভাইয়াকে বাবা সেদিনের মতো আবার কিছু বলেন নি তো!
উনার মুখটাও কেমন শুকনো দেখাচ্ছিলো।
ইশশ কেনো যে বেলা করে ঘুমাই আমি, কি হয়েছে কিছুই জানতে পারলাম না!
ছাই পাশ ভাবতে ভাবতেই রান্নাঘরে ঢুকেই দেখি….
চলবে….