অরুর_সংসার
পর্ব-২৬
নিশিকথা
_________________

অনেকক্ষন ধরে অহনার ফোন টা বেজে চলেছে…
– অহনা ?? অহনা ??
-ওফফ…! চিল্লাচ্ছো কেন?
– বের হবা কখন তুমি? সেই ১ঘন্টা আগে ঢুকেছো শাওয়ার নিতে। এদিকে তোমার ফোন বেজেই যাচ্ছে……….
-আমার শাওয়ার নেওয়ার দিকে একদম নজর দিবা না। আর ফোন বাজছে তো কি? তুমি রিসিভ কর!!
-নাহ আমি তোমার ফোন কেন রিসিভ করবো ..? পরে বলবে যে ওয়াইফের ফোন চেক করে…….! তোমাদের মেয়েদের উপর ভরসা নেই……
-রাজ………………!!
-বের হও… আমার ওয়াশরুমের সব পানি শেষ করে দিচ্ছে রে……
(রাজ কথাটা বলে পিছনে ফিরতেই দেখে অহনা টাওয়াল পেচিয়ে দাড়িয়ে আছে কোমড়ে হাত দিয়ে…)
-আরে হিটলার
-কিহ???? তোমারে!!!!
(অহনা রাজের দিকে এগিয়ে যেতেই আবার ফোন বেজে উঠলো অহনার…………)
-নেও দেখো কে???
-হু
-হেলো
-।।।।।।।।।।।।।
– ……………….
(অহনা ফোন রেখে হু হু করে কেঁদে দিল…)
-অহনা??????? এই অহনা কি হয়েছে???
কাঁদছো কেন জান???
– …………….. (কেঁদেই চলেছে…..)
-অহনা প্লিজ বল কি হয়েছে…??
-ভাইয়ার এক্সিডেন্ট!!!!!!! খুব খারাপ অবস্থা
-চুপ এভাবে কেঁদো না….চল কাপড় চেঞ্জ করে নেও…. হাসপাতালে যাবো………
……..
…………………
হ্যা সেদিন অহনার সাথে রাজের ই বিয়ে হয়েছিল….. সাড়ে ৩ মাসের সংসার তার আর রাজের।
সেদিন বিয়ের পর যখন আয়নায় একে অপরের চেহারায় নজর পরেছিল তাদের অহনা দেখেছিল রাজ বাকা হাসছে……..
আয়না ধরে আরোহীও হাসছিলো ………
১বছর পর রাজ কে দেখে অহনা যেন ফ্রিজড হয়ে গেছিলো।
তার রাজের সাথে বিয়ে হয়েছে ………. ??
বিশ্বাস হচ্ছিল না অহনার……কিভাবে সম্ভব হল এটা?? সেদিন যখন রাজ কথা দিয়েও ফিরেছিল না সেদিন তো অহনা সারা দিন রাজের বলা জায়গায় অপেক্ষা করেছিল রাজের জন্য….
রাজ এসেছিল না…. সেদিন থেকে অহনা তো নিজের মন কে মেরেই ফেলেছিল তাহলে আজ??
রাজ তার স্বামী…… ♥
নিজের দেওয়া কথা রাজ রেখেছিল সেদিন …..
সেদিন অনেক সময় শক্ড থাকার পর অহনা রাজ কে নিয়ে ফাকে দিয়ে একটা রুমে গেছিল… গেস্ট রা সবাই তখন খাচ্ছিল ….

-এতটা কষ্ট আমাকে সেদিন কিভাবে দিতে পারলে তুমি রাজ.?
-পারলাম…..
-কেন রাজ?
-আজকের এই সুখ দেবার জন্য সেদিন কষ্ট দিতে পেরেছিলাম……..
-আমি!! আমি ভেবেছিলাম সব শেষ…… আমি তোমায় হারিয়ে ফেলেছি(অহনা কেঁদে দিল…)
-এই খবরদার কাঁদবে না…আমি আমার বউ টার চোখে আর কোন দিন পানি দেখতে চাই না
-#বউ (কথা টা শুনে অহনার মুখে হাসি ফুটলো……. অহনা রাজ কে জড়িয়ে আবার কেঁদে দিল…….♥♥অবশেষে!! অবশেষে তাদের ৭বছরের প্রণয়ের শুভ পরিণয় সম্পন্ন হল ♥♥…….)
-কাঁদতে মানা করেছি কিন্তু অহনা… আমি এই দুনিয়ায় একটা জিনিস আছে যেটা সহ্য করতে পারি না…….
সেটা হল তোমার চোখের পানি.
– ………………
-(রাজ অহনার মুখটা নিজের হাতের মাঝে এনে বলল…..) আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি অহনা…..
-ইশ কই? লেট তুমি……
-মোটেই না বরং একদিন ফাস্ট
-কিভাবে ?
-আমি আমার কথা দেবার ১বছর পুরণ হবার আগের দিন ই তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি আব্বা আম্মাকে দিয়ে….
-ওহ হুম……
(রাজ অহনার ঠোঁটে ঠোট মিলিয়ে দিল….১০মিনিট… রাজের ছাড়ার নাম ই নেই…..অহনা পরে রাজকে চিমটি কাটলো.. …)
-আউচ ্্্্্্্্্্্ওই মেয়ে পাগল নাকি….
-তা তুমি আমার ঠোঁটজোড়া খেয়েই ফেলবে নাকি…!!
কিন্তু এসব এত ইজিলি পারলে কিভাবে??
-অয়ন ভাই এর জন্য…
-ভাইয়া?? ভাইয়া জানতো??
-হুম। উনি ই আমাকে হেল্প করেছে এসবে। বাবাকেও উনি ই রাজি করিয়েছে…
আমি উনাকে সব বলেছিলাম আমাদের কথা যা তুমি এত দিনে বলতে পেরেছিলে না….. তাও ভাই তো!! যথেষ্ট খোঁজ নিয়েছে আমার তারপর ই বিয়ে দিয়েছে তোমার সাথে……ইনফাক্ট জানো?? আমার লেখাপড়ার সেক্টোর তো জানোই electronic and telecommunication engineering…… বাংলাদেশে এই রিলেটেড জব ওপারচুনিটি অনেক কম।ভাই আমাকে এখানে USA Clipping Path এ ঢুকিয়ে দিয়েছে……

অহনা সেইদিন সাথেসাথে দৌড়ে গিয়ে অয়নকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল….. খুব কেঁদেছিল।………….. সবাই সেদিন ভাই বোনের ভালবাসার অটুট বন্ধন দেখেছিল…….
আরোহীও যোগ দিয়েছিল তাদের সাথে……. আরোহী, অহনা, আর অয়ন ৩জনের ভালবাসা সেদিন রাজ, অরু, সাদ,মৌ, নিসাদ হুসাইন, অনিক, সাথী চৌধুরী থেকে শুরু করে সেখানে উপস্থিত সবাই দেখে কেঁদেছে….
অয়ন আরোহী, অহনাকে জড়িয়ে সামনে তাকালো…. সাদকে উদ্দেশ্য করে অয়ন বলল…
-ওই বলদ ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস….. আয়……….!
(সাদ দৌড়ে ওদের কাছে দিয়ে কেঁদেছিল…….ওদের বন্ডিং দেখে উপস্থিত সবাই কাঁদলেও কাঁদে নি শুধু অয়ন…… অয়ন কখনো কাঁদে না…..সাথী চৌধুরী ওদের ছেড়ে চলে যাবার পর থেকে আজ পর্যন্ত অয়নকে কেউ কাঁদতে দেখে নি… অয়ন নিজেই হয়তো নিজেকে দেখে নি কখনো)

অহনার বিদায় এর পর সাদ বলল…..
-দোস্ত অহন কত খুশি!!! দেখলি………?
-হুম ওর এইটুক হাসির জন্যই তো এত কিছু করা….
– সত্যি তুই বেস্ট ভাই!!! লাভ ইউ
– লাভ…..! বলবো না!
-কেনন /?
-আশেপাশে দেখে নে কেউ আছে কিনা….. পরে যদি ভাবে আমাদের দোস্তানা??????? (অয়ন ভ্রু নাচিয়ে বলল…)
-হা হা হা লল…. আমার ডায়লগ আমাকেই……!

♥……..সাদ আর অয়নের কথাগুলো দাঁড়িয়ে শুনছিল অরু…… লোকটা তার সাথে যাই করুক না কেন তাও যে সে লোকটার প্রতি পাগল….
লোকটার প্রতি যে ভালবাসা,সম্মান ব্যতীত রাগ, অভিমান এসব কোন ফিল ই আসে না…….♥

অহনার বিদায় এর আগে অয়ন অরুকে বলেছিল…
-কি ভাবছো…..?
-অহনা আপুর কথা…. আপনি কি সুন্দর আপুর সব মনের কথা বুঝে গেলেন….
-আমি একজন খারাপ স্বামি হতে পারি অরু….কিন্তু অহন, আরু আপুর ভাই, আর বাবার ছেলে হিসেবে খারাপ না
-আপনি খারাপ স্বামি না
-কিহ?
-হুম
-lol….. best joke of the year…….
-আমার কাছে তো না…
-আমি নিঃসন্দেহে একজন খারাপ স্বামি কিন্তু তাকে আমার বিন্দুমাত্র যায় আসে না…..আমি খারাপ আমি সেটা তোমায় বলেই নিয়েছি…
আমার মাঝে তুমি কখনো কোন মিথ্যা পাবে না। আমি তোমাকে ভালবাসি বা অরু।আমি এটাও তোমায় অনেক আগেই বলেছি……
-হুম
-অভিযোগ কর মনেমনে আমায় নিয়ে??
-নাহ আমার কারো কাছে কোন অভিযোগ নেই….
-অভিযোগ করতেই পারো… পারমিশন আছে…
-হুম
-কিন্তু তাও তুমি আমায় ছেড়ে যেতে পারবে না কখনও…আমি তোমায় এই পারমিশন দেই নি
-♥যাবো ও না কখনো.. আপনি না বাসলেও আমি যে আপনাকে বড্ড বেশি ভালবাসি…. ♥ (মনেমনে বলল অরু)
-চুপ যে. …? জানি তাও চলে যাবা আমায় ফাঁকি দিয়ে
-সেটা সম্ভবা না
-হুম……..
…………………..
…………..

এ্যাপোলো হাসপাতালের লাকজারি ওয়ার্ডের আই সি ইউ এর সামনে ঠায় দাড়িয়ে আছে অরু..। চোখ দুটো থেকে অনবরত পানি পরছে…. ডঃশুশান্ত সহ ৩জন সার্জন্ট ওটি তে … সাদ যাবতীয় সব দৌড়াদৌড়ি করছে…… মৌ নিসাদ হুসাইন কে সামলাচ্ছে…….. মৌ এরা শরীর টা ভাল না বেশি একটা। ৭ মাসে পেট টা তার বেশ বড়। ডাক্তার বলেছে টুইন বেবী তার পেটে………….
অরু ভাবছে…….
কি হয়ে গেল এটা তার সাথে ?
কিভাবে হল?
অয়নের কিছু হলে সে যে বাঁচবে না…..অয়নের জীবনের সাথে যে তার তার ভিতরের ছোট্ট জানটার জীবন জড়িত….
না কেউ ই অরুর আপন না।এই পৃথিবীতে যাকেই অরু ভালবাসে সেই তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায়……
প্রথমে আম্মু আর এখন অয়ন………
না অরুর ই দোষ…! সে ই কারো ভালবাসা ধরে রাখার যোগ্য না…

জয়া অয়নের এক্সিডেন্ট এর কথা জানতে পেরে আই সি ইউ এর কাছে গিয়ে থমকে গেল। অরুকে দেখছে সে……একদম পুতুলের মত একটা মেয়ে। মা হবে বলে হয়তো চেহারায় আরো মাধুর্যের সৃষ্টি হয়েছে তার….. জয়া অরুর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল…
-আপু তুমি এভাবে দাড়িয়ে আছ কেন? এসো এখানে এসে বস।
– …………??
– এক্সকিউক মি?? (জয়া অরুর গায়ে হাত দিতেই অরু কেঁপে উঠলো..?)
– হু হু???? জ্বি????
-এই অবস্থায় এভাবে দাড়িয়ে থেকো না।এসো বস
-না না আমি এখানেই ঠিক আছি
-চল (জয়া অরুকে নিয়ে বসালো….) স্যার সুস্থ হয়ে যাবেন ডোন্ট ওয়ারি
-আপনি???
-আমি জয়া।এখানেই গাইনোক্লোজিস্ট
-ওহ।
– কয়মাস??
-সাড়ে ৫মাস
-গুড
-উনি ঠিক হয়ে যাবেন তো…?? আচ্ছা এখনো কেউ আই সি ইউ থেকে বের হচ্ছে না কেন? উনার কোন খবর দিচ্ছে না কেন??
-ডোন্ট পেনিক….! একটু দেরী হবে কিন্তু স্যার সুস্থ হয়ে যাবেন……..
-হু

অরু পেটে হাত দিয়ে বসে আসে।ভাবনার জগৎ এ পা দিল অরু আবার…..

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here