অরুর_সংসার
পর্ব ১৫
র্নিশিকথা
_________________

৫ টায় অয়ন বাসায় ঢুকলো! অয়ন ঢুকার সাথেসাথে অরু দাড়িয়ে পড়লো!!!
(অরুকে দেখে অয়ন অবাক)
অয়ন : কি তুমি কি সারা রাত জাগা ছিলা??
অরু :আপনিও তো জেগে ছিলেন…….
অয়ন : ও মানে সব কিছুতে আমার সাথে কম্পিটিশন ইদানিং তাই না?(ভ্রি কুঁচকে)
অরু : না না (বলে ২হাত দিয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলল অরু)
(অয়ন হেসে দিল..এই হাসিটুকুর এই মুহুর্তে বড্ড বেশি দরকার ছিল অয়নের… এতক্ষন যে অয়ন কেঁদেছে তা কিন্তু নয় ! তবে এক বুক কষ্ট নিয়ে বাড়ীতে যে ঢুকেছিল তা থেকে বিরতি পেল সে… অরুও হাসছে এখন, এতক্ষনের অয়নের কথা ভেবে কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে অরু….. অরু মুখ থেকে হাত সরিয়ে অয়নের দিকে তাকালো… তাকিয়েই আছে… অরু ভাবছে লোকটাকে দেখলে তার বুকের মাঝে চাপা কষ্টের আভাস পাওয়া যায় না কোনোভাবেই,সে যে তার কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয় না… ‘ অরুও তো এতদিন বোঝে নি! বা অয়ন অরুকে বুঝতে দেয় নি……. )
অয়ন: অরু…. ২কাপ চা বানিয়ে ছাদে আসবা? খুব মাথা ব্যাথা করছে……. তোমার হাতের চা খাবো
অরু : ঠিক আছে আনছি।
(অরু রান্নাঘরের দিক গিয়ে আবার ফিরে তাকালো! অয়ন উপরে চলে গিয়েছে। কিন্তু!
উনি ২ কাপ চা এর কথা বলল কেন? আর ছাদে নিয়ে যেতে বললেন??? এখনো তো সূর্যই ওঠে নি!! উফ কি বলে না বলে লোকটা…..অরু অয়নের কথা মত ২কাপ চা বানিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ছাদে গেল…… অরুর খুব ভয় লাগছে ছাদে যেতে, সারা ঘর অন্ধকার!! )

★★

অরু ছাদে গিয়ে অয়নকে খুঁজছে। ভয় ভয় লাগছে তার এমন সময় ছাদে আসায় …..আবার মনের মাঝে তার একটা ভাল লাগাও কাজ করছে আশেপাশের স্নিগ্ধ পরিবেশ দেখে……অরুর চোখ অয়নকে খুঁজছে…অয়নকে না পেয়ে রিতিমত হাত পা কাঁপছে অরুর আর সাথে হাতের ট্রে টাও কাঁপছে! অরুর ভয়ের আভাস না পেলেও ট্রে তে থাকা কাপ দুটোর আওয়াজ ঠিক ই পেল অয়ন।
নিরবতা ভেংগে অয়ন বলল……….
-অরু।(অয়নের ডাকে পাশে ফিরলো অরু)
-ভয় পাচ্ছো?
-হুম পাচ্ছিলাম
-এখন??
-না এখন আর কোন ভয় নেই
-দেখতে পাচ্ছো আমায়?
-হ্যা আপনি তো শত আধারের মাঝেও উজ্জ্বল
-তাহলে এতক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে কাঁপছিলে কেন ভয়ে! তখন আমি উজ্জ্বল ছিলাম না বুঝি?
-পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ দিক ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। আপনি তো পূর্বদিকে!! ওদিকটায় তখন ও তাকাই
নি।আসলে আগে কখনও এই সময়ে ছাদে আসি নি তো.. দেখছিলাম এই সময় আকাশ এবং চারিপাশ কেমন হয়…… আর এসব দেখার এক্সছাইটমেন্ট এর পাশাপাশি অন্ধকারে একটু ভয় ও লাগছিলো……
………………….
-কাছে এসো অরু
(অরু অয়নের কাছে গেল…..ট্রে এগিয়ে বলল…)
-আপনার চা
-হুম
-এই সময় ছাদে এলেন যে
-সকাল হওয়া দেখবো বলে
-২কাপ চা খাবেন?
-উহু
-তাহলে আনতে বললেন যে?
-আরেক কাপ তোমার
-একসাথে চা খাবো আর সকালের সূর্য ওঠা দেখবো
(অরু অয়নের কথায় অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে….. এমন সুখের মূহুর্ত তার জীবনে আজ এই দিনে আসবে ভাবতে পারছে না সে….
অয়ন ট্রে টা অরুর হাত থেকে নিয়ে ছাদের রেলিং এ রাখলো! তারপর একটা কাপ হাতে নিল আর একটা অরুর হাতে দিল। অরু কাপটা হাতে নিয়ে এখনো অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন ইশারা করে অরুকে পূর্ব আকাশের পানে ইশারা করলো……..
[কিছুক্ষন নিরবতার পর অয়ন বলল……
-সাথী চৌধুরী! যার কথা নিচে অহনা বলছিল! উনি দূর্ভাগ্যক্রমে আমাদের মা।
উনি আমাদের ছেড়ে, এই সংসার ছেড়ে, বাবাকে ছেড়ে অন্য লোকের হাত ধরে চলে গিয়েছিল।আচ্ছা অরু আমি নয় পাথর, আমার মাঝে কোন ইমোশন নেই তুমি বল তো উনাকে কি অহনের কথা মত বাড়ীতে ফিরিয়ে আনা উচিৎ?
– না।(আকাশের দিক তাকিয়ে বলল অরু…অয়নও আকাশের দিকে তাকিয়ে……..
(কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর অরু আবার বলল….
কোন পরিচয়ে আসবে উনি এই বাড়ীতে? এই সংসারের কারো সাথে উনার তো আর কোন সম্পর্ক নেই,না আছে অস্তিত্ব না আছে অধিকার,আর না ই আছে যোগ্যতা।
তবে উনার চিকিৎসা করা যেতেই পারে ভাল কোন হাসপাতালে রেখে। এর জন্য তো আর সম্পর্ক লাগে না যেমন আজ আপনি, বাবা,অনিক ভাইয়া আপনারা লাখ টাকা খরচ লরে কোভিড১৯ এর কারনে সুবিধা বঞ্চিত জনগনদের সাহায্য করছেন তেমনি মানবতার খাতিরে উনার চিকিৎসা করানো যায় এমনকি তার পাপের জন্য তাকে মাফ ও করা যায় কিন্তু তাকে এই বাড়ীতে না আনাই ভালো ।
(অয়ন এবার অরুর দিক তাকালো। অরুর কাছে থেকে অয়ন এমন উত্তর আশা করে নি…. আজ অরু তাদের সংসারের বউ এর মত বা তার স্ত্রি এর মত কিংবা মহান নারীর মত উত্তর দেয় নি… আজ অরু অয়নের একজন বন্ধুর মত উত্তর টা দিয়েছে যে উত্তরে অয়ন সন্তুষ্ট… কেন জানি অরুর এই উত্তর অয়নের শত দ্বিধাদ্বন্দের সমাধান করে দিয়েছে…………)
অয়ন বলল……
-মাফ করা সম্ভব না অরু
– কেন সম্ভব না? এই দুনিয়ার অসম্বব কিছুই নেই। আমি তো বলি নি এখান ই মাফ করতে! বললাম যে হয়তো একসময় মাফ করে দেওয়া যেতে পারে তাকে কারন মহান আল্লাহ তা’আলা ই বলেছেন যে “কেউ পাহাড় সমান পাপ করে যদি তার কাছে সত্য মনে ক্ষমা চায় তাহলে তিনি তাকে মাফ করে দেন” সয়ং আল্লাহ যদি মাফ করতে পারেন তাহলে আমরা তো তার ক্ষুদ্র স্ৃষ্টি মাত্র! আমরা পারবো না কেন? আর উনি যা পাপ করেছেন উনি তার শাস্তি ইহকালেই পাচ্ছেন, পরকালে তো পাবেন ই….আল্লাহ তার পাপের শাস্তি তাকে দিচ্ছেন! আমরা তো মানুষ! আমরা তো কাউকে শাস্তি দিতে পারবো না তাই আমাদের ক্ষেত্রে মাফ করে দেওয়াই ভাল।………
নিস্তব্ধ পরিবেশ….
অরুকে অবাক করে অয়ন কিছুক্ষন বাদে অরুর এক হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করলো।
♥♥♥♥♥♥♥♥♥
শান্ত আকাশ…
স্নিগ্ধ প্রকৃতি….
সূর্য দিগন্তের নিচে অবস্থান করছে তাই হয়তো দেখা যাচ্ছে না এখনো তবে পরিবেশে মৃদু সূর্যালোক ছড়িয়ে পড়েছে…… আর এই অপরূপ দৃশ্য ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে হাতে হাত ধরে উপভোগ করছে অরু আর অয়ন….
-অরু
-হু
-সুন্দর না?
-অনেক
-হুম।নীলাচল গিয়েছো কখনো???
-নাহ! বাসা থেকে স্কুল, নানী বাড়ী, কলেজ আর এখন এই বাড়ী…এর আওয়াভুক্ত পথ । এই গন্ডীর বাইরে পা ই রাখি নি কখনও…….
অরুর কথা শুনে অয়ন আকাশের দিক তাকিয়েই বলল…..
– তোমার পরীক্ষাটা শেষ হোক…তোমাকে নিয়ে যাবো নীলাচলে…… অপূর্ব সুন্দর একটা জায়গা।
***ভোরে মেঘের কোল ঘেঁষে অপরূপ রূপ নিয়ে সূ্র্যের উদয়। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে দুধসাদা মেঘের ঢেউ। দিনভর রোদের সঙ্গে ঝিরঝির বাতাস। গোধুলী বেলায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে পশ্চিমাকাশে সূর্যের ডুব। Just amazing***
(অরু অয়নের কথা শুনে অয়নের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে…..
ভাবছে! কি বলল লোক টা? আমাকে নিয়ে যাবেন?? সত্যি??
আসলে অয়ন অরুকে নিয়ে যাক না যাক এইটুকু যে বলেছে সেটাই অরুর জন্য অনেক♥♥)
অরু বলল……
-আপনি কয়বার গিয়েছেন ওখানে?
-৩ বার। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে নীলাচলে। সড়কের দু’পাশে সবুজ গাছ ও ছোট বড় পাহাড়ের সমারোহ দেখে মন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে! দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি নিমিষেই উধাও হয়ে যায় শীতল বাতাসের পরশে।
শুধু তাই ই নয়….
রাতে পাহাড়ের কোলে মেঘের ঘুমিয়ে পড়া, নীরব প্রকৃতিতে বাতাসের তোড়ে কলাপাতায় ফড়ফড় শব্দ। ঝিঁঝিঁ, তক্ষকসহ নানা পতঙ্গের ছন্দবদ্ধ সুর। খানিকটা অন্ধকারে, খানিকটা নীরবতায়, চাঁদ-তারা, মেঘের সঙ্গে রাতটা মায়াবী কাটে নীলাচল পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ঝুলে থাকা কটেজ গুলায়। শহর থেকে সাড়ে নয় কিলোমিটার দূরে বান্দরবানের সবচেয়ে সুন্দর পাহাড় এই নীলাচল।(অরু চোখ বন্ধ করে অয়নের কথাগুলোর সাথে নিজের মাথায় আসা দৃশ্য অনুভব করছে! ব্যাপার টা দারুন লাগছে অরুর কাছে। সে যেন অয়নের বর্ণনার মাঝেই ঘুরে আসছে সেখানে)
-অরু যাবে তো আমার সাথে ওখানে??
-হ্যা যাবো
-স্ত্রি হয়ে নয় একজন ভাল বন্ধু হয়ে! যাবে?
-হুম।
-ঠিক আছে তাহলে নিয়ে যাবো ♥ এখন চল নিচে যাই
-হু
(অরু চায়ের কাপগুলো ট্রে তে রেখে অয়নের পিছ পিছ নিচে গেল…অয়ন রুমে ঢুকলো আর অরু রান্নাঘরে গেল! রান্নাঘরে কাপ রেখে অরু ভাবছে যে কি নাস্তা করা যায়! ওহ রাতে তো অরু ভেবেই রেখেছিল যে আজ চিড়ার পোলাও করবে। সব রেডিও করে রেখেছিল।এখনো কেউ ওঠে নি এমনকি বুয়ারাও না। ওরু ঝটপট চিড়ার পোলাও করে ফেলল, সাথে ফলের জুস! রান্না শেষে রুমে গেল অরু …….
………অয়ন ঘুমিয়ে পরেছে। এখন অরুও একটু ঘুমাবে। তাই রান্না সেরে নিয়েছে, এখন দেরীকরে উঠলেও প্রব্লেম নেই)

জয়ার বাবা আজকে হাসপাতালে এডমিট হবেন তাই জয়া সকাল সকাল উঠে সব গুছিয়ে নিচ্ছে! সামনে না বুঝালেও ভয় হচ্ছে জয়ার মনে মনে বাবাকে নিয়ে। নানান চিন্তার মাঝে জয়া নিজের পিঠে কারো স্পর্ষ অনুভব করলো।
পিছে ফিরে দেখলো চিরচেনা কাউকে! …….
জয়া বলল…..
-অভি তুমি? কবে এলে?
-এইতো মাসখানেক আগে
-ওহ।জানালে না তো?
-কি জানাবো? তুমি জানিয়েছিলে যে মামা অসুস্থ
-হুম।কাউকে জানাবার সিচুয়েশনে ছিলাম না
-টেনশন কর না জয়া
-ভয় লাগছে অভি
-ভয় কিসের আমি আছি না?
-কই? যখন সব থেকে দরকার ছিল তোমায় তুমি তো ছিলে না
-ছিলাম! তুমি গ্রাহ্য কর নি
-হুম।আর দুরে যাবে না তো?
-তুমি যেতে দিয়ো না জয়া
-চল বাবার কাছে
-হুম
[অভি জয়ার দুর সম্পর্কের কাজিন। পেশায় চাইল্ড স্পেশালিষ্ট! ছোটকালে ২জন ভাল বন্ধু থাকলেও যেদিন জয়া প্রথম ডি এম সি তে পা রেখেছিল সেদিন অনেক বছর পর জয়াকে প্রথম দেখায়ই ভালবেসে ফেলেছিল অভি। এম বি বি এস পাশ করার পর একসাথেই এ্যাপোলো তে জইন করেছিল! পাগলের মত ভালবাসতো অভি জয়াকে কিন্তু ঠিক যেমন জয়া ভালবেসেও অয়নকে নিজের মনের কথা বলতে পারে নি তেমনি অভিও পেরেছিল না জয়াকে নিজের মনের কথা বলতে।যেদিন বলতে চেয়েছিল সেদিন ই জয়া অয়নের প্রতি নিজের ফিলিংস অভির সাথে শেয়ার করেছিলো!
যেদিন বলেছিল সেদিন রাতেই অভি নিজের ভাঙা মন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল….. অভি তো এখনো জানে না জয়া আর অয়নের মাঝের আসল সত্যটা…. বিদেশ থেকে ফিরেছিল মাস খানেক আগে।জয়ার সাথে দেখা করে নি সে! কারন জয়ার সম্মুখীন সে হতে চাচ্ছিল না।।।। তবে গতকাল জয়ার বাবার অসুস্থতার কথা শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারে নি অভি…………… ]

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here