#অবাক_মেঘের বাড়ি

পর্ব : ১৮
সুরমা

কাজল রেখা ড্রয়িংরুমে এসে বসলেন। রিয়াদ আর রিমি দুজনে কিছু একটা নিয়ে কথা করছিল। কাজল রেখা জিজ্ঞেস করলেন,,,,,,
– কি নিয়ে কথা বলছিস? রিয়াদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,,,,,,
– আম্মা অনুর একটা বিয়ের কথা বলেছিলাম কয়েকদিন আগে। ওরা কয়েকদিন ধরে আমাকে ফোন করছিল। একটু আগেও কল করেছিল। সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম।
– অহ। তা তুই কি বললি ওদের?
– আম্মা তোমার সাথে কথা না বলেতো কোনো ডিসিশন নিতে পারছি না। তাই তাদের কিছু জানাই নি। শুধু বলেছি তোমার সাথে কথা বলে ওদের জানাবো। এখন তুমি কি বলো? অনুর পরীক্ষাও শেষ হলো। আর অবাকও বিয়ে করেছে। সে সংসার করছে। এখনতো অবাকের জন্য অপেক্ষা করা নিতান্ত বোকামি। তুমি কি বলো? কাজল রেখা তড়িঘড়ি করে বললেন,,,,,
– না না। অবাকের জন্য অপেক্ষা কিসের? সে বিয়ে করেছে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছে। অনু বুদ্ধিমতী মেয়ে। আমার মনে হয়না এমন বোকামি কাজে অনু সায় দিবে। তাছাড়া অনু এখন অনেকটা স্বাভাবিক। প্রিতির কাছ থেকে আমি সব সময় খোঁজ খবর নিচ্ছি। তবে এতদিনের একটা অভ্যাস। একেবারে মুছে ফেলতে কিছুটা তো সময় লাগবে। তুই ছেলের খোঁজ খবর নিয়ে দেখ। ছেলে ভালো হলে আলাপ কর।

– আম্মা আমি আগেই খোঁজ নিয়েছিলাম ছেলের। আর ছেলেকেও দেখেছি। ছেলে লম্বা হেন্ডসাম। অনুর সাথে মানাবে। আর ছেলের ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো।
– তাহলে তো হলই। তুই কথা বল।
– ওরা অনুকে দেখার জন্য আসতে চাইছে।
– আসতে বল। ওদের যদি পছন্দ হয় তাহলে আমি আর দেরি করবো না। অনুর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এখন ওর বিয়েটা দিয়ে দেওয়া ফরজ হয়ে গেছে।
– আম্মা শুক্রবার ছাড়া আমার সময় হবে না। ওদের বরং শুক্রবার আসতে বলি। আর তুমিও এই ফাকে একটু অনুর সাথে কথা বলো। দেখো কি বলে। আপত্তি করলে বুঝিয়ে দেখো।
– হুম। তাই করতে হবে। আমি আজকেই অনুর সাথে কথা বলবো। আর আমার মনে হয়না অনু আমাদের মতামতের বিরুদ্ধে যাবে।

অবাক সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে অফিসের জন্য রেডি হয়ে মায়ের রুমে যায়। অবাককে দেখে বিলকিস বেগম সচকিত হয়। আজ কতদিন পর অবাক এলো। আনন্দে বিলকিস বেগমের চোখে জল চলে আসে। অবাক গিয়ে বিলকিস বেগমের সামনে বসে। বিলকিস বেগম স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন,,,,,,
-অফিস যাচ্ছিস?
-হুম। অবাকের ইচ্ছে হচ্ছে মাকে অনেক কিছু বলতে। আগের মতো করে মায়ের কোলে মাথা রাখতে। বাট পারছে না। অনেকদিন পর আম্মাকে দেখতে আসায় অবাকের ভেতরে আরো বেশি অপরাধবোধ কাজ করছে। অবাক মাথা নিচু করে। সে আমতা আমতা করে বলে,,,,,,,
-তোমার শরীর ভালো আছে তো আম্মা? অবাকের কথায় বিলকিস বেগম বিস্মিত হচ্ছেন। এতদিনের চেনা ছেলেকে আজ কেমন নতুন লাগছে। বিলকিস বেগম ভেতরে ভেতরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন। ছেলেটা আবার স্বাভাবিক হতে চলেছে। আল্লাহ যদি সব ঠিকঠাক করে দেন তাহলে শুকরিয়া। বিলকিস বেগম শীতল কণ্ঠে বললেন,,,,
-হ্যাঁ ভালো আছে। তোর বউ আমার খেয়াল রাখছে। কখন ওষুধ খেতে হবে। কখন কোন খাবারটা খেতে হবে। কখন পায়ে ওষুধ মালিশ করতে হবে সব খেয়াল রাখছে। বিলকিস বেগম আনন্দিত চোখ ঝলমল করে উঠলো।

মেঘের মন খারাপ। তার কিছু ভালো লাগছে না। জীবনটা কি কঠিন। বাস্তবতার কঠোরতায় ঝর্ঝরিত তার হৃদয়। এই হলো কপাল। যেখানেই যায় সেখানেই কষ্ট। আর পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় তখন, যখন মেয়েরা শুনতে পায় তার স্বামী তাকে নয় অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে। এই কষ্ট সবাই বুঝে না। যার কষ্ট সেই জানে একেমন কষ্ট। সবকিছু সবার সাথে শেয়ার করলেও স্বামীর ভালোবাসা কেউ কখনও শেয়ার করতে পারে না। মেঘের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। সত্যি কি অবাক বাবুকে ছেড়ে যেতে হবে? একটু কি জায়গা হবে না তার এই মানুষটার মনের ঘরে? কখনও কি অবাক বাবু তার কষ্টের সন্ধান পাবে? কখনও ফিল করবে সেও এই মানুষটাকে খুব ভালোবেসেছিল? শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে কেঁদে উঠে মেঘ। মেঘ কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,,,,
– আমি আপনাকে ছেড়ে যেতে চাইনা অবাক বাবু। আমি আপনাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না। আমি সব মেনে নিবো শুধু আমাকে এবাড়িতে থাকতে দেন। আমাকে আপনার কাছে থাকতে দেন।

অনু ইউটিউব থেকে পুতির ঝাড়বাতি বানানো শিখছে। সারাক্ষণ বসে থেকে সময় যাচ্ছে না। এখন তো পড়াশোনাও নেই। এভাবে বসে থেকে তারচেয়ে ভালো একটা কাজ শিখা যাক। মুক্তা পুতি দিয়ে তৈরি এই ঝাড়বাতিটা খুব সুন্দর। এটা বানাতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন পুতির। পুতি কিনতে হবে। অনু প্রিতিকে ডাকে। প্রিতি ব্যালকনিতে বসে গল্পের বই পড়ছিল। অনুর ডাকে রুমে আসে। সে অনুর প্রতি বিরক্ত। পড়ার সময় কেউ ডাকলে মুড চেঞ্জ হয়ে যায়। পড়ার রস কমে যায়। এক টানা বই পড়তে পারলে শান্তি এন্ড তৃপ্তি পাওয়া যায়। প্রিতি কর্কশ কণ্ঠে বলে,,,,,,,
-দিলিতো পড়ার বারোটা বাজিয়ে? অনু হাসে।
-তুই না। একটু ডাকলেই পড়ার বারোটা বেজে যায়? এখন আমি যা বলবো তাতে নিশ্চিত তোর মুড আজকের জন্য শেষ হয়ে যাবে। অনুর কথায় প্রিতি ভ্রু নাচায়।
-কি বলবি?
-চল মার্কেট যাই। প্রিতি চোখ বড় করে বলে,,,,
-এখন?
-হুম
-মার্কেট গিয়ে কি করবি?
-পুতি কিনবো?
-কিসের পুতি? আর পুতি দিয়ে কি করবি?
-মুক্তার পুতি। ঝাড়বাতি বানাবো
-কিহ!
-হুম। খুব সুন্দর দেখ। অনু ফোনটা এগিয়ে দেয়। প্রিতি ঝাড়বাতিটা দেখে বলে,,,,,

-সুন্দর। কিন্তু আমি এখন মার্কেট যাবো না।
-কেন যাবি না?
-আমি পড়ছি।
-চলনা প্লীজ। মার্কেট থেকে এসে পড়বি। আমি তোকে সব সময় বলি বল?
-সেটাই তো। সব সময় যখন বলিস না তখন এখন বলছিস কেন? এখনও একা চলে যা। আমি যাবো না। আমি পড়বো। অনু মুখটা একদম বাচ্চাদের ফেইসের মতো করে ফেলে। অনুর এমন ফেইস দেখে প্রিতি অসহায় ভঙ্গিতে বলে,,,,,,
-দিলিতো বারোটা বাজিয়ে? এখন ভাব ধরার কি আছে? আজিব। চল যাবো। অনুর মুখে হাসি ফোটে। অনু জানে প্রিতি যাবে। তার কথা প্রিতি ফেলবে না। শুধু কিছুক্ষণ ভাব নিয়ে থাকবে। অনু হেসে বলে,,,,
-এই তো আমার মিষ্টি বোন। আমি জানতাম তুই যাবি। প্রিতি মুখ বাকিয়ে বলে,,,,
-হয়েছে আর পাম দিতে হবে না। আমি বেশি সময় নষ্ট করবো না।
-আচ্ছা। যাবো আর আসবো।

অনু আর প্রিতি রেডি হয়ে বাইরে আসে। ড্রয়িংরুমে মা আর ভাবী। প্রিতি আর অনুকে রেডি হয়ে বাইরে যেতে দেখে কাজল রেখা বলেন,,,,,,
– কিরে এই সময় তোরা কোথায় যাচ্ছিস? অনু এগিয়ে যায় মায়ের দিকে।
– মার্কেট যাচ্ছি আম্মু।
– এই সময় মার্কেট কেন?
– পুতি কিনতে। একটা ঝাড়বাতি বানাবো।
– অহ! আমি তোর কাছে যেতে চাইছিলাম। অনুর চোখে আগ্রহ। সে স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করে,,,,,,
– কেন কোনো দরকার ছিল?
– কিছু কথা বলতাম। কিন্তু তুই তো এখন বেরুচ্ছিস?
– আচ্ছা বলো সমস্যা নাই।
– তুই মার্কেট থেকে এসে আমার সাথে একবার দেখা করবি। তখন বলবো। এখন বলা যাবে না। অনুর জানার আগ্রহ আরো বেড়ে গেলো। কি বলবে মা? কিন্তু এখন তো বলছে না। অনু উঠলো। এসেই না হয় শুনবে।

অবাকের হঠাৎ মনে হলো মেঘ অসুস্থ। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল বেলায় মনে ছিল না। তাই অফিস চলে এসেছে। অবাক অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বের হয়। মেঘ যে কেয়ারলেস। সে হাতের যত্ন করবে না। কাটা জায়গায় ইনফেকশন হলে ভয়ংকর ব্যাপার হয়ে যাবে। অবাক বাসার উদ্যেশে রওনা দেয়। মেঘকে ডাক্তার দেখাতে হবে।

মেঘ অবাকের ছবিটা হাতে নিয়ে ব্যালকনির ডিভানে শুয়ে থাকে। অপলকে ছবিটার দিকে চেয়ে থাকে। চোখ অশ্রুতে ঝরঝর করতে থাকে। মেঘ অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলে,,,,,
– আমি চলে যাবো। দূর থেকেও বহুদূর। অনেকদূর। যতদূর গেলে আপনি আমাকে পাবেন না ততদূর।

তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

এটাকি ছেলেখেলা আমার এই স্বপ্ন নিয়ে
চাইলে ভেঙে দেবে গড়ে দেবে ইচ্ছে হলে,
আমি গোপনে ভালোবেসেছি,
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছে
তোমায় নিয়ে যাবো বলে।
একবার এসে দেখো,
এসে বুকে মাথা রেখো
বলে দেবো চুলে রেখে হাত।

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

ভোর না হতে হতে তোমাকেই দেখার আশায়
শেষ ছবিটা দেখি বারে বারে আহা! দেখি,
আমি গোপনে ভালোবেসেছি,
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছে
তোমায় নিয়ে যাবো বলে।
একবার এসে দেখো,
এসে বুকে মাথা রেখো
বলে দেবো চুলে রেখে হাত…

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

অবাক রুমে এসে মেঘের কণ্ঠে গান শোনতে পায়। অবাক ব্যালকনির দরজায় দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধ কণ্ঠে বলে,,,,,
– তুমি তো বেশ চমৎকার গান গাও। অবাকের কথায় মেঘ ধরফরিয়ে উঠে বসে। হাতের ছবিটা তাড়াতাড়ি পেছনে লুকিয়ে ফেলে। মেঘ হতভম্ব। অবাক বাবু বাসায় কখন আসলো? মেঘ আমতা আমতা করে বলে,,,,,
– আপনি কখন আসলেন?
– যখন তুমি গান গাইছিলে। মেঘের শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠে। ছবিটা কি দেখে ফেলেছেন? মেঘ মাথা নিচু করে।
– আপনি না অফিস গেছিলেন? চলে আসলেন যে?
– তোমাকে কথা দিয়েছিলাম যে? মেঘ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অবাকের দিকে তাকায়। অবাক মৃদু হেসে বলে,,,,,,
– ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো এটা।
– অহ! আমার হাত এখন ঠিক আছে।
– ঠিক নেই। অনেকটা কেটে গেছে সেটা কালকেই দেখেছিলাম। এখন কোনো কথা না বলে গিয়ে রেডি হও। আমার বেশি সময় নাই। মেঘ কিছু বলতে গেলে অবাক হাতের ইশারায় থামিয়ে বলে,,,,,,
– কোনো কথা হবে না। আমি যা বলছি তাই। তুমি জানো তো আমার কতো রাগ?? চুপচাপ আমি যা বলবো তাই শুনবে। মেঘ আর কিছু বললো না। রুমে এসে রেডি হলো। বিলকিস বেগমকে বলে অবাক মেঘকে নিয়ে বের হয়। গাড়িতে বসে কেউ কোনো কথা বলে নি। সোজা হাসপাতালে চলে আসে। অবাক অফিস থেকে আসার সময় ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেয়। পারিবারিক ডাক্তার হওয়ায় অবাক কে অপেক্ষা করতে হলো না। অবাক ডাক্তারের চেম্বারে এসে বলে,,,,,,
– আঙ্কেল আসবো? ডাক্তার সাহেব রোগী দেখছিলেন। তিনি মাথা তুলে বললেন,,,,,
– অবাক যে। আসো আসো। অবাক ক্যাবিনে প্রবেশ করে। মেঘ অবাকের পেছনে। ডাক্তার বললেন,,,,,
– সোফায় বসো। এই রোগীটা দেখে তোমাদের দেখছি।
– ওকে। মেঘ আর অবাক সোফায় বসে। ডাক্তার রোগী দেখে অবাককে ডেকে নেয়। অবাক আর মেঘ গিয়ে বসে ডাক্তারের সামনে। ডাক্তার বলেন,,,,,
– কার সমস্যা? অবাক মেঘকে দেখিয়ে বলে,,,,,
– এর হাত কেটে গেছে। ডাক্তার এগিয়ে আসে মেঘের দিকে। তিনি বললেন,,,,
– কোথায় কেটেছে দেখি? মেঘ হাত বাড়িয়ে দেয়। ডাক্তারদের মেঘ খুব ভয় পায়। তাই তার হাত মৃদু কাঁপতে থাকে। ডাক্তার মেঘের হাত কাঁপা দেখে ব্যাপারটা বেশ ভালোই বুঝতে পারেন। তিনিও হেসে দিয়ে বলেন,,,,,
– কি মামনি, ভয় লাগছে? মেঘ মুখটা কাঁচুমাচু করে মাথা ঝাকায়।
– ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তার মেঘের হাতের ব্যান্ডেজ খুলে কাটা অংশ দেখে চমকে বলেন,,,,,
– এতোটা ক্ষত? কিভাবে হলো? অবাকের ভেতরে আবার অপরাধ বোধ কাজ করলো। কিভাবে ডাক্তারকে বলবে এটা তার জন্যই হয়েছে? অবাক আমতা আমতা করতে লাগলো। মেঘ একবার অবাককে দেখে স্বাভাবিক হয়ে বলে,,,,,
– আসলে আমি পড়ে গেছিলাম। অবাক হা করে তাকিয়ে থাকে মেঘের দিকে। ডাক্তার বললেন,,,,
– পড়ে গিয়ে এতোটা আঘাত? তাছাড়া আগে ট্রিটমেন্ট করাও নি কেন? জায়গাটার অবস্থা খুব বাজে হয়ে গেছে। একটা ইনজেকশন দিতে হবে। ইনজেকশনের কথা শোনে মেঘ ভয়ে শেষ। সে ঘেমে একাকার। মেঘ অবাকের একহাত চেপে ধরে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে,,,,,
– আমি ইনজেকশন করবো না। আমি ইনজেকশন ভয় পাই। মেঘের মুখ দেখে অবাকের খুব হাসি পেলো। এখন একদম ছোট বাচ্চা লাগছে মেঘকে। ডাক্তার সাহেব ইনজেকশন নিয়ে আসে। মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে মেঘকে আশ্বাস দিয়ে বলেন,,,,,,

– ইনজেকশন ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ব্যথা পাবে না। তুমি ঠেরই পাবে না কিছু। মেঘ মানতে নারাজ। সে উঠে দাঁড়িয়ে প্রায় কেঁদেই দেয়।
– অবাক বাবু আমি ইনজেকশন করবো না। প্লীজ আমি করবো না। মেঘ আচমকা অবাকের বুকে মুখ লাগিয়ে অবাককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মেঘের এমন কাণ্ডে অবাক হতভম্ব। সে ভাবতেই পারেনি মেঘ তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে। অবাকের হার্টবিট হঠাৎ করেই টিপটিপ শব্দ তুলে দৌঁড়াতে শুরু করে। মেঘ কাঁদছে। তার চোখ আর নাকের পানি এক হয়ে লাগছিল অবাকের শার্টে। মেঘকে এভাবে দেখে অবাকের মায়া লাগছে। মেয়েটা বড্ড অবুঝ। মায়াবী। আর তার এই ছেলেমানুষি গুলো যেন হৃদয় ছুঁয়ে গেলো। না চাইতেও অবাক মেঘের মাথায় হাত রাখে। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
– আঙ্কেল ইনজেকশনটা না করলে হয়না? এবার ডাক্তার সাহেব হেসেই দিলেন। তিনি হাসি হাসি কণ্ঠে বললেন,,,,
– অবাক তুমিও কি ইনজেকশনে ভয় পাও? অবাক আমতা আমতা করে বলে,,,,,
– না মানে ও ভয় পাচ্ছে তো,,,,?? ডাক্তার সাহেব আবার হাসলেন। তিনি বললেন,,,,,
– এটা না করলে ইনফেকশন হবে। এটা করলে কোনো রিস্ক নেই। ভয়ও থাকবে না।
– অহ! অবাক মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে,,,,,
– মেঘ দেখ তুমি ভয় পাবে না। কিচ্ছু হবে না। আমি আছিনা। মেঘ মাথা না তুলেই বলে,,,,,
– না আমি করবো না। আমার ভয় লাগে। অবাক জোর করে মেঘের মাথা নিজের বুক থেকে তুলে বলে,,,,,
– বলছি না কিছু হবে না। আমার উপর ভরসা নেই?? মেঘ মাথা কয়েকবার ঝাকায়। অবাক মৃদু হেসে বলে,,,,,
– তাহলে? বসো। তোমার কিছু হবে না। মেঘ অবাকের পাশে বসলেও অবাকের একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে রাখে। অবাক ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে অনুরোধের ভঙ্গিতে বলে,,,,,,,
– ডাক্তার একটু,,,,,,,। ডাক্তার হেসে বলেন,,,,
– কিছু হবে না। ডাক্তার মেঘের হাতে ইনজেকশন ফুস করে। মেঘ ভয় অবাকের বুকের সাথে নিজের মুখ চেপে রাখে। অবাকও ভরসা দিয়ে শক্ত করে মেঘকে নিজের সাথে আগলে রাখে। ডাক্তার ইনজেকশন করে ফেলে। মেঘ ঠেরও পায় না। অবাক মৃদু স্বরে বলে,,,,,
– এখনও এভাবেই থাকবে? ইনজেকশন করা শেষ। মেঘ মাথা তুলে বিস্মিত কণ্ঠে বলে,,,,
– শেষ? কই আমিতো ঠের পেলাম না? এবার ডাক্তার অবাক দুজনেই হেসে দেয়। মেঘ মুখটা কাঁচুমাচু করে ফেলে। ডাক্তার পরম যত্ন করে মেঘের হাত ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেয়। সাথে কিছু ওষুধও লিখে দেয়। আর বলে দেয় সামনের সপ্তাহে একবার দেখা করে যেতে।

অবাক আর মেঘ ডাক্তারের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে আসে। কিছুটা আসার পর মেঘ দাঁড়িয়ে যায়। অবাক পেছন ফিরে দেখে মেঘ তার থেকে অনেকটা পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক পিছিয়ে এসে বলে,,,,,,
– কি হলো? দাঁড়ালে কেন? তাড়াতাড়ি চলো। তোমাকে বাসায় রেখে আমি অফিসে যাবো। মেঘ ঠোঁট ভেঙ্গে বলে,,,,,
– আমি খাবো। অবাক বিস্মিত কণ্ঠে বলে,,,,,,
– কি খাবে?
– আমার পেটে ক্ষুধা লাগছে। অবাক ভ্রু তুলে বলে,,,,
– মাত্রই তো বাসা থেকে এসেছো। এখনি পেট খালি হয়ে গেছে? মেঘ আবার বলে,,,,,
– আমি খাবো
– আচ্ছা খাবে বাসায় যাই আগে।
– না আমি এখন খাবো।
– আচ্ছা খাবে।
– আমি এক্ষণি খাবো। অবাক কোমড়ে হাত রেখে বলে,,,,
– এই হাসপাতলে কি খাবে? খেতে হলেও তো বাইরে যেতে হবে চলো।
– আচ্ছা। আমি বাইরে গিয়ে খাবো কিন্তু। অবাক চোয়াল শক্ত করে বলে,,,,,,
– জ্বি না। বাইরে গিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে যেতে হবে। তারপর খাবে। মেঘ হাসি হাসি মুখ করে বলে,,,,,,
– হুম হুম।

চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here