গল্প – আমার আমি যে তুমি
পর্ব – 11+12
লেখিকা – ইশানুর তাসমিয়া

আজ প্রায় ২ মাস পর নিজের দেশে ফিরবে সায়ান,,,এখন সে প্লেনে বসে আছে,,,সব পাল্টে গেছে তার জীবনে,,,এখন তার বাড়ি গাড়ি সব আছে,,যা ২ মাস আগেও ছিল না,,,এখন সে পরিপূর্ণ,,,সব ভুল বুঝাবুঝি শেষ করবে সে,,,তার স্ত্রীকে বুঝাবে,,কিন্তু তার প্রিয়তমা যদি না বুঝে,,,,তাহলে তার এ এত কিছু সবই বৃথা,,,,ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সায়ান,,,

একটা পার্কের বেঞ্চে রুহি আর রুহান বসে আছে,,,রুহান সামনের টেবিলে তার ২ পা রেখে আরামসে বসে বসে কোক খাচ্ছে,,, আর রুহি রুহানের পা টিপে দিচ্চি,,,দীর্ঘ ১ঘন্টা ধরে এ কাজ করছে রুহি,,,ভীষণ বিরক্তি লাগছে তার,,আর রুহান,,তার তো আরামের শেষ নেই,,,,,

রুহিঃ আর কতক্ষন এভাবে বসে থাকবো রুহান,,,আপনি আমাকে বলেছেন আপনার পা টিপে দিলে আপনি আমাকে মার্কেটে নিয়ে যাবেন,,,,এখনও নিয়ে যাচ্ছেন না কেন,,,হ্যাঁ,,?? বসে বসে কোক খাচ্ছেন খালি,,,,😠😠

রুহানঃ কেন,,,??তোমার কি খেতে ইচ্ছা করছে নাকি,,,??🤨🤨

রুহিঃ হ্যাঁ করতাছে,,,,এখন কি করবেন,,,??😠😠

রুহানঃ রুহি ওদিকে ফিরো,,,আমার কোকে নজর দিবা না,,,আমি চাই না,, তোমার বদ দোয়ায় আমার পেট খারাপ হোক,,,,

রুহিঃ আপনার সমস্যা কি,,,

রুহানঃ আমার সমস্যা হলো তুমি আমার পা টিপছো না কেন,,,??টিপো তাড়াতাড়ি,,, ভীষণ ব্যথা করছে পায়ে,,,,

রুহিঃ দেখুন মিস্টার রুহান !!!

রুহানঃ জ্বী,,মিস পাংখা,,,😁😁

রুহিঃ কি,,,পাংখা,,,??

রুহানঃ হ্যাঁ,,,নাম শুনো নাই জীবনেও,,,??আরে এটা নিয়ে একটা গানও আছে,,, কি জানি,,,ও হ্যাঁ মনে পড়েছে,,,

,,,,পাংখা, পাংখা,উপরে পাংখা, নিচে পাংখা,, সবখানে পাংখা,,,আমার কাছেও পাংখা,,,

রুহিঃ এইডা কি ধরণের গান,,,🤨🤨আমার যতটুকু মনে পড়ে মমোতাজ আন্টির গান তো এমন ছিল না,,,,

রুহানঃ আরে,,এটা আমার প্রতিভা,,, দেখো কি সুন্দর গান বানিয়েছি আমি,,,😎😎

রুহিঃ হুম,,, যে প্রতিভা,,,১আনায়ও কেউ কিনবে না,,,,

রুহানঃ এ্যাঁ,,তোমাকে বলছে,,,,

রুহিঃ রুহান এগুলো বাদ দিন,, আমাকে সবার কাছে মার্কেটে নিয়ে যান প্লিজ,,,,

রুহানঃ নো,,,

রুহিঃ প্লিজ,,,

রুহানঃ নো বেইবি,,, নো,,,

রুহিঃ উফফ অসহ্য,,,,😠😠

রুহানঃ উফফ,,,সহ্যকর,,,,😁😁

রুহি আর কিছু বলল না,, চুপ চাপ বসে আছে বেঞ্চে,,মাথাটা একদম গরম হয়ে আছে তার,,”,একটা ছেলে কিভাবে এত পেইন দিতে পারে,,,আল্লাহ মালুম,,,,” রুহি এগুলো ভাবছে,,, হঠাৎ রুহান রুহির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,,,

রুহানঃ রুহি,,,

রুহিঃ কি,,,,

রুহানঃ শুনো না,,,🥺🥺আ,,!!

রুহিঃ কি হইসে কি আপনার হ্যাঁ,,,, এত জ্বালান কেন,,,??😠😠

রুহানঃ আমি হিশু করব,,,,

রুহিঃ কি,,,??[ চিল্লিয়ে ]

রুহানঃ না মানে,, আমার হিশু আসছে,, আমি হিশু করব,,,,

রুহিঃ তো জান না,,,, আমাকে বলতাছেন কেন,,,

রুহানঃ তুমিও আসো না,,,,

রুহিঃ আপনার কি মাথা ঠিকাছে মিস্টার রুহান,,,জান এখান থেকে,,,😠😠

রুহান অসহায় মুখ করে সেখান থেকে চলে যায়,,,আর রুহি মনে মনে এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,,,,
.
.

এদিকে রুহান সাহেলকে আগেই মেসেজ করে দিয়েছে যে,,,তার আর রুহির মার্কেটে আস্তে দেড়ি হবে,,,,তাই সাহেল এখানের সবটা সামলে নিয়েছে,,,

রোদ আর সবাই শাড়ি সিলেক্ট করছিলো,,,তখনই রোদ হঠাৎ সাহেলকে বলে উঠে,,,

রোদঃ আচ্ছা সাহেল,,,রুহি কি তোমাকে আগে থেকেই চিনে,,না মানে,,,,তোমাদের কে দেখে মনে হলো তোমারা ২ জন ২ জনকে চিনো,,,

সাহেলঃ হুম চিনি,,,

রোদঃ কিভাবে,,,,

সাহেলঃ এখন না ,,রাতে ছাদে বলব,,,

রোদঃ ওক্কে [ মুচকি হেসে ]

সাহেলঃ আচ্ছা রোদ শুনো,,,

রোদঃ হুম,,,

সাহেলঃ তোমাকে না খুব সুন্দর লাগবে এ লাল শাড়িতে,,,,

কথাটা শুনে রোদ লজ্জা পেয়ে যায়,,,তা দেখে,,, পেছন থেকে হঠাৎই কেউ বলে উঠে,,,

—-শাকচুন্নিরা বুঝি আবার লজ্জাও পায় নাকি,,,,

রোদঃ রুহান,,,শাকচুন্নি হবে তোর বউ,,,

রুহানঃ খবরদার,, আমার বউকে কিছু বলবি না,,,

সাহেলঃ তুইও আমার বউকে কিছু বলবি না,,,

রুহানঃ বউ কিসের রে তোর,,,এখনও বিয়ে হইসে তোদের,,,,

সাহেলঃ হয়নাই,, হবে,,,

রুহানঃ দেখা যাবে,,,

রুহিঃ থাক সাহেল ভাই,,, উনাকে কিছু বলে লাভ নেই,,,গাধারা নিজে নিজে যা বুঝে আরকি,,,

রুহানঃ ও-ই,,,গাধা বলতে তুমি কি বুঝাচ্ছো হ্যাঁ,,,,,

রুহিঃ আপনার মাথা,,,

রুহানঃ তোমারও মাথা,,,

রুহি রুহানকে পাত্তা না দিয়ে রোদের সাথে শাড়ি দেখতে ব্যস্ত হয়ে যায়,,,কেউ যে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে,,, এতে রুহির কোনো খেয়াল নেই,,,সে তো শাড়ি এক মনে দেখেই যাচ্ছে,,,,,হঠাৎ একটা শাড়ি রুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে রোদের মা রুহিকে পড়ে আস্তে বলে,,,রুহি শত বারণ করার পড়ও রুহিকে ও-ই শাড়ি নিতে হয়,,,

ট্রায়াল রুমের একটু দূরেই রুহান দাড়িয়ে ছিল,,,তাই ট্রায়াল রুমে যাওয়ার সময় রুহি রুহানকে একটা ভেংচি দেয়,,সাথে সাথে রুহানও একটা ভেংচি দেয় রুহিকে,,,যা দেখে সাহেল জোড়ে জোড়ে হেসে দেয়,, আর বলে,,,

সাহেলঃ তুই পারিসও,,,

রুহানঃ মেরে জান কে লিয়ে তো মেরা জান ভি কুরবান হে মেরে দোস্ত,,,[ রুহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ]

.
.

কিছুক্ষন পর রুহি শাড়িটা পরে বের হয়,,,রুহান মনে হয় অনেকটা সকড খায়,,,অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে,,,নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যাচ্ছে তার,,”,,,ইচ্ছা করছে এখনই রুহিকে একটু ছুয়ে দি,,,”

প্রায় বেশ কিছুক্ষন পরও যখন রুহান নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না,,,তখন সে তার চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে রুহিকে ডাইনির মতো লাগছে,,,ব্যস কাজ হয়ে গেলো,,,নিজেকে কন্ট্রোল করা যেন সহজ হয়ে গেছে তার,,,
…………..
…………………
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……….]

গল্প – আমার আমি যে তুমি
পর্ব – ১২
লেখিকা – ইশানুর তাসমিয়া

— আচ্ছা আমরা হানিমুনে কোথায় যাবো ছোকিনা বানু,,,,[ বিছানায় আয়েশ করে বসে নিজের নখ দেখতে দেখতে ]

কথাটা শুনে রুহি হাবলার মতো রুহানের দিকে তাকিয়ে আছে,,,একবার রুহানের দিকে তাকায় তো আরেকবার নিজের দিকে তাকায়,,,,তারপর জোড়ে একটা চিল্লানি দেয় সে,,,করন….

.
.
.

মার্কেট থেকে শপিং করে বাসায় আসতে সবার প্রায় রাত ৯টা বাজে,,,বাইরে থেকেই খেয়ে এসেছে সবাই,,,বাসায় এসেই সবাই যার যার রুমে চলে যায়,,,রুহি নিজের রুমে যেতে নিবে তখনই রুহান গান গাওয়া শুরু করে,,,

রুহানঃ “তুঝে দেখা তো য়ে জানা সানাম,,,,
পেয়ার হতা হে দিভানা সানাম,,,,
আব এয়া সে কাহা যায়ে হাম,,
তু তো দিখতি হ্যাঁ ডায়ান কি বেহেন,,,,”

রুহিঃ ওয়াট,,,,[ চিল্লিয়ে ] ডাইনির বোন,,,,??😠😠

রুহান কিছু না বলে বাঁশি বাজাতে বাজাতে নিজের প্যান্টের পকেটে হাত রেখে,,স্টাইল করে নিজের রুমে চলে যায়,,,রুহির দিকে তাকাবার প্রয়োজন বোধও করে না সে,,,,

রুহান যেতেই রুহি একটা চিল্লানি দিয়ে নিজের মাথার চুল গুলো চেপে ধরে,,,অসহ্য লাগে তার রুহানকে,,, ” একটা মানুষ কিভাবে এত ইরেটেটিং হয়,,,উফফ,,,”

রুহি খুব ক্লান্ত আজকে,,,, রুমে এসেই সে ওয়াশরুমে চলে যায়,,,তারপর ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে রুহান তার বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে নিজের নখ পর্যবেক্ষন করছে,,,কিন্তু রুহান এখানে আসলো কিভাবে,,,??রুমের দরজা তো বন্ধ,,,তাছাড়া রুহি শুধু একটা তাওয়াল গায়ে পেচিয়ে আছে,,,

রুহি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিল তখনই রুহান তাকে এ কথাটা বলে,,আর তখনই রুহির হোষ আসে সে শুধু তাওয়াল পড়ে আসে,,,তাই রুহি আর কিছু না ভেবে জোড়ে একটা চিল্লানি দেয়,,,,

এতে রুহানের যেন কোনো কিছুই যেয়ে আসে না,,, সে আগের মতোই বসে বসে তার নখ পর্যবেক্ষন করছে,,, হঠাৎ সে বলে উঠে,,,

রুহানঃ তোমার কত কষ্ট তাই না রুহি,,,এমন ফাটা গলার আওয়াজ নিয়ে খুব কষ্ট হয় তোমার,,,ভাগ্যিস রুমটা সাউন্ড প্রুফ,,,নাহলে হয়তো এতক্ষনে বাড়ির সবাইকে হসপিটালে এডমিট হতে হতো,,,

রুহানের কথা শুনতেই রুহি রাগে গজগজ করা শুরু করে,,,রাগি গলায় বলে,,,

রুহিঃ তাহলে আপনি এখনও এখানে বসে আছেন কেন,,,??যান হাসপাতালে যান,,,,

রুহানঃ কস,,আই এম আ সুপার ম্যান,,,,

রুহিঃ এ্যাঁ,,,সুপার ম্যান,,,আন্ডা,,,

রুহানঃ তোমার আন্ডা খাইতে ইচ্ছা করলে যাও কিচেনে যেয়ে আন্ডা বানাই খাও,,,পারলে আমার জন্যও আনিও,,,আম ভেরি হাংরি,,,যাদি পারতাম,, তোমাকে উথআউট ওয়াটার খেয়ে ফেলতাম,,,হা ইয়ামি😋 😋

রুহিঃ ওয়াট,,,,??😠😠

এবার রুহান রুহির দিকে তাকায়,,,আর এক দৃষ্টিতে রুহিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে থাকে,,,সাথে সাথে রুহি নিজেকে ঢাকতে শুরু করে,,, তা দেখে রুহান একটা বাঁকা হেসে বলে,,,

রুহানঃ ইউর লুখিং সো শাকচুন্নি বেব,,এত সুন্দর কখন থেকে হইলা তুমি,,,ট্রাস্ট মি,,তোমার মতো ডাইনি আমি জীবনেও দেখি নি,,,,

রুহিঃ কি,,?? বদ পোলা,, আমি বলছি আমাকে দেখতে,,,আর,,আর আপনি আসছেন কিভাবে এখানে,,,,??😠😠

রুহানঃ আই এম আ সুপার হিরো জান,,তোমার কাছে আসতে আমাকে কেউ আটকাতে পারে না,,,

রুহিঃ রুহান,,,আপনি আমার রুমে কিভাবে এসেছেন,,,??😠😠

রুহানঃ উফফ,,,দজ্জাল মাইয়ার সব জানতে হয়,,,,না জানলে হয় না,,,

রুহিঃ😠😠😠

রুহানঃ আরে তোমার বারান্দা দিয়ে আসছি,,,

রুহিঃ কি,,??কিভাবে,,??

রুহানঃ কি কিভাবে,,,পাইপ দিয়ে,,,😒😒

রুহিঃ সাচ আ ইরেটেটিং পারসন,,, যান আপনার রুমে যান,,,

রুহানঃ অকে বেব,,এন্ড ওয়ান থিংক,, ইউ আর রেইলি লুকিং শাকচুন্নি,,,

বলেই রুহান রুহির গালে একটা চুমু দিয়ে বাঁশি বাজাতে বাজাতে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে চলে যেতে নেয়,,,তারপর কি মনে করে দরজার কাছে আসতেই থেমে যায়,,,আর রুহির দিকে তাকিয়ে বলে,,,

রুহানঃ বেবি,,,তুমি কি আমাদের হানিমুনেও এভাবে থাকবা,,,না মানে তাহলে তো আমার অজ্ঞান হতে হবে,,,[ চোখ টিপ মেরে ]
…………..
…………………
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……….]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here