অরুর_সংসার
পর্ব-৩
নিশি কথা
__________________

ওদিকে জয়ার মন খারাপ এখন অস্থিরতায় পরিণত হয়েছে….
অস্থিরতা বললে ভুল হবে চরম অস্থিরতা!!! ৯;৩০ তো কখন পার হয়ে গেছে!! কই? অয়ন তো এলো না………..
সে কি তাহলে আজ ও আসবে না? কি হয়েছে তার?……. জয়ার চোখ বেয়ে ২ ফোটা পানি গরিয়ে পরলো……. তাহলে কি আজ ও অয়নের দেখা মিলবে না??
|
||
|||
ডায়নিং টেবিলে বসে চা খাচ্ছেন আর পেপার পড়ছেন অয়নের বাবা নিসাদ হুসাইন।ওদিকে অয়নের পিছে পিছে অরুও নেমে এল। সিঁড়ি থেকে যে অয়ন আর অরু নেমেছে সেদিকে খেয়াল নেই অয়নের বাবার।…. অয়ন তার বাবার সামনে এসে বলল……
অয়ন: আসসালামুআলাইকুম বাবা।
(পেপার থেকে চোখ সরিয়ে অয়নকে ফরমাল ড্রেসাপে দেখে অবাক হয়ে গেলেন মিঃনিসাদ)
মিঃনিসাদ : সেকি? কোথায় যাচ্ছো তুমি অয়ন??
(অয়ন গ্লাসে জুস ঢালতে ঢালতে বলল….)
অয়ন: কেন হাসপাতালে যাচ্ছি। অহন কই????
মিঃনিসাদ : তোমার অহন কলেজে গেছে। প্রতিদিনের মত ৯ টায় কিন্তু তুমি হাসপাতালে যাচ্ছো এটা কোন কথা হল?? বিয়ের ২য় দিনে কেউ কাজে যায়!! শুনছো কখনো??
(অয়ন জুস শেষ করে বাবার দিকে তাকালো)
অয়ন: আসি বাবা। আসসালামুআলাইকুম
মিঃনিসাদ: দাড়াও অয়ন!!
তুমি কোথাও যাবে না! আজ বাদে কাল তোমাদের বৌভাত,রাতে আরোহি আসবে! তাই আজ অরুর সাথে থাকবে তুমি।অবাক হয়ে যাচ্ছি আমি!! অহনা বাইরে,আমি অফিসে চলে যাবো একটু পর! তুমিও চলে গেলে অরু সারা বাড়ীরে একা কিভাবে থাকবে….
অয়ন:যেভাবে এরপর থেকে সারাজীবন থাকবে সেভাবে থাকবে………
(এই বলে গটগট করে অয়ন বের হয়ে গেল।)
………….
মিঃনিসাদ : মা ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন? এদিকে এস। আমি কিন্তু এখনো নাস্তা খাই নি। এসো একসাথে খাবো!
অরু: বাবা উনি তো না খেয়েই চলে গেলেন।
মিঃনিসাদ: আরে ও প্রায় ই এমন করে, হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিবে।
(অরু এবার বসলো,একটু আগেই খেয়েছে এখন তার ক্ষুধা নেই )
মিঃনিসাদ : রোজ রোজ এক ব্রেড, বাটার খেতে খেতে আমি না বোর হয়ে গেছি মা! আমাদের দুপুর আর রাতের খাবার ও খুবই একঘিয়ে! বোঝো তো কাজের মেয়েদের হাতের রান্না!! মা তুমি রান্না করতে পারো???
(অরু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে সম্মতি দিল… কারন সৎ মায়ের সংসারে তার ই রান্না করা লাগতো ২বেলা,মাঝেমাঝে ৩ বেলাও)
মিঃনিসাদ :বাহ তাহলে তো খুব ভাল।তোমার মা কিন্তু খুব ভাল রান্না করতেন।কলেজে পড়াকালীন কত তার রান্না খাবার খেয়েছি! তারপর তো আমি বিদেশ চলে গেলাম! বিয়ে শাদি করলাম। আরোহী, অয়ন হল, অয়নের যখন ৯বছর এক বন্ধুর শুনলাম তোমার মা আর নেই! “”!! তোমাকে জন্ম দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন! (এই বলে মিঃনিসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন! ওদিকে অরু কাঁদছে )
মা কেঁদো না! শুন এটা এখন থেকে তোমার সংসার। এর পরিবার টা তোমার!তোমাকেই সবাইকে সামলাতে হবে মা।আজ একথাগুলা তোমাকে তোমার শাশুড়ির বলার কথা ছিল কিন্তু আমি বলছি! আরোহীর বিয়ে হয়ে গেছে, ও এখন নিজের সংসারে ব্যাস্ত, নাহলে ও একাই আমাদের সবাইকে বিয়ের আগ পর্যন্ত সামলিয়েছে! আর অহনা, অয়ন এর যে সংসারে
কোন ইন্টারেস্ট নেই তাতো বুঝছোই……. এখন তোমাকেই নিজের সংসার নিজের মত করে সামলাতে হবে….
অরু: আমি চেস্টা করবো বাবা
মিঃনিসাদ: পারবে তুমি মা!আমি এখন আসি। অফিসের সময় হয়ে গেছে।তুমি ঘরে রেস্ট কর।সংসার সামলাতে বলেছি বলে যে আজ বিয়ের ২য় দিন ই কাজে লেগে যাবে তা কিন্তু না।খবরদার বৌভাতের আগে কোন ঝামেলায় জড়াবে না!
(অরু মাথা নেড়ে সন্মতি দিল)(অয়নের বাবা বের হয়ে গেলেন অফিরের পথে)
….
.
…..
…….
অয়ন গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে ঢুকাতেই দেখে জয়া হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালের CEO মিঃ শুশান্ত চৌধুরীর কেবিনে গেল।
অয়ন কে দেখে সবাই দাড়িয়ে সালাম, গুড মর্নিং দিল।অয়ন নিজের কেবিনে চলে গেল।
জয়া: Sir… May i come in??
শুশান্ত : Yes come in… Good morning Dr.Joya
জয়া: good morning sir.Sir i want to ask you something if you don’t mind
শুশান্ত: Yes please
জয়া:Sir…it’s already 10:30.””! where is our CFO ???he didn’t came yesterday also…is there any problem sir??? please tell me
শুশান্ত : may be some personal issue! don’t know
জয়া: But don’t we should ask him..??
(শুশান্ত মাথা উচু করে কিছু বলতে যাবে অয়নের ফোন আসলো তার ফোনে)
শুশান্ত : Dr.Joya excuse me.
Hello.জি মিঃঅয়ন। আপনি হাসপাতালে??? ওকে আমি ডাক্তারদের পাঠাচ্ছি এক এক করে।
(অয়ন অফিসে “! কথা টা শুনে জয়ার বুক টা মনে হয় শান্ত হয়ে গেল)
শুশান্ত ফোন রেখে জয়ার দিক তাকাতেই জয়া বলল………
জয়া :Excuse me sir
(বলে জয়া বের হয়ে গেল)
না অয়ন কে এক নজর হলেও দেখতে হবে তার! কিন্তু তার তো অয়ন এর সাথে দেখা করার সময় তো তার সন্ধা ৬:৩০!! এতক্ষন সে কি করবে??? সে তো অয়নকে না দেখলে পাগল হয়ে যাবে
…….

।।
।।।।
অরু রুমে এসে রুমটা সুন্দর করে গুছাতে লাগলো,হটাৎ করে ওর চোখ গেল বিছানায়….. সাদা বিছানায় লাল রক্তের দাগ। অরুর এর পিছনের কারন জানা নেই। জানা নেই যে এটা তার সতিত্বের প্রমান। আজ এই প্রমান পেয়েই অয়ন তাকে কাছে টেনেছে এটা যে অরুর জানা নেই…
অরু বিছানার কাছে যেয়ে ভাল করে পর্যবেক্ষন করলো।হ্যা এটা রক্ত!!!!! কিভাবে আসলো??? কই তার সারা শরীরে ঠোট বাদে তো কোথাও কাটে নি যে এত রক্ত পড়বে! তাহলে কি উনার কাটলো কোথাও??? নাকি অরুর পিরিওড হল??? ও হ্যা অরুর তো ডেট কাছাকাছিই…….. কিন্তু না হয় নি!! তাহলে???????
….
……
.
।।।।।
।।।
।।
অয়নের সামনে বসে আছে ডঃরাকিব!!! নিজের গত ২দিনের কাজের আর কাজের এক্সপেন্সের জবাবদিহিতা করছে। অয়ন হাসপাতালের চিফ ফিন্যান্সয়াল অফিসার। হাসপাতালের অর্থিক সকল কার্যক্রমই অয়নের আন্ডারে! বড় বড় সকল ডাক্তারকেই হাসপাতালের সকল অর্থিক খড়চাপাতির জবাবদিহিতা অয়নের কাছে করতে হয়…….. এমনকি হাসপাতালের সকল ডাক্তার, স্টাফদের বেতন ও অয়ন ই দেয়।”!!
অয়ন ফাইল চেক করে যেহেতু মাসের ৩ তারিখ তাই ডাঃরাকিব কে বলল যে আজ ৩ তারিখ, প্রতি মাসে ২ তারিখ আপনাদের পেমেন্ট আমি দিয়ে দেই কিন্তু কিছু পারসোনাল কারনে আমি গতকাল আসতে পারি নি আর ব্যাংক থেকে টাকাও তুলতে যেতে পারি নি। কাল দিয়ে দেব।
ডাঃ রাকিব অয়নের কথা শুনে বলল…
স্যার It’s okey.no problem.
অয়ন: Okey … go back to your work…..
(রাকিব চলে গেলে হুট করেই অয়নের মাথায় একটা কথা এল!! আরে অরুকে তো এই কথা বলাই হয় নি! কিন্তু অরুর নাম্বার তো অয়নের কাছে নেই..অয়ন দ্রুত বাসার ফোনে ফোন দিল…মিনু ফোন ধরলো)
মিনু :হেলো…
অয়ন : খালা অরুকে ফোনটা দেও
মিনু : অরু কে আব্বাজান?? ন
অয়ন : আরে “!! তোমাদের কারো নাম কি অরু??? না তো… তাহলে কার নাম অরু????
মিনু : অহ নুতন বউ!! আচ্ছা দিচ্ছি
অয়ন :হুম…..
(মিনু সিড়ি বেয়ে অয়নের রুমের সামনে যেয়ে দরজা নক করলো )
অরু তখনো বিছানার দিকে তাকিয়ে…… নক শুনে অরুর ভাবনায় ছেদ পরলো…….
অরু দরজা খুলে বলল.
অরু : জি খালা
মিনু : এই নেও তোমার বর…. (মিনু অরুর হাতে ফোন দিয়ে চলে গেল)
অরু: জি
অয়ন : এই তুমি কোথায়??
অরু : জি রুমে
অয়ন: বিছানাটা দেখেছো?? একটা কাজ কর দ্রুত বিছানার চাদর তুলে ধুয়ে ফেল। কাউকে কিছু বলার দরকার নাই। আর শুন চাদর তুমি ই ধবে বুয়াদের দিয়ে আবার ধুয়ায়ো না…..
অরু :……
অয়ন: হেলো?? বুঝছো??
অরু : জি। একটা কথা বলি?
অয়ন: কি?
অরু : আপনার কি কোথায়ো কেটে গেছে?? রক্ত আসলো কোথা থেকে???
(অয়ন এবার হতবাক।।মেজাজটাও খারাপ হচ্ছে এবার ওর..কিছু না বলেই ফোন কেটে দিল) টুট টুট
অরু :আহ ফোন কেটে দিল!! মন খারাপ হয়ে গেল অরুর
অরু বিছানার চাদর উঠিয়ে অয়নের কথা মত ধুতে গেল……..

।।।

ফোন রেখে পিছে তাকাতেই অয়ন দেখন ঝড়ের বেগে কেউ তার কেবিনে নক না করেই ঢুকে গেল!
সেটা আর কেউ না জয়া…….

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here