#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(১৪)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

লজ্জা লতা গাছের মতো মিইয়ে গেল তাকিয়া।এই প্রথম এতো কাছে আসা,এই প্রথম ভালোবাসা।ক্ষনে ক্ষনে শরীর শিউরে উঠছে তার।
ইসরাক তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করতে গেল।ফিরে এসে সবুজ রঙের ড্রিম লাইটের আলোয় বললো,
-“দিবে কি অনুমতি আমায়? তোমাকে আমার করে নেওয়ার!

লজ্জা রাঙ্গা হয়ে দুই হাতে মুখশ্রী ঢাকে তাকিয়া।তার ইচ্ছে করছে অদৃশ্য কোন মায়ায় এই মুহূর্তে বিলিন হয়ে যেতে!এই লজ্জা কোথায় রাখবে সে? একদিকে ভ’য়‌ও জেঁকে বসেছে!এই প্রথম তার স্বামী নামক পুরুষটির খুব কাছে সে।যেখানে কিঞ্চিৎ পরিমাণ দুরত্ব ও অবশিষ্ট নেই।

কথায় আছে “নিরবতা সম্মতির লক্ষণ” তাই ইসরাক অপেক্ষার প্রহর ভেঙ্গে দিল। এগিয়ে গেল খুব কাছে। যেখান থেকে চাইলেও কেউ আলাদা করতে পারবে না এই দম্পতি কে। তাকিয়ার ক্ষত স্থানে আলতো ছোঁয়ে দেয় অধরযুগল তারপর গোলাপী রাঙা অধরযুগল নিজের আয়ত্তে দখল করে নেয় ইসরাক।পরম আদুরে নেত্রজোড়া বন্ধ করে ইসরাক এর পিঠে কোমল ও লাবন্যময় হাত দুটো আলতো করে চে’পে ধরে তাকিয়া।ভালোবাসার রঙে মত্ত হয়ে উঠে একে অপরের সাথে।
_____

আরিসা আর আনিসা আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। এদিকে খাটের এক কোনায় বসে বিরতিহীন ভাবে হাঁচি দিয়েই চলছে তাকিয়া।আরিসা আর আনিসা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“ভাবীমণি তুমি এতো সকালে শাওয়ার নিয়েছো কোন দুঃখে?

গ্রামে নভেম্বরের শুরুতেই হালকা শীতের আমেজ শুরু হয়। সকালের দিকে চারিদিকে কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায়।এর মাঝে শাওয়ার নেওয়া চারটি খানি কথা নয়। আবার যদি হয় ঠান্ডা পানি তাহলে তো কথাই নেই। ঠান্ডা আর জ্বর দুই ভাই বিনা নিমন্ত্রণে হাজির হয়ে যায়।তাকিয়ার হয়েছে তাই।ফরজ গোসল করতে গিয়ে যাতা অবস্থা। গ্রামের পুরনো বাড়ি বলে হিটার এর ব্যবসা নেই। তাছাড়া এই সময় সুখী ঘুমিয়ে আছে বেচারির ঘুম ভাঙ্গানোর একদম ইচ্ছে হয়নি তাকিয়ার তাই ঠান্ডা পানি দিয়েই শাওয়া নেয়। ফলস্বরূপ ঠান্ডা লেগে নাজেহাল অবস্থা। একের পর এক টিস্যু পেপার ফেলছে ঝুড়িতে।

এদিকে দুই বোনের কৌতুহল দেখে হতবিহ্বল তাকিয়া। এখন কি বলে এদের বোঝাবে? ভিশন চিন্তিত মুখে বসে র‌ইলো সে। কথা ঘোরানোর জন্য বললো,
-“সুখী কে বলে আমার জন্য কফি আনার ব্যবস্থা করবে প্লিজ?

আরিসা আচ্ছা বলে নিচে গেল।আর আনিসা বিছানা গুছিয়ে রুমের জানালা খুলে দিয়ে পর্দা গুলো সরিয়ে দিল।
সকালের মিষ্টি রোদ নিমিষেই রুম জুড়ে জায়গা দখল করে নিল। তাকিয়া বিছানা থেকে নেমে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ায়। রোদের গরম উষ্ণতা অনুভব করে মিষ্টি হাসলো। সামনে থাকা আম গাছে টুনটুনি পাখি বসে আছে কি সুন্দর দেখতে ছোট্ট পাখিটি।তাকিয়ার ইচ্ছে করছে একটু ছোয়ে দিতে।
____

জানালা গলিয়ে সূর্যের আলো চোখে মুখে পরতেই কপাল কুঁচকে অস্পষ্ট সুরে ইসরাক বললো,
-“সবুজিনী ঘুমাতে দাও প্লিজ,জানোই তো রাতে ঘুম হয়নি!

শেষের কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেল সাহারা। পর্দা গুলো সরাতে গিয়ে হাত থেমে গেল।এই ভেবে কষ্ট পেল,ছেলে তার পুরোটাই অবাধ্য হয়ে গেছে।ব‌উকে পেয়ে এখন আর মায়ের কথা চিন্তা করার সময় নেই তার।মা রা’গ করুক বা অভিমান যাই করুক তা দেখার প্রয়োজন বোধ করে না।ব্যাথিত মনে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

ইসরাক কারো কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে নেত্রজোড়া মেলে তাকায়। আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখলো সাহারা বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তখন ইসরাক এর বুঝতে বাকি নেই যে তার মা এসেছিলেন। রা’গে দেয়ালে সজোরে ঘু’সি মা’রে ইসরাক।
____

দুপুরবেলা ব্যাপারি বাড়িতে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়!
মুহিব রহমান এবং তার স্ত্রী কাকলী পুলিশ নিয়ে হাজির হন!
এতো বছর পর কাকলী কে দেখতে পেয়ে সবাই আকাশ সম বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়া আছে।নিলুফা বেগম নিরব থাকতে পারলেন না। দৌড়ে এসে কাকলী কে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“বোন তুই! তুই বেঁচে আছিস? তবে আমার মেয়ে ক‌ই? আ.. আমার ছোট্ট ইসু ক‌ই আছে বোন?

কাকলী নিলুফা কে ঝাড়ি মেরে দূরে সরিয়ে বললেন,
-“কিসের বোন? আমার কোন বোন নেই! অফিসার এ্যারেস্ট করুন এদেরকে!এরা সবগুলো মিলে আমার মেয়েকে অত্যা’চার করে মাথা ফা’টিয়ে দিয়েছে!

ইসরাক এর চিন্তাশক্তি তীক্ষ্ণ হয়ে এলো, মস্তিষ্ক সতর্ক হলো। কাউকে কল করে কিছু বললো। তারপর দুতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে কি কি হচ্ছে সেসব দেখতে লাগলো।

এখন সবার মুখে দাঁড়িয়ে আছে কাকলী।তার পাশে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে মুহিব রহমান। সবার একই প্রশ্ন তুই তো মা হ‌ওয়ার সত্তা হারিয়ে ফেলেছিলে!ডাক্তার বলেছিলেন আর কখনো মা হতে পারবে না তবে তোর মেয়ে কোথা থেকে আসল?
কাকলী বিমূঢ় হয়ে গেল। প্রশ্ন গুলো মস্তিষ্কে আ’ঘাত হানছে। সবাই যখন জবাবের আশায় তাকিয়ে আছে তখন, মাথা চেপে ধরে তাকিয়া এসে বললো,
-“মিমা!মিমা তুমি কোথায়? তোমাকে আমি স্পষ্ট দেখতে চাই মিমা! আমি আর সহ্য করতে পারছি না এসব!

এই বলে মাথা চেপে ধরে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে তাকিয়া।তার মস্তিষ্কে আঘা’ত হানছে স্বপ্নেরা বার বার এসে হানা দিচ্ছে। কাউকে স্পষ্ট করে দেখতে পাচ্ছে না কিছুতেই। অনর্গল চোখের পানি ব‌ইতে চলেছে।

সবাই যারপরনাই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে কি ঘটে যাচ্ছে বুঝতেই যেন পারছে না সবাই। সাহারা দৌড়ে এসে তাকিয়ার কাঁদে হাত চেপে ধরে বললেন,
-“তুমি কাকে ডাকছো মিমা বলে?সেই প্রথম দিন এসেও তুমি মিমা বলেছিলে?

তাকিয়া মাথা তুলে তাকিয়ে বললো,
-“যাকে আমি স্বপে দেখি! মনে হয় আমার খুব কাছের কেউ! আমি হারিয়ে ফেলেছি ছোট বেলায়!

সাহারা খাতুন চোখের পানি ছেড়ে দিলেন এ কথা শুনে। তাকিয়া কে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“আমার ইসুপাখি! তুই আমার ইসুপাখি! এতো দিন বললি না কেন সোনা?

নিলুফা বেগম তাকিয়ার কাছে এসে ধপ করে বসে পড়লেন। দুই হাতে গাল চেপে ধরে তাকিয়ে রইলেন,মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।ওষ্ঠদ্বয় কাঁপছে তার।

তার ছোট মেয়ে “ইসরাত বিনতে ইসহাক” যখন দুই বছরের শিশু তখন তিনি আবারো পুত্র সন্তানের জননী হন। ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তখন। ইসরাত কে আদর করবেন দূর একপ্রকার দূরে সরিয়ে রাখেন। কারণ তিনি মনে করেন অবুঝ ইসরাত তার সদ্য নবজাতক ভাইয়ের ক্ষতি করে ফেলবেন।ইসরাত তখন ছোট্ট বয়সে মা’কে এক প্রকার হারায়।
সাহারা খাতুন মায়ের আদরে ইসরাত কে নিজের কাছে আগলে রাখতে শুরু করেন। খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দেন।এক প্রকার মায়ের আদরে ভরিয়ে দেন। ছোট্ট ইসরাত নিজের মা’কে ভুলে সাহারা কে মিমা বলে ডাকে মায়ের আসনে বসায়।

পাশের বাড়ির একটা মেয়ে সাহারা কে জেঠিমা বলে ডাকলে সেই ডাক শুনে শুনে ইসরাত সাহারা কে “মিমা” বলে ডাকে।
_____

একদিন নিলুফার খালাতো বোন কাকলী বায়না করে ইসরাত কে সাথে নিয়ে ট্যুরে যাওয়ার। ঢাকা থেকে অনেক দূরের যাত্রা বলে সাহারা নিষেধ করেন। কিন্তু বোনের কোন সন্তান নেই বলে নিলুফা বেগম অনুমতি দিয়ে দেন ইসরাত কে সাথে নিয়ে যাওয়ার।
সেদিন সাহারা খাতুন ভিশন কষ্ট পান এই ভেবে যে আজকে ইসরাত তার নিজের মেয়ে নয় বলে তার বারন করা সত্ত্বেও নিলুফা তার বোনকে সাপোর্ট করে অনুমতি দিয়ে দিল।

যাই হোক,
বিকালের দিকে খবর আসে কাকলী এবং ইসরাত যেই বাসে উঠেছিলেন সেই বাটা এক দূর্ঘটনায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! বাসের যাত্রীরা একজন ও বেঁ’চে নেই! সাহারা সেদিন মাটি কামড়ে কেঁদেছেন তার ইসুপাখির জন্য।জন্মের পর থেকেই আদর করে “ইসুপাখি” বলে ডাকেন তিনি ইসরাত কে।

সেই থেকে নিলুফা বেগম পাগল প্রায়, নিজেকে দোষারোপ করেন।ভাবেন তার ছেলের জন্য‌ই মেয়েকে হারিয়েছেন। আবারো সদ্য নবজাতক ছেলেকে অবহেলা শুরু করেন। তারপর সাহারা আর লাবিবা মিলে আদর যত্নে বড় করে তুলেন এ.বি. উরুফে আবু বকর সিদ্দিক কে।

সেই ঘটনার পর থেকে মুহিব রহমান এর কোন খুঁজ মিলেনি।অথচ আজকে স্ত্রী সহ জলজ্যান্ত মানুষ হাজির হয়েছেন। তবে তিনি কেন যেন এখনো নিরব আছেন।স্ত্রীর মতো উল্টো পাল্টা কথা বলছেন না।

ইসরাক উপরে থেকে সবটাই অবলোকন করছে কিন্তু এখানে আসছে না।সে চাইছে তারা নিজেরাই যেন সবকিছু বুঝতে পারে।আসল ঘটনা ঠিক কি হয়েছে।…..

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here