#অবাক_মেঘের_বাড়ি
পর্ব : ১১
সুরমা
অবাক হসপিটালে পৌঁছে দেখে মামা দাঁড়িয়ে আছে। অবাক এগিয়ে যায় মামার দিকে। মামা বলেন,,,,,,,
-বাসায় গিয়ে তো দেখছি কিছুই করিস নি। যেভাবে গেলি সেভাবেই ফিরে এসেছিস।
তোর দিকে তো তাকানো যাচ্ছে না। কি হাল করেছিস একবার আয়নায় যদি নিজেকে দেখতি। হয়তো নিজেই নিজেকে চিনতে পারবি না। মামার কথায় পাত্তা না দিয়ে অবাক অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,,,,,,,
-মামা আম্মা? কেমন আছে আম্মা? অবাকের কথা শোনে মামা আমতা আমতা করতে থাকে। অবাক আবার জিজ্ঞেস করে,,,,,,
-কি হলো মামা? কথা বলছো না কেন? আম্মা কেমন আছে? আম্মা ঠিক আছে তো? মামাকে নার্ভাস লাগছে। তিনি মাথা নিচু করে বললেন,,,,
-জ্ঞান ফিরেছে। তবে,,,,
-তবে কি? মামা বলো তবে কি?
-আপার একটা পা ড্যামেজ হয়ে গেছে। আপা আর হাঁটতে পারবে না। মামার কথা শোনে অবাক শকট হয়ে যায়। সে দু তিন পা পিছিয়ে যায়। দেয়ালে গিয়ে হাত দিয়ে ভর করে দাঁড়ায়। মাথা যেন ঝিম ধরে আছে। এসব কি বলছে মামা? আম্মার পা ড্যামেজ? আম্মা আর আগের মতো হাঁটতে পারবে না?
পৃথিবীর সব কিছু এভাবে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কেন? কেন এমন হচ্ছে? কেন হচ্ছে এসব? কি পাপ করেছে আল্লাহর কাছে? আল্লাহ কেন এমন শাস্তি দিচ্ছে? কেন এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলো? অবাকের চোখ দিয়ে টপটপ পানি গড়িয়ে পড়ে। অবাক ধীরে ধীরে ফ্লোরে বসে পড়ে। ছোট মামা এগিয়ে যায় অবাকের দিকে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বললেন,,,,,,,
-শক্ত হো। তুই যদি ভেঙ্গে পড়িস তাহলে আপা আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। এই সময় নিজে শক্ত থেকে আপাকে শান্তনা দিতে হবে। আপাকে ভরসা দিতে হবে। ডাক্তার বলেছে, চিকিৎসা চলতে থাকতে। তাহলে আপা হয়তো আগের মতো আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে সময় লাগবে। অবাক দুই হাঁটুর ভাজে মুখ গুজে কান্না ভরা কণ্ঠে বলে,,,,,,
-মামা আমি আর পারছি না। আম্মাকে এই অবস্থায় আমি দেখতে পারবো না। আম্মার সামনে গিয়ে আমি কিভাবে দাঁড়াবো। আমি পারবো না। আমি কিছুতেই পারবো না মামা। আম্মার এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। আমার জন্যই আজ আম্মার এতো বড় একটা ক্ষতি হলো। আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। আম্মার সামনে যেতে পারবো না আমি। কিছুতেই পারবো না।
-পারতে হবে। তুই পারবি। উঠ। আপার কাছে যা। এখন তোর আপার কাছে থাকা উচিত। আপাতো এমনি ভেঙ্গে পড়েছে। আপা ভাবছে সে আর বাঁচবে না। এই অবস্থায় আপা যদি আবার মানসিক প্যারায় থ্যাকে। অতিরিক্ত টেনশন করে। তাহলে চিকিৎসা করেও তার উন্নতি করা সম্ভব হবে না। তখন চলে যাবে আমাদের স্বার্ধের বাইরে। উঠ।
অবাক চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়। তার যত কষ্টই হোক। এখন মায়ের পাশে দাঁড়ানো উচিত। মা সে তো পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ। একবার মাকে হারালে তার সমস্ত কিছু বিসর্জন দিলেও আর মাকে পাওয়া যাবে না। তবে অবাক পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। তবুও মায়ের সামনে স্বাভাবিক থাকতে হবে। মাকে আশ্বাা দিতে হবে।
অবাক মৃদু পায়ে কেবিনে ঢুকে। বিন্তি বসে আছে বিলকিস বেগমের মাথার পাশে। আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে। বিলকিস বেগম চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। অবাককে দেখে বিন্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,,,,
-ভাইজান আপনে আইছেন? আম্মাতো জ্ঞান ফিরার পর থেকেই আপনেকে খুঁজতাছে। অবাক কোনো কথা না বলে মায়ের কাছে এগিয়ে যায়। বিলকিস বেগম চোখ মেলে তাকায়। অবাককে দেখে তিনি ফিসফিস করে বলেন,,,,,,
-তুই এসেছিস? মায়ের অবস্থা যে তেমন ভালো নয় তা বেডে শুয়ে থাকা বিলকিস বেগমের বডি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। না চাওয়ার সত্ত্বেও অবাকের চোখ জলে ভরে উঠে। বিলকিস বেগমের এক হাতে স্যালাইন লাগানো। তিনি অন্য হাত হালকা উপরে তুলে অবাককে কাছে ডাকলেন।
অবাক গিয়ে মায়ের পাশে বসে মায়ের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। সে কিছু বলতে পারছে না। মুখ দিয়ে কথা আসতে চাইছে না। আসতে চাচ্ছে কান্না। বিলকিস বেগমের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। শরীরের সাথে সাথে বিলকিস বেগমের কণ্ঠও নেতিয়ে পড়েছে। তিনি নিথর কণ্ঠে বললেন,,, ,,,
-অবাক,,,, অবাক কষ্ট করে নিজের কান্না লুকিয়ে বললো,,,,,,
-আম্মা তুমি কথা বলো না। তোমার কষ্ট হবে। তুমি রেস্ট নাও। আমি তোমার পাশে বসে থাকবো। বিলকিস বেগম জোরে জোরে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,,,,
-কিছু কথা বলার আছে। এখনি বলি। পরে যদি আর বলার সুযোগ না হয়। আল্লাহ যদি আমাকে তার কাছে নিয়ে যায়। মায়ের কথা শোনে অবাক অস্থির হয়ে বলে,,,,
-এসব বলো না আম্মা। তোমার কিছু হবে না। ডাক্তার বলেছে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে। তুমি ছাড়াতো আমার কেউ নেই। তুমি আমাকে একা রেখে কোথাও যাবে না। তুমি আমার কাছেই থাকবে। আমি নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে তোমাকে চাইবো।
আল্লাহ কে বলবো আমার সব কিছু নিয়ে তোমাকে যেন আমার কাছে রাখে। আমার অর্ধেক আয়ু যেন তোমাকে দিয়ে দেয়। ছেলের কথা শোনে বিলকিস বেগম জোরপূর্বক একটু হাসলেন। বিলকিস বেগম কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলেন,,,,,,
-অবাক, আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে অনেক কিছু দেখেছি। তুই এখন বড় হয়েছিস। আমার দায়িত্ব শেষ। এখন আমার থাকা মরা সমান। তুই এখন নিজেরটা নিজে বুঝতে শিখেছিস। এখন আমার কোনো পিছুটান নেই। তোকে নিয়ে চিন্তাও করতে হবে না। আমি মরলেও তোর কিছু হবে না। অবাক তার মায়ের চোখ মুছে দিয়ে বলে,,,,
-কিসব বলছো তুমি? এসব কথা বলতে আছে? বিলকিস বেগম অবাক মানা করা সত্ত্বেও বলেন,,,,,
– দুটো কথা বলবো। তারপর চুপ করেই থাকবো। অবাক, আমি যদি সামনে শুক্রবার পর্যন্ত বেঁচে থাকি তুই আমার শেষ ইচ্ছা হিসাবে একটা কথা রাখিস। হায়দার ভাইর মেয়েকে বিয়ে করিস। তার আগে যদি মরে যাই তাহলে তুইও বাঁচলি আমিও।
আর যদি বেঁচে থাকি তোর কষ্ট হলেও মেয়েটাকে আমার বাসায় বউ করে নিয়ে আসিস। আমি মরে যাওয়ার পর তোর যদি মনে হয় তুই হায়দার ভাইর মেয়ের সাথে থাকতে পারছিস না তখন তাকে তাড়িয়ে দিস। ডিভোর্স নিয়ে নিস। তখন তোর যা ভালো মনে হয় তাই করিস।
আমি তো আর তখন থাকবো না। তাই বাঁধাও দিবো না। অবাক তার মায়ের হাতের উপর কপাল ঠেকিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে। তার শরীর কাঁপছে। আল্লাহ বারবার এ কোন পরীক্ষার সামনে দাঁড় করাচ্ছে। কি করবে সে? অবাক আবেগমাখা কণ্ঠে বলে,,,,
-আম্মা আমি কি করবো? আমি যে অনুকে বড্ড বেশি ভালোবাসি। ওকে আমি কথা দিয়েছিলাম। ওর সাথেও যে বেঈমানি করা হবে। আজ যদি আমি রিলেশনে না যেতাম তোমার কথা নির্দিধায় মেনে নিতাম। একটাও কথা বলতাম না।
-ধর আজ তুই এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আসিস। তোর কাছে টাকা পায়সা চাকরি কিছু নেই। তোর কাধে অনেক দায়িত্ব। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তুই কি করতি? মায়ের কথা শোনে অবাক চুপ করে যায়। বিলকিস বেগম আর কিছু বলেন না। অবাক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,,,,
-আম্মা আগে তুমি সুস্থ হও। এসব ককথা পরে হবে। তুমি একটু সুস্থ হও। আমি তোমায় বাসায় নিয়ে যাবো। বাসায় চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা থাকবে। বাসায় থাকলে তুমি আরাম ফিল করবে। বিলকিস বেগম গরম পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন,,,,,,
-যতদিন বেঁচে থাকি আমি এখানেই থাকি। বাসায় যাওয়ার দরকার নেই। বিন্তিকে আমার কাছে রেখে দেই। বাসায় তো আমার আর কোনো কাজ নাই। আমার দায়িত্ব শেষ। বাসায় গিয়েও শুয়ে থাকবো এখানেও শুয়ে আছি। আমার কাছে এখন সব সমান। পার্থক্য নেই। অবাক মাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,,,,,,
-বাসায় তো তোমাকেই প্রয়োজন আম্মা। তুমি বাসায় না থাকলে বাসাটা অন্ধকার লাগবে। আর বাসায় থাকলে তোমাকে সব সময় শুয়ে থাকতে হবে না। আমি তোমাকে কাঁধে নিয়ে পুরো বাসাটা ঘুরবো। তুমি ফজরের সময় কোরআন তিলাওয়াত করবা।
তুমি বাসায় থাকলে বাসাটা বাসা নয় জান্নাত মনে হয়। তুমি বাসায় না গেলে তোমার ছেলের বউকে বরণ করে ঘরে তুলবে কে? তুমি যদি বাসায় নাই যাও তাহলে আমি বিয়ে করবো কার জন্য? কথা গুলো বলতে গিয়ে অবাকের বুক ফেটে যায়। তবু সে স্বাভাবিক থাকার ভান ধরে।
কষ্টে গলা ধরে আসে। বিলকিস বেগম অবাকের দিকে তাকায় মায়া ভরা চোখে। তিনি খুশিতে আত্মহারা। মনে হয় জীবনের অনেক বেশি কিছু পেয়েছেন। বিলকিস বেগম কোমল কণ্ঠে বলেন,,,,,,
-তুই বিয়ে করতে রাজি? হায়দার ভাইর মেয়েকে বিয়ে করবি? আমার কথা রাখবি? তোর বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করবি? অবাক মাথা নিচু করে। চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে শুরু করে। মায়ের হাতটাতে চুমু দিয়ে বলে,,,,,,,
-তোমার সুখের জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি। তুমিই আমার সব। শেষ ঠিকানা। অবাক আর বসে না থেকে বাইরে বের হয়ে আসে। বিলকিস বেগমের চোখ দিয়ে পানির বন্যা বইতে শুরু করে। তিনি জানেন এই সিদ্ধান্তে ছেলে কষ্ট পাবে।
কিন্তু এই কষ্ট বেশিদিন স্থায়ী হবে না। একবার বিয়েটা হলে সব কিছু ভুলে যাবে। আল্লাহ মানুষকে কঠিন সময় ভুলে যাওয়ার এক অপূর্ব নিয়ামক দান করেছেন। তাইতো খুব প্রিয়জন মারা গেলেও খুব সহজে ভুলে যায়। যদি মানুষের ভুলে যাওয়ার এই ক্ষমতা না থাকতো তাহলে হয়তো একজনের মৃত্যুর শোকে হাজার জনের মৃত্যু নিশ্চিত হতো ।
অবাক বাইরে বের হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। দুহাত দিয়ে মাথার চুল টানতে টানতে নিচে বসে পড়ে। আর বলতে থাকে,,,,,
– অনু তুমি তোমার অবাককে ক্ষমা করো। তোমার অবাক বেঈমান না। তোমার অবাক অসহায়। আমি তোমাকে আঘাত দিতে চাইনি অনু। কিন্তু আমি সময়, পরিস্থিতি আর নিয়তির কাছে অসহায়। আমাকে ক্ষমা করে দিও।
অনুর কিছুই ভালো লাগছে না। সময় কাটছে না। কঠিন সময়কে উপেক্ষা করার জন্য সে রান্না করেছে, বাগানে কাজ করছে কিছুক্ষণ। তবুও মনে হচ্ছে ঘড়ির কাটা আটকে আছে । সময় স্থির হয়ে গেছে।
আগে সময় পেতো না আর এখন সময় যায় না। কি আজব দুনিয়া। প্রিতি দেখে অনু মন খারাপ করে বসে আছে। আপুটা অনেক বদলে গেছে। তাকে আর আগের মতো লাগছে না। কি সুখের দিন ছিল এই মেয়েটার। আর আজ এই মেয়েটা কষ্টে চটপট করছে। অথচ তাদের সামনে কিভাবে নিজেকে সুখি মানুষ হিসাবেই উপস্থাপন করছে। সে অনুর মন ভালো করার জন্য বলে,,,,,,,,
-আপু চল আমরা বাগানে যাই। অনু নিস্তেজ হয়ে বলে,,,,,
-বাগানে গিয়ে কি করবো?
-কি আর করবি। আমরা দুজন হাঁটবো। গান গাইবো। বাগানে বাতাস আর বাগানে ফুলে ভরে গেছে। তোর অনেক ভাল্লাগবে। অনু উঠে দাঁড়ায়।
এখানে বসে বোর হওয়ার চেয়ে বাগানে গিয়ে হাঁটা ভালো। প্রিতি খুশি হয়। আজ আপুকে এতো বলা লাগে নি। নিজেই রাজি হয়েছে। প্রিতি অনু দুজন বাসা থেকে বের হতেই দেখে ইমন বাসায় ঢুকছে। অনু আর প্রিতিকে দেখে ইমন থেমে যায়। প্রিতি মুখ হাসি হাসি করে বলে,,,,,,
-আরে ভাইয়া। কেমন আছেন? ইমন মৃদু হেসে উত্তর দেয়।
-আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
-আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া। অনু মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। এক হাত দিয়ে আরেক হাতের আঙ্গুল কুঁচাতে থাকে। ইমন অনুর দিকে তাকিয়ে কোমল কণ্ঠে বলে,,,,,,,
-তুমি কেমন আছো অনুপমা? অনু এক রকম চমকে তাকায়। তাকে এখন আর কেউ অনুপমা ডাকে না। সবাই ছোট করে অনু বলেই ডাকে। এখন কারো মুখ থেকে অনুপমা নাম শোনলে মনে হয় অপরিচিত একটা নাম। অনু এক পলক ইমনের দিকে তাকিয়ে ছোট করে উত্তর দেয়।
-ভালো। ইমন অপলকে তাকিয়ে থাকে অনুর দিকে। মেয়েটার চেহারা কেমন অন্য রকম লাগছে। কথার মাঝে লুকানো সেই স্নিগ্ধ আভা আজ আর নেই। অনুর মায়াবী মুখটা আজ ফ্যাকাসে লাগছে। অনুপমা কি অসুস্থ? ইমনের বুক কেঁপে উঠে। ইমন আবার জিজ্ঞেস করে,,,,,,
-তুমি কি অসুস্থ অনু? ইমনের কথা শোনে প্রিতি তাকায় অনুর দিকে। অনুও প্রিতির মুখের দিকে তাকায়। তারপর ইমনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
-না। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ । অনু ইমনকে সাইট কেটে বাগানে চলে আসে।
পিছন পিছন প্রিতিও আসে। ইমন ঘুরে দাঁড়িয়ে অনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কেন জানি তার মন বলছে, অনু ভালো নেই। কিন্তু কেন এমন মনে হচ্ছে বুঝতে পারছে না ইমন।
অবাক মোবাইলে একটা মেসেজ লিখছে। তার হাত পা রীতিমত কাঁপছে। তবুও লিখতে হবে। অনুকে কথা গুলো কিভাবে বলা যায়? অনুতো কষ্ট পাবে। তবুও বলতে হবে। নাহয় মেয়েটা আরো বেশি কষ্ট পাবে। অবাক লিখছে,,,,,,
অনুপমা,
ক্ষমা করো। তোমাকে দেওয়া কথা রাখতে পারলাম না। কাল আম্মার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে হচ্ছে। আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই এখন। আম্মার কথাই মেনে নিতে হলো। আমি আম্মার কাছে অবশেষে আত্মসমর্পণ করেছি।
কারণ, আম্মার একটা পা ড্যামেজ হয়ে গেছে। আম্মা আগের মতো আর হাঁটতে পারবে না। আম্মা এখন হুইলচেয়ারে বসে চলাফেরা করে। গতকাল আম্মাকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে এসেছি। আম্মার অবস্থা তেমন ভালো না।
এই অবস্থায় আমার অল্প আঘাতে আম্মাকে হারাতে হতে পারে। ডাক্তার বলেছে আম্মাকে বেশি প্রেশারাইজড করা যাবে না। তাহলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। যার শেষ পরিণতি মৃত্যুও হতে পারে। আমি আমার মাকে এখন হারাতে চাইনা অনু।
দুঃখের আশংকা বেড়েই চলছে
হারিয়ে যাচ্ছে আমার প্রিয়জন
গভীর শূন্যতায় তলিয়ে যাচ্ছি আমি
অসুস্থ মায়ের কাছে আমার নিরুপায় আত্মসমর্পণ।
অনু,
তুমি হয়তো মনে মনে ভাবছো আমি কিভাবে এতো স্বার্থপর হয়ে গেলাম। হ্যাঁ। আমি স্বার্থপর হয়েছি। আমার মনে লোভ জেগেছে। এতো তাড়াতাড়ি মায়ের আঁচল ত্যাগ করতে চাই না।
বাবা মারা যাওয়ার পর আম্মা আমাকে বড় করতে কতটা কষ্ট করেছে আমি দেখেছি। মায়ের কাছে আমি ঋণি। মায়ের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য আমি আমাকে বিসর্জন দিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি তুমি আমায় অনেক ভালোবাসো।
আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি এটাও তুমি জানো। আমি এই জীবনে তোমাকে কখনও ভুলতে পারবো না অনু । তুমি আমার জীবনে কি সেটা আমিই জানি। আমি আজ শুধু মাত্র পরিস্থিতির স্বীকার। আমি খুব স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে নিয়ে।
ভেবেছিলাম তোমাকে পুতুলের মতো সাজিয়ে আমার ঘরে তুলবো। প্রতিটা সকাল শুরু করবো তোমার মুখখানি দেখে। বিকেল বেলায় যখন সূর্য হেলে লাল আবরণ ধারণ করবে তখন দুজনে হাতে হাত রেখে বাগানে বসে কফি খাবো আর গল্প করবো। মাঝে মাঝে তোমাকে নিয়ে সমুদ্র বিলাস, ঝর্ণা বিলাস করতে যাবো। এক সাথে অনেকটা পথ চলবো।
প্রিয়তমা,
তোমাকে চিরসুখী করার তুমুল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তোমাকে সুখি করতে পারি নি।
অপূর্ণ এই তীব্র ইচ্ছা নিয়েই হয়তো একদিন আমার এই অতৃপ্ত জীবনের চির সমাপ্তি হবে।
আমার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে। পূরণ হবে না। এ জীবনে হয়তো তোমাকে ভুলা সম্ভব নয়। আমার হৃদয়ে তোমার জন্য যে জায়গা তৈরি হয়েছে সেটা কেউ কখনও নিতে পারবে না। তুমি আমার কাছে যা আছো তাই থাকবে।
তোমার কাছে আমার একটা রিকুয়েস্ট, তোমার থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করো না। তাহলে হয়তো আমার আর বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা থাকবে না। মৃত্যুকে বরণ করতে হবে। অনু, আমি সব সময় চাইবো তোমাকে আমার করে পেতে।
যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন আমি চেষ্টা করে যাবো। তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিলেও আমি তোমার কাছে আসবো। তোমাকে এক নজর দেখার জন্য আমি প্রহরের পর প্রহর অপেক্ষা করবো। সমাজে হয়তো তুমি আমার থেকে আলাদা। কিন্তু তুমি সব সময় থাকবে আমার হৃদয়ের গহীনে।
আমার এমন একটা সিদ্ধান্ত শুনে তুমি হয়তো ভেঙ্গে পড়বে। অশ্রুর সাগরে ভাসবে। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারবো না। তোমার এতো কষ্টের কারণ আমি হবো ভাবিনি। কষ্ট আমারও হচ্ছে।
তোমার সমতুল্য কষ্ট। তোমাকে এক নজর দেখার জন্য আমি অস্থির হয়ে আছি। তোমার কণ্ঠটা শোনার জন্য মনটা বেকুল হয়ে আছে। কিন্তু তোমার সামনে গিয়ে তোমার কষ্ট বা তোমার বিরহিত কণ্ঠ শোনার মতো ক্ষমতা আমার নেই।
অবাক মেসেজটা সেন্ড করে অঝরে কাঁদতে শুরু করে। অনুর সাথে এখন কথা বলার কোনো মুখ নেই তার। কিভাবে অনুর সাথে কথা বলবে? মেয়েটাকে নিজের হাতে শেষ করে দিলো সে।
সে নিজে যদি এতোটা কষ্ট পেয়ে থাকে তাহলে অনুতো আরো কয়েকগুণ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। পাগলিটা যে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। অবাক কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,,,
” আল্লাহ তুমি কি আমাকে দেখছো না? আমার কষ্ট গুলো কি তোমার চোখে পড়ে না? তুমি নাকি সবার অন্তরে বাস করো। তাহলে আমার অন্তরে কি চলছে সেটা তুমি জানো না? কেন আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছ না প্রভু। কেন? আর কতো বিরহে কাঁদাতে চাও আমায়? আর কতো কষ্ট পেলে আমার এই জীবন থেকে মুক্তি মিলবে? ”
চলবে——-