“অভিশপ্ত ডায়েরী”
#পর্ব_১_ও_২
লেখিকা_সামিয়া_আহমেদ
আমি ইমিলিয়া ব্রাউন।আমার বাবা ফ্রেড ব্রাউন একজন ফরেস্ট অফিসার। আজকে আমি আপনাদের যেই ঘটনাটির কথা বলবো সেটি যখন ঘটেছিলো তখন আমি সেভেন স্টান্ডার্ডে পড়ি। তখন আমার বাবার অস্টিন থেকে ডেনবার এ পোস্টিং হয়। এখানে এসে আমি এখানখার রিচেল বি নয়েল স্কুলে ভর্তি হই। নতুন স্কুলে পড়ার চাপ খুব বেশি ছিল। কিছুদিন পরেই আমার পরীক্ষা। তাই অনেক রাত জেগে পড়তাম। আমি আবার দিনের বেলা পড়তে পারি না। তাই আমার আম্মু এনি আমার জন্য কফি বানিয়ে রাখতেন যেনও আমি রাতে খেটে পারি। যাই হোক, সেদিন ছিল ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ। বরাবরের মতই সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি পড়া শুরু করলাম। ২ দিন পরে স্কুলে একটা মডেল টেস্ট পরীক্ষা। তাই, ঠিক করেছিলাম পড়া একদম শেষ করে ঘুমাব। তার জন্য দরকার হয় ভোর পর্যন্ত পড়বো। তখন আনুমানিক রাত ৩ টা। পড়তে পড়তে মাথা কেমন যেনও ভারী ভারী ঠেকছিল। তাই ভাবলাম একটু রেস্ট নিয়ে নেই। আমার বারান্দায় একটা ইজি চেয়ার পাতা আছে। আমি বিকেলে অনেকটা সময় সেখানে কাটাই। বাবা আমার পছন্দের কথা মনে করেই চেয়ারটি বারান্দায় বসিয়েছিলেন। তাছাড়াও আমাদের বাসা ছিল ইডিলিয়া স্ট্রীটে যা পার্কফিল্ড লেক এর খুব কাছে ছিল। এই লেক সম্পর্কে আমি এখানকার মানুষের মুখে নানা শুনেছি । যাই হোক, আমি বারান্দায় গিয়ে ইজি চেয়ারে বসলাম। পড়ার মধ্যে বিরতি নিলে আমি সাধারণত চোখ বন্ধ করে এতক্ষণ যা যা পড়েছি তা মাথার মধ্যে একবার রিভিশন দেয়ার চেষ্টা করি। বরাবরের মতই আমি ইজি চেয়ারে শুয়ে মাথার মধ্যে তখনের পড়াগুলো নিয়ে ভাবছিলাম। এমন করে প্রায় মিনিট ৫-৭ যাবার পর হটাত একটা আওয়াজে আমি চমকে চোখ মেলে তাকাই। যাই হোক, আমি চমকে চোখ মেলে তাকিয়ে এদিক সেদিক দেখলাম। কিছুই চোখে পড়লো না। অথচ আমি স্পষ্ট একটা শব্দ পেয়েছি। শব্দটা কিসের ছিল জানি না। তবে অনেকটা কোমল গলায় কাউকে ডাকলে যেমন আওয়াজ হয় তেমন আওয়াজ। আমাদের বাড়ির আসে পাশেই কোথাও হয়েছে। আমরা ২ তালায় থাকতাম, তাই বারান্দা থেকে উকি দিলে নিচের দিকটা স্পষ্ট দেখা যেত। আমি প্রথমে ভাবলাম বারান্দার দরজা আটকে দিয়ে রুমে চলে যাই। কিন্তু পরক্ষনেই মনের মধ্যে কেমন যেনও একটা খুঁতখুঁতানি চলতে লাগলো। কিসের আওয়াজ ছিল সেটা? যদি কেউ আমার নাম ধরে ডাক দেয় তাহলে এতো গভীর রাতে কেন আসবে? মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। বারান্দার দরজা আটকে দিয়ে রুমে ঢুকলাম। ভাবলাম পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ভুলে যাবো। কিতু ১০ মিনিটের মত শুধু শুধুই বই নিয়ে বসে থাকলাম। মাথার মধ্যে চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অবশেষে ঠিক করলাম আবার যাবো বারান্দায়। সাহস করে দরজা খুলে বারান্দায় দাঁড়ালাম। আসে পাশে আবারো ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। নাহ, কেউ নেই। ধীরে ধীরে গিয়ে বসে পড়লাম ইজি চেয়ারটায়। অন্যান্য দিন যখন বসি তখন মনটা খুব শান্ত হয়ে যায়। আজকে হল উল্টো। ইজি চেয়ারে বসার সাথে সাথে বুক কেমন যেনও কেঁপে উঠলো। আমি ইজি চেয়ার ছেড়ে রুমে গিয়েছি প্রায় মিনিট দশেক হবে। এখনও ডেনভার শহরে শীত ভালোই আছে। যেই সময়ের ব্যবধানে আমি চেয়ারে আবার ফিরে এসেছি, তাতে চেয়ারটা ঠাণ্ডা হয়ে যাবার কথা। কিন্তু, চেয়ারে বসা মাত্রই অনুভব করলাম সেটা অনেক গরম। যেনও এই মাত্র কেউ চেয়ারটা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বুকের মধ্যে হৃৎপিণ্ড ধক ধক করে হাতুরির মত পিটাচ্ছিল। চোখ বন্ধ করে জিশাসকে মনে মনে ডাকতে লাগলাম। তখন অনেক ছোট ছিলাম, কিন্তু তারপরও বলতে গেলে আমার বয়সী অন্য যে কোনও মেয়ের চেয়ে আমার সাহস বেশি ছিল। এমনভাবে প্রায় মিনিট দুয়েক কাটল। হটাত আমাকে চমকে দিয়ে কে যেনও আমার নাম ধরে ডেকে উঠলো। ভয়ে শরীরের পশমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। এবার আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। অনেকটা বাতাসে ভর করে যেনও আসছিলো কথাগুলো। “ইমিলিয়া”, “ইমিলিয়া” “দেখো”, এমন বিক্ষিপ্ত কয়েকটা শব্দ। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে চোখ মেললাম। এবারো কিছু চোখে পড়লো না। তাকালাম বাইরের দিকে। আসে পাশের বেশিরভাগ বাসায় আলো নিভানো। শুধু দূরে এফ ব্লকে একটা বাড়িতে আলো জ্বলছে। হটাত মনে সন্দেহ হল, আওয়াজটা নিচ থেকে আসছে না তো? আমাদের বারান্দায় কোনও গ্রিল লাগানো ছিল না। তাই ইচ্ছে করলেই ঝুঁকে নিছতা দেখা যেত। আমি সাহস করে, জিশাসের নাম নিয়ে বুকে ফুঁ দিয়ে বারান্দার ওয়ালে ঝুঁকে নিচে উঁকি দিলাম।
নিচে কলিংবেল লাগানো, তাই রাতে সুবিধা হবে ভেবে একটা লাইট সবসময় জ্বালানো থাকে। সেই আলো মেইন গেটের সেখান থেকে শুরু হয়ে গেটের সামনের অনেকটুকু রাস্তা পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। সেই আলোয় আমি যা দেখলাম তা জীবনেও ভুলার মত নয়।
আমি উঁকি দিয়েই দেখলাম নিচে কে যেনও ঠিক আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। যেনও জানত আমি এই মুহূর্তে উঁকি দিবো। ঐ জিনিসটা এমন জায়গায় দাঁড়ানো ছিল যে গেটের আলোটা প্রায় তার মুখের উপর এসে পড়েছে। ওর মুখটা দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলাম।
ছেলে না মেয়ে তা পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছিল না। আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, এরপর আমার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিল। আমি ভয়ে জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা। চিৎকার করতে চাচ্ছি, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনও আওয়াজ বের হচ্ছে না। এবার দেখলাম সেই আকৃতিটি আস্তে আস্তে হাওয়ায় ভেসে আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি পাগলের মত চেষ্টা করছি চিৎকার দেয়ার জন্য কিন্তু পারছি না। দৌড়ে যে ভেতরে চলে যাবো তারও কোনো উপায় নেই।সেই হাওয়াটি আমার ভিতর মিলিয়ে গেল।সেই শক্তিটি আমাকে নিয়ন্ত্রিত আর চালিত করতে লাগল। সেই শক্তিটি আমাকে বারান্দা থেকে সিড়ি বেয়ে নিচে গেল।সেই শক্তিটি আমাকে সম্মোহিত করে আমাকে যেন নিয়ে যাচ্ছে।আমার ইচ্ছাশক্তি না থাকা সত্ত্বেও শক্তিটি আমাকে আমার বাসা থেকে বের করে আনল। আমি বাসা থেকে বের হয়ে ইডিলিয়া স্ট্রীটে হাটছি।আমি কোথায় যাচ্ছি,কেন যাচ্ছি কোন কিছুই বুঝতে পারলাম না শুধু এইটুকু বুঝলাম আমি পার্কফিল্ড লেকের দিকে যাচ্ছি।এবং সেই শক্তিটির প্রভাব উপেক্ষা করে ফিরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি প্রায় ৩০ মিনিট জঙ্গলে হাটলাম। এতক্ষণ চলার পর অবশেষে আমি লেকের পাশে এসে পৌছালাম।পৌছানোর পর আমি লেকটিকে দেখলাম। রাতের সময়ও লেকটিকে দেখতে অপরুপ লাগছিল।যখন আমি লেকটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছিলাম ঠিক তখনই কেউ আমাকে সজোরে ধাক্কা মারল এবং আমি লেকে পরে গেলাম।আমি সাতার কাটতে পারতাম না।তাই খুবই ভয় পেলাম।কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আমি টের পানির ভিতর থেকে কেউ যেন আমাকে টেনে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।লেকের ঠিক মাঝামাঝি আসার পর আমি টের পেলাম দড়ির মত কিছু আমার পায়ে পেচিঁয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর পানির ভিতর সেই দড়িটি টান দিয়ে আমাকে পানির ভিতর নিয়ে গেল।লেকের খুব গভীরে যাওয়ার পর লেকের তলদেশে আমি একটি কালো রংয়ের ট্রাংক দেখতে পেলাম।তারপর সেই ট্রাংকটিকে আমি লেকের পানি থেকে তুলে তীরে নিয়ে গেলাম।ততক্ষণে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি অনুভব করলাম আমার অপর এখন আর তার প্রভাব নেই। তাই আমি সেখান থেকে দৌড়ে যেতে লাগলাম। ঠিক তখনি আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। যেন কেউ আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিল।তারপর আমি শুনতে পেলাম “ইমিলিয়া” “ইমিলিয়া” “খুলো”।তখন আমি বুঝতে পারলাম সেই শক্তিটি চাইছে আমি যেন ট্রাংকটি খুলি তাই আমি লেকের তীরে ফিরে গেলাম। আমি ট্রাংকটি খুললাম। খুলার পর আমি ট্রাংকে একটি নীল ডায়েরী দেখতে পেলাম।
(চলবে)