গল্প – আমার আমি যে তুমি
পর্ব – ১৫
লেখিকা – ইশানুর তাসমিয়া

তোকে কতবার বলেছি আমার পাশে ঘেষবি না,,,তাহলে নির্লজ্জের মতো আমার কাছে আছিস কেন,,,??যা এখান থেকে,,,,,

সায়ানের এমন কথায় খুব কষ্ট পায় প্রিয়া,,,সায়ান এমন করে কেন তার সাথে,,,সেটা বুঝতে পারে না সে,,,প্রতিবার প্রিয়া সায়ানের কাছে গেলে সায়ান তাকে অপমান করে,,,,কথা শুনায়,,,আসলেই কি প্রিয়া এত খারাপ,,তাকে কি মেনে নেওয়া যায় না,,,,ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,,, কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে তার,,,কিন্তু তাতেও যে সায়ানের আপত্তি,,,এভাবেই সুখে দুঃখে কেটে যায় ৬টা মানুষের রাত,,,,

.
.
.

সকালে……

রোদঃ ওই এত কিসের ঘুম তোর,,, মদ কি এখনও শরীর থেকে কাটে নি,,,,

রোদের কথায় ধরফোরিয়ে সাহেল শোয়া থেকে উঠে যায়,,,,কোনোমতে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে,,,

সাহেলঃ এমন করো ক্যান জান,,,,??আর একটু ঘুমাতে দাও না,,,,এমনেও কালকে রাতে ঘুমাতে পারি নি,,,,

বলেই সাহেল আবার শুতে নিলে রোদ টান দিয়ে সাহেলকে বসিয়ে দেয়,,,আর বলে,,,,

রোদঃ তোমার ঘুমাতে হবে না এত,,,যাও ফ্রেশ হও গিয়ে,,,, শক কত ঘুমাবে সে,,,,[ ভেংচি কেটে ]

রোদ চলে যেতে নিকে সাহেল রোদের হাত টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে,,,,তারপর নিজের মুখ রোদের একদম কাছে নিয়ে বলে,,,,,

সাহেলঃ এত উড়িস কেন তুই রোদ,,,বলে দিচ্ছি,,,আজকে রাতেও যদি এমন করিস,,,তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে,,,,

রোদঃ আগে ফ্রেস হন গিয়ে,,,, গায়ের থেকে এখনও গন্ধ বের হচ্ছে,,, ছি,,,,

বলেই রোদ রুম থেকে বের হয়ে যায়,,,,আর সাহেল রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,,,

” বিয়া কইরা কি লাভ হইলো,,,যদি গালি আর এ ছি শব্দটাই শুনতে হয়,,,,”

.
.
.

এদিকে রুহান এখনও ঘুমিয়ে আছে,,,কালকে রাতে রুহান রুহির রুমেই ছিল,,,রুহি সোফায়,,,আর রুহান বিছানায় ঘুমিয়েছে,,,,অনেক কষ্ট হয়েছে রুহির রুহানকে সামলাতে,,,ঘুমের মধ্যে কিসব বলছি রুহান,,,,যার শব্দে রুহি রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারে নি,,,

ভোর রাতের দিকে চোখ লেগে আসে রুহির,,,আর সেও ঘুমিয়ে পরে,,,,সকালে যখন ঘুম থেকে উঠে,, তখন প্রথমেই সে রুহানের ঘুমন্ত মুখ দেখে,,, কি নিষ্পাপ চেহারা,,,কে বলবে এ ব্যটা আস্ত গুন্ডা,,,,যেমনই হোক,,, মনের অনেক ভালো ছেলে,,,যা রুহি এ কয়েকদিনে বুঝেছে,,,,

রুহি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুহান এখনও ঘুমিয়ে আছে,,,,তাই রুহানকে আস্তে করে ডাক দেয় সে,,,কিন্তু রুহানের কোনো সাড়া শব্দ নেই,,,আরও কয়েকবার ডাকার পরেও ফলাফল শূন্য,,,,,

এবার রুহির মাথা চরম পর্যায়ে চলে গেছে,,,,”আরে এত কিসের ঘুম,,,আস্তা গন্ডার এনা এ ছেলে,,,, এত ডাকি তবুও ঘুম ভাংছে না,,,, “ভেবেই অনেক জোড়ে রুহান বলে ডাক দেয় রুহি,,,,সাথে সাথে রুহান রুহিকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,,,,তারপর রুহিকে জড়িয়ে ধরে রুহির গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়,,,,

রুহিঃ ছাড়ুন রুহান,,,কি করছেন আপনি,,,,??

রুহানঃ আমার সাথে একটু ঘুমাও না প্লিজ রুহি,,,,রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি আমার,,,,

রুহানের কথা শুনে মাথা আরও চরম পর্যায়ে পৌছায় রুহির,,,” বলে কি পোলায়,,,রাতে বলে তার ঘুম হয় নি,,,,নিজে রাতের বেলা নাক ডেকে ডেকে ঘুমিয়েছে,,, আর সে বলে সে নাকি রাতে ঘুমাতে পারে নি,,,যত্তসব,,,”

রুহিঃ আমি দেখছি আপনি কেমন ঘুমিয়েছেন,,,এখন ছাড়ুন,,,

রুহানঃ উহু,,,ছাড়বো না,,,

বলেই রুহান রুহিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরার আগেই রুহি রুহাকে ধাক্কা দেয়,,,আর উঠে যায় বিছানা থেকে,,,,রুহি উঠতেই রুহানও উঠে বসে,,,,রুহান বসতেই খেয়াল করে রুহানের গায়ে শার্ট নেই,,,,সাথে সাথে সে নিজেকে চাদর নিয়ে ঢেকে ফেলে,,,,ন্যাকা কন্ঠে রুহিকে বলে,,,,

রুহানঃ সয়তান মেয়ে,,,তুমি আমার ইজ্জত নিয়ে নিলে,,,এ শিক্ষা তোমার,,,কিভাবে পারলে আমার ইজ্জত নিয়ে খেলা করতে,,,ছি রুহি ছি,,, আমি তো তোমাকে ভালো মনে করতাম,,,,[রুহির দিকে আঙুল তুলে]

রুহি এতক্ষন রুহানের এসব নটাংকি দেখছিল,,,,সে পুরাই অবাক,,একটা ছেলে কিভাবে পারে এত নাটক করতে,,, কিন্তু রুহি বুঝতে পারছে না রুহানের এমন নাটক করার কারন কি,,,,বিষয়টা বুঝার জন্য রুহানকে বলে,,,,

রুহিঃ মানে,,,??

রুহানঃ মানে,, কি মানে হ্যাঁ,,, আমার ইজ্জদ নিয়ে এখন মানে মানে করছ রুহি,,,আমি তোমার নামে ছেলে নির্যাতনের মামলা দিবো,,,,,,ইজ্জত হানির মামলা দিবো,,,হু,,,,

রুহিঃ আপনার মাথা ঠিক আছে রুহান,,,কিসব যা তা বলছেন,,,,😠😠

রুহানঃ আমি ঠিকই বলছি,,,কালকে রাতে আমার মতো একটা নিরীহ ছেলেকে একা পেয়ে তুমি…..!![ ন্যাকা কান্না করে ]

রুহিঃ আমার কিন্তু রাগ উঠছে রুহান,,,স্পষ্ট করে বলুন কি হয়েছে,,,,,😠😠

রুহানঃ তুমি আমার শার্ট খুলেছো কেন,,,তোমার লজ্জা করে না এমন করতে,,,,

এতক্ষনে রুহি বুঝতে পেরেছে,,,, মহাসাহেব কেন এমন করছে,,,বিরক্তি নিয়ে রুহি বলে,,,,,

রুহিঃ আপনার লজ্জা ছিল না আমার কাছে এসে মদ খেয়ে তামাশা করার সময়,,,,তাছাড়া আপনার শার্ট মদ লেগে পুরো ভিজা ছিল,,,তাই আমি খুলেছে,,,নাহলে আপনার শার্ট খুলার কোনো ইচ্ছা ছিল না আমার,,,,

রুহানঃ ও এ-ই ব্যপার,,,,

বলেই রুহান নিজের গায়ে জড়িয়ে থাকা চাদর দূরে ছুড়ে মেরে,,,রুহির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়,,, তা দেখে রুহি বলে উঠে,,,,

রুহিঃ কি,,এখন আপনার লজ্জা করছে না,,,,,

রুহানঃ নো বেবি,,,,তোমার সামনে কিসের লজ্জা,,,, আমি তো জাস্ট দুষ্টামি করছিলাম মাই বেব,,,,[ বাঁকা হেসে ]

রুহিঃ এখন যান,,,,আর দুষ্টামি করতে হবে না,,,,

রুহানঃ ওকে বেব,,,[ চোখ টিপ মেরে ]

বলেই রুহান দরজার দিকে এগোতে লাগলে রুহি রুহানের হাত ধরে ফেলে,, আর বিরক্তি কন্ঠে বলে,,,,

রুহিঃ আরে আরে,,, ওইদিক দিয়ে কোই যাচ্ছেন,,,,,??

রুহানঃ কেন নিজের রুমে,,,,??তুমিই তো বললা যেতে,,,যদি না যেতে বলো তাহলে কিন্তু আমার থাকতে অসুবিধে নেই,,,,,😏😏

রুহিঃ আরে দরজা দিয়ে কেন যাচ্ছেন,,,কেউ যদি দেখে আপনি আমার রুম থেকে এ সময় বের হচ্ছেন তাহলে কি কেলেংকারিটা হবে আপনি বুঝতে পারছেন,,,,

রুহানঃ ভালোই হবে,,,আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে,,,,কি বলো😁😁

রুহিঃ যান বারান্দা দিয়ে নিজের রুমে যান,,,,😠😠

রুহিঃ ও,,,কে,,,[ মন খারাপ করে ]

রুহান একবার বারান্দায় গিয়ে আবার রুহির কাছে আসে,,,তা দেখে রুহি বলে উঠে,,,,

রুহিঃ আবার কি,,,,

রুহানঃ একটা কিছু দিতে ভুলে গিয়েছিলাম,,,,

রুহিঃ কি,,,,

রুহান কিছু না বলে রুহির কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে চলে যায়,,,এতে রুহি আনমনেই বলে উঠে,,,,

“পাগল একটা,,,[মুচকি হেসে]”

.
.
.
.

টেবিলে বসে নাস্তা করছে সবাই,,,রুহির পাশে রুহান,,সাহেলের পাশে রোদ,,, সায়ানের পাশে প্রিয়া,,আর রোদের মার পাশে রোদের বাবা বসে আছে,,,,গল্প করতে করতেই নাস্তা করছে সবাই,,,,কিন্তু সায়ান চুপ করে আছে,,,তার নজর রুহির দিকে,,,রুহানের সাথে রুহিকে একদম সহ্য করতে পারছে না সায়ান,,,,খুব রাগ লাগছে তার,,, কিন্তু কিছু করতে পারছে না সে,,,,হঠাৎ প্রিয়া খাবার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়,,, সবার দৃষ্টি এখন প্রিয়ার দিকে,,,,

প্রিয়া হাসি মুখে একটা মিষ্টি নিয়ে প্রথমে রুহানকে খাওয়ায়,,,,তারপর সায়ানকে খাওয়ায়,,,ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও সায়ান মিষ্টি খায়,,,,,সায়ান মিষ্টি খেতেই প্রিয়া বলে উঠে,,,,

প্রিয়াঃ রুহান ভাই,,আর সায়ান,,,তোমরা আমার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ,,,,আর এ পরিবারটাও,,, তাই তোমাদেরকে একসাথে কথাটা বলতে চাই,,,,

রুহানঃ এমন কি কথা শুনি,,,আমরা কিন্তু অপেক্ষায় আছি,,,,

প্রিয়াঃ আসলে ভাই,,,,সায়ান[ সায়ানের দিকে তাকিয়ে ] তুমি বাবা হতে চলেছো,,,,

এতক্ষন যদিও সায়ান ভদ্রতার কারনে হাসি মুখ করে থাকলেও এখন তা পুরোপুরি ভাবে চলে গেছে,,,এক রাশ কালো মেঘ ছেয়ে গেছে তার মুখে,,,,বারবার এটাই ভাবছে,,,”তাহলে কি সব শেষ হয়ে যাবে,,,রুহি কি আর আমার হবে না,,,, কিভাবে এত বড় ভুল করলাম আমি,,,??”,,,

রুহির মনও খারাপ,,,বুঝতে পারছে না সে খুশি হবে নাকি দুঃখী,,,,কিভাবে পরলো সায়ান তার সাথে এমন করতে,,,কিন্তু এটা নিত্যান্তই স্বাভাবিক ব্যপার,,,কারন সায়ান আর প্রিয়া স্বামী স্ত্রী,,,কিন্তু কেন যানি বুকের এক কোণে রুহির খুব কষ্ট হচ্ছে,,,কিন্তু তা প্রকাশ করছে না,,,সবার সামনে হাসি মুখে থাকলেও আড়ালে খুব কষ্ট পাচ্ছে সে,,,,এদিকে পরিবারের সবাই খুশি,,,সবচেয়ে বেশি রুহান,,এখন আল্লাহ ছাড়া কেউই রুহিকে তার থেকে আলাদ করতে পারবে না,,,,

.
.
.
.

সায়ান আর প্রিয়াকে সবাই চাপ দিচ্ছে ট্রিট দিতে,,,প্রথম বাবা-মা হবে বলে কথা,,,অনেক জোড়াজুড়ির পর সায়ান আর প্রিয়া রাজি হলেও রোদের মা-বাবা রাজি হয় নি,,,কারন রোদ নতুন বউ,,,তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না,,,,এতে সবার মন খারাপ হয়ে যায়,,,,সবচেয়ে বেশি রুহানের,,,ভেবেছিল রুহির সাথে সময় কাটাবে,,,, কিন্তু,,,!!

পরক্ষনে রুহানের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসে,,আর সে সবাইকে বলে,,,,,

রুহানঃ আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়,,,সায়ান আমাকে টাকা দিবে,,, আমি আর রুহি বাইরে গিয়ে কিছু খাবার নিয়ে আসব,,,,

সাথে সাথে সায়ান বলে উঠে,,,,

সায়ানঃ তাহলে আমিও যাবো,,,,

রুহানঃ না,, তুমি প্রিয়ার সাথে থাকো,,,নতুন নতুন বাব মা হবে,,,২ জন ২ জনের সাথে টাইম স্পেন করো,,,,আমি আর রুহি যাই,,,,

সবাই রাজি হয়ে যায়,,,কিন্তু সায়ান ছাড়া,,,সে কিছুতেই চাচ্ছে না রুহি রুহানের সাথে যাক,,,,কিন্তু মুখ ফুটে বলতেও পারছে না,,,, অসহ্যের শেষ প্রান্তে সে,,,,,
.
.
.
.
রুহান অনেক্ষন ধরে বাইক নিয়ে বসে আছে,,, কিন্তু রুহির আসার নাম নেই,,,কিছুক্ষন পর রুহি আসে,,যা দেখে রুহান বলে উঠে,,,,

রুহানঃ তাহলে এতক্ষনে আসছো পেত্নি সেজে,,,

রুহিঃ কি,,,,??😠😠

রুহানঃ কিছু না বাইকে বসো,,,,

রুহি একটা ভেংচি কেটে বাইকে বসে,,,, বাইকে বসতেই রুহান জোড়ে এক টান দেয় বাইক,,,,সাথে সাথে রুহি রুহানকে জড়িয়ে ধরে,,,তা দেখে রুহান একটা বাঁকা হেসে দেয়,,এতে রুহি একটু জোড়েই বলে,,,

রুহিঃ অসভ্য,,,😠😠

রুহানঃ সহ্যকর,,,,😏😏

কিছুক্ষনের মধ্যেই রুহান আর রুহি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে যায়,,,,খাবার,, দাবার যা দরকার সব কিনে নিয়েছে তারা,,,,তারপর রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে বাইকে উঠতেই নিবে,,, এমন সময় রুহানের একটা কল আসে,,,,সে পিছনে ফিরে কল রিসিভ করে কথা বলা শুরু করে,,,

এদিকে রুহি অনেক্ষন ধরে রুহানের জন্য ওয়েট করছে,,,কিন্তু রুহান কথা বলছে যে বলছেই,,একসময় রুহি বিরক্ত হয়ে যায়,,,আশেপাশে তাকাতেই দেখে আইস্ক্রিম,,,সাথে সাথে রুহি খুশি হয়ে যায়,,,,আর আইস্ক্রিম যেখানে সেখানে এগোতে থাকে,,,,

রুহান কথা বলছিল,,,,হঠাৎ রুহান একটা বিকত আওয়াজ শুনতে পায়,,,পিছনে তাকাতেই দেখে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় শুয়ে আছে তার রুহি,,,,সাথে সাথে রুহানের হাত থেকে ফোন নিচে পড়ে যায় যায়,,,,,,,
…………..
…………………
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……….]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here