,#অপরাজিতা
#৩য়পর্ব
বিয়ে হবে রাত এগারটায় । এখন বাজে আটটা। হাতে সময় মাত্র তিন ঘন্টা। এর মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হবে।
এই নিয়ে দুপক্ষ মিটিং এ বসেছে। গেস্টরুমে একদল। আরেকদল ভেতরের রুমে।
নুপুরকে ঘিরে তিশা রাইমা বকবক করেই চলেছে। তবে রাইমা চরম উৎফুল্ল। এমন ক্লাইম্যাক্স সে নাটক সিনেমায় দেখেছে। কিন্ত বাস্তবেও যে এমনটা হতে পারে সেটা তার ধারনার বাইরে। আসলে হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে যাবার বিষয়টা দারুন রোমাঞ্চকর। এর চেয়েও রোমাঞ্চকর হল পালিয়ে বিয়ে করা। কেমন তুমুল ফিলিংস থাকে এমন বিয়েতে।
: ওহ নুপুর আপু তুমি বুঝতেছো কি হচ্ছে? ইশ! এমন বিয়ে কজনার কপালে থাকে। কেমন রোমান্টিক বিয়ে।
উফ! ইটস মোর,
নুপুর ধমক দিয়ে রাইমাকে থামিয়ে দেয়।
প্রচুর কান্নাকাটি করেছে মেয়েটা। কেঁদে চোখমুখ ফুলিয়েছে। এতে ফর্সা মুখ আরো ফর্সা লাগছে।
: কি শুরু করলি রাইমা, চুপ কর। ভাল্লাগেনা এসব।
তিশা শরবতের গ্লাস নিয়ে রুমে ঢুকল। রাইমা আজ একটু বেশী ভাব ধরেছে। এমনিতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলে যায় নিচতলায় গিয়ে উঁকিও দেয় না। আর আজ সবার সামনে কি অভিনয় করছে। যেন দুনিয়ার ভালবাসা নুপুর তিশার জন্য জমা রেখেছে। তিশা মনে মনে হাসল। পারেও এরা। সামনে এক আর পেছনে আরেক। তার পেছন পেছন সালমাও এসেছে।
বালিশে মুখ লুকিয়ে নুপুর কাঁদছে। এটা দেখে সালমা মেয়েকে জড়িয়ে ধরল। কিন্ত নুপুর রেগে যায়। এক ঝটকায় মাকে সরিয়ে দেয়।
সালমাও কাঁদছে।
: নুপুর শোন না। আমায় তুই ভুল বুঝিস না মা, এটাই তোর ভাগ্যে ছিল।
: কিসের ভাগ্য। আমি সব বুঝি। তোমরা চুপিচুপি আমাকে না জানিয়ে সব ঠিক করেছো। আর আজ আমাকে বলছো দেখতে এসে পছন্দ হয়ে গেছে তাই বিয়ে। এমন বিয়ে অনেক আগে হত। তখন মানুষ অত খারাপ ছিল না। কিন্ত এখনকার মানুষ ভালো নয়। ওরা কেন এভাবে তাড়াহুড়া করছে একটু খোজ নাও। ছেলেটাও কেমন দেখেছো। একদমই কথা বলেনি। কারোর সাথে না। এটাকে তুমি স্বাভাবিক বলছো?
সালমা নিরুত্তর থাকে। কি বলবে সে। কতটা অসহায় আজ সে।
তবুও নিজের পক্ষে সাফাই গাইল।
: কেউ কেউ ওমন শান্ত স্বভাবের হয় না? এটাকে সহজ করে ভাবলেই হয়।
: তুমি যাও। কোন কথা বলবে না আমার সাথে।
সালমা নুপুরকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে। হঠাৎ করে মেয়েটা এমন আচরন কেন করছে। তবে কি তার কোথাও আলাদা পছন্দ আছে। কিন্ত নুপুর তো বলেছে এসব কিছু নেই। তাহলে বিয়েতে তার এত অনীহা কেন। রিফাত ছেলেটা অতি রকম শান্ত। চুপচাপ। খুব একটা কথা বলেনি। এটা সালমা লক্ষ্য করেছে। কিন্ত অস্বাভাবিক কিছু আছে বলে মনে হয় না।
তার মানে কি নুপুর মনে মনে কাউকে পছন্দ করে। করলে বলুক। তাও তো করেনি।
তাহলে এখন এমন করছে কেন।
সালমা চুপ করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। থাকুক কিছুটা সময় একা। নিজের সাথে বোঝাপড়া করুক।
এটারও দরকার আছে।
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় আজ তার। এই সময় মেয়েরা অসহায় হয়ে পড়ে।
নুপুর ফুপিয়ে কাঁদছে। প্রচন্ড রকম একাকী হলে যেমন লাগে ঠিক তেমন লাগছে তার। এই যে এত আয়োজন হৈ চৈ তবুও তার মন এত ভার কেন।
কোথাও একটা গাঢ় কষ্ট। কিছু হারিয়ে ফেলার কষ্ট।
কিন্ত কেন এমন লাগছে তার।
ফোনে মেসেজ এল অনেকগুলো। নুপুর ফোনটা হাতে নিতেই দেখে রিহানের মেসেজ।
” নুপুর আমি যা শুনলাম তা কি সত্যি?”
” বলো , হা অথবা না ”
” তোমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এটা আমি মানতে পারছি না”
নুপুর স্থানুর মত বসে রইল। এতসব রিহান জানল কি করে। কে বলেছে তাকে।
আবার মেসেজ।
” নুপুর কথা বলছো না কেন?
” তুমি একবার বলো যে বিয়েটা তুমি নিজের ইচ্ছায় করছো না
” প্লিজ নুপুর বলো”
নুপুরের বুক ভেঙে আসছে।
রিহান তাকে পছন্দ করে। কিন্ত সেটা একতরফা। নুপুর কখনও রিহানের ডাকে সাড়া দেয়নি। তার প্রতি ভালোবাসা তৈরী হয়নি। ভালো লাগত কিন্ত সেটাও স্বাভাবিক ছিল। প্রচন্ড আকর্ষন বা মোহের জলে ভেসে যাবার মত না।
রিহান নুপুরের পিছু পিছু ঘুরে। তাকে নিজের করে নিতে চায়। কিন্ত শেষ পর্যন্ত হয়নি।
নুপুরই ফিরে এসেছে। অনুভুতির খেলায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে গেলে অনেক কিছু হারাতে হয়।
নুপুর মন শক্ত করে রাখত। কিন্ত আজ এমন লাগছে কেন তার।
রিহানের সাথে নুপুরের যায় না। ওরা অনেক ধনী মানুষ। রিহানের সাথে সম্পর্ক হলে নুপুর কষ্টই পেতো। কারন নুপুরকে ওর মা বাবা কখনও মন থেকে মেনে নিত না।
এসব সে রিহানকে অনেক বলেছে।কিন্ত ছেলেটা তাকে বুঝাতো।
” ওসব আমার উপর ছেড়ে দাও, আমার ভালবাসাকে মা বাবা মেনে না নিলেও তোমায় আমি খারাপ রাখব না নুপুর”।
নুপুর জানে এসব কথা বাস্তবে বেমানান। রিহান মা বাবার বিপক্ষে গিয়ে ভালো থাকবে না। তারপর নুপুর কাঁদবে সারাজীবন। এসব ভেবে রিহানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্ত আজ বড় বেশী নিঃসঙ্গ লাগছে তার।
এদিকে রিহান মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে।
নুপুর ফোনটা বন্ধ করে ফেলে দিলো।
চশমার ফাঁক গলে সুন্দর একজোড়া চোখ সারাক্ষণ তাকে খেয়াল করত। আজকের পর সেই মানুষটাকে আর দেখতে পারবে না সে।
নুপুর ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।
রিফাত ড্রইরুমে বসা। তার সাথে আরো দুজন আছে। টিভি চলছে। দুজনের কেউ রিফাতের সাথে কথা বলছে না।
তিশা রাইমা এক চক্কর ঘুরে গিয়ে ড্রইরুমে ঢুকল।
রিফাত তার মায়ের সাথে বসে গুজুর গুজুর কথা বলছে।
: রাইমা তুই কথা বল। আমি আসছি।
তিশা কেটে পড়ল। আসলে রাইমার সাথে থাকতে চাইছে না তাই সরে গেছে।
রাইমা দুম করে পাশে গিয়ে বসতেই ছেলের মা একগাল হেসে ওদের মাঝ থেকে উঠে পড়ে।
রাইমা অপ্রস্তুত হয়ে যায়।
: আন্টি বসুন না। কথা বলি।
: তুমি কি নুপুরের বোন?
: না আন্টি, ওই যে আমার সাথে ছিল না? ও নুপুর আপুর ছোটবোন। আমি ওর কাজিন।
: ওহ। ঠিক আছে তোমরা কথা বলো।
ভদ্রমহিলা যাবার আগে রিফাতকে কানে কানে কি যেন বলে গেলো। রাইমা এটা দেখে হেসে ফেলল।
: জিজু তুমি তো নুপুর আপুর সাথে কথাই বললে না। এটলিস্ট এটা তো বলতে পারতে তোমাকে ওর কেমন লেগেছে?
রিফাত কেমন চমকে যায়। এই চমকানোটা কেমন জানি অস্বাভাবিক।
: কথা বলতে হলে বলব। বাট আম্মু কিছু বলেনি তাই বলিনি।
রাইমা অবাক হয়ে যাচ্ছে। এটা কেমন কথা। বিয়ে করবে সে।আর আম্মুর পারমিশন নিয়ে বউয়ের সাথে কথা বলবে। মাই গড।
রাইমার চোখ কপালে। আরে এতো দেখি পুরাই মাম্মাস বয়। আল্লাহ নুপুর আপু এমনিতে সহজ সরল। তার উপর বর যদি মায়ের কথায় উঠবস করে তবে তার লাইফ তো ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে।
এত প্যারা নিয়ে সে সংসার করতে পারবে তো?
রাইমা ফিকফিক হাসছে। একটু পর হাসি থামিয়ে বলল।
: আন্টি বললে তুমি কথা বলবে? নইলে বলবে না?
: কি করে বলব।
রাইমার বিস্ময়ের শেষ নাই। কি বলে এই লোক।
রাইমার সাথে কথা না বলে রিফাত মোবাইল বের করল সে গেইম শো অন করেছে। রাইমা মনে মনে বলল কি অদ্ভুত চিড়িয়া। এটা তার জীবনের সেরা চিড়িয়া। কিন্ত এই চিড়িয়ার সাথে নুপুর আপু কেন কোন মেয়েই ভালো থাকবে না।
রাইমা কয়েক মিনিট খেয়াল করে উঠে এল। রিফাত এক মনে গেইম খেলছে। তার মনোযোগ অদ্ভুত রকম। চারপাশে কোন খবরই নাই।
লোকটার বিয়ের তোড়জোড় চলছে আর সে গেইম নিয়ে বিজি।
রাইমা চলে আসতে আসতে আবার পেছন ফিরে তাকাল। ছেলেটা হাসে কম। কথাও বলল কম। কেমন মাপা কথা। অনুভূতিহীন। রোবট নাকি।
একটা খচখচ ব্যাপার। বিষয়টা চাচীকে নয় বাবাকে জানাতে হবে।
বাজেট করা হয়েছে তবে তা খুবই ছোট বাজেট।
কিছু কেনাকাটা করাই লাগবে । আদিল বসে গেছে কাগজ কলম নিয়ে। ঝটপট একটা লিস্ট করে ফেলল।কারন শপিংমল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবে দশটার মধ্যে।
লিস্টে ছেলের পাঞ্জাবি, আংটি ঘড়ি আর মিষ্টি। মালা বদল হবে। তার জন্য ফুলের মালা কিনতে হবে। সেটার জন্য শাহবাগ যাওয়া সম্ভব না। আদিল চিন্তায় পড়ে যায়।
সিলভিয়া বুঝিয়ে বলল।
: শোনো ফুল কিনতে শাহবাগ কেন যাওয়া লাগবে।আমাদের এলাকায় “গোলাপ কানন ” দোকানটা আছে না? ওই দোকানের ফোন নাম্বার আমার কাছে, দাঁড়াও আমি কল দিচ্ছি।
সিলভিয়া ফোন ঘেঁটে নাম্বার বের করল।
: হ্যালো সজীব আছে?
: আমি সিলভিয়া ম্যাডাম বলছিলাম। আমাদের এক জোড়া ফুলের মালা লাগবে বিয়ের জন্য। খুব জরুরী কিন্ত। রাত দশটায় বিয়ে। প্লিজ ম্যানেজ করো না।
করা যাবে?
সিলভিয়া খুশীতে লাফিয়ে উঠে।
: ওকে। থ্যাংকস সজীব। আমি জানতাম তুমি পারবে।
আদিল উৎসুক দৃষ্টিতে সিলভিয়াকে দেখছিল। মানুষটা ভালোই সেয়ানা। দুনিয়া শুদ্ধ মানুষের সাথে খাতির।
: ওরে বাহ। কাজ খতম?
সিলভিয়া চোখ নাচাতে নাচাতে বলল।
: জ্বি স্যার। অত বোকা হলে চলে?
ঐ তোমার ভাবীর মতন হলে না খেয়ে থাকতে হবে, বুঝছো?
আদিল বেশ ক্ষেপে গেছে এই কথায়।
: আহা কথায় কথায় ভাবীর প্রসঙ্গ আসে কেন, তোমার স্বভাব বদলাও সিলভিয়া। নইলে মানুষের সাথে শত্রুতা বাড়বে।
সিলভিয়া মুখ কালো করে সরে যায়। দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসে।
: শোনো অত ঢং দেখাবা না, কি ক্ষমতা আছে তোমার ভাই ভাবীর। একটা মেয়ের বিয়ে সামলাতে পারে না।
সেই তুমি দৌড়ঝাঁপ করেই না সম্বন্ধটা আনলে। ওরা এসবের মূল্য বুঝবে?
বুঝবে না।
দেখো কত বড় ঘর থেকে নুপুরের বিয়ের প্রস্তাব এল। যাক এখন ভালোয় ভালোয় সব শেষ হলেই হয়।
যত যাই বলো তুমি না থাকলে ওদের মেয়ে ভাবীকে পথে বসতে হত।
যতই সুন্দর হোক মেয়ে বিয়ের বাজার আজকাল বড় কড়া।
শাড়ি পালটে সালোয়ারকামিজ পড়ে সিলভিয়া বের হয়ে গেছে।
লিস্টের কাজ শেষ। আদিল আলমারী খুলে টাকা গুনছে। আপাতত ত্রিশ হাজার নিয়ে বের হবে। বাকীটা পরে দেখা যাক।
পাঞ্জাবী ব্র্যান্ড ছাড়া কেনা যাবে না। কমসে কম দশ হাজার তো লাগবেই। তারপর জুতা ঘড়ি অন্যান্য এক্সেসরিজ সব মিলিয়ে দশে তো হবে।না।
আদিল চিন্তায় পড়ে গেছে। ভাইয়ার কাছে অত টাকা নাই সে জানে। কিন্ত এখন অতকিছু ভাবার সময় নাই।
মোটকথা টাকা ম্যানেজ করা লাগবে। যা আছে ঘরে টেনেটুনে দশ হবে।
এতেও কাভার হবে না। তারচেয়ে বড় চিন্তা মাস চলবে কি করে।
দরজায় টোকা পড়ল। আদিল সবসময় দরজা লাগিয়ে টাকা গুনে। আজও তা করছিল। সে মানিব্যাগে টাকা রেখে দ্রুত গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। সিলভিয়া হুড়মুড় করে ঢুকেছে। ওর হাতে ফুলের মালা। বিশাল বড় একটা প্যাকেটে।
মালার ব্যাগটা বিছানায় রেখে হাই তুলতে তুলতে একটু শুয়েছে। অমনি আদিল চেচিয়ে উঠে।
: আরে এখন শোবার সময়? চলো বেরিয়ে পড়ি। সব বন্ধ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব।
সিলভিয়া আধশোয়া থেকে উঠে বসল।
: আচ্ছা নিচে দেখলাম ওদের তিনটা গাড়ি। সবগুলোই তো নিজের না তাই না?
: হুম। একটা অফিসের আর বাকী দুইটা ওদের নিজের।
কেন কি হয়েছে?
: আরে বাইরের লোকজন বলাবলি করছিল এত বড়লোকের ঘরে নুপুরের বিয়ে কেমনে দিচ্ছি এসব আর কি।
একটা সত্যি কথা বলো তো বিয়ের সবকিছু তুমিই তো দেখলে এখানে কি অন্যকিছু আছে, মানে কোন ঝামেলা?
সিলভিয়ার চোখের ভাষায় অনেক প্রশ্ন। আদিল সামান্য ভড়কে গেছে।
: কিসব যে বলো না?
: কেন আমি কি উদ্ভট কিছু বলেছি, ওরা তাদের ছেলেকে তাদের সমান সমান পরিবারে বিয়ে করাতে পারত তাই না? আমার না একটু কেমন কেমন যেন লাগছে। কি জানি মেয়েটার কপালে কি আছে।
আদিল বেশ বিরক্ত হয়। সে সিলভিয়াকে তাড়া দিয়ে বের হয়ে পড়ে। কপালে তার কয়েকটা চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠে। সব কথা সালমা ভাবীকে বলা উচিত ছিল। কিন্ত এখন শেষ মুহুর্তে কি বলবে। তাছাড়া ভাইয়া তো জানে। সে তো ভাবীর সাথে শেয়ার করতে পারত। কেমন অস্বস্তিকর জানি বিষয়টা।
ছেলেপক্ষের লোকজন মেয়েপক্ষকে নিয়ে ড্রইরুমে বসেছে। আলোচনার মূল বিষয় কেনাকাটা।
তিনটি গাড়ি যাবে। দুইটাতে ছেলেরা আর একটাতে মেয়েরা।
মেয়েপক্ষ ছেলের জিনিস কিনবে। ছেলেপক্ষ মেয়ের জিনিস। সিলভিয়া যাচ্ছে সাথে আদিল আর তিশা। রাইমা ভেটো দিয়েছে। সে যাবে না।
ছেলের মা নিজে।কিনবে মেয়ের শাড়ি। সাথে যাবে। রিফাতের মামা ফুপু আর তাদের জামাইরা।
আপাতত অল্প বাজেটে কেনা শেষ করে বিয়ের কাজ শেষ করবে।
তারপর মেয়েকে যখন উঠিয়ে নিয়ে যাবে তখন বড় করে অনুষ্ঠান করবে।
ছেলের মামা ফুপুরা দলবেঁধে নেমে গেছে নিচে।
কেনাকাটা হবে বসুন্ধরা শপিং মল আর গাউছিয়া মার্কেট থেকে।
কল্যানপুর থেকে বসুন্ধরা যেতে সময় লাগলেও মূল সমস্যা হবে মিরপুর রোডে। ভয়ানক জ্যাম এই রোডে।
জ্যামের কারনে যদি আটকে যেতে হয় তবে শপিংমলের আশা বাদ দিতে হবে।
ছেলের বাবা পান চিবুচ্ছে। নাশতা পানির পর ভারী খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল কিন্ত বিয়ের কথা ফাইনাল হবার পর খাওয়াটা পিছিয়েছে।
কেনাকাটার পর খাওয়া হবে।
রান্নাও শেষ। আইটেম পোলাও, রোস্ট, মাছ ভাজা, গরু গোশত আর দই।
আদিল আংটি পড়ানোর অনুষ্ঠান হলেও বুদ্ধি করে খাবারের ব্যবস্থাটা শফিক আর সালমার সাথে আলোচনা করে রেডী করে ফেলেছিল।
সালমা বারবার জানতে চেয়েছে এতকিছু করার দরকার কি।
কিন্ত সিলভিয়া আদিল বুঝিয়েছে যদি ওদের খুব পছন্দ হয় তবে আকদও করিয়ে ফেলা হবে।
সালমা মনে মনে খুশী হয়ে আয়োজন শেষ করেছে।
: বেয়াইন একটা কথা ছিল আমার ছেলে রিফাতকে নিয়ে।
ছেলের বাবার কথা শুনে আদিল বলে উঠে।
: সব শুনব আগে আমরা কাজ শেষ করি। তারপর গল্প হবে কথা হবে।
ছেলের বাবা চুপ হয়ে যায়।
আদিল সবাইকে নিয়ে বের হয়। সিলভিয়া কটকটে হলুদ রঙের থ্রিপিস পড়েছে। গোলাপী লিপস্টিক দিয়েছে।
সারা মুখে গোলাপী আভা। ব্লাশন ঘষেছে ইচ্ছেমত। তিশা নীল রঙের একটা টুপিস পড়েছে। ওড়নাটা গলায় পেচানো।
বাড়িতে এখনও দশ বারোজন মেহমান রয়ে গেছে।
রিফাত ওর বাবার সাথে একটা রুমে শুয়ে বিশ্রাম করছিল। এমন সময় ছেলের এক ফুপা এসে কানে কানে কিছু বলে যায়।
: আহা সায়মন কি ফিসফাস করছো?
: মানে দুলাভাই আপনারা কাজটা ভালো করেন নাই। এদের সাথে যে সম্পর্ক করছেন এটা কি ভালো করলেন,কোথায় আমরা আর এরা কোথায়?
রিফাতের শ্বশুরবাড়ির জন্য মানুষজন আপনাকে ছোট করে দেখবে।
: দেখুক। তুমি বুঝো না কেন এত নীচে নামতে হচ্ছে আমাকে নাকি নতুন করে সব বোঝাতে হবে?
: আমাকে বোঝানোর দরকার নাই, মেয়ের ফ্যামিলিকে সব বলেছেন তো?
ছেলের বাবা রেগে যায়।
: তোমাকে এখানে এনেছি কি ঝামেলা করতে?
: ঝামেলা আমি করছি নাকি আপনি পড়বেন।ভেবে দেখেন?
সায়্মন ছেলেটা ঝড়ের বেগে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
আধঘণ্টা পর শফিক আর সালমাকে ডেকে আনে ছেলের বাবা।
: ভাই যেহেতু বিয়েটা হতেই যাচ্ছে তাহলে আমাদের উচিত হবে রিফাত আর নুপুরকে একটু একা কথা বলতে দেয়া। ওদেরও কিছু বলার থাকতে পারে।
নিজেরা নিজেরা কিছু বুঝে নিক কি বলেন?
এটুকু বলে ছেলের বাবা হাসতে লাগল। সালমা কিছুটা লজ্জা পায়।
শফিক বেশ সহজ করে কথাটায় সায় দেয়।
: ঠিক বলেছেন ভাই, এখনকার যুগে ছেলেমেয়েদের মধ্যে।কত কি হয়। তাই যেহেতু বিয়ের কথা ফাইনাল সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে একটু আলোচনা করুক।
আমার আপত্তি নাই।
: সালমা তুমি গিয়ে দেখো নুপুর কি করছে।
আর ভাইজান আপনি তাহলে রিফাতকে পাঠিয়ে দিন নুপুরের রুমে ওরা কথা বলুক।
সালমা উঠে চলে গেলো।
রুমে গিয়ে দেখে নুপুর শুয়ে আছে।তারপর মেয়েকে সব বলে বুঝিয়ে রেডী হতে বলল।
খুব অনিচ্ছা নিয়ে নুপুর বিছানা ছাড়ে।
ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চুলটা বেঁধে।নেয়।
এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল।
: আসব?
নুপুর ওড়না ঠিক করতে করতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
: জ্বি আসুন।
দরজাটা খুলতেই নুপুর দেখে রিফাত একা দাড়িয়ে আছে।
লম্বা একহারা শ্যামলা গায়ের রঙ। কি সুন্দর হাসি।
নুপুর লজ্জা পেলো।
: আসুন, দাড়িয়ে কেন?
রিফাত এগিয়ে পা ফেলতেই নুপুর অবাক হয়ে দেখল সে খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে এগুচ্ছে। হাঁটতেই পারছে ন।
নুপুর স্থানুর মত বসে পড়ল।
একি দেখছে সে।
বিঃদ্র- প্রিয় পাঠক আরো অনেক কথা বাকী রয়ে।গেলো। সবই যে আমায় বলতে হবে।
বলতে গিয়ে লিখতে হচ্ছে।
তাহলে পরের পর্বটা দিয়েই দিই🥰❤️
তবে অবশ্যই আগামী দুদিন পর ইনশাল্লাহ,,,
কারন আমার ভালবাসার মানুষগুলোর জন্য লিখতে কোনই ক্লান্তি নেই,,কেবল প্রতিদানে ভালবাসাটা চাই।
চলবে তাহলে পরের পর্ব কি বলেন ❤️🥰🥰🥰🥰🥰
………. তামান্না হাসান