#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৩
ভাইয়া যেহেতু এখন খরচ দেয় তাই টিউশন ছেড়ে দিয়েছি।শিশিরকেই শুধু পড়াই।ওকেও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আন্টির অনুরোধে পারিনি।ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে অনুরোধ করলেন আন্টি।আমিও আর না করতে পারিনি।কিন্তু আজকে শরীর চাচ্ছে না টিউশনে যেতে।বড্ড মেজমেজ করছে শরীরটা তারমধ্যে আবার পিরিয়ডস।প্রচন্ড পেইনে একেবারে নাজেহাল অবস্থা।এর কারণে আজ ক্লাসও করিনি।
বিছানার এক কোণে গুটিশুটি হয়ে পরে আছি।টেবিলের এক কর্ণারে ফোনটা পড়ে আছে।এই টুকুই আমার কাছে হাজার মাইলের মনে হচ্ছে।কোনো রকমে উঠে ফোনটা নিয়ে আবার বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়ি।আন্টিকে ফোন দিই।শিশির ফোন রিসিভ করে,,,
-হ্যালো ম্যাম আজকে আসবেন না?
-নাহ বাবু!আন্টিকে ফোনটা দাও তো!
শিশির গিয়ে আন্টিকে ফোনটা দেয়।
-আন্টি আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আস সালাম।আসবে না আজকে?সময় তো হয়ে গেছে!
-নাহ আন্টি।পিরিয়ডস হয়েছে।প্রচন্ড পেইন হচ্ছে।
-অহ।যত্ন নিও নিজের।
-জ্বী আন্টি।আল্লাহ হাফেজ
-আল্লাহ হাফেজ।
আমি ফোন কেটে দিই।পেইনটা দেখা যাচ্ছে এবার আমার সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।আর পারছি না।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।এরই মধ্যে এশা আসে।আমায় এমন আধমরা অবস্থায় দেখে মেয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে।
-কি হয়েছে?
-জানিস না তুই?আর সহ্য হচ্ছে না রে।প্রচন্ড পেইন দিচ্ছে।
-দাঁড়া গরম পানি করে আনি।
-কিসের জন্য?
-তুই ছ্যাকা নিবি না?ছ্যাকা নিলে তো পেইন কমে।
-তুই আয়রন গরম করে দে আমায়।গরম পানি আবার রিস্কিও।বাই এনি চান্স পুড়ে গেলে!
আমার কথায় মেয়ে আয়রন গরম করতে দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।আয়রন কিছুটা গরম হয়ে এলে ছ্যাক নিই।সতর্কতার জন্য গামছা ভাজ করে তল পেটের ওপর রেখে হিট নিই।এশা ফ্রেশ হয়ে এসে স্যুপ বানিয়ে দেয় আমায়।স্যুপ খেয়েই আবার শুয়ে পড়ি।
★
-এই মেঘ।ওঠ।শুভ্র ভাইয়া ফোন দিয়েছে।
চোখটা কখন লেগে গিয়েছিলো বুঝতে পারিনি।এশার ডাকে ঘুমঘুম চোখ নিয়ে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করি।মেয়ে আমায় ঝাড়ি দিয়ে বলে,,,
-ছাগল!আমার ফোনে কল দিয়েছে।তোমায় ফোনে পাইনি তাই টেনশন হচ্ছে দেখো গিয়ে।
ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে এশার ফোন নিই।ক্লান্তি আর ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে সালাম দিই।উনি সালামের জবাব দিয়ে বলেন,,,
-বিয়ের দিনও ঘুমাচ্ছো নাকি?
-বিয়ের দিন মানে?
-আজকে শিশিরকে পড়াতে যাও নি।তুমি তো রেগুলার পড়াও।বাদ দাও না।আজকে যাওনি বলে আম্মুকে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
-হু।উনি কি বললো?
-বললো তোমার বিয়ে।তাই তো আমি এতবার কল করলাম।রিসিভ করছো না দেখে এশাকে কল দিলাম।
-আমি তো ছোট মানুষ কে বিয়ে করবে আমায়?
-অনেকেই তোমায় বিয়ে করার জন্য একপায়ে রাজি।শান্তর কথা বললে তো কথাই নেই!
-জ্বলে আপনার?
-জ্বলবে না তো হবে?শুভ্র শুধু মেঘের আর মেঘ শুধু শুভ্রের।
-ওমাগো টুরু লাপ।
-তুমি আমার কোনো কথাই সিরিয়াসলি নেও না!বাই দ্যা ওয়ে আর ইউ ওকে?শরীর ঠিক আছে তোমার?
-ঐ পেটব্যথা আর কি
-পেটব্যথা?বাইরের জিনিস খেয়েই অসুখ বাঁ্ধিয়েছো না?কতবার না করছি।ঐগ্লা হার্মফুল।
-আরেহ না।
-তো কি?
কিভাবে বলি ওনাকে পিরিয়ডসের কথা?কেমন একটা সংকোচ কাজ করছে।যদিও এটা এখন স্বাভাবিক আর সাধারণ বিষয়।তাও কেমন কেমন লাগছে!
-মেঘ!কি হয়েছে তোমার?বললে না
-আপনি বুঝবেন না।
-বুঝালেই বুঝবো।
-বুঝবেন না।
-হুদাই ঢং করতেছিস।ভাইয়া মেঘের পিরিয়ডস হইছে।আর এই সময় মেয়ে আধমরা হয়ে যায়।
চিলের মতো ছো মেরে ফোন নিয়ে বলে দেয় এশা।তারপর আবার আমার হাতে ফোন দিয়ে বলে,,
-কথা বল।
-কি কথা বলবো?এভাবে আমায় লজ্জায় না ফেললেও পারতি।
ফিসফিস করে ঝাড়ি দিয়ে বলি এশাকে।মেয়ে আমার কথা বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।আমি সংকুচিত আর লাজুক কন্ঠে শুভ্রকে বলি,,
-আর কিছু বলবেন?
-হুম।টেইক কেয়ার মাই কুইন।
এখন আর ঘুম আসছে না।দেয়ালের সাথে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুর ঘুর করতে লাগি।বাচ্চাদের মতো ফাইভ মিনিট হ্যাক্স দেখে অলস সময় কাটাতে লাগি।হঠাৎ কি মনে করে যেন শুভ্রের আইডিতে ঢুকি।সব গুলো পোস্ট মন দিয়ে দেখতে লাগি।কোন কোন মেয়ে রিয়াক্ট দিয়েছে কোনো মেয়ে কমেন্ট করেছে।একে একে সব গুলো মেয়ের আইডিতেই ঢুকে ঘুরে আসি।তিনচারটা মেয়ের মিউচুয়াল ফ্রেন্ডলিস্টে শুভ্রকে পাই।মেয়েগুলোর আইডি গোয়েন্দাদের মতো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগি।দেখি মেয়েগুলোর সব ছবিতে শুভ্র লাভ রিয়েক্ট দিয়েছে।আমার কোনো পোস্টে ব্যাটায় লাইক পর্যন্ত দেয় না।আর অন্যমেয়েদের পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দেয়।বিষয়টা আমায় খুব হার্ট করে।ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের চারপাশটা।গাল গড়িয়ে চোখের পানি ফোনের স্ক্রিনে পড়ে।আমি কোনো রকমে ওয়াইফাই অফ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগি।মিনিট পনেরো পর এশা এসে ডাকতে লাগে।
-কিরে তুই এই কুত্তা মরা গরমে কাঁথার নিচে কি করিস।দম বন্ধ হয়ে মরবি তো!
আমি কোনো প্রতিত্তোর দিই না।এশা আমায় আবার ধাক্কা দিয়ে বলে,,
-এই ফকিন্নি ওঠ।খাবি না?
আমি এইবারও চুপচাপ। এশা এইবার আমায় টেনে কাঁথার নিচ থেকে বের করে।বের করে আমার চোখ মুখ ফোলা দেখে বলে,,,
-কিরে?কাঁদছিস নাকি?
আমি কোনো কথা বলি না।জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিই।
-ব্যথা কমে নাই তোর?শুভ্র ভাই চকলেট খাবি?
-তুই খা ঐ বদের দেওয়া চকলেট। আর জীবনে যদি ঐ লোকটার ধারে কাছে গিয়েছি আমি!আর তুইও ওর নাম নিবি না।
হুংকার দিয়ে বলি আমি।এশার কপালে চিন্তার ভাঁজ।
-হঠাৎ কি হলো তোর উনার ওপর এত ক্ষেপলি?
-তুই বুঝবি না।
বলেই আবার জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিই।
-এই মেয়ে বল!
আমি ফোনে মেয়েগুলোর আইডি বের করে প্রত্যেকটা পোস্ট ওকে দেখাই যেগুলোতে শুভ্র লাভ রিয়েক্ট দিয়েছে!আমি কাঁদতে কাঁদতে বলি,,,
-দেখ।আমার পোস্টে রিয়াক্ট দেওয়ার খবর নাই।অন্য মেয়েদের পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দেয়।
আমার কথা শুনে এশা হেসে দেয়।আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলি,,
-হাসছিস যে?
-মনে আছে?আমিও সেইম কারণ নিয়ে নাবিলের সাথে ঝগড়া করেছিলাম।তুইও তখন হেসেছিলি।শুধু তাই নয়!তুই এই বিষয়টা নিয়ে আমায় অনেকদিন ক্ষেপিয়েও ছিলি।এখন তোর জ্বলে কেন?ওয়হয় জেলাসি জেলাসিই।আসলে প্রেমে পড়লে ওই কম বেশি জেলাসি সবাইই করে।
-আমায় ইগ্নোর করবে কেন?সোশ্যালমিডিয়ায় আমায় পাত্তাই দেয় না।আর যদি ঐ লোকটার ধারে কাছে গেছি!
-তোর বপ্পেন তুই যা মন চায় কর।আমি শুধু বিনোদন নেবো।ডাইনিংয়ে চল।খেয়ে নে।
★
-মেঘ!
শুভ্র ডাকছেন।কিন্তু আমি আমার মতো করে হেঁটেই যাচ্ছি।কে যায় ঐ লোকটার কাছে?হুদাই প্রেমে পড়েছিলাম।এইজন্যই হয়তো মানুষ বলে,,
“সখী তোমরা প্রেম করিওনা”
“পিরিত ভালা না!”
বেশ অনেকক্ষণ ধরেই লোকটা আমার পিছু ধরেছে।কিন্তু আমি পাত্তা দিচ্ছি না।পাত্তা দেবোও না।যাক না ঐ মেয়েগুলোর কাছে যাদের পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দেয়।আমার কাছে কি?
-কি হয়েছে তোমার?এতক্ষণ ধরে ডাকছি কোনো সাড়া শব্দ করছো না।
আমি এইবারও চুপচাপ। উনি এসে এবার আমার হাত ধরেন।ঝটকা মেরে নিনের দিকে ঘুরিয়ে বলেন,,,
-সমস্যা কি?এতক্ষণ ধরে ডাকছি কোনো রেসপন্স করছো না।
আমি মুখ ফিরিয়ে নিই।কোনো কথা বলি না।
-মেঘ কি হয়েছে তোমার?
আমি এইবারও চুপচাপ। নিয়ত করেছি এই লোকটার সাথে আর কথা বলবো না।উনি জোর করে আমার মুখ তার দিকে ঘুরিয়ে বলেন,,,
-এই এত ঢং করছো কেন?
এইবার আর চুপ করে থাকতে পারি না।একে তো আমায় এভাবে শক্ত করে ধরে রেখেছে তারওপর আবার জোর করে আমায় তার চেহারা খানা দেখাচ্ছে।যেখানে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি উনার চেহারা আমি দেখবো না।শান্ত কন্ঠে বলি,,
-ছাড়ুন আমায়।
-ছাড়লাম না।কি করবে?
-আমি আবার বলছি ছাড়ুন।
-এমন করছো কেন?
-তো কেমন করবো?আপনি ঢং করবেন আর আমি চুপ করে থাকবো?
-আমি ঢং করি মানে?
-জানেন না কিছু?
-না জানি না
– হবেও না জানতে।
কথাটা বলেই আমি তার হাতে কামড় দিয়ে দিই এক দৌড়।উনি পেছন থেকে আমায় ডাকতে লাগেন।কিন্তু আমি তা কর্ণপাত করি না।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ