#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব : ৫
সুরমা

অবাক টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়। বিলকিস বেগম বলেন,,,,,
-উঠলি কেন? খাবি না? অবাক গিয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে এসে বলে,,,,,
-পেট ভরে গেছে। অবাক গম্ভীর মুখ নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করে। বিলকিস বেগম ছেলের মন খারাপ হয়েছে বিষয়টা ধরতে পারলেন। তিনিও অবাকের রুমের দিকে পা বাড়ান।

অবাক ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে আছে। বিলকিস বেগম অবাকের কাঁধে হাত রাখলে অবাক মায়ের দিকে ফিরে তাকায়। অবাকের চোখে পানি ছলছল করছে। বিলকিস বেগমের মনটা ধরাম করে উঠে। অবাকের এখনও সারা শরীর কাঁপছে। ভালোবাসা হারানোর একটা ভয় জমে গেছে মনে। অবাক চোখ বন্ধ করে বললো,,,,,,

-আম্মা, আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই। বিলকিস বেগম শীতল কণ্ঠে বললেন,,,,,
-বল কি বলবি। অবাক কিছুক্ষণ নীরব থেকে নিজেকে রিলাক্স করে। মনটা কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে । সে বলে,,,,,

-আম্মা আমি অনুকে ভালোবাসি। অনুও আমাকে ভালোবাসে। ভেবেছিলাম অনুর পরীক্ষা শেষ হলেই তোমাকে বলবো। আম্মা আমি অনুকেই বিয়ে করতে চাই। বিলকিস বেগমের চোখ মাছের চোখের মতো চেয়ে আছে।

তিনি এর আগে কখনও এতটা আশ্চর্য হোন নি। এতো বড় একটা কথা ছেলে কিভাবে লুকালো? অবাক মায়ের ডান হাত নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে করুণ স্বরে বলে,,,,,

-আম্মা, অনু খুব ভালো মেয়ে। ওর মতো এতো শান্ত শিষ্ট মেয়ে তুমি দুটো খুঁজে পাবে না। তুমিও তো অনুকে খুব ভালোবাসো। ওকে তোমার ছেলের জীবনে এনে দাওনা। আমি তোমার কাছে কখনও কিছু চেয়েছি বলো?

বিলকিস বেগমের চোখে পানি জমা হলো। তিনি কিছুটা পিছিয়ে আসলেন। ব্যালকুনির চেয়ারে বসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন। তাঁর হার্টে প্রবলেম আছে। অল্প টেনশনে প্রেসার বেড়ে যায়। বুক কাঁপতে থাকে। মনে হয় কেউ বুকে হাতুড়ি পিটাচ্ছে এমন অবস্থা হয়।

অবাক গিয়ে বসলো মায়ের সামনে ফ্লোরে। মায়ের কোলে মাথা রেখে অসহায় হয়ে বললো,,,,,,

-আম্মা, অনুকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করবো না। কাউকে না। বিলকিস বেগম নিঃশ্বাসের উপর নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন। কেমন একটা অদ্ভুত রকমের কষ্ট ফিল করতে লাগলেন। তিনি ধরা গলায় বললেন,,,,,,,

-তোর বাবা যে হায়দার ভাইকে কথা দিয়েছিল? তার কি কোনো মূল্য নেই? অবাক মাথা তুলে তাকায় মায়ের চোখের দিকে। মায়ের চোখে পানি। এই প্রথম মাকে করুণ লাগছে। অবাক হাঁটুতে ভর করে বসে।

মায়ের চোখের পানিটা মুছে দেয়। সে মায়ের হাতটা নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বলে,,,,,,

-আম্মা, আমি যে অনুকে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। অনু আমার নিঃশ্বাসে বসবাস করে। আমি হায়দার সাহেবের মেয়ের সব দায়িত্ব নিবো। ওই মেয়েকে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিবো। ওই মেয়ের লাইফটা সুন্দর করতে যা যা লাগে সব দিবো। দরকার হলে আমাদের একটা ফ্ল্যাট ওদের নামে করে দিবো।

বিলকিস বেগম চুপ করে রইলেন। অবাকের কান্না পাচ্ছে। মা এমন নীরব হয়ে আছে কেন? অবাক বিলকিস বেগমের হাতটা নিয়ে নিজের গালে রেখে বলে,,,,,,,

-আম্মা, তুমি এমন নীরব হয়ে থেকো না। তোমার নীরবতাযে আমার কলিজায় লাগছে। আম্মা বিশ্বাস করো, অনুকে ছাড়া আমি শেষ হয়ে যাবো। তুমি যা বলবে আমি তাই মেনে নিবো। শুধু অনুকে আমার থেকে দূরে করে দিও না।

আম্মা, তুমি একবার অনুর সাথে কথা বলো। ওও খুব ভালো মেয়ে। তোমার ওকে ভালো লাগবে। আমি যে ওকে কথা দিয়েছিলাম। ওকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমি কিভাবে বেইমানি করবো?? বিলকিস বেগম শীতল কণ্ঠে বললেন,,,,

-তোর বাবাও হায়দার ভাইকে কথা দিয়েছিল। উনার মেয়েকে এ বাড়ির বউ বানাবে। উনার ঋণ পরিশোধ করবে। তোর বাবা মরে যাওয়ার আগেও আমাকে বারবার বলে গিয়েছেন আমি যেন তোর সাথে হায়দার ভাইর মেয়ের বিয়ে দেই।

তোর কথার মূল্য কি তোর বাবার কথার থেকেও বেশি মূল্যবান ??? অবাক চমকায়। তার চোখ দিয়ে টিপটিপ করে পানি পড়তে থাকে। মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে অনেকটা দূরে বসে। বিলকিস বেগমও উঠে নিজের ঘরে চলে যান।

অনু গুনগুন করে গান গাইছে। হাতে কফির মগ। প্রিতি বলে,,,,,,,,

-আপু এমন গুনগুন করছিস কেন?
-গান বলার চেষ্টা করছি।
-তোর গানের গলা কাউয়ার মতো। অযথা ট্রাই করিস না। অনু চোখ রাঙিয়ে তাকায়। প্রিতি বলে,,,,
-আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে লাভ নাই। আমি সত্যি কথাই বললাম।

-সত্যি কথা গুলোও সুন্দর করে উপস্থাপন করা যায়। সাহিত্য বুঝিস না হাদারাম কোথাকার।
-সাহিত্য বুঝি। সাহিত্যিক ভাষায় কাউয়া স্মার্ট ওয়ার্ড। সাহিত্যে আরো একটা কথা আছে। যারা অতি রূপবতী তাদের কণ্ঠ হয় অতি বিশ্রী। যাকে কাউয়া বলে। রূপ আর কণ্ঠ একে অপরের বিপরীত।
-তার মানে তুই বলতে চাইছিস আমার কণ্ঠ খারাপ??
-নর্মাল বয়েজ তোর খুব সুন্দর। এতে কারো সন্দেহ নাই। কিন্তু যখন গান বলিস তখন কণ্ঠ কেমন ঝং ধরার মতো লাগে।

তবে সংগীত হলো প্রেক্টিসের বিষয়। প্রবাদে বলে, গাইতে গাইতে গাইন আর বাজাতে বাজাতে বাইন। এরকম। অনু চুপ করে থাকে। আজ বিকালটা একদম অন্য রকম লাগছে তার।

না ভালো না খারাপ। মাঝামাঝি অবস্থানে আছে। সে এরকম একটাও বিকেল কাটায় নি। প্রিতি আবার বলে,,,,,

-আপু, তোর কি মনে হয় আমি বেশি কথা বলি??? অনু কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,,,,
-কমও বলিস না।

-আসলে আমার কথা বলতে ভালো লাগে। তাই বলি। ভালোলাগার বিষয়গুলো আঁকড়ে ধরতে হয়। আর যাদের অনেক গুলো ভালো লাগার বিষয় থাকে তাদের জীবন আবার ছন্ন ছাড়া হয়। কোনোটাই ঠিক মতো মেন্টেইন করতে পারে না। অনু প্রিতির কথায় মনোযোগ দিলো না। তার হঠাৎ করে অবাকের কথা মনে পড়ে গেলো। অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,

-অবাক এখন কি করছে? প্রিতি নিজের কথা বন্ধ করে বলে,,,,,

-আমি কিভাবে বলবো? আমাকে বলতে হলে এখন অবাক ভাইয়ার বাসায় গিয়ে দেখে আসতে হবে সে এখন কি করছে। অনু হেসে বলে,,,,,,
-তাই কর। তুই গিয়ে একবার দেখে আয় সে কি করে। প্রিতি চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে থাকে অনুর দিকে।

অবাক কাঁদছে। তাঁর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। তার এখন কি করা উচিত? একদিকে মা অন্যদিকে নিজের ভালোবাসা। কাউকে ছাড়াই তার পক্ষে ভালো থাকা সম্ভব নয়।

পৃথিবীর কি নিষ্ঠুর নিয়ম। ভালোবাসা কি ভয়াবহ রূপ নেয়। কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছে অবাক। পৃথিবীটা ঘুরছে। চারপাশে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। মাকে বুঝাতে হবে।

ভেঙ্গে পড়া মানে নিরবে সব কিছু মেনে নেওয়া। কিন্তু তার জীবনে অন্য কারো জায়গা নেই। যে জায়গাটা অনুকে দিয়েছে সে জায়গাটায় অন্য কাউকে বসানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

বিলকিস বেগম বসে আছে ইজিচেয়ারে। তাঁর চোখেও পানি। ছেলেটা যে কষ্ট পাচ্ছে। তিনি কোনোদিন কল্পনাও করেন নি নিজেই কোনদিন ছেলের কষ্টের কারণ হবেন।

কিন্তু স্বামীকে দেওয়া শেষ কথা রক্ষা করতে হবে। আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো এরকম একটা পরিস্থিতির সামনে কাউকেই দাঁড়াতে হতো না। নিজের আরেকটা ছেলে থাকলেও বিকল্প কিছু চিন্তা করা যেতো।

কিন্তু এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। বিলকিস বেগম দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করলেন। সাথে সাথেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আজ কতদিন পর কাঁদছেন।

কতোকাল পর চোখ থেকে পানি ঝরছে। নামাজে বসলে দু এক ফোটা পানি বের হয়। কিন্তু তিনি কাঁদতে চেষ্টা করেন। তখন কান্না আসে না। শুধু শুধু কেউ কাঁদতে পারে না।

কষ্ট হলেই মানুষ কাঁদে। আবার বেশি সুখেও মেয়ে মানুষ কাঁদে। মেয়েরা হয় আবেগপ্রবণ। কিন্তু তাঁর চোখ থেকে পানি আসতেই চায় না। সুখেও পানি বের হয়না।

বিলকিস বেগমের মাথা ধরেছে। হঠাৎ মাথায় চিনচিন অসহ্যনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে। বিলকিস বেগম বিন্তিকে ডেকে চা দিতে বললেন। চা খেলে হয়তো মাথা ব্যথাটা কমে যাবে।

প্রেশারও হয়তো বেড়েছে। শরীর খারাপ লাগছে। মাথা ঘুরতেছে। এতো টেনশন করলে মাথার কি দোষ? মাথা কতো কিছু নিবে? এইটুকু মাথা কতো যন্ত্রণা সহ্য করবে???

কিছুক্ষণ পর চা এলো। চা নিয়ে বিন্তি এলো না। চা নিয়ে এসেছে অবাক। টিপটিপ পা ফেলে প্রবেশ করে সে। তাকে দেখতে লাগছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ। বিলকিস বেগম ছেলেকে এভাবে দেখে কষ্টে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে গেলেন।

কিন্তু মুখ ফোটে কিছু বললেন না। অবাক মায়ের সামনে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে ধরা গলায় বললো,,,,
-আম্মা তোমার চা। বিলকিস বেগমের বুক কেঁপে উঠলো। তিনি কাঁপা হাতে চায়ের কাপটা তুলে নিলেন। কিন্তু হু হ্যাঁ কোনো শব্দ করলেন না। তিনি আবার চেয়ারে হেলে চায়ে চুমুক দিলেন।

অবাক চা দিয়ে বসলো মায়ের পায়ের কাছে। মাথা নিচু করে বসতেই কয়েক ফোটা জল পড়লো মায়ের পায়ের উপর। সেই গরম পানির স্পর্শে বিলকিস বেগম কেঁপে উঠলেন।

তিনি পা দুটো জড়ো করে গুটিয়ে নিলেন। অবাকের বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো। কিন্তু সে কাঁদতে চাইছে না। সে নিজেকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো।

বিলকিস বেগম চা শেষ করে কাপ নিচে নামিয়ে রাখলেন। অবাক বললো,,,,,
-আম্মা, তুমি তোমার কথা ফিরিয়ে নাও। আমি অনুকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।

বিলকিস বেগম শীতল কণ্ঠে বললেন,,,,,,
-আমার চেয়েও অনু তোর কাছে বেশি প্রিয়? আমার কথার কোনো মূল্য নেই???

-আম্মা তুমি যদি এক বোতল বিষ এনে আমাকে দিয়ে বলো খেয়ে নিতে আমি খেয়ে ফেলবো। একটুকুও সংকোচ বোধ করবো না।

-তাহলে বিয়েটা করতে অসুবিধে কোথায়???
-আম্মা আমি তো বলেছি হায়দার সাহেবকে সব দিবো। উনার মেয়ের বিয়ের সব দায়িত্ব আমার। কিন্তু অনুকে ভুলে যেতে বলো না। আমি এটা করতে পারবো না।

-বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিবো এই কথা আমি আর তোর বাবা দেইনি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছি উনার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে আনবো। আমি আজ মরে গেলে তুই যাকে ইচ্ছে হয় বিয়ে করতে পারতি।

কিন্তু বেঁচে থাকার পর এটা কিভাবে সম্ভব? আমিতো উনার কাছে মুখ দেখাতে পারবো না। অবাক কাঁদছে। সে মায়ের পা দুটো জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,

-আম্মা আমি অনুর জায়গাটা কাউকে দিতে পারবো না। ওর সাথে যে অন্যায় করা হবে। ওকে যে ঠকানো হবে। আমি এতো বড় বেঈমানিটা কি করে করবো? কি করে???

বিলকিস বেগমের চোখ দিয়েও অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। তিনি ছেলেকে এভাবে দেখতে পারছেন না। কিন্তু ছেলের কথা চিন্তা করলে যে একটা মেয়ের সাথে অন্যায় করা হবে। একজন পিতার সাথে অন্যায় করা হবে। বিলকিস বেগম নিজের চোখ মুছে বললেন,,,,,

-জায়গা কেউ কাউকে দেয় না। জায়গা অটোমেটিক তৈরি হয়ে যায়। আর তোকে কারো কাছে বেঈমানও হতে হবে না। যা, নিজের ঘরে যা। অবাক মুখ তুলে তাকায়। করুণ স্বরে বলে,,,

-আম্মা, তুমি আমার কথা একটু ভেবে দেখো। আমিতো শেষ হয়ে যাবো।
-তুই যা। আমি ভেবে দেখবো। অবাক উঠে দাঁড়ায়। মনের ভেতরে কোথাও একটু আশ্বাস খুঁজে পাচ্ছে সে। অবাক মায়ের হাতে অসংখ্য চুমু দিয়ে বলে,,,,,

-আম্মা, আমি কখনও তোমার কোনো কথা ফেলবো না। তুমি শুধু আমার এই আবদার টুকু রাখো। এরপর তুমি যা চাইবে তাই করবো।

অনুর মন খারাপ। অবাক সেই কখন থেকে তাকে একটা কল দেয়নি। সে নিজে অবাককে অনেকগুলো কল দিয়েছে। একটা কলও রিসিভ করছে না। তাই মনে অভিমান জমা হয়েছে।

অবাক কল দিলেও আর রিসিভ করবে না সে। অনু গাল ফুলিয়ে শুয়ে থাকে। প্রিতি এসে বলে,,,,
-আপু খাবি না??? অনু মুখ না তুলেই বলে,,,,,
-না খাবো না।

-তাহলে গিয়ে আম্মুকে বলে আয়। অনু মাথা তুলে তাকায়। মুখ কালো করে বলে,,,,,,
-আম্মুকে বলার কি আছে???

-কারণ আম্মু তোকে খেতে যাওয়ার জন্য বলেছে। তুই যেহেতু খাবি না সেহেতু তুই নিজেই গিয়ে একবার কারণটা বলে আয়। আমি বললে আম্মু হাজারটা প্রশ্ন করবে। না চাওয়ার সত্ত্বেও অনুকে উঠতে হলো।

ডাইনিং টেবিলে মা, ভাই, ভাবি সবাই আছে। সেখানে গিয়ে অনু বলতে পারলো না আমি খাবো না। সে চুপচাপ গিয়ে টেবিলে বসে।

রিমি সবাইকে খাবার দেয়। অনুর ভাই রিয়াদ অনুকে দেখে। অনু নর্মালি শান্তশিষ্ট। চুপচাপ। কিন্তু আজ একটু বেশিই চুপচাপ লাগছে তাকে। রিয়াদ বলে,,,,,

-অনু। অনু মাথা তুলে বলে,,,,,,
-হ্যাঁ ভাইয়া বলো,
-তোর কি মন খারাপ?
-না। কেন বলতো?

-আমার মনে হচ্ছে তোর মন খারাপ।
-মন খারাপ থাকবে কেন? মন ভালোই আছে। রিয়াদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,,,

-অবাকের সাথে ঝগড়া হয়েছে?
-ওর সাথে আমার কখনই ঝগড়া হয়না ভাইয়া।
-তাহলে অবাককে তো আসতে দেখি না। আগেতো প্রত্যেকদিন সকাল বেলায় আসতো।

অনু চুপ করে মায়ের দিকে একবার তাকায়। কাজল রেখা বলেন,,,,

-আমি আসতে মানা করেছি। রিয়াদ বিস্মিত হয়ে তাকায় মায়ের দিকে। ভ্রু কুঁচকে বলে,,,,,
-না করেছো কেন?

-আশেপাশের লোকজন অবাক আমাদের বাসায় আসে বলে এটা নিয়ে সমালোচনা করে। রিয়াদ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,
-অহ!

কিছুক্ষণ নিরবতা চলে। সবাই চুপ করে খাচ্ছে। অনু সবার আগে খাবার টেবিল থেকে উঠে। প্রিতিও উঠে যায়। তারা দুজনেই নিজের রুমে চলে যায়। রিয়াদ মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,,,

-আম্মা, অনুর বিয়ে নিয়ে কিছু ভেবেছো?
-কি ভাববো?
-ওর বিয়ে দিতে হবে না???

-তুই আছিস না? বাবার অবর্তমানে বড় ভাই গার্ডিয়ান। তুই দেখ কখন কি করবি।
-আম্মা, আমি কি মামার বাসায় গিয়ে মামীর সাথে অবাক আর অনুর বিয়ে নিয়ে কথা বলবো?

-অনুর বয়স হয়েছে। প্রিতিও বড় হয়েছে। ওকেও বিয়ে দিতে হবে। এখন যত তাড়াতাড়ি অনুর বিয়েটা হয় ততই মঙ্গল। তাছাড়া পাড়াপ্রতিবেশিরা যেভাবে পিছনে লেগেছে মান সম্মান সব ধূলায় মিশে যাবে।

আমার মনে হয় ওদের বিয়েটা এখন দিয়ে দেওয়া উচিত। তাছাড়া আমার কথায় হয়তো আজ অবাক আসবে না। কাল যে আসবে না তার কি গ্যারেন্টি আছে? অথবা তারা যে বাহিরে দেখা সাক্ষাত করবে না তারও নিশ্চয়তা নেই।

ওরা দেখা করবে তাতে আমার আপত্তি নাই। আপত্তি হলো লোকের সমালোচনার স্বীকার হবে তাতে। হয়তো দুজন একদিন বাহিরে গিয়ে ঘুরবে। কেউ একজন দেখলো। তখন আবার বাসায় এসে নালিশ দিয়ে যাবে। আমি এটা চাইছি না। রিয়াদ চুপ করে আছে। কাজল রেখা টেবল থেকে উঠলেন।

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here