“অভিশপ্ত ডায়েরী”
লেখিকা_সামিয়া আহমেদ ।
#পর্ব_৫_ও_৬

আমার আব্বু বলল,“আপনি এমন কেন বলছেন?আপনি যদি আমাদের যেকোন সাহায্য করতে পারেন,প্লিজ করুন।”আমি ঐই বিষয়ে সবকিছু জানিনা কিন্তু একজন আছে যে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। আব্বু বলল,“কে সে?আপনি কি আমাকে তার কাছে নিয়ে যাবেন?”ফাদার বলল,“তিনি একজন প্রিস্ট।তিনি খুব বৃদ্ধ তাই চার্চে আসেন না।চার্চের পিছনের একটি ছোট বাসায় থাকে।চলেন আমি আপনাদের তার কাছে নিয়ে যাই।”আমরা তার সাথে সাথে চলতে লাগলাম চার্চের পিছনে।যেয়ে দেখলাম পুরাতন দিনের একটি আউট হাউস।ফাদার আমাদের বললেন,“আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন।আমি আসছি।”কিছুক্ষণ পর তিনি আবার আসলেন এবংআমাদের ভিতরে আসতে বললেন।আমরা ভিতরে যেয়ে দেখলাম প্রায় ৮০ বছরের একটি বৃদ্ধ লোক হুইলচেয়ারে বসে আছে।আমার আব্বুকে দেখে তিনি ফাদারকে বললেন,“ইনি কি সেই ব্যক্তি যার কথা তুমি আমাকে একটু আগে বলেছিলে?”ফাদার বললেন,“জ্বী,তিনিই সেই সাহায্যপ্রার্থী।”আমার আব্বু তাকে সব ঘটনা বলল।আমি তাকে সেই ডায়েরীটাও দেখালাম।তিনি ডায়েরীটা দেখে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং বললেন,“এটি অভিশপ্ত,ভীষণ অভিশপ্ত তোমরা এই ডায়েরী কেন নিয়ে আসলে?”আব্বু বললেন,“আপনি এই ব্যাপারে কিছু জেনে থাকলে,প্লিজ বলুন।”প্রিস্ট বললেন,“ঠিক আছে।প্রায় ১০০ বছর আগে আজকের দিনের ডেনভার শহরের বেশিরভাগ স্থানই ঘন জঙ্গল ছিল।এখানে খুবই কম জনবসতি ছিল।সেই সময়ও এই চার্চ ছিল।অনেক দূরদূরান্তে থেকে মানুষ আসতো।তখন এখানে এক নতুন দম্পতি আসলো।তার মধ্যে মেয়েটি রাশিয়া থেকে এসে এসেছিল।তার নাম মিয়া ছিল আর ছেলেটির এলেক্স।তৎকালীন সময়ে আমেরিকা-রাশিয়া পরস্পর বিরোধী হওয়ায় এখানকার স্থানীয়রা তাদের খুবই অপছন্দ করতো।তাদেরকে কেউ কোন উৎসবেও নিমন্ত্রণ দিত না।সবাই এড়িয়ে চলতো।তবুও তারা দুজন অনেক সুখে ছিল কারণ তারা একে অপরকে অনেক ভালবাসতো।কিন্তু মাঝে মাঝে এলেক্স খুবই মনমরা হয়ে যেত এখানকার মানুষের ব্যবহার এর জন্য তখন মিয়া তাকে বুঝাতো,সান্ত্বনা দিত যদিও মিয়াও খুব কষ্ট পেত।কারন সানডেতে সে যখন চার্চে যেতো অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করত।একদিন এলেক্স খুব অসুস্থ ছিল।মিয়া খুবই চিন্তিত হয়ে উঠলো।সেই সময় অনেক রাত ছিল তাই মিয়া পাশের এক ডাক্তার এর বাসায় গেল।সেদিন ডাক্তারের স্ত্রী বাসায় ছিল না।মিয়া ডাক্তারকে যেয়ে বলল, “আমার স্বামী এলেক্স খুব অসুস্থ এবং প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন।”ডাক্তার মিয়াকে বলল,”যে আমি তোমাকে আমি কেনইবা সাহায্য করব আর আমিইবা কি পাবো?”মিয়া বলল,“আমার পক্ষে যা সম্ভব তাই করে আমি আপনাকে সাহায্য করব,প্লিজ এখন চলুন।”ডাক্তার বলল,“ঠিক আছে।তুমি যখন এত অনুরোধ করছো আমি তোমাকে সাহায্য করব।কিন্তু তার আগে আমার একটি কাজ করে দিতে হবে।”মিয়া বলল,“অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি বলুন,আমি এক্ষণি করে দিব।”ডাক্তার বলল,“আমার স্ত্রী জেনিফার বাসায় নেই তাই আজ রাতটি তুমি আমার সঙ্গ দিলে কেমন হয়?”মিয়া খুবই বিস্মিত হয় আর ভাবে পৃথিবীটা খুবই নির্দয়ী।একজন অপরজনের অসহায়ত্মকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারে সর্বদাই তৎপর।ডাক্তার বলল,“কি ভাবছো?ইউ ডন্ট হাভ মাচ্ টাইম।টেল মি আর ইউ রেডি অর নট ?”এই বলে সে এক গ্লাস স্কচ দিলো মিয়াকে । মিয়া তার হাত থেকে গ্লাসটি নিলো আর তার চেহারায় স্কচ ঢেলে দিল।আর বলল ,“তোমার মত মানুষের জন্য আজ সমগ্র মানবজাতি কলঙ্কিত।কিন্তু এখনো পৃথিবীতে ভালো মানুষ আছে এবং তাদের সাথে ইশ্বর আছে।”এই বলে মিয়া চলে গেল।কিন্তু ডাক্তারটি সাথে সাথে ফন্দি আটল তার অপমানের বদলা নেয়ার জন্য।সে বলল,“আমাকে মাফ কর,মিয়া।যা বললাম সব নেশার ঘোরে।চল আমি তোমার সাথে চলি।”অগত্যা কোন উপায় না পেয়ে মিয়া রাজি হল।বাসায় পৌছে ডাক্তার এলেক্সকে পরীক্ষা করতে লাগল।সে মিয়াকে বলল,“আমাকে একটু গরম পানি এনে দাও।”মিয়া তাই কিচেন যেয়ে স্টোভেগরম পানি চড়াল।ততক্ষণে ডাক্তার জ্ঞানহীন অবস্থায় পরে থাকা এলেক্সের বুকে ছুরি মারল।আর তার রুমের ড্রয়ারে কালো জাদুর একটি বই রেখে পালিয়ে গেল।

#পর্ব_৬

মিয়া এসে দেখে এলেক্সের বুকে ছুরি বিঁধে আছে।ঠিক সেইসময়ই তার পুরো জীবন ধূলিস্মাত হয়ে যায়।সে এলেক্স এর কাছে আসে।আর ততক্ষনে ডাক্তার পাড়া-প্রতিবেশি সবাই এর কাছে যেয়ে বলে মিয়া শয়তানের উপাসক সে কালো জাদু করে।তারা সবাই আগে থেকেই মিয়াকে তেমন পছন্দ করতো না।তাই অনেকে তার কথা মেনে তায় কথা মেনে তার বাসার দিকে যেতে থাকে।আর সেই দিকে মিয়া এলেক্সের বুকে বিঁধে থাকা ছুরিটি বের করে তাকে বাচাঁনোর জন্য কিন্তু তাকে বাচাঁতে পারে না।পরক্ষণে সবাই এসে দেখে মাটিতে ছুরি পরে।এলেক্স রক্তাক্ত অবস্থায় এবং মিয়া তার পাশে বসে কাদঁছে।তখন ডাক্তার সবাইকে বলে,“আপনারা সবাই নিজ চোখে দেখে নেন,আমি যা বলছিলাম সব সত্য।আপনারা তার রুমে তল্লাশি চালান।প্রমাণ পেয়ে যাবেন সে একটা ডাইনি।”ডাক্তারের এসব কথা শুনে মিয়া বুঝে যায় এলেক্সের মৃত্যু এর জন্য সেই দায়ী।তাই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সে রক্তে মাখা ছুরিটি তুলে নেয় এবং ডাক্তারের পেটে ঢুকিয়ে দেয়।ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ কিছুই করতে পারে না।কিছুক্ষণ পর পুলিস আসে এবং সবার থেকে সাক্ষ্য গ্রহন করে এবং মিয়াকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।মিয়া শোকে পাথর হয়ে যায়।তাকে কারাগারে প্রেরণ করি হয়।সেই প্রিজনে তার সাথে আর একটি বয়স্ক মহিলাও ছিল।মহিলাটি তাকে বলল,“এই মেয়ে,তোমার নাম কি?তোমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে?কি করেছ,তুমি?নাকি বিনা দোষে?”কিন্তু মিয়া একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেয় না।চুপ করে থাকে।যেন সে কিছুই শুনতে পায়নি।এভাবে ২ দিন পর্যন্ত মিয়া চুপ করে থাকে।মহিলাটি তাকে যতই প্রশন করে না কেন সে কোন জবাবই দেয় না।পরে সে প্রহরীকে প্রশ্ন করে,“মিয়াকে কোন দোষে আনা হয়েছে?”প্রহরী বলে,“সে তার স্বামিকে খুন করেছে এবং আরও একজনকে খুনের দায় আছে এবং অনেকে বলে সে কালো জাদু করে কারন পুলিস তার রুমে তল্লাশি চালিয়ে কালো জাদুর বই পায়।” বুড়ো মহিলাটি মিয়াকে বলে,“তাহলে তুমি কালো জাদু করো?”মিয়া তার প্রশ্নের কোন উত্তর দেয় না।সে আবার বলে,“তোমার স্বামীর খুনের দায়ে তোমাকে আনা হয়েছে?”মিয়া চিৎকার করে বলে,“আমি এলেক্সের খুন করিনি।সেই ডাক্তার মেরেছে।তাই আমি তাকে খুন করেছি।আম এলেক্সকে খুব ভালোবাসি এইসব বলতে গিয়ে মিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে।বুড়ি তাকে বলল,“তোমার সাথে ভাগ্য খুবই অন্যায় করেছে।আমার সাথেও ঈশ্বর খুবই অন্যায় করেছে।সে মিয়াকে বলল তুমি চাইলে আমাকে তোমার দুঃখ শেয়ার করতে পারো।”মিয়া তাকে তার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছু খুলে বলল।বুড়ি বলল,“তুমি ঈশ্বরবিশ্বাসী হয়ে কি পেয়েছ?তিনি তোমার জীবনে বেঁচে থাকার সমস্ত ইচ্ছা কেড়ে নিল।আমিও তোমার মত এক সময় অনেক ঈশ্বরবিশ্বাসী ছিলাম।আমারও সুখের পরিবার ছিল।কিন্তু একটি দূর্ঘটনায় আমার ছেলে এবং তার স্ত্রী মারা যায়।শুধু রয়ে যায় আমার শেষ বয়সের সম্বল,আমার নাতনী চেরী।আমি তাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করি।তার দিকে তাকিয়ে আমি ছেলে মারা যাওয়ার দুঃখ ভুলে যেতাম।সে একদিন তার বান্ধবীদের সাথে পার্টিতে যেতে চাইলো।আমি তাকে না করলাম তবুও সে যাওয়ার জন্য প্রচুর আগ্রহ করল।আমি তাকে না করতে পারলাম না।অনেক রাত হল সে ফিরল না।তাই আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর তার বান্ধবী আমার কাছে এসে যা বলল আমি তা বিশ্বাস করতে পারলাম না।চেরীকে কিছু ছেলেরা ধর্ষিত করার পর তাকে হত্যা করেছে।এই বলতে বলতে বুড়িটি কাদঁতে লাগল।মিয়া বলল,“আপনার দুঃখ আমার চেয়েও অনেক বেশী।তারপর সেই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আপনি কিছু করেননি?”বুড়ি বলল,আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম কিন্তু তারা খুবই প্রভাবশালী ছিল তাদের কিছুই হয়নি।কিন্তু আমি আমার চেরীর হত্যাকারীদের কখনো ছেরে দেওয়ার পাত্র ছিলাম না।যখন ঈশ্বরের উপাসনা করে আমাকে এত কষ্ট করতে লাগল তাই আমি শয়তানের উপাসনা করতে শুরু করলাম।আমি কালো জাদুর সাহায্যে তার দুই হত্যাকারীকে মেরে ফেললাম কিন্তু তৃতীয় জনকে মারতে পারলাম না কারণ সে সর্বদা ক্রশ পারে থাকতো।কিন্তু আমি তাতেও নিরাশ হইনি।একদিন আমি তাকে চার্চে দেখলাম। আমার সাথে থাকা ছুরিটি বের করলাম এবং তাকে মেরে ফেললাম।আর সেই কারনে আমি এখন কারাগারে।কিন্তু আমি এখান থেকে বের হতে চাই।আমার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চাই।আমার চেরীকে পুনরায় জীবিত করতে চাই।মিয়া বলল,“আপনি এসব কি বলছেন?”আমি যা বলছি সবই সত্য,মিয়া।কালো জাদুর মাধ্যমে এটা সম্ভব।আমি তোমাকে প্রমিস করছি তুমি আমাকে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করলে আমি তোমার এলেক্সকেও ফিরিয়ে আনব।মিয়া রাজি হয়ে গেল।মিয়া বলল,“ আমরা এখান থেকে বের হবো কিভাবে?”বুড়ি বলল,“আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।কাল ক্রিস্ট্মাস এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই শিথিল থাকবে।ক্রিসমাস শেষ হওয়ার পর কালো জাদু ব্যবহার করে আমী আর তুমি অদৃশ্য হয়ে পালিয়ে যাব।আমি এইকাজটি অনেক আগেই করতে পারতাম কিন্তু আমার হাতে ব্যথা থাকায় আমি মন্ত্র লিখতে পারব না।তাই আমার তোমার সাহায্যের দরকার।মিয়া তার কথা অনুযায়ী কাজ করলো এবং পালিয়ে গেল।মিয়া বলল,“এখন আমরা কি করবো?”বুড়ি বলল,“আগে আমরা চেরীকে ফেরত আনব তারপর এলেক্সকে।কিন্তু এইকাজ খুবই কঠিন।আমাদের চেরী যেই সময় জন্মগ্রহণ করেছিল ঠিক সেই সময় জন্মগ্রহণ করেছে এমন ১০০ জন মানুষের বলি দিতে হবে।মিয়া বলল,“যতই কঠিন কাজই হোক আমি রাজি।”
আমি প্রিস্টকে বললাম,“আপনি এসব কিভাবে জানেন?প্রিস্ট বলল,“আমি এসব জানি,,,,,,

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here