#অভিশপ্ত_জীবন
পার্ট ৬
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno

নানান জন নানান ভাবে আমাকে বুঝাতে লাগলো। কি করবো কি সিদ্ধান্ত নিবো কিছুই বুঝতে পারছি না। মন বলছে রাজি না হতে। এর চেয়ে ভালো বর নাকি আমি পাবো না। আমি কি এতোটাই খারাপ, ডিভোর্সি হয়েছি বলেই কি এমন বুড়ো মানুষ কে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু কাকে বলবো আমি এ বিয়েতে রাজি না।

আজ আমাদের পরিবার থেকে লোকজন গেছেন,, সব কিছু দেখে ঠিক ঠাক মনে হলে দিন তারিখ ঠিক করে আসবেন। আমি আল্লাহর কাছে বারবার ফরিয়াদ করছি যেন কোন ত্রুটি খুঁজে পায়। রাত হয়ে গেছে কিন্তু এখনো কেউ ফিরে নি। পপি একবার মা কে বলেছিল যে, মা লোকটা অনেক বুড়ো, আপুর সাথে বিয়ে দিও না। তখন মা আশেপাশের ৫/৬ জন কে আঙুলে গুনে দেখিয়ে দিলেন। যাদের বয়স কম কিন্তু স্বামীর বয়স বেশি এবং কিছু কিছু অল্পবয়সী বিধবা মেয়েদের। আমি এইসব শুনে কোন কথা বলতে পারলাম না।

মনে মনে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি,, মনকে বুঝাচ্ছি মায়ের বলা কথার আলোকে। জানি এই জীবনে সুখ বলে কিছু পাবো না। অনেক রাতে আব্বা বাসায় আসছে। ঘুম আসেনি আমার, কান খাড়া করে মা আব্বার কথা শোনার চেষ্টা করছি। আব্বা বললো যে, ছেলে মেয়েরা বিয়ে দিতে অমত করছে কিন্তু উনি বিয়ে করতে চান। একবার বিয়ে হয়ে গেলে সব মেনে নিবে। তাছাড়া সুমি চাইলে নিজের নামে জমিজমা লিখে নিতে পারবে। তখন সুমিকে তাড়ায় কে। আর বয়স্করা বউকে বেশি আদর যত্নে রাখে।

মা অবশ্য ছেলে মেয়ে রাজি নাই এটা শুনে নিষেধ করেছিলো কিন্তু আব্বা উঠে পড়ে লেগেছে। দুইদিন পরে বিয়ে। খাবার মুখ দিয়ে নামছে না। ঘুম যেন হরতাল ডেকেছে। অশান্তি বুকের ভেতর সিডরের মতো আঘাত হানছে। খুব ইচ্ছে করছে মরে যেতে কিন্তু আত্নহত্যা করার জন্য যতটুকু সাহস দরকার তা হয়তো আমার মাঝে নেই। আমার মনের কথা বা কান্না বুঝা বা দেখার কেউ নাই। এভাবে কেটে গেলো এক বেলা,, ঘটক মুখ কালো করে এসে আব্বা কে বললো বিয়ে টা হবে না। উনার ছেলে মেয়েরা নাকি অনেক ঝামেলা শুরু করেছে তারা কিছুতেই বাপ কে বিয়ে দিবে না।

আল্লাহ মনে হয় আমার ডাক শুনেছেন। জীবনে এতো খুশি কখনো হয় নি মনে হচ্ছে। খুশিতে তারাতাড়ি অযু করে দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নিলাম। অনেক ভালো লাগছে আমার। জীবনের সব দুঃখ যন্ত্রণা যদি এমন ভাবে দূর হয়ে যেতো তাহলে আমার মতো মহা সুখী পৃথিবীতে আর কেউ থাকতো না।

সেলাইমেশিন এর পাশাপাশি কিছু হাঁস মুরগী রাখা শুরু করলাম। ছোট বোন এখন বড় হয়ে গেছে। শামিম ও ইন্টার পরিক্ষা দিবে। আজ পপি কে নিয়ে বাজারে কিছু কেনাকাটা করতে যাচ্ছি। এ-দোকান ও-দোকান ঘুরাঘুরি করার সময় হঠাৎ করে মুহিতের সাথে দেখা হয়। মুহুর্তেই আমার পুরো পৃথিবী থমকে দাঁড়ালো, মনের মধ্যে কেমন যেন দমকা হাওয়া চলছে। মুহিত ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চাহনিতে ভালোবাসা স্পষ্ট। নিমিষেই হারিয়ে গেলাম তার চোখের সমুদ্রে। আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ পুরুষ সে। কিভাবে ভুলবো তাকে। কোন রকম নিজেকে সামলিয়ে চলে আসছি আমি। কিন্তু ওই মুহুর্তের কথা ভুলতে পারছি না। জমানো কিছু টাকা দিয়ে বেশ কিছু দিন আগে মোবাইল কিনেছিলাম। বারবার ইচ্ছে করছে মুহিতের সাথে কথা বলতে। না কথা বলবো না। আমার জীবনের সব দুঃখ যন্ত্রণা গুলো মনে করতে করতে বৃথা চেষ্টা করছি মুহিত কে ভুলার। কিন্তু মন সে-তো নিজের কথা শোনে না,,,, অবশেষে রাতে মুহিতের নাম্বারে ছোট্ট করে মিস-কল দিলাম। অপর প্রান্ত থেকে মুহিত ও মনে হয় এই মিস-কলের অপেক্ষা করছিলো। সাথে সাথে কল ব্যাক করলো মুহিত। মনে হচ্ছে পরিচিত নাম্বার থেকে মিস-কল গেছে। হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। পপি আর আমি এক সাথে থাকি। কথা বলতে গেলে পপি জেগে যাবে। কিন্তু কল রিসিভ না করে থাকতেও পারছি না। কল কেটে যাওয়ার আগে রিসিভ করে টয়লেটের পিছনে গেলাম। কতদিন পরে সেই পরিচিত কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছি। চোখের পানি এমনই বেড়িয়ে যাচ্ছে।

কেমন আছো সুমি?

ভালো,,,,,

মনে পড়ে এখনো আমাকে?

,,,,,,,

চলনা আবারও নতুন করে শুরু করি,, আমার ভুল গুলো কে ক্ষমা করা যায় না?

তুমি তো একবার ভুল করো নি,, বারবার ভুল করেছো আর বারবার আমি ক্ষমা করেদিয়েছি। একটা মানুষ কে কত বার ক্ষমা করা যায়?

এটাই শেষ!! এই একবার বিশ্বাস করে দেখো, আর ঠকাবো না তোমাকে। আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি এখন প্লিজ ফিরে আসো আর একবার।

তুমি কিভাবে ভাবলে তোমার বউ আছে তাও আবার তোমার কাছে আমি যাবো?

ওই বউকে তালাক দিছি প্রায় চার মাস আগে। মায়ের সাথে ওর মিলতো না। সব সময় কিছুনা কিছু নিয়ে ঝামেলা হতো। তার আগে দুইবার বিয়ে হয়েছিল সে কথা গোপন করেছিলো আমার কাছে। এইরকম অনেক মিথ্যা প্রকাশ পাই আমার কাছে তাই তালাক দিছি।

ভালোই তো তোমার সাথে মিলে গেছে,,,,

এমন কিছু কথা বলতে বলতে অনেকক্ষন হয়ে গেছে। আমি কল কেটে ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়ি। কেন জানি না আজ অনেক সুখ সুখ লাগছে। খুব অল্প সময়ে ঘুমিয়ে গেলাম। তারপর মাঝে মাঝে মুহিতের সাথে কথা হতো। আমি বললাম পরিবারের দ্বিমতে আমি আর তোমার কাছে যাবো না। পরিবার রাজি হলে আমি রাজি। তুমি সবাই কে রাজি করানোর ব্যবস্থা করো কিভাবে করবে জানি না।

মুহিত আমার ফুফা কে আবারও অনুরোধ করে এবং আমাদের যত আত্মীয় স্বজন আছে তাদেরকে অনুরোধ করে যেন আমার আব্বাকে বোঝায়। মুহিতের মা নিজে এসে ছেলের কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন সবাই আর একবার সুযোগ দেওয়ার কথা বলে। অবশেষে আব্বা রাজি হয়। নতুন করে ২ লক্ষ টাকা কাবিন এবং আমাকে ২ ভরী গহনা দেওয়ার শর্ত দেয় আব্বা। এটা শুনে মুহিত ঘাবড়ে যায় কারণ দুই ভরী সোনা কেনা তার পক্ষে সম্ভব না কিন্তু আমি অভয় দিলাম রাজি হতে। প্রয়োজনে গহনা ভাড়া করে আনতে বলি আর যদি কিনে আনে তাহলে পরে আমি নিজেই বিক্রি করতে দিবো মুহিত কে। সম্পুর্ণ শর্ত মেনে নিয়ে মুহিতের সাথে আবারও বিয়ে হয় আমাদের।

আমি মুহিত দুজনেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। সকল বাজে অভ্যাস ত্যাগ করেছে মুহিত। অটোরিকশা কিনেছে আমার গহনা বিক্রি করে। প্রতিদিন ব্যাগ ভর্তি বাজার করে জামা কাপড়ের অভাব নাই। সারা মাসে দুজনের মধ্যে জোরে কথা হয় না। দুজনের ই ভুল বুঝাবুঝি আর ছন্নছাড়া জীবনের জন্য একটা বাচ্চা নাই বলে প্রথম দিন থেকেই একটা বাচ্চার আশায় প্রতিটি মাস শেষে অপেক্ষা করি। কিন্তু পরম করুনাময় হয়তো আরো পরিক্ষা নিবেন বলে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। চার/পাঁচ মাস যাওয়ার পরে গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলাম তারপর প্রায় দুই তিন মাস পরে কন্সিভ করি। খুশিতে মুহিত পুরো পাড়াতে মিষ্টি বিতরণ করে। কিন্তু তিন মাসে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়।

তারপর দুই/তিনবার কন্সিভ করি কিন্তু বাচ্চা অটোমেটিক নষ্ট হয়ে যায়। কত ডক্টর চেঞ্জ করলাম কত কবিরাজের ঔষধ খেলাম কোন কাজ হলো না।এখন তো তিন/চার বছর থেকে কন্সিভ করি না। বাচ্চার আশা একদম ছেড়ে দিছি। মুহিতের আর বিন্দু পরিমাণ কোন দোষ আমি বা আমার ফ্যামিলি বের করতে পারিনি। কিন্তু আমি বুঝতে পারি বাবা ডাক শুনতে তার মন কতটা ছটফট করে।

মাঝে মাঝে ফাজলামো করে মুহিত কে আবার বিয়ে করার জন্য বলতাম। কিন্তু মুহিত খুব রেগে যেতো আর বলতো, আমার করা পাপের শাস্তি আমি পাচ্ছি,, একটা সন্তান জীবনের সব না। মুহিতের এইসব কথা খুব ভালো লাগতো। আমার চাচাশ্বশুর এর মেয়ের স্বামী রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে কিছুদিন আগে। চার বছরের একটা ছেলে আছে। খুব ভালো মানুষ ছিলেন উনি। চাচা শশুরের মেয়ের নাম রুনা। রুনা মেয়েটাও বেশ শান্ত ও নম্র।আগে থেকেই আমার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো রুনার। হঠাৎ করে এমন কিছু ঘটে যাওয়াতে মেয়েটা প্রায় পাগল হয়ে গেছে। প্রায় সময় আমি রুনার সাথে কথা বলি, বুঝায়, সান্ত্বনা দিই। রুনার ছেলে টাও অনেক সুন্দর, শিহাব নাম। শিহাব কে দেখলেই কেমন যেন আপন আপন লাগে। মনে হয় আল্লাহ চাইলে আমার এই বয়সী বাচ্চা থাকতো।

মুহিত সব সময় খাওয়ার জন্য ফলমূল বিস্কিট মিষ্টি ইত্যাদি কিনে এনে রাখতো বাসায়। আমি সেগুলো শিহাব কে দিতাম। যেহেতু আমি সব সময় একা একা বাড়িতে থাকি তাই শিহাব কে আমার কাছে রাখতাম। স্বামী মারা যাওয়ার কারণে চাচা রুনাকে আর ওর স্বামীর বাড়ি থাকতে দেন নি। অল্প বয়স তারউপর স্বামী নাই, দুষ্টু মানুষের তো আর অভাব নেই তাই এখানে নিয়ে আসছেন। মাঝে মাঝে রুনার শশুর শাশুড়ী এসে শিহাব কে দেখে যায়, রুনাও দুই এক দিন যেয়ে থেকে আসে।

শিহাব এখন আমাকে ছাড়া কিছু বোঝে না,, সব সময় সুমি মামি সুমি মামি করে। আব্বার বাড়িতে আসার সময় শিহাব কে নিয়ে এসে দুই/তিন দিন করে থেকে যায়। রুনাদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে দুটো বাড়ি পরে। মাঝে মাঝে সন্ধ্যার পরেও শিহাব যেতে চাইতো না তাই রুনা শিহাব কে নিতে এসে আমার সাথে অনেক গল্পগুজব করতো।এভাবে মাঝে মাঝে রাত আটটা/নয়টা বেজে যেতো গল্প শেষ হতে। তারপর আমি বা মুহিত রুনাকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতো।

এভাবে একদিন,,,,,,,,,

চলবে,,

ছোট হওয়ার জন্য আন্তরিক দুঃখিত। গল্পটা পড়ার পরে রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন। রিয়েক্ট কমেন্ট দেখে গল্প লেখার অনুপ্রেরণা পাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here