আকাশে অনেক তারা – ৫

——
তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। অলস সময় পাড় করছে লেখা। দিবা শশুড় বাড়ি দিনাজপুর গেছে। তার
স্বামী আরো একমাস আগেই উচ্চশিক্ষা অর্জনে দেশ ছেড়েছে। লেখার সঙ্গে দিবার এখন ন’দিনে ছ’দিনে যোগাযোগ হয়। দিবার বিয়ের পর থেকেই এই অবস্থা। মুহিবের চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। ভাইবা আর প্রাকটিক্যলের জন্য সে এখনো আঁটকে রয়েছে। একটা বিষয়ে মুহিবের ভবিষ্যত বানীই সত্যি হয়েছে। লেখার বাবা সত্যিই যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। দেশে আছেন এক মাসের একটু বেশি সময়। তার পূর্বে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে কোনো পিতার কাছে কণ্যাদান সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর সৎপাত্রে কণ্যাদান আরোবেশি কঠিন এবং বিশেষ গুরুতর কাজ। সঠিক হাত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অবশ্য, তিনি এই কঠিন কাজই করে দেখিয়েছেন। পাত্র তিনি ইতমধ্যে ঠিক করে ফেলেছেন। সোনার টুকরো ছেলে। লেখাকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়নি এখনো। সিদ্ধান্ত জানাবেন তিনি মেয়েকে। লেখা হয়ত মানতে চাইবে না। কিছু করার নেই। সম্মতি থাকুক আর না থাকুক তাকে বিয়েটা করতে হবেই।
_________________________________

মুহিব আর লেখা বেরিয়েছে আজ। বেশ অনেকদিন পর। মুহিবের ডান হাতটা জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে
সামনে ঝালমুড়ি ওয়ালাকে দেখছে। মুহিব ইতোমধ্যে দু’টো প্লেট দিতে বলেছে। অনেক ভীড়। লোকটা বেশ হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। লেখার চাহনি দেখে মুহিব তাড়া দিল,

”মামা, তাড়াতাড়ি দেও!”

”আইচ্ছা, এক মিনিট মামা!”

একমিনিট পরেই লোকটা দু’টো প্লেট দিয়ে গেল৷ লেখা প্লেটটা হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে। মুহিব নিজের প্লেট রেখে লেখার মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,

”কি হয়েছে টুকি? খাচ্ছিস না কেন?”

চামচ নাড়াচাড়া করে লেখা স্পষ্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মুহিব চিন্তায় পড়ে গেল। সে লেখার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল সন্তর্পণে। কিছুক্ষণ পরে লেখা নিজে কথা বলল। তার কণ্ঠস্বর কম্পমাণ শোনায়।

”দিবাকে মিস করছি মুহি! ভীষণ মিস করছি!”

মুহিব চোখের পলক ফেলে। সে ততক্ষণে বুঝতে পারে লেখা এতক্ষণ সামনে তাকিয়ে ঝালমুড়ি না তার পাশে দাঁড়ানো দু’টো মেয়েকে পর্যবেক্ষণ করছিল।

”কিছুদিন পরই তো তোর চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শুরু হবে। দিবা চলে আসবে তো।”

”সময়ের সাথে পরিস্থিতির চাপে মানুষ কেমন পরিবর্তন হয়ে যায় তাইনা মুহি?”

”এত দার্শনিক কথাবার্তা বলতে হবে না। দ্রুত খা৷”

”মুহি তুই-ও কি চলে যাবি আমাকে ছেড়ে?”

”তুই শশুড় বাড়ি যাবি। আমি না।”

”আমি বিয়ে করব না মুহি!”

”ওমা সেদিন না বললি, ভালো পাত্র পেলে করবি!”

”পৃথিবীতে তোর থেকে ভালো ছেলে আর দুইটা নেই।”

”বহুত আছে লেখা রানী। বহু আছে। দেখি হা করেন।”

লেখা হা করতেই মুহিব তার মুখে চামচ দিয়ে মুড়ি দিল। মুড়িচা নেতিয়ে যাওয়ায় কেমন বিস্বাদ হয়ে গেছে। মুখটা বিকৃত করে সে কোনোরকমে গিলে নিল। দ্বিতীয়বার লেখার মুখে ঝালমুড়ি দেওয়ার সুযোগ হল না মুহিবের। তার হাতটা শূণ্যেই ভেসে রইল।

”ও, এই ব্যপার! গার্লফ্রেন্ডকে সময় দিতে পারো না। কোথাও নিয়ে যেতে বললেই শুনতে হয়, বিজি আছি। কিন্তু, জাস্ট ফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে আসতে পারো। ঠিকই হাজার লোকের সামনে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে পারো! আমি কাল বলেছিলাম, আজ একটু বেরবো একসঙ্গে। তুমি ব্যস্ততার অযুহাত দিয়েছিলে। এই তোমার ব্যস্ততা! পাবলিক প্লেসে অন্য মেয়েকে খাইয়ে দেওয়া!”

কাল নতুন গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে বেরনোর কথা থাকলেও লেখা যখন বহুদিন বাদে ইচ্ছে পোষন করল একসাথে ঘুরতে বেরোবে। সে নিষেধ করতে পারেনি। সবকিছুর ঊর্ধ্বে লেখা তার কাছে। আশেপাশের লোকজন অদ্ভুত চাহনিতে লেখার দিকে তাকাচ্ছে। যেন সে বড়কোনো অপরাধে অভিযুক্ত। লেখা হতভম্ব। বিস্ফোরিত চাহনিতে সে সামনের মেয়েটাকে একবার তো একবার মুহিবকে দেখছে। কবে মুহিব নতুন গার্লফ্রেন্ড যোগাড় করল। সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল মুহিবের দিকে। মুহিব রক্তচক্ষু নিয়ে সামনের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা সেখানেই থেমে রইল না। তেড়ে এল লেখার দিকে। ঝাঁঝাল গলায় বিতৃষ্ণা নিয়ে বলল,

”লজ্জা করে না তোমার মেয়ে! অন্যের বয়ফ্রেন্ডকে এভাবে নিজের আয়ত্তে রাখতে চাও! ঠিকই বলেছিল
মারিয়া নামের মেয়েটা। তুমি আসলেই নির্লজ্জ! হায়া হীণ। তোমার কারনেই মুহিব কোনো সম্পর্কে স্টেবল হতে পারে না।”

মুহিব ধৈর্য্যচ্যূত হচ্ছে। লেখাকে নিয়ে কোনো কটুবাক্য তার সহ্যাতীত। লোকজন লেখাকে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বাজে শব্দ ব্যবহার করছে। সে দাঁড়িয়ে গিয়ে মেয়েটার দিকে এক কদম এগিয়ে গেল। কপালের শিরা দৃশ্যমান মুহিবের। তবুও, সে যথাসম্ভব নমনীয় গলায় বলল,

”নিধি, কোনো সিনক্রিয়েট কোরো না। মানুষজন লেখাকে ভুল বুঝছে। আমি বুঝিয়ে বলব তোমাকে। প্লিজ!”

নিধি মেয়েটা আরোবেশি তেতে গেল। লেখার প্রতি এত রক্ষণশীল মুহিব। কেন হবে? মুহিব তার বয়ফ্রেন্ড।
লেখার না।

”কি বলবে? তুমি আর লেখা শুধুই বন্ধু! দু’জনের মাঝে কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই। ব্লা, ব্লা ব্লা! একটু আগে তাহলে মেয়েটা কেন তোমার কাঁধে মাথা রেখেছিল? তুমি কেন খাইয়ে দিচ্ছিলে তাকে?”

”এটা খুব সাধারন ব্যপার নিধি! একটু আগে মারিয়ার কথা বললে না। সে আমার এক্স। সে-ও জানে লেখা আর আমার মাঝে সম্পর্ক কি! ইচ্ছে করে তোমাকে পথভ্রষ্ট করছে। আমি ভালো থাকি সে চায়না।”

”ওহ্, তাই নাকি? আমার বয়ফ্রেন্ডের কাঁধে অন্যকেউ মাথা রাখবে, তাকে খাইয়ে দেবে। এসব সাধারন? আচ্ছা, তুমি অস্বীকার করতে পারবে এই মেয়েটার জন্যই মারিয়া মেয়েটার সাথে ব্রেকাপ করোনি! বল?”

”তার চরিত্রে সমস্যা ছিল। সেকারণে ব্রেকাপ করেছি। লেখাকে টেনো না এর মাঝে!”

মেয়েটা আকস্মিক হেসে উঠল সশব্দে। দু’একজন সব কিছুর ভিডিওচিত্র ধারন করছে। বিশেষ করে লেখাকে ফুঁটিয়ে তুলছে। নিজের মুখ ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করছে লেখা।

”হা হা হা। মুহিব তুমিও না! অস্বীকার করছ কেন? মারিয়া লেখাকে নিয়ে কথা বলেছিল সেকারনে তুমি ব্রেকাপ করেছিলে সেদিন রাত্রে রেস্টুরেন্টে। আসলেই তুমি বল, কোন মেয়ে মেনে নেবে তার বয়ফ্রেন্ড তার থেকে বেশি তার জাস্টফ্রেন্ডকে সময় বেশি দেয়। কদর বেশি করে! তোমার সঙ্গে সম্পর্কের আমার তিনসাস। আমি তো কোনো জাস্ট ছেলে বন্ধুর সঙ্গেও কথা বলতে পারিনি। কারন, তুমি পছন্দ কর না। অথচ তোমার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো। কেন? মুহিব তুমি একটা হিপোক্রিট! আর তোমার থেকেও বেশি এই মেয়েটা!”

লেখার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে দেখায় নিধি। লেখা স্থির হয়ে নিস্পৃহ চাহনিতে দেখছে সবকিছু। যখন নিধি মেয়েটা যখন বলল তিন মাসের সম্পর্ক। লেখা কেঁপে উঠেছিল শোনামাত্রই। মাঝেমধ্যে তাঁর চোখ আর ঠোঁট ভীষণ কাঁপুনি দিচ্ছে। মুহিব দাঁত কিড়মিড় করল,

”ওয়াচ য়ুর টাঙ নিধি! পাবলিক প্লেসে আমি অপ্রিয়কর কিছু করতে চাচ্ছি না। যদি করি, শেষে তুমি পস্তাবে নিধি।”

নিধি পাত্তা দিল না মুহিবের কথায়। এত লোকের ভিড়ব মুহিবের কিছু করার সাহস হবে না। তাঁর ব্যঙ্গাত্মক গলা শোনা গেল পুণোরায়,

”আসল কথা কি জানো মুহিব! এই মেয়েটা তোমাকে পছন্দ করে। মনে মনে ভীষণ পছন্দ করে! সে চায় না
তুমি অন্যকোনো মেয়ের সংস্পর্শে আসো। এই মেয়ে, তুমি যেহেতু ওকে পছন্দই করো, তাহলে মুখে বলো না কেন? সরাসরি বলে দেওয়ার সাহস নেই, আই লাভ য়ু মুহিব। তুই অন্যকারো কাছে যাস কেন? আমি অাছি তো তোর জন্য! তোর যা যা চাহিদা আমি একাই পূরণ করব!”

লেখার সহ্য হচ্ছে না আর। সে দাঁড়িয়ে গেল। চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে তাঁর। সে দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ করে
মেয়েটার দিকে আঙ্গুল তুলে হাঁক ছাড়ল,

”ইনাফ! ইনাফ ইজ ইনাফ!”

থতমত খেয়ে গেল মেয়েটা। হকচকানো ভাব তার মুখে। লেখা মুহিবের দিকে ঘুরল,

”তিনমাস ধরে সম্পর্কে আছিস! জানিয়েছিস আমাকে? বুকে হাত দিয়ে বল তো, তোর কোনো রিলেশলে আমি কখনো বাঁধা হয়েছি? যতগুলো সম্পর্কে তুই গেছিস আমি তোকে নিজের স্পেস দিয়েছি। তুই নিজে থেকে সেধে না আসলে আমি যাইনি তোর কাছে। কারন, আমি জানি কোনো মেয়েই তাঁর বয়ফ্রেন্ডকে অন্যকোনো মেয়ের সঙ্গে মেনে নিতে পারে না! আমি নিজেও হয়ত এমন কোনো পরিস্থিতি এলে পারব না। এবার তাদের সম্পর্ক যাই হোক। তুই আজ আমাকে ভীষণ বাজেভাবে অপমানিত করলি মুহি। খুব জঘণ্যভাবে আমার আত্মসম্মানে আঘাত করলি!”

লেখা দাঁড়ায় না। ব্যগ থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করে ঝালমুড়ি ওয়ালাকে দিয়ে দ্রুত সামনে এগোয় ভিড় ঠেলে। ছোটখাটো একটা জটলা বেঁধে গেছে এতক্ষণে।

”আপা, বাকি টাকা নিয়া যান!”

লেখা পিছু না ঘুরেই জবাব দেয়,

”লাগবে না মামা। রেখে দিন!”

জটলা সরে যেতেই মুহিবের স্নায়ু ধীরে ধীরে সচল হয়। সে একছুটে লেখা যে পথে গেছে সেদিকে যায়। কোনো চিহ্ন নেই মেয়েটার। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে!কি থেকে হয়ে গেল কয়েক মূহুর্তে! কয়েক মূহুর্ত স্থির দাঁড়িয়ে থেকে সে নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করে। নিধিকে দেখে রাগটা আকাশ ছোঁয়। চোখ রাঙ্গায় সে নিধিকে। এই মেয়েটাকে সে যতই পছন্দ করুক। তাঁর জীবনে লেখার গুরুত্ব সবথেকে বেশি।
__________________________________

জুবায়েরের বিয়ে নিয়ে বাড়িতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। হাওয়ায় ভেসে ভেসে কিছু জুবায়েরের কানেও আসে। সে আঁখির দিকে জড়তার কারনে তাকাতে পারে না। আঁখি মেয়েটা গত কয়েক মাসে কেমন বদলে গেছে। তাঁর মাঝে আমূল-পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে সে দাখিল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে আরো বেশি ধর্মকর্মে মনোযোগী হয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার, সোমবার রোযা রাখছে। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ পড়ছে। আগে তার মা সুযোগ পেলে দু’একটা কথা শুনিয়ে দিত। এ বাড়িতে আঁখি আর তাঁর মায়ের বসবাস কোনোকালেই নাহার ভালোভাবে নেননি। দু’জনে একমাত্র মোতালেব সাহেবের জন্যই টিকে ছিলেন। ইদানীং, নাহারও ভীষণ আদর করে আঁখিকে। নিজের ছোট মেয়ে আর আঁখির মাঝে যেন কোনো তফাতই নেই। জুবায়ের ভীষণ চিন্তায় আছে। কোনদিন জানি বাবা ডাক দিয়ে বলে,’জুবায়ের তোমার বিয়ে ঠিক করেছি। আশা করি তুমি প্রস্তুত নতুন জীবন শুরু করার জন্য!’
সে প্রতিদিন নামাজে একটাই দোয়া করে। যাতে তাঁর এবং সকলের ভবিষ্যত কল্যান নিহিত সৃষ্টিকর্তা যেন তাই করেন।
__________________________________

একসপ্তাহ পাড় হয়ে গেছে। মুহিবের সঙ্গে লেখার কোনো যোগাযোগ হয়নি। সে নিজে থেকে করেনি। মুহিবও করেনি। এই প্রথম দু’জনে এতদিন কথা না বলে আছে। লেখার একটু কষ্ট হচ্ছে। তবে, সেদিনের থেকে বেশি না। এতবেশি অপমানিত সে জীবনে কোনোদিন হয়নি। তার সবথেকে বেশি কাছের এবং শুভাকাঙ্খী মানুষটার জন্যই হতে হয়েছে। লেখার বাবা পরের মাসের তেরো তারিখ যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন। এটা নিয়েও তেমন মাথা ব্যথা নেই তাঁর। ছোটোবেলায় যখন বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে গেল এবং বাবা তার অভিভাবকত্ব পেল। তার পর থেকেই সে একা থাকতে শিখে গেছে। বাবা বেশি সময় দিতেন না তাকে। সে একাই থাকত। তার একাকীত্বে সবথেকে বেশি যে মানুষটা পাশে ছিল সে হচ্ছে মুহিব। সেকারণেই মুহিবের প্রতি তাঁর এতবেশি টান আর এতবেশি নির্ভরশীলতা। আর সেটাই কাল হয়েছে। দিবার সান্নিধ্য-ও তাঁর জীবনে কাল হয়েছে। বিষন্নতায় ভুগছে এখন মেয়েটা পাশে না থাকায়। মুহিবের নিজস্ব জীবন রয়েছে। কোনো না কোনোদিন মুহিব বিয়ে করবে। তাঁর সংসার হবে। তখন সে মুহিবের উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারবে না। স্বাভাবিক ভাবেই মুহিবের জীবনে থাকা নারী চরিত্রটি অগ্নিমূর্তি ধারন করবে। যেমনটা সেদিন নিধি করেছিল। মুহিবের সঙ্গে তার দূরত্বই ভালো হবে।
____________________________________

লেখার বাবা আশরাফ সাহেব মেয়েকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। লেখা বলেছে সে ভেবে দেখার জন্য সময় চায়। তিনি একদিন সময় দিয়েছেন
। সঙ্গে জানিয়েছেন, লেখা যদি বিয়েতে অসম্মতি করে তাহলে সে যেন নিজের পথ নিজে বেছে নেয়। তিনি আর লেখার কোনো ভার বহন করবেন না। লেখা বেশ অস্থিরতায় ভুগছে। কি জবাব দেবে সে? দিবা বা মুহিব কেউ পাশে নেই। কে সাহায্য করবে তাকে! সে মনকে স্থির করেছে। মুহিবের উপর আর নির্ভর হওয়া যাবে না। কোনোক্রমেই না। দিবা নিজের স্বামী সংসার নিয়ে সুখে রয়েছে। সে ভালো থাকুক সেটাই লেখার কামনা।
সকলকে এতদিনের দানের প্রতিদান দেওয়ার সুযোগ এসেছে। হাতছাড়া করবে না সেই সুযোগ সে।
______________________________________

লেখা বাপের সামনে বসে। ওনার মুখোভঙ্গি চিরায়ত ক্ষণের ন্যায় গম্ভীর। আশরাফ সাহেব কোনো ভনিতা করলেন না। সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন,

”তোমার কি সিদ্ধান্ত?”

লেখা মেরুদন্ড সোজা করে স্থির হয়ে বসে আছে। তাঁর মাঝে কোনো দুর্বলতার চিহ্ন নেই। সেও বাপের প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করল,

”তুমি কি নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল?”

”আ’ম স্টেডি!”

লেখা নিঃশব্দে সন্তর্পণে দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। জবাব দেয়,

”তাহলে আর কি? দিন ঠিক কর! তুমি যাওয়ার আগেই তো বিয়েটা হবে তাইনা?”

আশরাফ সাহেব মাথা নাড়েন। বলেন,

”হ্যাঁ!”

লেখা আর কোনো কথা বলে না। বাপের সামনে থেকে উঠে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। দুই কদম যেতে শুনতে পায়,

”পাত্র কে, কেমন জানতে চাইবে না? ”

পিছু ঘুরে না লেখা। তাঁর ঠোঁটের কোণে একটু বিদ্রুপ হাসিরূপে খেলা করে। বাপের দিকে ঘুরে সে বলে,

”নিশ্চয়ই তোমার মতো কোনো ওয়েল কর্পোরেট জব করা প্রতিষ্ঠিত কেউ হবে। তুমি যেহেতু সব ঠিক করেছ
আমি দেখেশুনে কি করব? তুমি তো কোনো অপশন রাখনি। বলেই দিয়েছ বিয়ে না করলে নিজের পথ নিজে দেখে নিতে। আমি কোনোদিন একটা পয়সা উপার্জন করিনি। কি খাব? কোথায় থাকব? সত্যিই আজ ভীষণ আফসোস হচ্ছে! আর মনে হচ্ছে, ফেমিনিস্টরাই ঠিক!”

কথা শেষ করে সে পুণোরায় ঘরের দিকে এগোয়। তাঁর আবেগ বড্ড এলোমেলো হয়ে আছে। তাঁর নিজেকে গোছানো প্রয়োজন। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। পথ অস্পষ্ট। সে শুনতে পেল বাবা পেছন থেকে বলছে,

”আজ আফসোস হচ্ছে! পরে তুমি নিজেই বলবে কি বোকামো করেছি আফসোস করে! আমি লিখে দিতে পারি, তোমার সব আফসোস একদিন ধুয়েমুছে যাবে!
তোমার মনের সমস্ত গ্লানি মোচন হয়ে সেখানে সজীব আনন্দের ছাপ পড়বে। তুমি ভালো থাকবে!”
______________________________

®সামিয়া বিনতে আলম

’রমাদান মোবারক!’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here