#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব- ২৭
সুরমা

মেঘ কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকে। তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে বিলকিস বেগমের রুমে যায়। বিলকিস বেগমকে মেঘ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চুপ করে থাকে। বিলকিস বেগম মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর বিলকিস বেগম বলেন,

-চুপ করে আছিস কেন? কিছু বলছিস না যে? মেঘ মাথা তুলে তাকায়। তার চোখ দুটো জলে ভরপুর। মেঘের চোখে পানি দেখে বিলকিস বেগম উতলা হয়ে যান। তিনি জিজ্ঞেস করেন,
-কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন? অবাক তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে ওখানে গিয়ে?

-না আম্মা। উনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন নি। তোমাকে খুব মিস করছিলাম। কতদিন তোমাকে দেখি নি। তোমার শরীরের গন্ধ পাই নি। মনে হচ্ছে কতোকাল পর তোমায় জড়িয়ে ধরলাম। সেই খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে। আমি আর কখনও তোমাকে ছাড়া কোথাও যাব না আম্মা। কথাটা বলে মেঘ আবার বিলকিস বেগমকে জড়িয়ে ধরে। বিলকিস বেগম মেঘকে পরশ আদরে জড়িয়ে ধরেন। তিনি আদুরে কণ্ঠে বলেন,

-পাগলি মেয়ে। আমি কি সারা জীবন তোদের সাথে থাকবো? মেঘ মাথা তুলে ঠোঁট ভেঙ্গে বলে,
– আমাদের ছেড়ে কোথায় চলে যাবে তুমি? আমি তোমাকে কোথায়ও যেতে দিব না। বিলকিস বেগম মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মেঘের মাঝে বোধ শক্তি অনেক কম। এখনও ছেলেমানুষি ভাবটা রয়ে গেছে আচরণে। বিলকিস বেগম কথা ঘুরালেন,

– অবাক কোথায়?
– উনিতো ঘুমাচ্ছেন।
– তুই খেয়েছিস? মেঘ মাথা নাড়িয়ে না বলে। বিলকিস বেগম বললেন,
– যা আগে খেয়ে নে। তারপর দুজনে মিলে অনেক গল্প করবো। তোরা কেমন ইনজয় করলি শোনবো তো। মেঘ হাসিহাসি মুখ করে বলে,

– তুমি আমায় খাইয়ে দাও না। আজকে তোমার হাত দিয়ে খাবো।
– আচ্ছা যা। খাবারটা নিয়ে আয়। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। মেঘ খুশিতে প্রায় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে নিচ থেকে খাবার নিয়ে অাসে। বিলকিস বেগম নিজ হাতে মেঘকে খাইয়ে দেয়।

দিন কাটতে লাগলো। সময় ঘনিয়ে এলো অনুর বিয়ের। বিয়ের আয়োজনের কমতি নেই। বিয়ের সাতদিন আগে থেকেই অনুর বাড়ি বউ সেজেছে। অনুর এখন আর তেমন অবাকের কথা মনে পড়ে না। তবে একেবারেই যে অবাককে ভুলে গেছে সেটাও নয়। তবে এখন অবাকের কথা মনে হলে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এছাড়া তার আর কিছু করারও নেই। সে চেষ্টা করছে বর্তমান নিয়ে বাঁচতে। অতীত যত তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবে ততই মঙ্গল।

অনুর বিয়ের কেনাকাটাও সব শেষ। কালদিন পর চিরদিনের জন্য ইমনের হয়ে যাবে সে। অনু খুব ভালো করে জানে, ইমন তাকে সর্বোচ্চ দিয়ে সুখে রাখবে। ইমন মানুষ হিসাবে খারাপ না। ইমন তাকে কতোটা ভালোবাসে, কতটা কেয়ার করে এই দিনগুলোতে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। এখন তার প্রার্থনাও একটাই। ইমনকে যেন সে সুখি করতে পারে। তাকে যেন মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে পারে।

এদিকে অবাকের অবস্থা বেহাল। মেঘ এখন আর আগের মতো কিছুই খেতে পারেনা। যাই খেতে নেয় বমি করে বের করে ফেলে। এজন্য মেঘ সারাক্ষণ অবাককে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়। মাঝ রাতে অবাককে ঘুম থেকে টেনে তুলে। অবাককে দিয়ে খাবার রান্না করায়। কখনও অবাক চোখে ঘুম নিয়েই মেঘের জন্য খাবার তৈরি করে এনে দেখে মেঘ ঘুমে কাতর। আবার কখনও জেগে থাকলেও খেতে পারেনা। কখনও রাত ২টা ৩টায় বলে বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসতে। বেচারা অবাক কিছু বলতেও পারেনা। কিছু বলতে না বলতেই মেঘ ভ্যাভ্যা করে কান্না শুরু করে। আর তখনেই রুমে আগমন ঘটে বিলকিস বেগমের। তখন মা আর বউ দুজন মিলে অবাকের মাথা খায়। অবাক আর বিলকিস বেগম মেঘকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে চায়। মেঘ ইনজেকশনের ভয়ে ডাক্তারের কথা শুনলেই কান্না শুরু করে। মেঘের জন্য অবাক ঠিক মত অফিসও করতে পারেনা।

অনু বসে আছে ব্যালকনিতে। প্রিতি হাতে একজোড়া হাইহিল নিয়ে উপস্থিত হয়। অনু প্রিতির হাতে হাইহিল দেখে জিজ্ঞেস করে,
– এগুলো নিয়ে এলি কেন? প্রিতি চেহারাটা করুণ করে বলে,
– আপু দেখ কি করেছি। অনু জুতাজোড়া হাতে নিয়ে দেখে বলে,
– কি করেছিস?

– দুটো জুতার সাইজ দুই রকম। একটা ৪৮ আর একটা ৪৯। আমি কাল হলুদে এই জুতাটা পরবো বলে কিনেছিলাম। অনু খেয়াল করে দেখে সত্যি দুটো জুতার সাইজ আলাদা। অনু ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
-এটা কিভাবে হলো? আনার সময় খেয়াল করিস নি? প্রিতি মুখ ভোতা করে অনুর পাশে বসে বলে,

– তোরাই তাড়াহুড়ো করছিলি। প্যাক করার সময় আমি আর দেখিনি। এখন আমি কি পরবো কাল? তোরাতো নিজেদের জন্য কতো মার্কেট করলি। সব ঠিকঠাক করেছিস। আমার বেলায় তোদের যত তাড়াহুড়ো। প্রিতির মুখটা একদম কাঁদুম কাঁদুম হয়ে যায়। অনু প্রিতিকে শান্তনা দিয়ে বলে,

– আরে এমন করছিস কেন? মার্কেটে গেলেই তো চেঞ্জ করে দিবে।
– মার্কেটে যাবো কাকে নিয়ে? কেউ তো আমার সাথে যেতে রাজি হচ্ছে না।
– ভাবিকে নিয়ে যা।
– ভাবি কাজে বিজি। বলছে যেতে পারবে না।
– তাহলে তুই অন্য জুতা পর।
– এটা আমার জামার সাথে ম্যাচিং করা ছিল। তুই তো বসে আছিস। তোর কোনো কাজ নাই। চলনা আমার সাথে। অনু চোখ বড় বড় করে বলে,
– আমি?

– হুম। প্লীজ না করিস না। প্লীজ চল। অনু আর না করলো না। প্রিতি জুতাটা পরতে না পারলে তার মনটা খারাপ থাকবে। তাই রাজি না হয়ে উপায় নেই। প্রিতির মন খারাপ মানে পুরো অনুষ্ঠানে সে চুপ করে এক কোনে বসে থাকবে। দুজনেই রেডি হয়ে মার্কেটে যায়। প্রিতির জুতা চেঞ্জ করে শপ থেকে বের হতে গিয়ে অনু আর অবাক মুখোমুখি হয়।

অনেকদিন পর অবাক অনুকে আর অনু অবাককে দেখে। অনু ভেবেছিল আর কখনও অবাকের মুখোমুখি হবে না। এতদিন পর আবার অবাককে দেখে অনু ভেঙ্গে পড়ে। অবাকের চোখের কোণেও জল জমা হয়। এতদিন বিভিন্ন ব্যস্ততায় অবাক অনুর কথা ভুলেই গিয়েছিল। আজকে অনুকে দেখে তার বুকের ভেতরের হার্টবিট দৌঁড়াতে শুরু করে। বুকটা হাহাকার করে উঠে। পুরোনো স্মৃতি বুকের ভেতরে চেপে বসে। অবাক অসহায় চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-কেমন আছো অনু? অনুর নামটা নিতে গিয়ে অবাকের গলা ধরে যায়। অনু মাথা নিচু করে ফেলে। আল্লাহ কোন পরীক্ষা নিচ্ছে? কেন এভাবে অবাক মুখোমুখি হলো? প্রিতির রাগ লাগছে। প্রিতি কর্কশ কণ্ঠে বলে,

-কি ভেবেছিলে তুমি চলে যাওয়াতে আপু খারাপ থাকবে? খুব ভেঙ্গে পড়বে? আল্লাহ রহমতে সেটা হয়নি। আপু খুব ভালো আছে। আর ভবিষ্যৎ এও ভালো থাকবে। অবাক বুঝতে পারছে প্রিতি কেন তার সাথে এভাবে কথা বলছে। এক সময় এই প্রিতি তাকে খুব পছন্দ করতো। ভালোবাসতো। আজকে কিভাবে কথা বলছে? আর এভাবে কথা বলাটা তো অন্যায় কিছু নয়। তার ব্যবহারে সবাই কষ্ট পেয়েছে। অবাক নরম কণ্ঠে বলে,

-আমি জানি প্রিতি। তুই এখন আর আমাকে পছন্দ করিস না। আমার জন্য খুব কষ্টও পেয়েছিস। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি নিরুপায় ছিলাম। আমার দুটো হাত শিকল দিয়ে বাঁধা ছিল।
-থাক ভাই। আমরা এখন তোমার কথা শুনতে আসিনি। আর দেখা যখন হলো তখন একটা সুখবর দেই, কালদিন পর আপুর বিয়ে। তোমাকে দাওয়াত দেইনি। শুধু জানালাম। অনুর বিয়ের কথা শুনে অবাক আঁতকে উঠে। সে উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-অনুর বিয়ে? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? অনু আমাকে ভালোবাসে। অবাক অনুর দিকে এগিয়ে যেতে নিলে প্রিতি হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। অবাক থমকে দাঁড়ায়। প্রিতি রূঢ় কণ্ঠে বলে,

-কেন সম্ভব নয়? তুমি বিয়ে করতে পারো তাতে কিছু হয়না আর আপু বিয়ে করলেই অসম্ভব। আর ভালোবাসার কথা বলছো? সেটা অতীত। এখন আপু তোমাকে আর ভালোবাসে না। অবাকের দুনিয়া যেন ঘুরে যাচ্ছিল। অবাকের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। কথা বলার মতো শক্তিটুকু তার নেই। সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে। দুনিয়াটা তার ঘুরতে শুরু করেছে। প্রিতি অনুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। অবাক পাবলিক প্লেসে ধুম করে নিচে বসে পড়ে। মাথার চুল চুল টানতে টানতে চিৎকার করে উঠে।

অবাককে দেখার পর থেকে অনুর পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কেন আজ দেখা হলো? আজকে এভাবে মুখোমুখি হওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিল? অনুর চোখ দিয়ে গরম নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। আর অনু সেটা প্রিতির আড়াল করার চেষ্টা করছে।

অবাক এখন তার কাছে অতীত ছাড়া কিছুই না। কিন্তু অতীতের সেই মারাত্মক স্মৃতি অস্বীকার করার উপায় নাই। স্মৃতি কখনও মধুর হয় আবার কখনও ভয়ংকর হয়। তার মধুর স্মৃতি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাসায় মেহমানের অভাব নেই। এতো মানুষের ভিড়ে মন খুলে যে একটু কাঁদবে তারও কোনো উপায় নেই।

কাঁদতে পারলে হয়তো মন হালকা হতো। কিন্তু প্রিতি এক সেকেন্ডের জন্যও তাকে চোখের আড়াল করছে না। নানান কথায় অনুকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনু আনমনে বসে থাকে। প্রিতি অনুকে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরে বলে,

-আপু প্লীজ ভেঙ্গে পড়িস না। আম্মু ভাইয়া জানলে ভীষণ কষ্ট পাবে। অনু কিছু বলল না। চোখ মুছে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। প্রতিও পেছন পেছন গিয়ে বলল,

-শরীর খারাপ লাগছে তোর? অনু মাথা নাড়াল।
-তাহলে এই সময় শুলি কেন? ফ্রেশ তো হো। অনু নরম কণ্ঠে বললো,
-একটু ঘুমাবো। তুই অন্য রুমে যা। প্রিতি নড়লো না। অনু মাথা তুলে প্রিতিকে আবার বলল,
-কি হলো? যা। প্রিতি আবেগী কণ্ঠে বলল,
-আমি চলে গেলে তুই কান্না করবি। আমি যাব না। আমি চুপ করে বসে থাকবো তুই ঘুমা। অনু আর কিছু বলল না। চুপচাপ শুয়ে রইলো। জানে, প্রিতিকে এখন এখান থেকে সরানো যাবে না। অবাককে দেখার পর থেকে তার শরীর কাঁপছে। বুকের ভেতরে কেমন একটা ফিল হচ্ছে। নিঃশ্বাসটা ভারী লাগছে।

অবাক বাসায় পৌঁছায় সন্ধ্যার দিকে। তাকে বেহাল দেখাচ্ছে। চোখ দুটো আগুনের মতো লাল হয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো। অবাকের এমন চেহারা দেখে মেঘ আঁতকে উঠে। অফিস যাওয়ার সময় তো সে ঠিকেই ছিল। তাহলে এখন তাকে এমন লাগছে কেন? মেঘ লাফিয়ে বিছানা থেকে নিচে নামে।

অবাক দুলতে দুলতে সোফায় গিয়ে বসে। মেঘ অবাকের পাশে দাঁড়িয়ে শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে আপনার? আপনি কি অসুস্থ? এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাকে? মেঘের কথায় অবাক রেসপন্স করলো না। মেঘ অবাকের কাধে হাত রেখে আবার জিজ্ঞেস করে,

-অবাক বাবু। আপনার কি হয়েছে? আমাকে বলুন। অবাক মেঘের দিকে আগুন চোখে তাকায়। অবাকের এমন ভয়ংকর চাহনি দেখে মেয়ের সারা শরীর কেঁপে উঠে। মেঘ আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করে,

-আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? আমি কি করলাম? অবাকের এই মুহূর্তে মেঘকে বিষের মতো লাগছে। মেঘের জন্যই অনুকে পাওয়া হলো না। মেঘের জন্যই সারাজীবনের জন্য অনুকে হারাতে বসেছে। অবাক মেঘের ডান হা শক্ত করে চেপে ধরে। মেঘ আর্তনাদ করে উঠে,

-আহ! অবাক বাবু। আমার লাগছে। ছাড়ুন আমাকে। আমাকে এভাবে ধরলেন কেন? আমি কি করেছি? অবাক চিল্লিয়ে উঠে,
-তুমি আমার জীবনটা হেল করে দিয়ে জিজ্ঞেস করছো কি করেছো? তুমিই সকল সমস্যার মূল। তুমি যেদিন থেকে আমার জীবনে এসেছো সেদিন থেকে আমার জীবনটা আধারে ঢেকে গেছে।

আমি হাসতে ভুলে গেছি। আমি বেঈমান হয়ে গেছি। সবার কাছে অপন্দের পাত্র হয়েছি। আমাকে সবাই ঘৃণা করছে। তোমার জন্য আমার অনু আমাকে পর করে দিচ্ছে। মেঘের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে থাকে। অসহায় চোখে অবাকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। অবাক বলতেই থাকে,

-আমি তোমার থেকে মুক্তি চাই। আমি তোমার মুখও দেখতে চাইনা। তুমি এক্ষণি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবে। মেঘ কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-আমি কোথায় যাবো অবাক বাবু? আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমি আপনাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। অবাকের মাথায় যেন রক্ত চেপে গেলো। সে মেঘের দুই বাহু চেপে ধরে বলে,

-কিসের ভালোবাসা? আমি ঘৃণা করি তোমাকে আর তোমার ভালোবাসাকে। ঘৃণা করি। আমি একটু একা বাঁচতে চাই। একটু শান্তি চাই। অনুকে পাই বা না পাই। অন্তত তোমার মুখটা আমায় দেখতে হবে না। তুমি এক্ষণি বের হয়ে যাও আমার বাসা থেকে। অবাক মেঘকে বসা থেকে টেনে তুলে। মেঘ করুণার স্বরে বলে,

-আপনি শান্ত হোন প্লীজ। আমার সাথে এমন করবেন না। আপনার শরীর ঠিক হোক। তারপর আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো। অবাক মেঘকে টেনে একটু সামনে নিয়ে আসে। অবাক বলে,

– তোমাকে আমি আর দুমিনিটও এবাড়িতে দেখতে চাইনা। তুমি এবাড়িতে থাকলে আমি শান্তিতে বাঁচতেও পারবো না। তুমি যদি এক্ষণি না যাও তাহলে আমি এখন তোমাকে খুন করে ফেলবো। কথাটা বলেই অবাক মেঘকে জোর ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। মেঘ খাটের কোণায় বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। সাথে সাথেই চিৎকার করে উঠে,

-অবাক বাবু। অবাক ফিরেও তাকায় নি মেঘের দিকে। সে চলে যায় ব্যালকনিতে। ব্যালকনিতে গিয়ে হাটুতে ভর করে বসে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। অবাকের চিৎকার তার মায়ের রুম পর্যন্ত পৌঁছায়। বিলকিস বেগম অবাকের আর মেঘের চিৎকার শুনে আঁতকে উঠেন। তিনি আতংকিত কণ্ঠে বিন্তিকে ডাকেন,

-বিন্তি আমাকে তাড়াতাড়ি অবাকের রুমে নিয়ে চল। বিলকিস বেগম ছেলের রুমে ঢুকে আঁতকে উঠেন। মেঘ খাটের পাশে ফ্লোরে পড়ে রয়েছে। মেঘের পায়ের দিকটায় রক্তে বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বিলকিস বেগম চিৎকার দিয়ে উঠেন,

-মেঘ,,,,,,,,,,,,,,,! মায়ের চিৎকার শুনে অবাক ব্যালকনি থেকে দৌঁড়ে রুমে এসে দেখে মেঘের অবস্থা। অবাকের সারা শরীর নাড়া দিয়ে উঠে। সে কথা বলার মতোও শক্তিটুকু পাচ্ছে না। বিলকিস বেগম বলেন,

-অবাক, তুই কি করেছিস মেয়েটার সাথে? এক্ষণি মেঘকে হাসপাতালে নিয়ে চল। মেঘের কিছু হলে আমি তোকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না। আমার মেয়েটার কি করলি তুই। এত বড় আঘাত কিভাবে দিলি।

অনুর ঘুম ভাঙ্গলো ফোনের রিংটোনের শব্দে। শুয়ে থেকে সে কখন ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো সে নিজেও জানে না। অনু তাকিয়ে দেখে রুমে প্রিতি নেই। হয়তো সে ঘুমানোর পর প্রিতিও চলে গেছে। অনু হাত বাড়িয়ে পাশ থেকে ফোনটা নেয়। ফোনের স্কিনে ইমনের নাম ভেসে আছে। অনু বলে,

-এই ছেলেটা ঘুমাতেও দিবে না? আমার কি সুন্দর আরামের ঘুমটা নষ্ট করে দিল। অনু বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিভ করে। ওপাশ থেকে ইমন বলে উঠে,
-একটা সুন্দর জিনিস মনে পড়লো। এজন্য কল দিলাম। অনু জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

-আপনার কাছে সব কিছু সুন্দর লাগে।
-সুন্দর চোখে দেখি কিনা। অনু হেসে দেয়। ইমন বলে,
-আপনার হাসিটা ভয়ংকর । অনু উঠে বসে। নরম কণ্ঠে বলে,
-ঠিক আছে তাহলে আর হাসবো না।

-কেন হাসবেন না?
-আপনি না মাত্র বললেন আমার হাসিটা ভয়ংকর।
-তো? ভয়ংকর কিছু থেকে যদি ভালো কিছু হয় তবে ভয়ংকরেই ভালো। তাই নয় কি? অনু উত্তর দিল না। সে জিজ্ঞেস করলো,
-কল দিলেন কেন সেটা বললে ভালো হয়।
-একটা ছন্দ শুনাব।

-না এখন আমি ছন্দ শুনার মুডে নেই।
-শুনেই দেখুন ম্যাডাম। মুড তো ভালোও হতে পারে।
-ওহ! আচ্ছা তাহলে বলুন।
-একজন স্ত্রী তার স্বামীকে সব সময় এই ছন্দ বলতো। যখন স্বামী বাসা থেকে বের হতো।

” বিপদ যেন না আসে আমার মনের মানুষের জীবনে
সব সময় খুশি থাকে যেন শয়নে জাগরণে।
খুশিতে থাকে যেন সারা জীবন ভর
সর্বদা সাথে থাকবো জীবনে মরণে।”

– সুন্দর না ম্যাডাম? অনু বলল,
-এটা কোন ছন্দ হলো? আমার ভালো লাগে নাই। অনুর কথা শুনে ইমনের মনটা হালকা খারাপ হলো। ইমন নিচু কণ্ঠে বলল,

-এটা একটা ভালোবাসার ছন্দ ছিল। আচ্ছা তাহলে আর একবার ভালো কোনো ছন্দ বলবো। ইমন আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। অনু আপন মনে হেসে দেয়। তবে ছন্দটা তার খুব পছন্দ হয়েছে। অনু দুএকবার ফিসফিস করে ছন্দটা বলে।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here