একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_১৬
##Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

কাঁধের ব্যাগ হাতে নিয়ে গাড়ি থেকে খুব সাবধানে নামলাম আমি।
একটু উঁচু হিল পরেছি তবে পিচ্ছিল রাস্তা হিল জুতোকে কাবু করতে এক সেকেন্ড সময়ও নেবে না।
খুব সাবধানে এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।
এই কর্দমাক্ত রাস্তায় পরে গেলে মান সম্মান যে আমার কানা কুড়িও থাকবে না।
বাম হাতে জামার এক সাইড ধরে সামনে পা ফেলতেই আমি পেছনে হেলে পড়লাম।
এক নেনো সেকেন্ডের মধ্যেই বুঝতে পারলাম এখনই আমি পা পিছলে পরে যাবো।
হাত থেকে ব্যাগ ফেলে কোনো মাধ্যম খোঁজার আগেই যেই না আমি পরে যাবো ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ আমার বাহু শক্ত করে ধরে।

.

কিছুটা পিছনে হেলে গিয়ে আমি চোখ বড় বড় করে আমাকে ধরে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হ্যাঁ, যাকে এই মুহূর্তে এখানে আশা করেছিলাম সেই আমাকে নিজের এক হাতে আবদ্ধ করে রেখেছে।
চোখ দু’টোকে ছোট ছোট করে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন রেহান ভাইয়া।
নিচে পরে যাওয়ার ভয়ে বুকের হার্টবিটটা দ্রুত হয়েছিলো, এখন মনে হচ্ছে আরো দ্রুত হয়ে গেছে।

.

আমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে রেহান ভাইয়া নিচে পরে থাকা আমার ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে নিলেন।
উনার দু’হাতেই ব্যাগ দেখে আমি আমার ব্যাগটা নিতে যাবো ওমনি উনি আমার ব্যাগটা নিজের কাঁধে নিয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরলেন।

.

উনার এমন কাজে আমি অবাক হয়েছি ঠিকই কিন্তু উনার চেহারার কোনো পরিবর্তনের রেশ মাত্রও দেখলাম না।
এবার আমি রীতিমতো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পানিগুলো উনার চুলে হিরোর কণার মতো চক চক করছে।
উনার হালকা ভেজা নীল শার্টটা থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আমার নাকে আসছে।
এক দৃষ্টিতে আমার দিকে শীতল চাহনি রেখেই উনি বললেন–

.

— খুব তো একা একা ডেং ডেং করে কাঁদা মাটিতে হাঁটছিস, বড্ড সাহস হয়েগেছে তোর!
এখনই তো নিচে পরে যাচ্ছিলি, পরে গেলে কি অবস্থাটাই না হতো।
কাউকে সাথে করে নিয়ে হাঁটলেই তো পারিস।
কাঁদা মাটিতে পরে গিয়ে পা ভেঙে ঘরে বসে থাকার এতোই ইচ্ছে তোর?
দেখি আমার সাথে আয়, খবরদার একদম তাড়াহুড়ো করবি না।
নিজেও পড়বি আমাকেও ফেলে দিবি।

.

উনি এক হাতে আমার হাত শক্ত করে ধরে খুব সাবধানে কাঁদা মাটি পেরিয়ে সামনে যেতে লাগলেন।
আমিও নির্ভয়ে উনার সাথে হাঁটতে লাগলাম।
এই মানুষটার উপর যে আমি অন্ধ বিশ্বাস রাখতে পারি তাতে কোনো সন্দেহ্ই নেই।

🥀
🥀
🥀

হাতে থাকা রং চায়ের কাপে একটু পর পর চুমুক দিতে খুব ভালো লাগছে।
বৃষ্টির গতিবেগ বেড়েছে, সেই সাথে শীতল আবহাওয়াটাও চারপাশ ঠান্ডা করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এখন বর্ষা না, প্রায় হেমন্ত ছুঁই ছুঁই করছে।
রং চা-টা অবশ্য আমি নিজেই বানিয়েছি।
অন্য কারো হাতের রং চা খেতে আমার তেমন একটা ভালো লাগেনা।

🥀

দোতলার বদ্ধ রুমের উত্তরের জানালাটা খুলতেই ঠান্ডা বাতাস গায়ে এসে লাগে।
গ্রামের সচ্ছ পরিবেশে নানাজান বাড়িটা খুব নিখুত ভাবেই তৈরি করেছেন তাতে সন্দেহ্ নেই।
নানাজান তো নেই, তবে নানি এখনও পুরোনো বাড়ির স্মৃতি আকড়ে ধরে একা বেঁচে আছেন।

🥀

এখানে এসেছি আজ দু’দিন হলো।
ভালোই কাটছিলো গ্রামের মুহুর্তগুলো।
নির্ভেজাল পরিবেশে কাউকে ভালোবাসার শীতল অনুভূতি গুলো আমার মনে দাগ কাটছিলো প্রতিনিয়ত।
না না পাগলামি টাইপ ভালোবাসা না।
প্রেমিক প্রেমিকা কে পাগলামি করতেই হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি?
আমাদের ভালোবাসা তো সুপ্ত অনুভূতি।
চোখে চোখেই না বলা সব কথা হয়ে যায় আমাদের।
এমন ভালোবাসায় কি পাগলামির প্রয়োজন আছে, ওহুম একদমই নেই।

🥀

দোতলার সিড়ি পেরিয়ে ছাঁদে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মেঝো খালামনির কন্ঠ শুনতে পেলাম।
রুমের ভেতরে খুব সম্ভবত সব মামি, খালামনিরা আর মা বসে আছেন।

— বড় আপা, বলছি যে রেনুর বিয়ে তো দিলেন।
এবার রেহানটার একটা ব্যবস্থা করুন।
রেনুর জন্যই তো রেহানটাকে বসিয়ে রেখেছেন।
বয়স তো আর কম হলো না রেহানের।
চাকরি যেমনই করুক, মেয়ে ঠিকই পাওয়া যাবে।
আপনার সব ছেলেরই বিয়ের বয়স হয়েছে আপা সে খবর মাথা থেকে ফেলে দেবেন না।
.
.

মেঝো খালামনির কথায় বড় খালামনি সায় দিচ্ছেন।
আফসোস করছেন রেনু আপুর দেরি করে বিয়ে দেয়ার জন্য।
রুমের ভেতর রেহান ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে এক প্রকার তোরজোড় শুরু হয়ে গেছে।
আমার কানে তাদের কোনো কথাই আর কানে যাচ্ছে না।
বার বার একটা কথাই শুধু মনে আসছে, রেহান ভাইয়ার বিয়ে হবে।
কিন্তু কার সাথে হবে!

🥀

বিদ্ধস্ত মন নিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্যে হাঁটছি আমি।
মামাতো বোনেরা অনেক আগেই ডেকে গেছে আমাকে।
আজ নাকি ছাঁদে বিশেষ কিছু হবে।
কিন্তু আমার মন তো এখন সেদিকে নেই।
মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে—
“এবার রেহানটার একটা ব্যবস্থা করুন”
.
.
মনের কথা মনে মনেই ভাবছি, কখন যে ছাঁদের দরজায় এসে পৌছেছি সে খেয়ালই আমার নেই।
দরজা ঠেলে সামনে চোখ যেতেই দেখি…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here