#ইস্ক
#সাদিয়া

২৬
চিকচিক আলো জানালা দিয়ে এসে সোজা তিতিলের চোখের উপর গিয়ে পড়ছে। কপাল কুঁচকে চোখ ডলে পিনপিন করে তাকাল। হাই তুলে পাশ ফিরে দেখল ইয়াদ উন্মুক্ত পিঠে উবু হয়ে শুয়ে আছে। ফর্সা পিঠ টা বেশ লোভনীয় লাগছে। সেদিকে এক নজরে তাকিয়ে দেখছে। মনের ভাবনাচিন্তার কথা ভেবে নিজেই নিজেকে বকল তিতিল। তারপর নিজের বেহাল অবস্থা দেখে কপালে যেন শতখানিক ভাঁজ পড়ল। রাগ আর বিরক্ত নিয়ে ইয়াদের দিকে তাকাল সে।

হঠাৎ ইয়াদ নিচে পড়ে গেল বিছানা থেকে। আসলে পড়ে নয় ফালানো হয়েছে তাকে। তিতিলে রেগে ঘুমন্ত ইয়াদ কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে নিচে। তারপর গলা ছেড়ে চিৎকার করে বলতে শুরু করেছে “সুযোগে সৎ ব্যবহার করেছেন তাই না? কাল আমার জ্বর উঠেছিল আর আপনি? ছি আপনি কি মানুষ?”

চোখ ডলতে ডলতে কোনো রকম তাকাল ইয়াদ। হাই তুলে বলল,
“আমার কথাটা শুনো তিতিল।”

তিতিল রেগে বালিশ ছুঁড়ে মারল তার গায়ে।
“এমন করছো কেন তিতিল?”

“তো কি করব? আপনাকে ঘাড়ে তুলে নাচব?”

“তোমার ওই ইঁদুর শরীর নিয়ে আমাকে ঘাড়ে তুলতে পারবে?”

“আপনি আমার সাথে মজা করছেন? আপনাকে কাপড়ের মতো চিঁপতে ইচ্ছা করছো।”

“আমি তো আর কাপড় না।”

“নিচে শুয়ে পড়ুন আগে ইচ্ছা মতো ধোলাই করি তাহলেই হবে।”

ইয়াদ বিড়বিড় করল কপালে আঙ্গুল ডলে বলল “পুরো ধানিলঙ্কা।”

“কি বললেন আপনি?”

“কিছুই বলি নি। বলছি সকাল সকাল এসব করে একটা সুন্দর সকাল নষ্ট করছো কেন? চলো আরেকবার হয়ে যাক রোমাঞ্চ।”

“আর এক পা বাড়ালে তোকে আমি খুন করে ফেলব অসভ্য, সুযোগ নেছ।”

তিতিল কপট রাগ দেখিয়ে বিছানার চাদর পেঁচিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। ইয়াদ ওখানেই বসে কি ভেবে মুচকি হাসল। একটু পর বলল “বউ চলো এক সাথে গোসল করি।” ইয়াদ কান খাড়া করল ওয়াশরুম থেকে তিতিলের গলা ভেসে আসছে “রাখ আমি আসছি ছুড়িটা নিয়ে তোর গলায় ঘষব।” ইয়াদ এবার কপালে বৃদ্ধা আর তর্জনী আঙ্গুল ঠেকিয়ে হাসল।

বেশ সময় যাওয়ার পর তিতিল শুভ্র টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হলো। অন্য আরেকটা টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করল।
ইয়াদ বিছানায় হেলান দিয়ে ফোন চাঁপছিল। হঠাৎ তিতিল কে ওমন রূপে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসতে দেখে পুরোই থ হয়ে গেছে সে। তাজ্জব বনে যাওয়া যাকে বলে। সে বুঝতে পারল বুকের বা পাশের যন্ত্র টা বেগতিক হারে উঠানামা করছে। এখনি যেন ছিটকে বের হয়ে আসবে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। শিহরণ পুরো শরীর কে নিস্তেজ করে দিচ্ছে ক্রমশ। এ কি শিহরণের ঢেউ তাকে উন্মাদ করে দিচ্ছে। তিতিল চুল মুছতে মুছতে আড়চোখে দেখল ইয়াদ কে। ইচ্ছা করেই সে এমন হয়ে বের হয়েছে।

হুট করে ইয়াদ ধীর গলায় বলল “কেউ কি বুঝতে পারছে তাকে এভাবে দেখে আমার মাথাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
তিতিল ঘাড় ঘুরিয়ে সঙ্গেসঙ্গে জবাব দিল “তো নষ্ট মাথা গলায় নিয়ে ঝুলবেন কেন? ভেঙ্গে ফেলুন না মাটির হাড়ির মতো।”

“সত্যিই কিন্তু মাথা হ্যাং হয়ে আসছে যা খুশি করে ফেলতে পারি কিন্তু।”

তিতিল ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল “হ্যাঁ সবসময় তো সুযোগ নিবেন আর আমি বসে ললিপপ খাবো।”

“সেটা তোমার সাথে বেশ মানাবে জানো তো?”

ইয়াদের ফাজলামি আর ভালো লাগছে না তিতিলের। কপাল কুঁচকে বিরক্ত নিয়েই বলল,
“আয় শুধু একবার এদিকে।”

“ও কি করবে তুমি?”

“দেখুন আর এক পা বাড়াবেন না এটা কিন্তু খারাপ হবে।”

“তুমি আমার মাথা নষ্ট করার জন্যে টাওয়াল পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছো আমি কি একটু আদর না করে পারি বলো? এটা কেমন বেখাপ্পা লাগবে না? বিষয়টা বেমানান হয়ে যায় তিতিল পাখি।”

এবার ইয়াদের ক্রমশ এগিয়ে আসা দেখে তিতিল ভয় পেলেও মুখে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করল।

“আমি কিন্তু আপনার বুকে ছুড়ি ফুটিয়ে দিব।”

“জ্বি আমি অনায়াসে রাজি। প্রেয়সীর দ্বারা শতবার সহস্রবার স্বেচ্ছায় ঘায়েল হতেও আমি কুণ্ঠাবোধ করব না। কখনোই না।”

পরিস্থিতি আওতার বাহিরে চলে যাওয়া দেখে তিতিল স্থান ত্যাগের জন্যে পা বাড়াতেই ইয়াদ ছুটে এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। মোটা তোয়ালের উপর দিয়ে তিতিলের পেট চেঁপে ধরে আরেকটু কাছে টেনে আনল তাকে। তিতিল নড়ল না যেন নিজের চালে নিজেই ফেঁসে গেছে। ইয়াদ উন্মুক্ত কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়াতেই ইষৎ কেঁপে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয় মেয়েটা। ইয়াদ ছোট্ট করে তিতিলের কানের লতিতে চুমু খেলে মেয়েটা সইতে না পেরে শব্দ তুলে নিশ্বাস ফেলে দেয়। ইয়াদ মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলল “কাল রাতের সবটুকুর জন্যে শুধু তুমি দায়ী প্রিয়। এর এক কোণাও দোষ আমার ঘাড়ে চাপাতে পারবে না। তবে মধুর ছিল। প্রেয়সী তোমার বা কাঁধের লাভবাইট টা দেখে ইচ্ছা করছে সাথে আরেকটা জুড়ে দেই। প্রতি রাতে এমন পাগলামু করলে মন্দ হয় না।” নিজের কথা শেষ করে ইয়াদ তিতিলের মাথায় ছোটখাটো একটা চুমু খেয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। রাগে তিতিল হাসফাস করছে। মনে মনে বলল “এবার আপনাকে একটু শিক্ষা দিতেই হবে।”

ইয়াদ ওয়াশরুম থেকে এসে দেখল তিতিল নেবিব্লু ড্রেস পরে বিছানায় বসে ফোন টিপছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, বেশ মানায় মেয়েটা কে এই রঙে। ইয়াদ চুলের পানি মুছতে মুছতে বলল “তিতিল এক কাপ কফি দাও।”

“পারব না।”

“দাও না প্লিজ। খিদেও পেয়েছে।”

“যাওয়ার সময় করে নিব।”

“যাওয়ার সময় মানে?”

“মানে আমরা একটু পর ঢাকায় ফিরছি।”

“এই না একদম না। আর দুইটা দিন থেকে যাই।”

“তাহলে আপনি থাকুন আমি একাই চলে যাই।”

“ওই ওয়েট রেডি হতে তো দিবে।”

তিতিল আর কিছু বলল না। চুপচাপ সব কাপড় গুছিয়ে নিল। ইয়াদ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত ঘড়ি পরতে পরতে তিতিল কে দেখে বিড়বিড় করল “তারকাটা মেয়ে।”

তিতিল যেন কথাটা শুনতে পেয়েই ফুস করে উঠেছে “কি বললেন আমায়?”

“তোমায় কিছু বলেছি? কাজ করো নিজের।”

অতঃপর চুপচাপ মেয়েটা দাঁত কিড়িমিড়ি করতে লাগল।

রাস্তায় তিতিল একটা কথাও বলে নি। ইয়াদ মাঝে মাঝে দুএকবার কিছু জিজ্ঞেস করলেও উত্তর পায় নি। একটুআধটু রাগ তুলানোর চেষ্টা চালিয়েও লাভ হয়নি। তিতিল দাঁত কিটে চুপ ছিল। জানালার বাহিরে তাকিয়ে মনে মনে আওড়াল “বাসায় যান দেখাব মজা।”

চলবে
(গল্প আমি কষ্ট করে লিখি আপনাদের জন্যে। তাই আপনারাও নিজেদের গঠনমূলক মন্তব্য টুক করে যাবেন❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here