#অবাক_মেঘের_বাড়ি
পর্ব : ২৫
সুরমা
সকালের মিষ্টি সোনালি রোদ এসে চোখে লাগতেই অবাকের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তার বুকটা ভারী ভারী লাগছে।গরম নিঃশ্বাসের বাতাস গলায় লাগছে। অবাক চোখ খুলে দেখে মেঘ তার বুকের উপর গুটিসুটি মেরে একদম বাচ্চাদের মতো শুয়ে আছে। অবাক শুয়ে আছে খালি গায়ে।
রাতে কখন ঘুমিয়েছে তার মনে নেই। কিন্তু কি হয়েছিল তার সবটা স্পষ্ট মনে আছে। অবাকের বুকটা হঠাৎ করেই কেঁপে উঠে। অবাক তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে দেখে সে একদম বিছানার কিনারায় শুয়ে আছে। একটু নড়াচড়া করলেই বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অবাক ফিসফিস করে বলে,
-ও আল্লাহ। এই মেয়েটা কি? এসে একদম কলিজার উপর শুয়ে আছে। অবাক একটু নড়তেই মেঘ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। অবাক খেয়াল করে দেখে,এইটুকুনি জায়গায় সে নিজেই ভালো করে শুয়ে থাকতে পারছে না আর এই মেয়ে কেমন করে তার বাহু আঁকড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। অবাক এক হাত দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে দেখে ভোর ৬. ৪২বাজে। সকালের এই মিষ্টি রোদ এসে চোখে পড়ছে। অবাক মেঘকে আস্তে করে পাশের বালিশে শুইয়ে দিতে নিলে মেঘ জেগে উঠে। চোখ দুটো কচলে বলে,
-কি হলো? এতো সকালে আমার ঘুম ভেঙ্গে দিলেন কেন? অবাক উঠে বসে বলে,
– এই মেয়ে তুমিতো এমনি অনেক নড়াচড়া করো ঘুমিয়ে। তার উপর যে এই টুকু জায়গায় এসে শুয়ে ছিলে কেন? যদি পড়ে যেতে? কি হতো? হাত পা তো ভেঙ্গে বিছানায় থাকতে এতক্ষণে। তখন আমার বিপদ হতো। মেঘ অবাকের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমি জানি আমি পড়তাম না। সাপোর্টার ছিলতো। আমি পড়ে যেতে নিলেও সে পড়তে দিতো না। অবাক ভ্রু নাচিয়ে বলে,
-তাই? এতো কনফিডেন্স?
-হু। নিজের থেকেও বেশি। আজকে তার প্রমাণও পেয়েছি। অবাকের মন কালো হয়ে যায়। অবাক কথা ঘুরিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
– যাও। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হও। আমরা এখনি বের হবো। একটু ঘুরবো। নাস্তা করবো। তারপর ছেড়াদ্বীপ ঘুরে কাল বাসায় চলে যাবো। মেঘ উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে একদম রেডি হয়ে বের হয়। অবাকও পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আসে।পরাগ ব্ল্যাক টিশার্ট আর থ্রি কোয়েটার পরে। মেঘ অবাকের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। যেকোনো সাজেই অবাককে স্মার্ট লাগে। যার তুলনা মেঘ করতে পারে না।
অবাক আর মেঘ দাঁড়িয়ে আছে মেইন বীচে । যাবে ছেড়াদ্বীপ। সাকিল সাইকেল ভাড়া নিয়েছে। সে প্রমিকে নিয়ে সাইকেলে করে ছেড়াদ্বীপ ঘুরে আসবে। অবাক বুঝতে পারছে না মেঘকে কি করে নিয়ে যাবে সেখানে। না নিয়ে গেলেও একটা বড় রকম আপসোস থেকে যাবে।
এতো দূর এসে ছেড়াদ্বীপ না যাওয়া মানে সেন্টমার্টিন আসাটা ব্যর্থ হওয়া। কিন্তু মেঘ তো ট্রলারে উঠতে পারে না। পিচবোর্ড, লাইফবোট এসবেও উঠতে পারবে না। অবাক পড়ে মহা বিপদে। সাকিল আর প্রমি কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হবে। মেঘ অবাকের হাত জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমরা যাবো না ছেড়াদ্বীপ?
– কিভাবে যাবো? তুমি ট্রলারে উঠবে না। পিচবোর্ডে উঠবে না। লাইফবোটে উঠবে না। তাহলে কি আমরা উড়ে চলে যাবো?
– আমরাও সাইকেল করে যাবো। প্রমি আপুকে সাকিল ভাইয়া সাইকেলে করে নিয়ে যাবে। আপনিও আমাকে সাইকেলে করে নিয়ে যান। অবাক মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তোমাকে সাইকেলে করে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
– কেন? আমি কি করেছি?
– কিছু করনি। তবে সাইকেলে সবাই ছড়তে পারে না।
– আমি পারি। আমিতো স্কুলে অনেকবার সাইকেল দিয়ে যেতাম। অবাকের চোখ কুচকে যায়।
– সাইকেলে করে কার সাথে গেছো? আংকেল সাইকেল চালাতে পারে?
– আরে না। আব্বু সাইকেল চালাতে পারে না। জমির ভাই খুব ভালো সাইকেল চালায়। আমি উনার সাথে যেতাম। যখন আমার স্কুলে যেতে লেইট হয়ে যেতো তখন জমির ভাইকে বলতো ‘চলো আমি তোমাকে স্কুলে দিয়ে আসি।’ তখন আমি জমির ভাইর সাথে যেতাম। উনি খুব ভালো সাইকেল চালান। অবাক মনে মনে রাগ হয়। মেঘের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,
– জমির ভাইটা কে?
– আমাদের পাশের বাসার।
– বয়স্ক?
– বয়স্ক হতে যাবে কেন? ইয়াং। আমার থেকে তিন বছরের বড়। ভালো মানুষ।
– অহ! যাও তোমার জমির ভাইকে নিয়ে আসো। উনিই না হয় তোমাকে সাইকেল করে ছেড়াদ্বীপ ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। মেঘ ঠোঁট উল্টে বলে,
– উনিতো এখন ঢাকায় আছে। আপনি চলুন না।
– আমি সাইকেল চালাতে পারিনা।
– মিথ্যা কথা বলবেন না। আম্মা বলেছিল আপনি সাইকেল চালাতে পারেন। অবাক অন্যদিকে ফিরে তাকায়। মেঘ অবাকের হাত আবার আঁকড়ে ধরে তার বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে বলে,
– প্লীজ চলুন না। আমি আপনার সাথে যেতে চাই। আমি ছেড়াদ্বীপ ঘুরতে চাই। অবাক জোরে নিঃশ্বাস ফেলে। এই ছেলের কথা শুনে মেঘের উপর হঠাৎ এতো রাগ হওয়ার কি কারণ? অবাক চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মেঘ অবাকের হাত ঝাকিয়ে বলে,
– দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কিছু বলুন। প্রমি আপুরাতো চলে যাবে। অবাক সাইকেল ভাড়া করে। যারা হাতে সময় নিয়ে সেন্টমার্টিন ঘুরতে যায় তাদের মাঝে অনেকেই সাইকেল করে ছেড়াদ্বীপ ঘুরে আসে। জোয়ারভাটার সময় ধরে সাইকেল রাইড এর মজাই অন্যরকম। অবাক মেঘমে সামনে বসিয়ে শুরু করে সাইকেল রাইডিং।
অনু তৈরি হচ্ছে মার্কেট যাওয়ার জন্য। সাথে প্রিতি আর রিমিও যাবে। অনু আর রিমি রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। সাথে কাজল রেখাও বসে আছেন। তিনি বললেন,
– প্রিতির এতো দেরি হচ্ছে কেন? রিমি বলে,
– ও এখনও সাজতেছে। আল্লাহ জানে আর কতো সাজবে। বেশ কিছুক্ষণ পর প্রিতি তৈরি হয়ে নিচে আসে। প্রিতিকে দেখে রিমি আর অনু দুজনেই বিস্মিত হয়। রিমি বলে,
– আরে। তুমি এতো সাজলে কেন? মনে হচ্ছে স্পেশাল কারো সাথে মিট করতে যাচ্ছ। প্রিতি হেসে জবাব দেয়,
– অবশ্যই স্পেশাল। আমার একমাত্র জিজু বলে কথা। আর প্রথমবার জিজুর সাথে যাচ্ছি। একটু না সাজলে হয়? অনুর বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে যায়। প্রিতি অনুর দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে বলে,
– এভাবে আমাকে দেখছিস কেন? বেশি সেজে ফেলেছি নাকি? অনু উঠে দাঁড়ায়।
– তুই এখনি যেভাবে সাজলি বিয়ের দিন না জানি কেমনে সাজিস আমি সেটাই ভাবছি।
– ভাবতে হবে না। তোর থেকে বেশি সাজবো গ্যারান্টি। রিমি হাসতে হাসতে বলে,
– বিয়েরটা নাহয় আমরা পরে ভাববো। এখন চলো তাড়াতাড়ি। আম্মা আব্বা মনে হয় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। কাজল রেখার থেকে বিদায় নিয়ে তিনজন বের হয়। গেইটের সামনে এসে তিনজনেই বড়রকমের শকড খায়। বিস্ময়ে তারা হা হয়ে যায়। কারণ ইমন গাড়ি নিয়ে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– ভাই তুই এখানে?
– তোদের রিসিভ করতে এসেছি।
– আমরা তো চলে যেতে পারতাম।
– তা যেতে পারতি। কিন্তু আমার মনে হলো তিনজন সুন্দরী রমণী একসাথে আসবে। যদি সমস্যা হয়। সেটা ভেবে চলে আসলাম। রিমি আর প্রিতি হেসে দেয়। অনু মাথা নিচু করে। ইমন অনুর দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,
– অন্যকারো জন্য টেনশন হয়না। প্রিতির জন্য বেশি টেনশন হচ্ছিল। আমার তো একটাই শালিকা। তার উপর পরীর বাচ্চার মতো সুন্দর। যদি কেউ নিয়ে যায়। তাই একঘণ্টা আগে বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি। প্রিতি খুশি হয়ে বলে,
– সত্যি ভাইয়া? একঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন? ইমন হাতের ঘড়িটা দেখে বলে,
– না। এক ঘণ্টা হতে এখনও ৩ মিনিট ২২ সেকেন্ড বাকি আছে।
– এতক্ষণ ধরে আসলেন বাসার ভেতরে কেন গেলেন না?
– মনে হলো তোমরা সাজগোজ করছো। আর আমি যাওয়ার কারণে যদি ডিস্টার্ব হয় তাই।
– সরি এতক্ষণ অপেক্ষা করানোর জন্য। & থ্যাংকইউ আমাদের নিতে আসার জন্য।
– ওয়েলকাম আপু। এবার সবাই গাড়িতে উঠলে আমি ধন্য হই। অনু, প্রিতি আর অনু তিনজনেই পেছনের সিটে গিয়ে বসে। ইমন মুখ কালো করে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে। রিমি গ্লাসের ফাঁক দিয়ে মুখ বের করে বলে,
– কিরে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
– তো কি করবো? সবাই গিয়ে এমন ভাবে বসছিস মনে হচ্ছে আমি ড্রাইভার। রিমি ভ্রু উপরে তুলে। সে অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
– অনু তুমি গিয়ে সামনে বসো। অনু ভ্রু কুচকে ফেলে
– আমি?
– হ্যাঁ তুমি।
– কিন্তু ভাবি আমি কেন? তুমি যাও। নাহলে প্রিতি যাক। রিমি আর প্রিতি একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে। প্রিতি বলে,
– আমি কেন যাবো? তোর জামাইর পাশে তুই গিয়ে বস। অনু প্রিতির দিকে চোখ বড় করে তাকায়। রিমি বলে,
– যাও। তুমি ওখানে না গেলে ইমন গাড়ি চালাবে না। রিমি জোর করে অনুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। অনু মনে মনে বলে,
– আজব লোকতো। আমাকে কেন তার পাশে বসতে হবে? অন্য কেউতো বসতে পারে। না আমাকেই বসাবে। সবার উপর খুব রাগ করলাম আমি। একটার সাথেও আর কথা বলবো না। অনু মুখটা একদম বাচ্চাদের মতো করে সামনের সিটে ইমনের সাথে বসে। ইমন অনুকে দেখে খুশি হয়।
সাকিল আর প্রমির সাইকেল এগিয়ে গিয়েছে। মেঘ আর অবাকের সাইকেল পেছনে। বীচে শীতল বাতাস। মেঘের চুল উড়ে গিয়ে পড়ছে অবাকের মুখের উপর। অবাক সাইকেল চালানোতে মনোযোগী হতে পারছে না। মেঘের চুলের নেশাকর ঘ্রাণ তাকে মাতাল করে দিচ্ছে। কি এক আকর্ষণীয় শক্তি তাকে টানছে। ইচ্ছে করছে মেঘের চুলে মুখ গুজে দিয়ে হারিয়ে যেতে।
মেঘ সাইকেলের সামনে বসে অবাকের হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। আজ তার খুশির সীমা নেই। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সেরা সুখটা সে পেয়েছে। খুশিতে মাঝে মাঝে মেঘের চোখ জলে ভিজে যাচ্ছে। সে হয়তো এই সুখের কথা মুখে প্রকাশ করতে পারবে না। তবে আল্লাহর কাছে বারবার শুকরিয়া আদায় করছে। মেঘ আনমনে অবাকের হাতে মাথা ঠেকায়। সে ফিল করতে পারছে সাইকেল কাঁপছে। মেঘ সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে চাকা ঠিক মত চলছে না। এভাবে সাইকেল চললে তো পড়ে যাবে। মেঘ চিৎকার করে উঠে,
-অবাক বাবু, কিভাবে চালাচ্ছেন? পড়ে যাবতো। মেঘের কথা শেষ হতে না হতেই অবাক আর মেঘ সাইকেল নিয়ে পড়ে যায়। অবাক তাড়াতাড়ি উঠে মেঘের উপর থেকে সাইকেল টেনে তুলে। মেঘ নিচেই পড়ে থাকে। অবাক অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-ব্যথা পেয়েছো কি? মেঘ মুখটা অসহায় করে বলে,
-আপনি সাইকেলটা নিয়ে এমন কাকতাড়ুয়ার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে আমাকে টেনে তুলুন। অবাক আশ্চর্যনিত কণ্ঠে বলে,
-একি! তুমি এখনও উঠোনি কেন? মেঘ কড়া কণ্ঠে বলে,
-আমার এখানে এভাবে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছিল তাই উঠি নি। এবার আমাকে উঠান। আমার কোমড়টা মনে হয় ভেঙ্গে গেছে। অবাক তাড়াতাড়ি সাইকেলটা স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে মেঘকে টেনে তুলে। অবাক বলে,
-ব্যথা পেয়েছো?
-না পড়ে গিয়ে খুব মজা পেয়েছি। এভাবে কেউ সাইকেল চালায়?
-আমার কি দোষ? তোমার জন্যই তো এমনটা হলো। মেঘ চোখ বড় বড় করে বলে,
-আমি আবার কি করলাম?
– তুমি করনি। তোমার চুল করেছে।
– আমার চুল কি করছে? অবাক আমতাআমতা করতে শুরু করে। এখন মেঘকে কি বলবে? মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– বলছেন না কেন?
– ইয়ে মানেএএএএ, ইয়ে,
– এমন করছেন কেন? ভালোকরে বলুন
– হয় হয়। এমন হয়।
– কি হয়?
– ইয়ে মানে অনেকদিন ধরে সাইকেল চালাইনিতো। এজন্য হয়ে গেছে। আজব। একটু নাহয় পড়েই গেছি। পা চলছিল না। একজনকে নিয়ে সাইকেল চালাচ্ছি। সহজ কথা নয়। সাইকেলেরও তো জীবন আছে নাকি? এতো ওজন নিয়ে সাইকেল চলতে পারে নাকি? এজন্যই এমনটা হয়েছে। অবাকের কথা শোনে মেঘের চোখ কপালে। অবাক তাকে মুটি বলছে? মেঘ মুখটাকে করুণ করে কান্নামাখা কণ্ঠে বলে,
– আপনি আমার মতো একটা বাচ্চা, ইনোসেন্ট, স্লিম মেয়েকে মুটি বলছেন? আমি মুটি? এটা আপনি বলতে পারলেন? আপনার বুকটা একটুকুও কাঁপলো না? কথাগুলো বলেই মেঘ কান্না শুরু করে দেয়। মেঘের কান্না দেখে অবাক আবুল হয়ে যায়। সে নিজের হাত বুকে রেখে দেখে সত্যি তার বুক কাঁপছে কিনা। অবাক মনে মনে বলে, ‘আজব মেয়েতো। বুক কাঁপবে কেন?’ অবাক অসহায় কণ্ঠে বলে,
– আমি তোমাকে মটু বলিনি। সত্যি বলছি। আমি বলছিলাম তুমি নড়ছিলে তাই সাইকেল পড়ে গেছে। মেঘ কান্না থামিয়ে বলে,
– আমি মুটেও নড়ি নি। আপনার জন্যই পড়েছি। অবাক পড়েছে মহা মুশকিলে। কোনো দিকে যাওয়ার মতো রাস্তা নেই তার।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমার জন্যই পড়েছো। অনেকদিন চালাইনি তাই এমনটা হয়েছে। এখন চলো। যাই। আর ফেলবো না।
– আমি যাব না। আমি কাঁদবো। আপনি আমাকে মটু বলেছেন। মিথ্যা অপবাদ দিলেন। অবাক নিজের কপালে হাত রাখে। আল্লাহ আমাকে বাঁচাও। আমি কই যাবো। এই কোন মেয়েকে আমার কপালে দিলে? সব কিছুতেই তার কান্না করতে হবে। মেঘ তাকিয়ে দেখে অবাক চুপ করে কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে শান্তনাও দিচ্ছে না। মেঘ বলে,
– আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? দেখছেন না আমি কাঁদছি? কিছুতো বলুন।
– আমি বললে কি তুমি শুনবে? তারচেয়ে ভালো তুমি কাঁদো। কান্না করা শেষ হলে বলো আমরা রিসোর্টে ব্রেক করবো। মেঘ চোখ বড় বড় করে বলে,
– কেন আমরা কি ছেঁড়াদ্বীপ যাবো না?
– তোমার কান্না শেষ হতে হতে সাকিল আর প্রমি ঘুরে চলে আসবে। তখন রিসোর্টেই যেতে হবে।
– থাক আমি আর এখন কাঁদবো না। রিসোর্টে গিয়ে কাঁদবো। এখন চলুন আমরা ছেঁড়াদ্বীপ যাবো। অবাক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
– ঠিক আছে চলো।
অনুর জন্য গয়না দেখা হচ্ছে। সবাই মিলে একটার পর একটা গয়না দেখে যাচ্ছে। যে গয়নাটা পছন্দ হচ্ছে সেটাই নিয়ে নিচ্ছে। অনু পড়েছে মহা জ্বালায়। তাকে একটার পর একটা গয়না ট্রায়াল দেওয়ানো হচ্ছে। কোন গয়নায় তাকে মানাবে। যদিও অনুকে সব গয়নাতেই মানায়। ইমন দাঁড়িয়ে আছে একটু দূরে। আর তাকিয়ে আছে অনুর দিকে। আল্লাহ কিভাবে একটা মেয়েকে এতো গুণ আর রূপ দিতে পারে? যতই দেখে দেখার স্বাদ মিটে না। ভাবতেই অবাক লাগে এই মেয়েটাই জীবনের প্রথম চাওয়া ছিল। হৃদয়ে আসা প্রথম প্রেম। হারিয়ে যাবে এমন অবস্থায়ও তাকে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে। সব কিছুর পর তাকেই জীবন সঙ্গী হিসাবে পাওয়া হচ্ছে। ইমন জোরে নিঃশ্বাস ফেলে। মনে মনে বলে, ‘অনু তোমাকে আমার মনের আর আমার রাজ্যের রাণী করে রাখবো। কখনও বিন্দুমাত্র কষ্ট পেতে দিব না। কখনও না। কোনদিনও না।’
একে একে সব রকম মার্কেট করা হলো। লালটুকটুকে শাড়ি কিনা হলো। ইমনের জন্য শেরয়ানি। ইমনের আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে না। কখন চিরদিনে জন্য নিজের করে পাবে অনুকে? সেইদিনটা আজ হলো না কেন? ইচ্ছে করছে না আর অপেক্ষা করতে। তবুও অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা যদি হয় কল্যকার তবে অপেক্ষাই ভালো।
চলবে,,,,,,