আকাশে অনেক তারা – ৬
———
”জুলেখা বিনতে আশরাফ! সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিণী, জীবনসঙ্গীণী এই শব্দগুলোর মানে জানেন আপনি?”
অদ্ভুত শিহরণে পুরো শরীর কিঞ্চিৎ কাঁপুনি দিল লেখার। নিজের সম্পূর্ণ নামটা কোনো অপরিচিত ব্যক্তির মুখে একটু অন্যরকম শোনাল। লেখা নিজের ভাবনায় কেঁপে উঠল। অপরিচিত ব্যক্তি? মানুষটা অপরিচিত নয়। এই লোকটাই এখন তাঁর সবথেকে কাছের মানুষ। তাঁর অর্ধাঙ্গ। চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছে লেখার।
”আপনি জবাব দিচ্ছেন না যে?”
মাথা অবনত করে খাটের এক কোণে লেখা বসে আছে। এতক্ষণ সে নিজেকে কঠিন করে রেখেছিল।
এখন এই পুরুষ লোকটির কণ্ঠস্বর তাকে কঠিন হয়ে থাকতে দিচ্ছে না। তাঁর আকাশ সমান দৃঢ়তা আর পাহাড়ের মত অবিচল মনোবল গুড়িয়ে দিচ্ছে। সে বিয়ে করে নিয়েছে। বিয়েতেই তো সব শেষ নয়। বরং, শুরু। নতুন পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। মানিয়ে নেওয়া। এই লোকটির সঙ্গে তার পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে হবে তাঁকে। সে যদি না পারে? তবে? গলায় কোনো সাড় পাচ্ছে না লেখা। ঢোক গিলতে গিয়ে কণ্ঠিতে টান লাগল খুব বাজেভাবে। ব্যথায় কোঁকিয়ে উঠতে গিয়েও থেমে গেল। মানুষটা কীভাবে নেবে কে জানে! অসহ্য লাগছে সবকিছু লেখার। এরমধ্যে সে অনুভব করল তাঁর হাত দুয়েক সীমানার মাঝে কেউ এসেছে দাঁড়িয়েছে। একটা মিষ্টি সুঘ্রাণ ভেসে এসে নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করছে। বিক্ষিপ্ত মস্তিষ্কে একটুখানি শান্তির বাতাস বয়ে গেল। লেখা বিষয়টা অনুধাবণের সুযোগ পেলনা ভালোভাবে। সে শুনতে পেল,
”আপনি বোধহয় আমার নামটা জানেন না, তাইনা?”
ছোট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল লেখা। সত্যিই সে জানে না। কাজি যখন কবুল বলতে বলেছিল সে বলে দিয়েছিল কোনো ভনিতা ছাড়াই। আর কোনোকিছুই সে খেয়াল করেনি। দিন দুনিয়ার কোনো খেয়ালই ছিল না। উরুর মাঝ বরাবর রাখা হাত দু’টো দোপাট্টার আড়ালে গুটিয়ে নিল সে। তাঁর আড়ষ্টতা অনুভব করতে বিন্দুমাত্র সময় নেয়নি মানুষটি। সে এটাও বুঝল, লেখা তাঁর নামটা জানে না। হৃদয়ে একটু ভার ভার অনুভব করল। তাঁর বিবাহিত স্ত্রী তার নাম জানে না! কেউ শুনলে কি বলবে! তাঁকে হাসির খোরাক করা হবে নিশ্চিত। বেশ তামাশা হবে বন্ধু আত্মীয় মহলে। তবে, সে এতটুকু বুঝল লেখার পরিস্থিতিও তাঁর অনুরূপ অনেকটা। যাই হোক, বিয়েটা তো হয়ে গেছে। ভাগ্যের লিখন সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কোনো মানুষের পক্ষে খন্ডানো দুঃসাধ্য। সে ছোট করে নিঃশ্বাস নিয়ে ঠোঁটের কোণে আর কণ্ঠে সজীবতা ফুঁটিয়ে বলে উঠল,
”আমি জুবায়ের প্রধানীয়া। আপনার স্বামী!”
ঢোক গিলল লেখা। জুবায়ের নামটা মনে মনে ক’বার সে আওড়াল। অদ্ভুত অনুভূতি। সম্পূর্ণ নতুন। নিজের হাত দু’টো পরস্পর সংযুক্ত করে এই অনুভূতির সঙ্গে বোঝাপড়া করল সে।
”জুলেখা!”
একটু নড়েচড়ে বসল লেখা। ডাকটা অন্যরকম। লেখা ডাক শুনেই সে অভ্যস্ত। অস্বস্তি হচ্ছে। জুবায়ের লেখার গতিবিধি তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করছে। সে পুণোরায় কথা বলল,
”আমি কি আপনার মুখটা দেখতে পারি জুলেখা?”
লেখার মুখটা দোপাট্টার আঁড়ালে লুকানো। লোকটা কি দেখেনি তাকে এখনো? সে নাহয় বাপের উপর রাগ থেকে দেখেনি লোকাটাকে। চট করে মাথাটা উপরের দিকে তুলে লেখা জিজ্ঞেস করে বসল,
”আপনি কি এখনো দেখেননি আমাকে? না দেখেই বিয়ে করে নিলেন?”
মসৃন দোপাট্টার সুতা ভেদ করে লেখার চোখ জোড় জুবায়েরের চোখে মিলিত হল। লোকটার মুখে মুচকি হাসি। সেটা মিলিয়ে গেল। কয়েক মূহুর্ত পাড় হল নিঃশব্দে। লেখার নিঃশ্বাস বন্ধের জোগাড়। সে তো কম পুরুষের সঙ্গে কথা বলেনি জীবনে। আর কোনোদিন তো এমন হয়নি! জুবায়ের মাথা নাড়ল, বলল,
”দেখেছি। তবে, সরাসরি না ছবিতে।”
”পছন্দ করেছেন আমাকে?”
”আমার বাবার ভীষণ পছন্দ হয়েছে আপনাকে।”
চমকে উঠল লেখা। কি বলল লোকটা? ধাতস্থ হয়ে সে জিজ্ঞেস করল,
”বিয়ে তো আপনি করেছেন?”
জুবায়ের ঘাড় কাত করল। বলল,
”হ্যাঁ, করেছি। আপনি কি নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছেন আমাকে? করেননি। যদি করতেন তাহলে আর কিছু না হোক আমার নামটা অন্তত জানতেন।”
মৃদু শব্দ করে হাসল কথা শেষ করে জুবায়ের। লেখার মানে লাগল ভীষণ। বিয়ের আধঘন্টা হয়নি অথচ লোকটা কেমন খোঁচা দিয়ে কথা বলা শুরু করেছে।
রাগটা চড়ছে মস্তিষ্কে।
”জুলেখা!”
নামটা শুনে নিজেকে দমন অসম্ভব হয়ে পড়ল তাঁর পক্ষে। সে মাথার ঘোমটা ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল,
”কি জুলেখা, জুলেখা শুরু করেছেন আপনি?”
জুবায়ের হতভম্ব। তবে, ক্ষণিকে সামলে নিল নিজেকে। মুচকি হেসে বলল,
”আপনার নাম তো জুলেখাই।”
”লেখা ডাকুন! জুলেখা নয়। ব্যকডেটেড লাগে শুনতে!”
জুবায়ের হাসল। শব্দ হল সেই হাসিতে। হাসি মুখে ধরে রেখেই বলল,
”ব্যকডেটেড, কেন? নামটা তো খুব সুন্দর! আপনি জানেন জুলেখা নামের অর্থ কি!”
”জ্ঞান দেওয়া বন্ধ করুন। আর দয়া করে আমার খাবারের কোনো ব্যবস্থা করুন। ভীষণ খিদে পেয়েছে।”
জুবায়ের চুপ হয়ে গেল। ঘড়ির দিকে তাকাল। কি যেন ভাবল কিছুক্ষণ। পরে বলল,
”এখন সময় বিকাল পাঁচটা বিশ। আপনি আসরের নামাজ পড়েছেন?”
লেখা মাথা নাড়ায়। বলে,
”না!”
”ওহ্, আসরের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আপনি কাপড় বদলে নামাজটা পড়ে নিন। আমি খাবার দিতে বলছি ততক্ষণে!”
কথা শেষ করে ঘরের দরজার কাছ থেকে লেখার ট্রলিটা টেনে বিছানার দিকে নিয়ে এল জুবায়ের। লেখা তীক্ষ্ণ চাহনিতে দেখছে লোকটাকে। আকস্মিক সে জিজ্ঞেস করল,
”আচ্ছা, আপনি কি করেন?”
জুবায়ের ট্রলিটা দাঁড় করিয়ে রেখে লেখার দিকে চেয়ে জবাব দিল,
”তেমন কিছু করি না। বাবার ব্যবসায় হাত লাগাই।”
চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেল লেখার। বিস্ময় তাঁর চোখেমুখে স্পষ্ট। প্রতিক্রিয়াও করল সে দ্রুত।
”কিহ্? আপনি কোনো জব করেন না?”
”না। চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি এখনো। দেখি যদি আল্লাহ চায় তাহলে হবে ইন শা আল্লাহ!”
পেছন দিকে হেলে বসে পড়ল লেখা। অবিশ্বাস্য! লোকটা কোনো নামকরা চাকরি করে না! সম্পূর্ন বেকার! বাপের উপর নির্ভরশীল। তাহলে তাঁর বাবা কেন এই ছেলের কাছে বিয়ে দিল? এর থেকে বিয়েটা না করে নিজে কিছু করার চেষ্টা করলেই তো বেশি ভালো হত। সে কেন কিছু জিজ্ঞেস করেনি ছেলের ব্যপারে? কেন? বেশি ভাব দেখিয়েছিল! এই ছেলের বাপও যদি তাঁর বাপের মত হয়? কি করবে তখন সে?
লেখা ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছে। কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে মুখটা তাঁর অজান্তেই। জুবায়ের সেটা লক্ষ্য করে ভ্রু কুঁচকাল,
”কি হয়েছে আপনার?”
লেখা মুখটা ব্যথিত করে জিজ্ঞেস করল,
”আপনি সত্যিই কোনো চাকরিবাকরি করেন না?”
”নাহ!”
”তাহলে, আমাকে খাওয়াবেন কি?”
”আলহামদুলিল্লাহ, আমার বাবার অনেক আছে।”
”আমার বাপেরও তো অনেক আছে কিন্তু সেসবের কিছুই আমার না। আপনার বাপ যদি বলে বউ নিয়ে বেরিয়ে যা। কি করবেন তখন? আমার দায়িত্ব থেকে পালাবেন?”
”আমার বাবা কখনোই এমন করবেন না। আর তিনি নিজেই আপনাকে পছন্দ করেছেন।”
দাঁত গিজগিজ করল লেখা,
”যদি করে? কি করবেন বলুন? আপনি তো বেকার।”
”যদি করে তখন আল্লাহ নিশ্চয়ই কোনো না কোনো
পথ করে দিবেন। বান্দার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর। আর চিন্তা করবেন না। যাই হোক, ইন শা আল্লাহ আমি আপনার দায়িত্ব যেহেতু নিয়েছি সেই দায়িত্বে কোনো হেলা করব না।”
লেখার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। খিদের কারনে আরো বেশি হচ্ছে।
”হয়েছে। দেখতেই পাচ্ছি কেমন দায়িত্ব নেবেন। অনেক কথা শুনেছি। এবার দয়া করে আমার খাবারের ব্যবস্থা করুন। খিদায় আমি মরে গেলে লাশটাকে দাফন করে দায়িত্ব পালন করার ধান্দা করছেন, না?”
জুবায়েরের মুখটা কঠিন হয়ে এল। সে স্থির চোখে লেখার দিকে চেয়ে রইল খানিকক্ষণ। শক্ত চোয়াল নাড়িয়ে জবাব দিল,
”জুলেখা নিজের জবানকে দয়া করে একটু সংযত রাখবেন এখন থেকে!”
”মানে?”
জুবায়ের জবাব দিল না লেখার কথার। সে নিজের মত করে জিজ্ঞেস করল,
”জোহরের নামাজ পড়েছিলেন?”
”না! কেন?”
জুবায়েরের মাঝে হতাশার ছাপ দেখা গেল। সে একটু দম ধরে থেকে বলল,
”আপনার এই বাড়িতে আজ প্রথম দিন সেকারণে আমি কিছু বলছি না। এর পর থেকে এমন হলে কোনো ছাড় পাবেন না। এখন আসরের নামাজটা পড়ে নিন। আর হ্যাঁ সঙ্গে জোহরের নামাজটা কাযা পড়বেন!”
”কি শুরু করেছেন? নামাজ পড়তে পারব না। খিদে পেয়েছে খাবার আনুন!”
”কেন নামাজ পড়তে পারবেন না? আপনি কি অসুস্থ?”
”নাহ্, আমি অসুস্থ হব কেন? আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে, আপনি খাবার যদি না আনেন যেকোনো সময়ে আমি জ্ঞান হারাতে পারি।”
”আপনি যেহেুত অসুস্থ নন। আগে নামাজ পড়ুন তারপর খাবার পাবেন। এই বাড়িতে নামাজ না পড়ে কেউ খাবার পায়না। আপনিও ব্যতিক্রম নন জুলেখা।
আজ থেকে আপনিও এই বাড়িরই একজন সদস্য। খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। এই বাড়ির একমাত্র ছেলের সহধর্মিণী। আমার যেমন আপনার প্রতি দায়িত্ব রয়েছে তেমনই আপনারও আমার প্রতি কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আশা করি, আপনি নিজের দায়িত্বগুলো পালন করে নিজেকে আদর্শ স্ত্রী আর আমাকে গর্বিত স্বামী হিসেবে সকলের সামনে মান অক্ষুন্ন রাখবেন।”
লেখার মাথার উপর দিয়ে গেল সবকিছু। সে সরাসরি বলল,
”আমি নামাজ পড়ি না।”
জুবায়ের চমকে উঠল। পরক্ষণেই, তাঁর বাপের কথা স্মরণে এল। তিনি জুবায়েরকে নিজের ঘরে ডেকে ছিলেন। সামনে বসিয়ে ভনিতা না করে বলেছিলেন,
’তোমার জন্য মেয়ে দেখেছি!’
চুপচাপ বসেছিল জুবায়ের। খুব বেশি চমকায়নি সে বাপের কথায়। প্রস্তুত ছিল তো। মোতালেব সাহেব বলেন,
’তুমি বিয়ের জন্য এখনই প্রস্তুত তো?’
বাপের দিকে চেয়ে থেকে চোখের পাতা ঝাপটে চাহনি নামিয়ে নিয়ে মুখে জবাব দিয়েছিল সে,
’তুমি নিশ্চয়ই খারাপ চাইবেনা আমার। তুমি খুশি হলে আমি অমত করব না।’
খুশি হয়েছিলেন ছেলের জবাবে মোতালেব সাহেব। বলেছিলেন,
’বিয়েটা আমার খুশির জন্য না বাবা। তুমি আল্লাহর খুশির জন্য করবে। নিজেকে পাপ থেকে মুক্ত রাখার জন্য করবে। সুন্দর জীবন ধারনের জন্য করবে।’
জুবায়ের চুপ করে কঠিন হয়ে বসেছিল। তিনি এক এক করে অনেক কথাই বলেছিলেন। শেষে বলেছিলেন,
’দেখ বাবা, আল্লাহ মানুষের হাতের পাঁচটা আঙ্গুল সমান বানায় না। আমরা প্রতিটা মানুষ দ্বীন শিক্ষা পরিপূর্ণভাবে জন্ম থেকেই পাই না। কেউ বেশি পাই, কেউ কম পাই। সবই পরিবেশ পরিস্থিতি। এখন যারা তোমার থেকে কম জানে, তুমি যদি তাদেরকে নিজ দায়িত্বে নিজে যতটুকু জানো তটকুকু শেখাও। দ্বীনের পথ সম্পর্কে জানাও, শেখাও। সেটা কত পূর্ণের কাজ হবে ভাব তো!’
’তুমি এসব আমাকে এখন বলছ কেন?’
’বলছি, কারন আছে!’
’কি কারন?’
’তোমার সঙ্গে যার বিয়ে ঠিক করেছি সে ধর্মীয় বিষয়ে একটু আনাড়ি। তাকে পরিপূর্ণভাবে শেখানোর দায়িত্ব তোমারই হবে জুবায়ের।’
জুবায়ের ভীষণ বিহ্বলিত হয়েছিল। আঁখি তো দ্বীন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা রাখে। সে জিজ্ঞেস করে বসেছিল,
’বাবা মেয়েটা কে? আঁ..”
সে থেমে গেছিল। মোতালেব সাহেব হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিয়ে নিজে বলেছিলেন,
’মেয়েটা আমার পরিচিত এক আত্মীয়ের। মেজ আম্মার বিয়েতে এসে তোমাকে দেখেছে। তোমার আচার-আচরণ, ব্যবহার তাকে মুগ্ধ করেছে। সে তাঁর একমাত্র মেয়ের জন্য তোমার হাত চেয়েছে। আমি না করেছিলাম প্রথমে। মেয়েটা তোমার ধাঁচের না। কিন্তু, শোনেনি। বারবার অনুনয় করেছে। এককালে খুব বড় উপকার করেছিল সে আমার। সে কৃতজ্ঞতা আর চক্ষু লজ্জা থেকেই আমি ভেবে দেখব বলি। নিজে থেকে মেয়েটার খোঁজ নেই। মেয়েটা স্বভাবে আনাড়ি তবে, মন থেকে ভীষণ ভালো। এখনো কাঁদা মাটির মত। তুমি যত্মে, ভালোবাসায় যেভাবে গড়ে নেবে সে ঠিক সেভাবেই রূপ নেবে। আমি জানি হয়ত একটু সময় লাগবে। তবে, তুমি ঠিকই পারবে? কি পারবে না তাকে পরিপূর্ণ মানুষ বানাতে নিজের সহচর্যে?’
জুবায়ের একটু সময় নিয়ে জবাব দিয়েছিল,
’ইন শা আল্লাহ পারব!’
জুবায়ের ভেবেছিল মেয়েটা বুঝি আঁখি। শেষ পর্যন্ত সে কল্পনায়ও আনেনি মেয়েটা আঁখি নয় অন্যকেউ।
শেষে বাপের ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি পেছনে ডাকেন ছেলেকে। বলেন,
’যাকে গড়ার দায়িত্ব নিলি তাঁকে দেখবি না?’
জুবায়ের কোনো জবাব দেয়নি এ প্রশ্নের প্রেক্ষিতে। মোতালেব সাহেব নিজে উঠে এসে ছেলের হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়েছিলেন। জুবায়ের বুঝতে পেরেছিল সেটা কিসের। সে ঘরে এসে অনেক দোনোমোনো করেও শেষে দেখেছিল খাম খুলে।
মেয়েটা যে একেবারেই নামাজ পড়েনা সে এটা ভাবনাও আনেনি। মুখভঙ্গি শক্ত হয়ে এল তাঁর। সে
লেখার মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞেস করল,
”আগে কোনোদিন নামাজ পড়েননি?”
জুবায়েরের কঠিন মুখ দেখে একটু ভয় পায় লেখা। ঠোঁট ভিজিয়ে জবাব দেয়,
”পড়েছি!”
”নিয়ম নিশ্চয়ই জানেন তাহলে?”
মাথা নাড়ায় লেখা,
”জানি। তবে, ঠিকঠাকভাবে না।”
শেষের শব্দগুলো বিরবির করে উচ্চারণ করে। জুবায়েরের কান অবধি পৌঁছায়না।
”এক্ষুনি ড্রেস চেঞ্জ করে নামাজ পড়বেন। নাহলে, আপনি অজ্ঞান হন আর যাই হন খাবার পাবেন না। প্রধানীয়া ভিলায় যে নামাজ পড়বেনা সে অভুক্ত থাকবে। এটাই নিয়ম।”
রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে জুবায়ের ফের বলে,
”আপনার বাবা নিচে অপেক্ষা করছেন। কথা বলবেন তিনি সম্ভবত আপনার সঙ্গে। দ্রুত নামাজ শেষ করুন।
খেয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলবেন। গুরুজনদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখা সঠিক ম্যানার না। বিশ মিনিট পরেই আসছি আমি। এসে যেন দেখি নামাজ শেষ করেছেন আপনি।”
লেখা জুবায়েরের যাওয়ার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ভাবে কোথায় এসে পড়েছে সে। ততক্ষণে তার মাথায় একটা কথা আসে। এটা কি সেই বাড়ি যেই বাড়ির মেয়ের বিয়েতে নামাজ না পড়ায় খাবার দেওয়া হয়নি মেহমানদেরকে? যদি সেই বাড়িই হয়? তাঁর অবস্থা কি হবে? শুকনো ঢোক গিলল লেখা! জীবন কি তবে এই নরকেই শেষ হবে তাঁর!
_________________________________
®সামিয়া বিনতে আলম