গল্প – আমার আমি যে তুমি
পর্ব – ২০
লেখিকা – ইশানুর তাসমিয়া
—” মিস্টার রুহান,,আপনাকে কি কেউ ঘর মুছা শিখায় নি ?? ঠিক করে মুছুন।দেখুন ও-ই জায়গায় কত ময়লা লেগে আছে।”
বলেই রুহি মুচকি মুচকি হাসছে,,,আর রুহান অসহায় ভাবে রুহির দিকে একবার তাকিয়ে আবার ঘর মুছা শুরু করে,,,,
প্রায় ৩ ঘন্টা পর রুহানের ঘর মুছা শেষ হয়,,,,রুহান ঘর মুছা শেষ করে যেন বিশ্ব জয়ের একটা হাসি দেয়,,,,তারপর যেই না রুহির পাশে বসতে যাবে,,,,অমনি রুহি চেঁচিয়ে উঠে,,,,,,,
—” কিরে কিরে !! এখানে বসছেন কেন?? যান বাথরুমে আমার আর আপনার প্রায় ৫০টার মতো কাপড় আছে,,, ওগুলো ধুঁন!!”
—” কি?? আবার কাপড় ধুঁবো??”🥺🥺
—” হ্যাঁ,,, কেন?? কোনো কি সমস্যা?? [ ভ্রুঁ নাচিয়ে ]
রুহির কথা শুনে রুহান অসহায় ভাবে একটা হাসি দিয়ে বলে,,,,
—” না না,,, কোনো সমস্যা নেই।তুমি এখানে বসো আমি কাপড় ধুঁয়ে আসছি,,,আর কোনো কিছু লাগলে বলো হ্যাঁ?? ”
—” আপাতত কিছু লাগবে না।কিন্তু আপনি একটা কাজ করুন।আমাকে একটু বারান্দায় নিয়ে যান।”
রুহি বলতে না বলতেই রুহান রুহিকে কোলে তুলে নেয়।তারপর বারান্দায় নিয়ে চেয়ারে খুব যত্ন করে বসিয়ে রুহির কপালে একটা গভীর চুমু দিয়ে বলে,,,,,
—” তুমি যা বলবে আমি তা করতে রাজি রুহি।শুধু আমাকে রেখে কখনও চলে যেও না,,, সত্যি বলছি তুমি বিহীন আমি থাকতে পারবো না,,,”
বলেই রুহান রুহির কপালে আরেকটা চুমু দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়,,,আর রুহি,,,সে তাকিয়ে থাকে তার সামনে থাকা সুন্দর প্রকৃতির দিকে,,,যেখানে আছে বিশাল বড় পাহাড় আর গাছপালা,,,,এসব সুন্দর প্রকৃতি দেখে রুহির মন জুড়িয়ে যায়,,,এগুলো দেখলে মনটাও খুব হালকা হয় রুহির,,,
কিন্তু এখন কেন যেন মন হালকা হচ্ছে না,,,বারবার রুহানের কথা ভাবছে সে,,,,রুহির মনে এক বিরাট প্রশ্ন,,,” রুহান যা করেছে তার জন্য কি তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত??” কিন্তু ও যা করেছে তা তো রুহিকে পাওয়ার জন্য,,,শুধু রুহানের রুহিকে কাছে পাওয়ার রাস্তাটা ভুল ছিল,,,হয়তো সত্যিই রুহান রুহিকে ভালোবাসে,,,,!!
এভাবে কিছুক্ষন ভাবতে থাকে রুহি হঠাৎই কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে সে,,,তারপর রুহানকে জোড়ে জোড়ে ডাকা শুরু করে,,,,
রুহির কন্ঠ শুনে রুহান তাড়াতাড়ি রুহির কাছে আসে,,,তারপর নিজের হাতে লেগে থাকা পানি প্যান্টে মুছতে মুছতে রুহিকে বলে,,,,
—” কিছু কি হয়েছে রুহি??”
রুহির যেন রুহানের কোনো কথা কানে ঢুকছে না,,, সে হা করে রুহানের দিকে তাকিয়ে আছে,,,চিকন একটা গেঞ্জি,,,হাফ প্যান্ট,,, কপালে আর পায়ের হাটুতে সাবানের ফেনা লাগানো,,,মনে হচ্ছে রুহান কাপড় ধুঁতে যেয়ে কাপড়ের সাথে কুস্তি করে এসেছে।
রুহিকে এভাবে তাকাতে দেখে রুহান ভ্রুঁ কুঁচকে রুহিকে জিজ্ঞেস করে,,,,
—” কি হয়েছে জান??তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন??
এবার আর রুহি হাসি আটকাতে পারলো না,,,জোড়ে জোড়ে হেসে দিলো,,,,আর বলতে লাগলো,,,
—” রুহান আপনাকে পুরাই জোকার লাগছে,,,”🤣🤣🤣🤣
—” তা তো লাগবেই।যদি বউ এমন পেত্নি হয়,,,তাহলে বরদের জোকার হতেই হয়,,”😏😏
কথাটা শুনে রুহির হাসি বন্ধ হয়ে যায়,,,কিছুটা রাগি কন্ঠে সে রুহানকে বলে,,,,
—” হইছে,,, আর মুখ বেকাতে হবে না ,,,, দিন তোয়ালে দিন,,,আমি আপনার গায়ে লেগে থাকা সাবানের ফেনা গুলো মুছে দিচ্ছি,,,”
—” ওকে পেত্নি ”
—” কি??😠😠”
—” আই লাভ ইউ “[ চোখ টিপ দিয়ে ]
—” অসভ্য ”
—” আহা কতদিন পর শুনলাম ডাকটা,,,আই জাস্ট লাভ ইট,,,দিল খুশ কার দিত্তা,,,”
—” ঢং ”
বলেই রুহি একটা ভেংচি দিয়ে তোয়াল দিয়ে রুহানের গায়ে লেগে থাকা সাবানের ফেনা মুছে দেয়,,,আর বলে,,,
—” এখন আমাকে কোলে করে নিচে দিয়ে আসুন ”
—” তাহলে কাপড় ধুঁতে হবে না” [ খুশি হয়ে ]
—” জীবনেও না,,আমাকে দিয়ে এসে কাপড় ধুঁবেন,,,আর একটা কাজ করুন,,,লুজ্ঞি পড়ে তারপর ধুঁবেন,,,তাহলে আপনাকে একেবারে কাজের ব্যটা লাগবে,,,”🤣🤣🤣
—” পড়তাম না লুজ্ঞি,,,আর তাছাড়া লুজ্ঞি কেমতে পড়ে,,,”
—” যেমতে পড়ে তেমতে পড়বেন,,নাইলে…..বুঝছেন তো,,,”
—” ঠিকাছে পড়মু,,,পড়ে কারো সামনে খুইলা গেলে আমার দোষ নেই ”
—” নির্লজ্জ ”
—😒😒😒
এরপর রুহান রুহিকে কোলে করে নিচে নিয়ে যায়,,,,নিচে যেতেই দেখে বাড়ির সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে,,,, রুহি আর রুহানকে দেখে সাহেল বলে উঠে,,,
—” কিরে তোর এ অবস্থা কেন রুহান,,,আর রুহি কেমন আছো তুমি,,,??”( সাহেল)
—” জ্বী ভাইয়া ভালো,,, আপনি কেমন আছো,,,??”( রুহি)
—” আমিও ভালো আছি,, আর রুহান কিছু বলিস না কেন,,,??”(সাহেল)
—” আমি আর কি বলব ”
—” তুই নাচ গর্ধব “( রোদ)
—” তুই নাচ গাধি আর তাছাড়া আমার কাজ আছে আমি যাই “( রুহান)
বলেই রুহান রুহিকে সোফায় বসিয়ে সেখান থেকে চলে যায় রুমে,,,কাপড় ধুঁতে।।
রুহান যেতেই সায়ান রুহিকে বলে,,,
—” কেমন আছো রুহি?? “( সায়ান)
—” হুম ভালো,,,প্রিয়া কেমন আছো তুমি?? “( রুহি)
—” ভালো “(প্রিয়া)
বলেই প্রিয়া চুপ হয়ে যায়,,,তার কেন যেন খুব অসস্থি লাগছে,,,সায়ানের রুহির সাথে কথা বলা মটেও পছন্দ হয় নি তার,,,কিছুক্ষন ওভাবে বসে থেকে সে নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়,,,প্রিয়াকে রুমে যেতে দেখে সায়ানও তার পিছে পিছে যায়,,,
সায়ানকে রুমে ঢুকতে দেখে প্রিয়া কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে,,,,,
—” প্লিজ সায়ান আমার সামনে রুহির সাথে কথা বলবেন না,,,, সত্যি বলছি,, আমার খুব কষ্ট হয়,,,”
প্রিয়ার কথা শুনে সায়ান একটা মুচকি হেসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে,,,তারপর প্রিয়ার কাঁধে নিজের থুতনি রেখে বলে,,,,
—” এটার আদাত করে ফেলো মিসেস সায়ান খান,,,কারন এখন থেকে প্রতিমুহূর্ত কষ্ট দিবো তোমাকে আমি,,,ভালোবাসার কষ্ট ”
বলেই সায়ান প্রিয়াকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে তার ঠোঁট দখল করে নেয়,,,আর প্রিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,,,বুঝতে পারছে না,, তার সাথে কি হচ্ছে,,, আসলেই কি এটা সত্যি নাকি তার স্বপ্ন,,,সায়ান কি বুঝাতে চাচ্ছে তাকে,,,নাকি এটা তার প্রতি সায়ানের একটু আবেগ,,,,
কিন্তু যাই হোক,,,প্রিয়ার কেন যেন মনে হচ্ছে এখন থেকে হয়তো তাদের ২টো মন এক হতে যাচ্ছে,,,, ভেবেই সেও সায়ানের সাথে তাল মিলায়,,,,
এদিকে রোদ, সাহেল আর রুহি মিলে গল্প করছে,,, গল্পের বিষয় হচ্ছে তারা কালকে সন্ধ্যায় মেলায় যাবে,,,,
—“তাহলে কালকে মেলায় যাবো তো সাহেল “(রোদ)
—” দেখি”(সাহেল)
—” দেখি না আমরা যাবোই যাবো হু”(রোদ)
—” কিন্তু রোদ,,,রুহিকে এ অবস্থায় কিভাবে নিয়ে যাবো “( সাহেল)
—” আমার চিন্তা করতে হবে না ভাইয়া,,,আমার পার্মানেন্ট বর আছে না,, সে আমাকে কোলে করে নিয়ে যাবে,, কোনো সমস্যা নেই,,,,”(রুহি)
রুহানের নাম নিতে না নিতেই রুহান সবার মাঝে এসে হাজির হয়,,,সবার নজর এখন রুহানের দিকে,,,কিছুক্ষন রুহানের দিকে তাকিয়ে থেকে সবাই একসাথে হেসে দেয়,,,,হাসতে হাসতে রোদ বলে,,,
—” আরে সাহেল,,দেখো একে,,, কোন কাজের ছেলে এসে গেছে আমাদের বাসায়,,,খেদাও এরে “🤣🤣(রোদ)
—” ঠিক বলছ,,,এ লুজ্ঞি পরা ছেলে,,, তুমি কে হ্যাঁ,,?? আমাদের বাসায় কি করছ,, জানো রুহান দেখলে তোমাকে মেরে ফেলবে,,,,যাও এখান থেকে,,, “🤣🤣(সাহেল)
—” আরে ভাইয়া,, এত সম্মান দিচ্ছেন কেন,,,?? ছেলে না কাজের ব্যটা বলুন,,,,”😁😁(রুহি)
—” যত হাসার হেসে নাও সবাই আমারও দিন আসবে “😒😒(রুহান)
বলেই রুহান আর কোনো কথা না বলে রুহিকে কোলে করে নিয়ে যায় তাদের রুমের দিকে,,,,এটা দেখে রোদ সাহেলকে খোঁচা দিয়ে বলে,,,,
—” দেখো আমার ভাই কত রোমেন্টিক,,,রুহিকে কি সুন্দর কোলে নিয়ে রুমে যাচ্ছে,,,, আর তুমি,,,আনরোমেন্টিকের ডিব্বা,,আমার ভাই থেকে কিছু শিখো যাও ”
—” তাই নাকি,,,ওয়েট,,”
বলেই সাহেল রোদের গালে টুপ করে কয়েকটা চুমু দিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে,,,আর রোদ চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষন বসে থেকে ভাবতে থাকে তার সাথে কি হয়েছে,,,,পরক্ষনে বুঝতে পেরে একটা মুচকি হাসি দেয়,,,,
এদিকে রুহান রুহিকে বিছানায় বসিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই তার লুজ্ঞি খুলে পড়ে যায়,,,,এটা দেখে রুহি কিছুক্ষন চোখ বড় করে রুহানের দিকে তাকিয়ে থাকে,,, পরক্ষনে রুহি জোড়ে জোড়ে হেসে দেয় আর বলতে থাকে,,,,
—” ভাগিস্য লুজ্ঞির ভেতর হাফ প্যান্ট পড়া ছিলেন,,, নাহলে তো,,,,,,”🤣🤣
…………..
…………………
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……….]