#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব : ১৭
সুরমা

অবাক অফিস থেকে বাসায় আসে রাত ৯টায়। রুমে এসে দেখে মেঘ রুমে নাই। অবাক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মেয়েটাকে দেখলে রাগ লাগে। মেজাজ ঠিক থাকে না। ভালো হয়েছে অফিস থেকে এসেই তার মুখ দেখতে হয়নি।

অবাক ব্যাগ রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেই দেখে মা রুমে বসে আছে। হঠাৎ মাকে রুমে দেখে অবাক সচকিত হয়। বিলকিস বেগম অদ্ভুত ভাবে অবাকের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।

মায়ের এমন অদ্ভুত চাহনি দেখে অবাকের বুক ধ্ধক করে উঠে। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে অবাকের। অবাক টাওয়াল গলায় ঝুলিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। বিলকিস বেগম স্বাভাবিক কণ্ঠে বলেন,,,,,,

– এখন আর মায়ের কথা মনে পড়ে না? মায়ের কথা শোনে অবাক করুণ চোখে তাকায়। সত্যি এখন আর মায়ের কথা মনে পড়ে না। কতদিন হলো মাকে দেখে না সে। একবার জানতেও চায়নি মা কেমন আছে। অবাকের বুক হাহাকার করে উঠে। চোখের কোণায় জল জমা হয়। অবাক অপরাধী কণ্ঠে বলে উঠে,,,,,,,

– সরি আম্মা। খুব বিজি ছিলাম তো। তাই,,,,,,
– আগেও তো বিজি থাকতি। সকাল থেকে শুরু করে রাত ১২টা ১টা পর্যন্ত অফিসে কাজ করতি। তবু ফজরের সময় আমার কাছে গিয়ে বসতি। অফিস থেকে বাসায় এসেই আমার সাথে দেখা করতি।

তখন আমিও সুস্থ ছিলাম। এখন যখন আমি অসুস্থ তখন তিন চারদিনেও আমার কথা মনে হয়না। মাকে দেখতে ইচ্ছে করে না। জানতে ইচ্ছে করেনা মা কেমন আছে। কথাগুলো বলে বিলকিস বেগম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। অপরাধবোধে অবাকের মাথা নিচু হয়ে যায়।

আম্মাতো মিথ্যা বলেনি। প্রত্যেকটা কথা সত্যি। বিলকিস বেগম চাপা হেসে বললেন,,,,,
– আমি কিছু মনে করিনি এতে। সব সময় সন্তানরা মা বাবার খেয়াল রাখবে তা তো নয়। কখনও কখনও তো ভুলতেই হয়। এতেও যদি সন্তান সুখি হয় তাহলে আমরা মা বাবারাও খুশি।

বিলকিস বেগম আর অপেক্ষা করলেন না। চেয়ারের চাকা নিজ হাতে ঘুরিয়ে নিলেন। অবাক একটু এগিয়ে এলো। কিন্তু আম্মাকে পিছু ডাকার সাহস পেলো না। অবাকের চোখের অশ্রুকণা টপ করে গড়িয়ে পড়লো। অন্যায় হয়েছে। খুব অন্যায় হয়েছে।

অবাক বাসায় আসার পর থেকে একবারো মেঘকে দেখেনি সে। মেঘ কোথায় আছে অবাক জানে না। জানার ইচ্ছাও নেই। অবাক রাতের ডিনার শেষ করে। রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে। ফেইসবুকে ঢুকতেই অনু একাউন্ট চোখের সামনে ভেসে উঠে।

অনু অন লাইন। আজ কতদিন পর অনুর ছবিটা দেখছে। আনন্দে অবাকের চোখ চিকচিক করে উঠে। সে আর বিলম্ব করলো না। মোবাইল হাতে নিয়ে অনুকে কল করে। একবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ হয়। কি আশ্চর্য! এমনটা অবাক এখন কল্পনাও করে নি।

তবে মনে মনে এমনটাই চেয়েছিল। তার মনে হচ্ছে আজ পুরোনো সেই দিন। যেমনটা অনু আগেও করতো। আজও হয়েছে। তাহলে কি সুখ আবার আসবে?? অবাক বিস্ময়ে কথা বলতে পারছে না। অনু স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে,,,,,,

-হ্যালো,,,, অনুর কণ্ঠ শোনে অনু আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। কতদিন পর সেই চিরচেনা কণ্ঠ। আবেগে অবাকের চোখে পানি চলে আসে। সে আবেগপ্রবণ হয়ে কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলে,,,,,,,,

-অনু, অনু। অবাকে কণ্ঠ শোনে অনু চমকে উঠে। কণ্ঠ এতো ভারী অবাকের? অনু উতলা হয়ে যায়।
-কি হয়েছে তোমার? তুমি ঠিক আছো তো?
-হ্যাঁ আমি আছি। তুমি কেমন আছো অনু?

-হুম। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। এতো রাতে কল দিলে যে?
-তোমাকে খুব মিস করছি অনু। তোমাকে খুব দেখতে মন চাইছে। অনু আমার সাথে একবার দেখা করবে? কাল একবার আসবে আমার সাথে দেখা করতে? অনু চুপ করে থাকে। অবাক আবার বলে,,,,,,

-অনু কি হলো? কিছু বলছো না যে? চুপ করে আছো কেন? অনু কষ্ট হচ্ছে। বলতে ইচ্ছে করছে তুমি বললে একবার কেন একশোবার আসবো। কিন্তু বললো না। সে নিজের কষ্ট নিজের ভেতরে চাপা দিয়ে দিলো।

-অবাক তোমার বউ রুমে নেই? নাকি তুমি রুমে নেই? অবাক সচকিত হয়। অবাকের রাগ লাগছে। সে কি বলছে আর অনু কি বলছে? অবাক দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,,,

-কিসের বউ বউ করছো? তুমি খুব ভালো করেই জানো তোমার জায়গাটা কেউ কোনোদিন নিতে পারবে না। মেঘকে আমি বউ হিসাবে মানি না। অনু জানে অবাক তাকে এতো সহজে ভুলতে পারবে না। তবে ভুলতে হবে। এযে নিয়তির লেখা।

-তুমি মানো আর না মানো বিয়েতো হয়েছে। আর মেনেও নিবে। কথায় বলে না ‘নিয়তির লেখন না যায় খণ্ডন।’ এনি ওয়ে তোমার বউয়ের নাম মেঘ? অবাক কথা বলে না। অনু আবার বলে,,,

-নামটা কিন্তু অনেক কিউট। তোমার বউটাও নিশ্চয় অনেক কিউট। দাওয়াত তো দিলে না। অন্তত একটা পিক দেখাতে পারতে। অবাকের মাথা ফেটে যাচ্ছে। অনু এমন করছে কেন? অনু খুব ভালো করেই জানে এ কথা গুলো শোনলে তার খারাপ লাগবে। কষ্ট লাগবে। তবুও ইচ্ছে করে কষ্ট দিচ্ছে? অবাক টপিক চেঞ্জ করে বলে,,,,,

-কি হলো? আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এখনও পেলাম না
-কি প্রশ্ন?
-আমার সাথে কাল একটিবার দেখা করবে? তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। প্লীজ না করো না।
-সরি অবাক। আমার সময় হবে না।

-কেন সময় হবে না? তোমার তো এক্সাম শেষ। এখন কিসের ব্যস্ততা? আমার জন্য একটু সময় বের করো প্লীজ। আগে তো বললেই পাখির মতো উড়ে আসতে।
-আগের সময় এখন নেই। সময় বদলে গেছে। সাথে মনও।
-তুমি এভাবে বদলাতে পারো না অনু। তুমি তো আমায় ভালোবাসো।

-আগে বাসতাম। এখন না। আর বউ থাকার পর যদি ছেলেরা এক্সের সাথে যোগাযোগ রাখে তাহলে লোকে সেটাকে পরকিয়া বলে। সেটা নিশ্চয় তুমি জানো? অবাকের চুল কাঁড়া হয়ে যায়। অবাক রাগে নিজের চুল এলোপাথাড়ি টানতে শুরু করে।

-তুমি কি বলছো অনু? তুমি এখনও আমায় ভালোবাসো। আমি জানি তুমি অভিমানে এসব বলছো।
-অবাক একটা মেয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে তোমার কাছে এসেছে। তাকে কষ্ট দিয়ো না। অবহেলা করো না। বরং তাকে ভালোবাসার চেষ্টা করো। তুমি যতটা কষ্ট পেয়েছো সবটা কষ্ট মুছে যাবে। কিন্তু তাকে অবহেলা করলে তোমার কষ্ট বাড়তেই থাকবে। কথা গুলো বলে অনু ফোন কেটে দেয়। অবাক চিল্লিয়ে উঠে।

-আমি পারবো না অনু। আমি কখনই পারবো না। অবাক আবার অনুকে কল করে। বাট অনু এবার কল রিসিভ করে নি। রাগে দুঃখে অবাক ফোনটা মাটিতে আছাড় মারে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে সাজানো জিনিস গুলো মাটিতে ছুড়ে ফেলে দেয়।

মেঘ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ অবাকের কাণ্ড গুলো দেখছিল। তার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। হাতের ব্যথায় ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে। কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না। এমনকি অবাক যখন অনুর সাথে ফোনে কথা বলছিল তখন কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন অবাক কষ্টে মাছের মতো ছটফট করছে। এই কষ্ট দুনিয়ার অন্য সব কষ্টকে হার মানায়।

মেঘ দেয়ালে পিট ঠেকাই। অস্পষ্ট স্বরে বলে,
অবাক বাবু পৃথিবীর সব কষ্ট আমার হোক। আপনি সুখি হোন। আপনার সুখের জন্য যদি আমাকে আমার সুখ বিসর্জন দিতে হয় দিবো। আমি চলে যাবো । আমি চলে যাবো বহুদূর। আপনার ভালোবাসায় বাঁধা হবো না।

অবাক দরজার কাছে এসেই থমকে দাঁড়ায়। মেঘ দাঁড়িয়ে আছে। মেঘের দিকে চোখ লাল করে তাকায় সে। মেঘ নিজের চোখ মুছে অবাকের দিকে কিছুটা এগিয়ে আসে। অবাক চোখ রাঙিয়ে বলে,,,,,,

– মহারাণী এসেছেন। এবার আপনি হেপি? খুব মজা পাচ্ছেন আমাকে কষ্ট দিয়ে? আমার ভালোবাসার কাছে আমাকে অপরাধী করে? আমার অনুও আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমাকে বুঝেও না বুঝার অভিনয় করছে সে।

আপনি খুশি হয়েছেন এখন?? অবাকের কথাগুলো মেঘের বুকে সুচের মতো বিঁধে। গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। মেঘ অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলে,,,,,,

– আপনার জীবন থেকে আমি চলে গেলেই তো আপনি খুশি হবেন তাই না??
– হ্যাঁ খুশি হবো। খুব খুব খুশি হবো। তুমি গেলে আমার জীবনটা রক্ষা পায়। আমি একটু শান্তি পাই। অবাক মেঘের দিকে কিছুটা ঝুকে দুহাত জোর করে বলে,,,,,,

– আমাকে এটুকু দয়া করো। আমাকে এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি দাও। মেঘ করুণ চোখে তাকায়। কান্নায় চোখ ভেসে যাচ্ছে তার। আর কষ্টে বুক। এতো কষ্ট ছিল জীবনে? কি অপরাধ তার? কেন এতো কষ্ট এলো জীবনে? মেঘ উপরের দিকে তাকিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে। শক্ত গলায় বলে,,,,,,

– বেশ। তাহলে তাই হোক। আমি চলে যাবো। আপনার আর আপনার ভালোবাসার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। আপনি না চাইলে আর কখনও ফিরে আসবো না। অবাক ভ্রু কুঁচকায়।

– সত্যি বলছো নাকি মিথ্যা?
– সত্যি বলছি। আপনি ডিভোর্স পেপার তৈরি করুণ। নীল আকাশ থেকে কালো মেঘ চিরতরে সরে যাবে। আর কখনও অবাক বাবুর ভালোবাসায় বাঁধা হবে না মেঘ। অবাক শান্ত হয়। কিছুক্ষণ মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

সত্যি কি এমনটা হবে? এই কষ্টের সমাপ্তি ঘটবে? ফিরে পাবে প্রিয়তমাকে? অবাক খুশিতে আত্মহারা। মাথার চুলে আঙ্গুল চালিয়ে চুল ঠিক করে। ঘনঘন নিঃশ্বাস নেয়। ঘুরে আবার মেঘের সামনে আসে। আনন্দ মাখা কণ্ঠে বলে,,,,,,

– মেঘ,,,,,! অবাক খুশির ঠ্যালায় কি বলবে বুঝতে পারছে না। অবাকের চোখ ঝলমল করছে। তার খুশি চারপাশে ছিটকে পড়ছে। মেঘ স্পষ্ট অবাকের আনন্দ ফিল করতে পারছে। মেঘের ভেতরটা ধোমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।

ভালোবাসাকে হারানোর কষ্ট বুকের গহিনে চেপে বসেছে। এই মানুষটাকে ছেড়ে দিতে হবে ভেবে শরীরের লোমগুলো কাটা দিয়ে উঠছে। তবুও সুখ। যদি এই মানুষটার মুখে হাসি ফোটে। মেঘ মাথা নিচু করে ফেলে। অবাক উল্লাসিত কণ্ঠে বলে,,,,,,

– বিশ্বাস করো মেঘ খুশিতে আমি কিছু বলতে পারছি না। অবাক মেঘের দুটো হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। অবাকের স্পর্শে মেঘের সারা শরীর কেঁপে উঠে। অবাক বলে উঠে,,,,,

– তুমি জানো না তুমি আমার কতো বড় উপকার করছো মেঘ। আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি অনুকে খুব ভালোবাসি। অনুকে ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকারে আচ্ছন্ন। আর মনের রাজ্যে দুঃখের ছড়াছড়ি।

মেঘ আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। আমি আমার জীবনে কোনোদিন এক ফোটাও চোখের জল ফেলিনি। যতটা কেঁদেছি অনুকে হারিয়ে।

মেঘের হৃদয় মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে। নিঃশ্বাস আটকে যেতে চাইছে। সে কান্না চাপাতে চেষ্টা করছে। পারছে না। মেঘের দৃষ্টি শূনো। সে মনে মনে বলে, ‘ তবুও কি আমার কষ্টটা আপনি কখনও ফিল করবেন? কখনও কি খোঁজ নিয়ে দেখবেন আমার হৃদয়টাও আপনার মতো সেইম কষ্ট পেয়েছে কিনা? কখনও কি জানতে চাইবেন আমিও ভালোবাসা হারিয়েছি কিনা? আমিও ভালোবেসেছিলাম কিনা? অবাক মেঘের বিপরীত দিকে ফিরে দাঁড়ায়। অপরাধী কণ্ঠে বলে,,,,,,

– হয়তো আমার উপর তোমার অনেক অভিযোগ থাকতে পারে। আমি তোমাকে ভালো যখন বাসবো না তখন কেন বিয়ে করলাম। বিশ্বাস করো মেঘ, তোমার জীবনের সাথে আমি জড়াতে চাইনি। আমি পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম। আমি মায়ের কথা রাখতে গিয়ে এমনটা করেছি। কিন্তু আমি পারছি না আর। অনুকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারছি না। মেঘ নীরবে কেঁদে উঠে।

‘ আপনাকে আর কি দোষ দিবো অবাক বাবু। ভাগ্য তো আমার সাথে সব সময় এমন নিষ্ঠুর খেলা খেলছে। হয়তো আজও তাই ছিল।’

অবাক মেঘকে আশ্বস্ত করে বলে,,,,,,,
তুমি চিন্তা করো না মেঘ। তোমার কোনো অভাব রাখবো না। তোমার যত টাকা চাই আমি দিবো। বাসা, বাড়ি, গাড়ি সব দিবো। যা চাইবে তাই দিবো। এতো পরিমাণ দিবো সারা জীবন তুমি বসে খেয়েও শেষ করতে পারবে না।

তোমার সামনে সুন্দর একটা জীবন পড়ে আছে। তুমি অনেক কিছু করতে পারবে। পড়াশোনা করো। দেখবে আমার থেকেও ভালো একজন লাইফ পাটনার পাবে। মেঘের ভেতরে গর্জন শুরু হলো। ঝড় বইছে হৃদয়ে। তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছে। মেঘ ধরা গলায় বলে,,,,,,

– আমার টাকা লাগবে না। বাড়ি টাকা পয়সা আমার কিছু চাইনা অবাক বাবু। আমাকে কয়েকদিনে জন্য একটু আশ্রয় দিবেন এ বাড়িতে? কথা দিচ্ছি আমি কোথাও একটা প্রতিষ্ঠানে অনার্স ভর্তি হয়েই চলে যাবো।

– অবশ্যই। থাকো। যতদিন ডিভোর্স না হয়। তবে ডিভোর্সের পর চলে যাবে। দরকার হলে আমাদের অন্যকোনো ফ্ল্যাটে থাকবে। মেঘ মাথা কাত করে। অবাক বলে,,,

– আমি কালই ডিভোর্সের জন্য কথা বলবো।
– আমার আরো একটা রিকুয়েস্ট ছিল। রাখবেন?
– হ্যাঁ বলো।
– আম্মাকে ডিভোর্সের আগে কিছু বলবেন না। আর আমার আব্বুকেও এসব শোনাবেন না। অবাকের চোখ ছোট হয়। বিস্মিত কণ্ঠে বলে,,,,,,

– শোনাবো না মানে? আংকেল তো শুনবেই। তাছাড়া আম্মাও তো শুনবে।
– না না। আব্বু এসব শোনলে মরেই যাবে। সহ্য করতে পারবে না। আমি কোথাও চলে গেলে আব্বু পড়াশোনার কথা বলে ম্যানেজ করবো। কিন্তু ডিভোর্সের কথা কখনও বলা যাবে না। আর যেদিন আমাদের ডিভোর্স হবে সেদিন আম্মাকে বলবো। এর আগে আম্মাকে বলারও প্রয়োজন নেই। অবাক চিন্তা করে বলে,,,,,,

– ঠিক আছে। তাহলে তাই হবে। মেঘ মৃদু পায়ে এগিয়ে আসে খাটের কাছে। শরীর খুবই খারাপ লাগছে। মাথা ঘুরছে। মেঘ পড়ে যেতে নিলেও নিজেকে সামলে নেয়। অবাক দৌঁড়ে এসে মেঘের হাত ধরে। মেঘ অবাকের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,,,,,,,

– আমি ঠিক আছি। অবাকের মনে হলো মেঘের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক নেই। অবাক মেঘের কপালে হাত রেখে আতংকিত হয়ে বলে,,,,,,

– একি! তোমার শরীরে তো জ্বর। এতো জ্বর কিভাবে আসলো? ওষুধ নিয়েছো? মেঘ হাসে। কি মানুষ। কি ভিন্ন ব্যবহার। একটা কথায় পুরো মানুষটাই বদলে গেছে। কিছু মুহূর্ত আগেও তো হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। মেঘ খাটের উপর উঠে বসে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,,,,

– এটুকু জ্বরে আমার কিছু হবে না। কতো কঠিন রোগে আক্রান্ত আমি। মরলে তো তাতেই মরে যেতাম। অবাক মেঘের কথার অর্থ বুঝলো না। ভ্রু নাচিয়ে বললো,,,,,,,,

– মানে??
– কিছুনা। যান আপনি শুয়ে পড়ুন।
– তার আগে তুমি মেডিসিন খাও। এতো জ্বরে মানুষের মাথার ব্রেন নষ্ট হয়ে যায় অনেক সময়। মেঘ মনে মনে বললো,,,,,

– আমার ব্রেন তো নষ্টই হয়ে গেছে। ভেতরে যে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছি এই জ্বরতো তার কাছে নগণ্য। অবাক মেঘের দিকে মেডিসিন আর পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। হাত বাড়িয়ে নিতে গিয়ে মেঘের কাটা হাত শাড়ির আঁচল থেকে বেরিয়ে আসে। অবাকের নজর পড়ে মেঘের হাতের ব্যান্ডেজের উপর। অবাক প্রশ্ন করে,,,,,

– তোমার হাতে কি হয়েছে? অবাকের কথায় মেঘ চমকে উঠে। তড়িঘড়ি করে শাড়ি টেনে হাত ঢেকে ফেলে। মেঘ আমতা আমতা করে বলে,,,,,,
– ইয়ে মানে, কিছু হয়নি।

– কিছু হয়নি মানে? তাহলে ব্যান্ডেজ করেছো কেন? অবাক মেঘের দিকে এগিয়ে গিয়ে মেঘের পাশে বসে।
– হাত দাওতো দেখি কি হয়েছে।
– তেমন কিছু না। অবাক কঠিন গলায় বলে,,,,,,

– আমি বলছি না হাত দিতে??? এদিকে আসো। অবাক দেখে ব্যান্ডেজের উপর রক্তের দাগ। ব্যান্ডেজটাও ভালো করে করা হয়নি। অবাক ব্যান্ডেজ খুলে আঁতকে উঠে।

– এতোটা কেটে গেছে? অবাকের মনে হলো ভোরবেলার কথা। সে নিজেই মেঘকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল। নিশ্চয় তখনেই কেঁটে গেছে। অপরাধবোধে অবাকের মাথা নিচু হয়ে যায়। একটা মেয়েকে এতটা আঘাত দিয়েছে সে। কিভাবে এমনটা করতে পারলো। এতো নিষ্ঠুর আচরণ কিভাবে তার ভেতরে জন্ম নিলো? অবাক অপরাধী কণ্ঠে বলে,,,,,

– আই য়্যাম সরি। আমার তখন মাথা ঠিক ছিল না। মেঘ অপলকে চেয়ে দেখে অবাককে। সে নিস্তেজ কণ্ঠে বলে,,,,,,,
– আমার কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।
– ডাক্তারের কাছে যাওনি কেন? ইনফেকশন হয়ে যাবে তো।
– হবে না। লোহার শরীর। রক্ত মাংস কিছু নেই। অবাক অবাক হওয়ার লাস্ট পর্যায়। কি বলে এই মেয়ে???

– যে ক্ষতটা হয়েছে ডাক্তার দেখানো মাস্ট বি প্রয়োজন। এখন আমি ড্রেসিং করে দিচ্ছি কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। অনেক রাত হয়েছে। এখন ডাক্তার পাওয়া যাবে না। মেঘ কিছু বললো না। চুপ করে অবাককে দেখতে লাগলো। অবাক এইড বক্স বের করে পরম যত্নে মেঘের হাতের ক্ষতটা পরিষ্কার করতে লাগলো।

অনু প্রিতির সাথে গেইম খেলছে। প্রিতিটা দিন দিন বড্ড জেদি হয়ে যাচ্ছে। যা বলবে তাই করবে। এবং যাকে বলবে তাকে দিয়ও করিয়ে ছাড়বে। এই সকাল বেলায় কেউ গেইম খেলতে বসে? অনু বিরক্ত প্রকাশ করে বলে,,,,,,,

-এটাই লাস্ট পর্ব। আমি আর খেলবো না। প্রিতি মুখ বাকিয়ে বলে,,,,,,
-কেন খেলবি না?
-মুড নাই। এখন কি গেইম খেলার সময়?
-গেইম খেলারও আবার সময় লাগে নি? যখন মন চাইবে তখনেই খেলা যায়। আর বলছিস মুড নাই। অথচ দুই বারেই আমাকে গেইম দিলি। নিজে তো একটাও খেলি না। অনু হো হো করে হেসে উঠে। প্রিতি মুখ কাঁচুমাচু করে তাকিয়ে থাকে। অনু হাসি থামিয়ে বলে,,,,,

– হিংসে হচ্ছে? প্রিতি মুখ বেংচি দেয়। চোখ বড় করে বলে,,,,,,
– যতক্ষণ আমি না জিতবো ততক্ষণ খেলা চলবে।
– কি সাংঘাতিক ব্যাপার। আমি এতো খেলবো না। আচ্ছা যা এখন আমি হার মেনে নিলাম। খেলা শেষ। প্রিতি পা ভাজ করে বসে।
– জ্বি না। তুই হার মানলি মানে ইনডিরেক্টলি আমি হার মানলাম। তাতো হবে না সিস্টার। আমি গেইম খেলেই তোকে হারাবো। অনু নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,,,,,
– হয়েছে। আজ তাহলে আর খেলা শেষ হবে না মনে হচ্ছে।

কাজল রেখা এতক্ষণ প্রিতি আর অনুর কথা শোনছিল দরজার পাশে দাঁড়িয়ে। অনুকে বেশ স্বাভাবিক লাগছে এখন। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। মেয়েটা যদি স্বাভাবিক হয়ে যায় তাহলেই শান্তি। একজনে জন্য মেয়েটা কষ্ট পেতে পেতে শেষ হয়ে যাবে এটা তো হয়না। তিনি নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলেন।

চলবে—–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here