#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব : ১৫
সুরমা

অবাক রাগে কটমট করে ওয়াশরুমে ঢুকে। তার রাগটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কমছে না। সে রাগে ঠাস করে ওয়াশরুমের দরজা লাগায়। মেঘ ব্যালকনি থেকে দরজা লাগানোর আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে। তার এখন সত্যি খুব কান্না পাচ্ছে।

চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। দুই হাঁটু ভাজ করে হাঁটুর ভাজে মুখে লুকায়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,,,
– আম্মু গো। তুমি আমাকে কোন সাগরে বাসিয়ে দিয়ে গেলে?? তুমি আমাকে কেন সঙ্গে নিলে না? আমি আর কষ্ট নিতে পারছি না।

আমার কপালে তো আল্লাহ একটুকুও সুখ দিলো না। আমার জন্য আমার প্রিয় মানুষগুলোও কষ্ট পাচ্ছে। আমাকে তো কেউ একটু ভালোও বাসে না। আমি সবার অবহেলার স্বীকার। কেন কেউ আমাকে আপন করতে পারেনা? কেন পারে না? আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও আম্মু। আমি তোমার কাছে থাকতে চাই। মেঘ কিছুক্ষণ বসে বসে কান্না করে।

তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। হাতে প্লেট নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রুমে আসে। অবাক ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মেঘের কান্না শোনে। অবাক দেখে মেঘ রুম থেকে বের হচ্ছে। সে পেছন থেকে মেঘকে ডাক দেয়,,,,,
– এই মেয়ে এদিকে শোন। অবাকের ডাক শুনে মেঘ দাঁড়ায়। অবাক মেঘের দিকে এগিয়ে এসে বলে,,,,,

– এভাবে ম্যাও ম্যাও করছো কেন? রুমে বাহিরে ম্যাও ম্যাও করতে করতে যাবে না। মেঘ ভেজা চোখে অবাকের দিকে তাকিয়ে ঠোট ভেঙ্গে বলে,,,,,,

– আমি ম্যাও ম্যাও করছি না। আমি কাঁদছি। অবাক ভ্রু কুঁচকে কপালে হাত দিয়ে বলে,,,,,,
– ও মাই গড এটা কান্নার স্টাইল?? মেঘ মুখটা অসহায় করে বলে,,,,,,,

– আপনি কি জীবনে কারো কান্না শুনেন নি?
– শুনেছি। তবে ম্যাও ম্যাও স্টাইলের কান্না শুনিনি। আজ প্রথম শোনলাম। মেঘ রেগে বলে,,,,,

– আমি ম্যাও ম্যাও করছি না। মা মা করছিলাম। অবাক নিঃশ্বাস নিয়ে কঠিন হয়ে বলে,,,,,,,
-আমার জীবনটা শেষ করে এখন আবার কাঁদছে। কাঁদার কথা তো আমার। আচ্ছা যাই হোক। রুমে বাইরে গিয়ে কখনও কাঁদবে না।

কাঁদতে হলে রুমে বসে কাঁদবে। যত খুশি কাঁদবে। কেউ বারণ করবে না। আর আম্মাকে কিছু বলবে না। বললে তোমার খবর আছে। মনে থাকবে? মেঘ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। অবাক অন্যদিকে ঘুরে আবার বলে,,,,,

– চোখ মুখ মুছে রুম থেকে বের হও। যাও। অবাকের কথা শেষ হতে না হতেই মেঘ বাচ্চাদের মতো ইচ্ছাসূচকভাবে বলে,,,,,,

– তাহলে আপনি চোখ গুলো মুছে দিন। মেঘের কথায় অবাক আকাশ থেকে পড়ে। চোখ গরম করে মেঘের দিকে তাকালে মেঘ অসহায় ভঙ্গিতে বলে,,,,,,

– দেখছেন না আমার হাতে প্লেট। তাই বলছিলাম। মেঘ ঢোক গিলে অবাকের দিকে তাকায়। অবাক রাগে লাল হয়ে আছে। অবাকের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। মেঘ ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,,

– ইয়ে মানে আমিই মুছে নিচ্ছি। আপনি প্লেটটা ধরুন। অবাক কিছু বলার আগেই মেঘ অবাকের হাতে প্লেটটা ধরিয়ে দিয়ে বাম হাতে চোখ মুছে বলে,,,,

– ঠিক আছে? অবাক চুপ করে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘ একটু হেসে বলে,,,,
– এখন মনে হচ্ছে আমি কান্না করেছি? অবাক বলার মতো কিছু পেলো না।

মেঘ আর অপেক্ষা না করে বাতাসের গতিতে অবাকের হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে বের হয়ে আসে। অবাক দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে,,,,
– এই মেয়ে আমাকে না জ্বালিয়ে ছাড়বে না। আল্লাহ তুমি আমার কোথায় এনে ফেললে? অবশেষে একে???

অনু বই পড়ছে। সামনে পরীক্ষা। বেশি সময় বাকি নাই। এখন পড়াশোনায় মন না দিলে নির্ঘাত রেজাল্ট খারাপ আসবে। এমন সময় প্রিতি রুমে ঢুকে। অনুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,,,

– আপু আম্মু তোকে ডাকছে। অনু বই থেকে মাথা তুলে বলে,,,,,
– কেন?
– জানি নাতো।
– ওহ, আচ্ছা যাবো নে পরে।

– পরে না আগে গিয়ে দেখা করে আয়। না চাইতেও অনুকে উঠতে হলো। মা ডেকেছে। না গিয়ে উপায় নেই। তবে এখন পড়ায় মুড এসেছিল। যাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিল না। অনু সোজা নিজের মায়ের রুমে যায়। কাজল রেখা আলমারি গুছিয়ে রাখছেন। অনু স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করে,,,,,,,

– আম্মু আমায় ডেকেছিলে? কাজল রেখা ঘুরে মেয়ের দিকে তাকালেন। অনু দাঁড়িয়ে আছে। অনুকে আজ স্বাভাবিক লাগছে। চেহারাও নর্মাল। কাজল রেখা মৃদু হেসে বললেন,,,,,

– হ্যাঁ ডেকেছিলাম। কয়েকদিন ধরে তোকে দেখছি না। মায়ের মনতো কেমন কেমন করে। অনু মাথা নিচু করে। শীতল কণ্ঠে বলে,,,,,,

– আসলে আম্মু আমার পরীক্ষার ডেট দিয়েছে। পড়াশোনা নিয়ে একটু বিজি আছি।
– ভালো। পড়া শোনার জন্য বিজি থাকলে খারাপ কিছু নয়। কাজল রেখা কাপড় গুলো আলমারিতে গুছিয়ে রাখলেন। অনু বললো,,,,,

– আম্মু তুমি কি আমাকে আরো কিছু বলবা? কাজল রেখা বিছানায় বসে বললেন,,,,
– আয় আমার কাছে আয়। অনু এগিয়ে যায় মায়ের কাছে। কাজল রেখা মেয়ের হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে বলেন,,,,,,

– এই কয়দিনে তুই অনেকটা শুকিয়ে গেছিস। নিজের যত্নটুকুও করছিস না। এভাবে থাকলে চলবে? নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। এখন থেকে শরীরের যত্ন করবি। অনু মাথা নিচু করে বলে,,,,

– আচ্ছা। কাজল রেখা অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শীতল কণ্ঠে বললেন,,,,,,

– অনু মা আমার। অনু মাথা তুলে তাকায় মায়ের দিকে। মা কিছু বলতে চাইছে। কি বলবে? অনু চাপা হেসে বলে,,,,

– হ্যাঁ আম্মু বলো। কাজল রেখা অনুর কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে আদুরে কণ্ঠে বললেন,,,,
– আমি জানি তোর উপর দিয়ে এই সময় কি ঝড়তুফানটাই না যাচ্ছে। অবাকের জন্য তুই কতোটা কষ্ট পেয়েছিস।

অবাকের কথা শুনে অনুর বুকটা হাহাকার করে উঠে। এতক্ষণ লুকিয়ে থাকা কষ্টটা আবার যেন তাজা হয়ে উঠেছে। অনু নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,,,,,
– থাকনা আম্মু এসব কথা। যা হবার হয়ে গেছে। আমি আর অতীত নিয়ে ভেবে কষ্ট পেতে চাইনা। কাজল রেখা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,,,,,

– আমিও চাই তুই সব কিছু ভুলে যা। নতুন করে জীবনটা নিয়ে ভাব। কারো জন্যতো আর পুরো জীবনটা শেষ করে দেওয়ার মানে হয় না। তুই বুদ্ধিমতী। তুচ্ছ বিষয়ে নিজের জীবনের ক্ষতি করবি না এই বিশ্বাস টুকু আমার আছে। আমিও চাই তুই নতুনভাবে জীবনটা সাজা। কাজল রেখা কেমন আমতা আমতা করতে লাগলেন। অনু মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

– আম্মু তুমি যা বলতে চাও নিঃসংকোচে বলো।
– আসলে রিয়াদ তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছে। ছেলে খুব ভালো। জব করে। পরিবারটাও ভালো। আমিও চাইছিলাম যদি তোর,,,,,,,,। কাজল রেখা থেমে গেলেন।

অনু সচকিত। এখন বিয়ে? আর বিয়ে। বিয়ে করার জন্য তো সেই মানুষটাই নাই। অনুর বুকে কেমন হাতুরি পেটানোর মতো শব্দ হচ্ছে। হার্ট বিটটা ঝড়ের গতিতে চলছে। দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। চোখে পানি আসতে চাইছে। কিন্তু নিজেকে শান্ত করার জন্য সে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়। অনু নিজেকে সামলে বলে,,,,,,

– আম্মু আমি এখন বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছি না।
– ভাবছি না বললে হবে? ভাবতে হবে। আর যার জন্য বলছিস বিয়ে নিয়ে ভাবছি না সেতো ঠিকেই সংসার করছে বউ নিয়ে। সেতো তোর কথা ভাবেনি। তাহলে তুই কেন তার কথা ভেবে কষ্ট পাবি?

– আমি কারো কথা ভাবছি না। আমি এখন শুধু পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করছি। আম্মু প্লিজ আমাকে এখন বিয়ে নিয়ে প্রেসারাইজড করো না। বিয়ে নিয়ে চিন্তা করার জন্য অনেক সময় আছে। কাজল রেখা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,,,,,,

– আচ্ছা তাহলে তাই হোক। আমি তোকে এখন আর কিছু বলবো না। কিন্তু আমি চাইবো আমার মেয়েটা সুখি হোক। খুব সুখি হোক। আর তোকে আমার কথা রাখতে হবে। আজ নয় দুদিন পর।

আকাশের অবস্থা মেঘলা। বাহিরে বাতাস বইছে। অবাক দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। অফিস থেকে আসার পর থেকেই মাথা প্রচণ্ড পরিমাণ ব্যথা করছে। কিছু ভালোও লাগছে না। অফিসে যতক্ষণ ছিল ব্যস্ততম সময় কাটিয়েছে।

ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলো মাথায় আসে নি। বাসায় আসার পর থেকেই কেমন অস্বস্তি লাগছে। নিঃসঙ্গতা কেমন আঁকড়ে ধরেছে। কি আশ্চর্য! কয়দিন আগেও এমন রাত কাটে নি তার। নিজেকে এতোটা অসহায় লাগে নি। ভালো লাগছে না এই জিনিসটার সাথেও পরিচয় ছিল না।

ভালো লাগে না কি? সব কিছু ভালো লাগতো। যা চোখে ভাসতো সব রঙিন মনে হতো। যা নিয়ে কল্পনা করতো সব কিছু মনের গহীনে রোমাঞ্চ তৈরি করতো। ইদানীং সব কিছুতেই মনে হচ্ছে ভাল্লাগেনা।

‘ভাল্লাগেনা’ একটা কঠিন রোগের নাম। এর কোনো প্রকার ওষুধ নেই। যদি থাকতো তাহলে অবাক কিনে নিয়ে আসতো। এই ভাল্লাগেনাটাকে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিতো। অবাক টাওজারের পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে বাহিরের আকাশ দেখছে।

অন্যদিন হলে এই সময় হাতে কফি থাকতো। মোবাইলের ওপাশে প্রিয় মানুষটা থাকতো। আজ কিছু নেই। এযেন এক অন্যরকম জীবন। অন্যরকম দুনিয়া।

আকাশ আজ কালো হয়ে আছে। তার কোনো আলো নেই আজ। কাছ থেকে কাছে গাছগুলোও দেখা যাচ্ছে না। রুম থেকে আসা আলোয় হালকা আলোকিত হয়ে আছে ব্যালকনি।

মেঘ রুমে প্রবেশ করেই সিগারেটের গন্ধ নাকে এসে লাগে। মেঘের মন থমকে যায়। এই লোকটা আগে কখনও সিগারেট খায়নি। ইদানীং সব সময় রুমে সিগারেটের গন্ধ পাওয়া যায়। মেঘ নিঃশব্দে ব্যালকনিতে উঁকি দেয়।

অবাক দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে মুখ করে। মেঘ ধীর পায়ে এগিয়ে যায় অবাকের কাছে। অবাকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অবাক মেঘকে দেখেও না দেখার ভান করে। সে আগের ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে থাকে। মেঘ খুশি খুশি ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,,,

-এখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন? অবাক মেঘের কথায় পাত্তা দিলো না। সে সিগারেটে লম্বা টান দেয়। মেঘ অবাকের বাম হাতে আঙ্গুল দিয়ে গোতা দেয়। অবাক বিরক্তি কণ্ঠে বলে,,,,,,

-কি প্রবলেম তোমার? মেঘ হাসে। চোখ ঝলঝল করছে। মৃদু আলোয় মেঘের চকচকে দাঁত আর ঝলঝল করা চোখ নজর কাড়ে। এই আলোতে বেশ লাগছে মেঘকে। অবাকের বুক হঠাৎ করেই কেঁপে উঠে।

এই মেয়ের চোখ দুটো অমায়িক মায়ায় ভরপুর। কেমন নেশার মতো। এই চোখে চেয়ে থাকলে ভালো মানুষ সহজে খুন হয়ে যাবে। ক্ষনিকেই অবাকের মনে হলো, ‘চোখে কাজল পরলে যদি তা সুন্দর দেখায় তবে জীবনের কালো কেন জীবনকে সুন্দর করবে না?’

অবাক তড়িঘড়ি নিজের চোখ ঘুরিয়ে নেয়। মেঘ আহ্লাদী কণ্ঠে আবার বলে উঠে,,,,
-কি করছেন এখানে?
-ফুটবল খেলছি। খেলবা? মেঘ ভ্রু নাচায়। মুখ কাঁচুমাচু করে অসহায় ভঙ্গিতে বলে,,,,,

-তাহলে বল কোথায়? আপনিতো দাঁড়িয়ে আছেন। অবাক চোখ গরম করে মেঘের দিকে তাকায়। অবাকের রাগী চোখ দেখে ভয়ে মেঘ ঢোক গিলে। অবাক আবার বাহিরে নজর দেয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেঘ আবার বলে,,,,

-আপনি কি খাচ্ছেন? অবাক ভ্রুক্ষেপহীন। মেঘ বাচ্চাদের মতো ফেইস করে বলে,,,,,
-আপনি সিগারেট কেন খাচ্ছেন? সিগারেট খেলে কি হয়? অবাক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেঘকে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,

-সিগারেট খেলে বুদ্ধি এবং বয়স দুটোই বাড়ে। খাবে? মেঘ হাসি হাসি মুখ করে বলে,,,,,,
-তাহলে দেন একটু খেয়ে দেখি। আমারও বুদ্ধি লাগবে। আর বয়সও। সবাই আমাকে কেমন পিচ্চি বলে ডাকে। এটা কেমন খেতে?

মেঘের কথা শোনে অবাকের চোখ কপালে। এই মেয়ে বলে কি? সিগারেটকি খেয়ে টেস্ট করার মতো জিনিস? অবাক কিছু বলার আগেই মেঘ অবাকের আঙ্গুলের মাঝখান থেকে সিগারেটটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। অবাক উত্তেজিত হয়ে বলে,,,,,

-আরে কি করছো? সিগারেটটা নিলে কেন? দাও বলছি দাও। মেঘ ঠোঁট ভাজ করে বলে,,,,
-আমি খাবো।
-আজবতো। এটা কি খাওয়ার মতো জিনিস? সাথে সাথে মেঘ প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।

-তাহলে আপনি খাচ্ছেন কেন? অবাক বাকহীন হয়ে পড়ে। সে ইতস্ততভাবে বলে,,,,,
-এগুলো মেয়েরা খায় না। ছেলেরা খায় শুধু।
-মেয়েরাও খায়। আমি টিভিতে দেখেছি। মেঘ সিগারেট দুই আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে সিগারেটে টান দেয়।

সাথে সাথে সে কাশতে শুরু করে। অবাক বোকার মতো কিছুক্ষণ মেঘের দিকে চেয়ে থেকে বলে,,,,,
-হয়েছেতো এবার? দাও সিগারেটটা আমার হাতে। এখন তোমার বুদ্ধি আর বয়স দুটোই বেড়ে যাবে। মেঘ কাশি থামিয়ে মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে বলে,,,,
-ছিঃ ছিঃ! একটুকুও মজা নেই। কেমন তিতা তিতা। আপনি এসব খান কিভাবে?
-এই মেয়ে। তোমাকে বলেছি এতো প্রশ্ন করতে? এতো পণ্ডিত কেন তুমি? সিগারেটটা আমার হাতে দিয়ে সোজা রুমে গিয়ে ঘুমাও। নাহলে দুগালে দুটো দিবো। মেঘ ঠোঁট টানটান করে। চোখ ছোটছোট করে বলে,,,,

-আমাকে মারলে আম্মাকে বলে দিবো আপনি এসব বাজে জিনিস খান। মেঘের কথা শোনে অবাক চোখ বড় বড় করে। এই মেয়ে দেখছি ব্ল্যাকমেইল করছে। অবাকের ইচ্ছে হলো সত্যি সত্যি কষে একটা থাপ্পড় দিতে। কিন্তু মনে আবার ভয় কাজ করলো। সত্যি যদি আম্মাকে বলে দেয়। অবাক আমতা আমতা করে বলে,,,,,,

-আচ্ছা মারবো না। তুমি আম্মাকে এসব বলো না। গুরুজনদের কাছে সব বলতে হয়না। মেঘ সিগারেটটা বাহিরে ফেলে দেয়। অবাকের কাঁদো কাঁদো অবস্থা। এইটুকুনি মেয়ে কেমনে হুমকি দিচ্ছে। ভাবা যায়?

মেয়েরা বিয়ের পর দজ্জাল হয়ে যায়। অবাক চুপচাপ রুমে চলে আসে। মেঘও অবাকের পেছন পেছন আসে। অবাক আলমারি খুলে। মেঘ গিয়ে অবাকের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে। অবাক আলমারির ডোর লাগিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে,,,,,

-আমার পেছনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
-ঘুমাবো। আমার ঘুম পাচ্ছে।
-তো আমি কি করবো? আমি কি তোমার চোখের উপর বসে আছি? মেঘ মুখটা কাঁচুমাচু করে বলে,,,,

-আপনি ঘুমাবেন না?
-আমি পরে ঘুমাবো।
-চলুন না একসাথে ঘুমাই। অবাক ভ্রু উপরে তুলে বলে,,,,

-মানে? মেঘ অবাকের ডান হাত চেপে ধরে বলে,,,,,
-চলুন। প্লীজ চলুন। মেঘ অবাকের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে বিছানার কাছে। অবাক নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,,,,,

-কি হচ্ছে এসব? ছাড়ো বলছি। মেঘ অবাকের হাত ছেড়ে দেয়। অবাক রাগী স্বরে বলে,,,,,
-নিজের লিমিট ক্রস করো না। ফলাফল খুব ভয়াবহ হবে। মেঘের মন খারাপ হয়। মেঘ ধরা গলায় বলে,,,,

-আমার ভুলটা কোথায়? আমি কি অন্যায় করেছি?? অবাক কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে,,,,,

-তুমি কি করেছো সেটা সারাদিন চিল্লিয়ে বললেও শেষ হবে না। শুধু জেনে রাখো তুমি আমার জীবনটাই শেষ করে দিয়েছো। আমি বেঁচে থেকেও মরার মতো হয়ে আছি। মেঘের চোখ জলে ভরে উঠে। মেঘের চোখে পানি দেখে অবাক রাগে চিল্লিয়ে উঠে,,,,

-এখানে দাঁড়িয়ে ন্যাকা কান্না না করে যাও গিয়ে ঘুমাও। অবাকের চেল্লানো শুনে মেঘ কেঁপে উঠে। চোখ থেকে টপটপ করে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। মেঘ গিয়ে খাটের এক পাশে উঠে বসে। অবাক ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় শোয়।

বাহিরে তুমুল ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। সাথে প্রচণ্ড গতিতে বাতাস বইছে। মাঝে মাঝে বজ্রপাত। মেঘ বজ্রপাতের শব্দ শোনে হুরমুর করে উঠে বসে। মাঝেমাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মেঘের মনে হচ্ছে আগুনের ফুলকি রুমে চলে আসছে।

মেঘ বিছানা থেকে নেমে অবাকের কাছে যায়। সোফায় অল্প জায়গায় অবাকের সাথে মিশে অবাককে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ কারো জড়িয়ে ধরার স্পর্শে অবাক পেছনে ফিরতে গিয়ে মেঘ নিচে পড়ে যায়।

অবাক তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। তাকিয়ে দেখে নিচে মেঘ পড়ে আছে। অবাক একটা ভ্রু উপরে তুলে বলে,,,,,
– নিচে শুয়ে আছো কেন? অবাকের কথা শোনে মেঘ ভ্যাউভ্যাউ করে কাঁদতে শুরু করে। অবাক দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,

– আজবতো। সব সময় এমন করে কাঁদো কেন? আর তুমি এখানে আসছো কি করতে? মেঘ অবাকের কথার উত্তর না দিয়ে কাঁদতেই থাকে। অবাক বিরক্তি প্রকাশ করে। মেঘ কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,,,

– আপনি আমাকে নিচে ফেলে দিয়েছেন। অবাক বিস্মিত হয়।
– আমি ফেলে দিয়েছি মানে? আমি কিভাবে ফেলে দিলাম।
– আপনিই ফেলে দিছেন।
– না আমি ফেলিনি। আর খাট থেকে পড়লে এখানে আসলে কিভাবে?

– আমি খাট থেকে পড়তে যাবো কেন? আমিতো সোফায় আপনার সাথে শুয়েছিলাম। আপনার চোখ নেই? আমি যে এখনো নিচে পড়ে আছি। অবাক কড়া মেজাজে বলে,,,,,

– তো উঠছো না কেন?
– আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আবার আমার উপর মেজাজ দেখাচ্ছেন? আমাকে তুলুন বলছি। তুলুন। অবাক বিরক্ত হয়ে মেঘকে টেনে তুলে। অবাক বলে,,,,
– শোয়ার জন্য এতো বড় একটা খাট থাকার পরও এখানে এসেছো কেন? মেঘ অসহায় ভঙ্গিতে বলে,,,,,
– আমার ভয় করছে। বজ্রপাত আমার খুব ভয় লাগে। আমি আপনার সাথে থাকবো। অবাক ভ্রু নাচায়।

– আমার থাকে থাকবে মানে? সোফায় কি দুজন শোয়া যায় নাকি? তাছাড়া বজ্রপাত তো বাহিরে হচ্ছে। রুমে ভয় কিসের? যাও বিছানায় গিয়ে শোও।

– না আমি একা থাকবো না। প্লীজ আমাকে আপনার সাথে শোতে দিন। আমি আপনার সাথে শুব।
– আজবতো। আমার সাথে কিভাবে শুবে? সোফায় কি দুজন থাকা যায়?

– তাহলে আপনিও বিছানায় আসুন। আমার খুব ভয় করে। অবাক দাঁত কটমট করে বলে,,,,
– আমি তোমার সাথে শোব না। যাও এখান থেকে।
– তাহলে কিন্তু আমিও আম্মাকে গিয়ে বলে দিবো। অবাক বিস্মিত হয়ে বলে,,,,,
– কি বলে দিবে?

– আপনি সিগারেট খান। মেঘের কথা শোনে অবাক হা হয়ে যায়। মেঘ অবাকে হাত ধরে টেনে বলে,,,,,
– আসুন প্লীজ। আমি একা ঘুমাতে পারবো না। অগত্যা অবাককে বিছানায় যেতে হলো।

চলবে———-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here