#
#অন্তিম_পর্ব
#Aএকা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়dharer_Musafir (ইফ্ফাত)

শুনেছি আজ নাকি রেহান ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে যাবে।
এর মাঝে বাবা রেহান ভাইয়ার বিয়ের জন্য অনেক মেয়ের বোয়োডাটাই খালামনির ফোনে দিয়েছে।
তবে তাদের নাকি সেসব মেয়েদের পছন্দই হয়নি।
এখন পছন্দটা খালামনিদের হয়নি নাকি রেহান ভাইয়া ইচ্ছে করেই ফিরিয়ে দিয়েছে তা অবশ্য আমি জানিনা।
রেহান ভাইয়ার ইচ্ছে না থাকা সত্তেও আজ খালামনি জোড় করেই উনাকে মেয়ে দেখাতে নিয়ে গেলেন।
বাবাও তাদের সাথে গিয়েছেন অবশ্য, আর আমার ভয়টা সেখানেই।
বাবা যদি নিজ থেকেই কিছু একটা করে বসেন, তবে রেহান ভাইয়াকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা অবশ্যই আছে।

🥀
🥀
🥀

বাড়ান্দায় এলো মেলো পায়চারি করছি আমি।
বড় কিছু হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয় মনে যেকে বসেছে।
কিছুক্ষণ পর পরই মায়ের রুমে কান পাতছি।
বাবা একটু পর পর ফোন করে সেখানকার খবর দিচ্ছেন।
ঠিক ভাবে এখনও কিছুই বুঝতে পারছি না।
বুকের বাম পাশে একটু একটু ব্যাথা করছে, অস্থির লাগছে খুব।
এক রাতেই পরিস্থিতি, মন আর বাস্তবতার কতটা পরিবর্তন।
এইতো গতকাল, ১৪ ফেব্রুয়ারি গেলো।
শুধু যে ভালোবাসা দিবস তা নয়, তার সাথে আপনার জন্মদিনও ছিলো কাল।
ভেবেছিলাম, জন্মদিনের শুভেচ্ছার পাশাপাশি আপনাকে ভালোবাসি কথাটাও বলে দেবো।
কি অদ্ভুত না, একটা মানুষও আপনাকে শুভেচ্ছা জানালো না।
আপনিও হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন সে কথা।
প্রতি বছরই তো এই দিনটা আপনার খুব সাধারনই যায়।
কিন্তু আমি তো আমিই, বোকা আর লাজুক।
আপনাকে সরাসরি শুভেচ্ছা জানিয়ে ভালোবাসি বলা আমার পক্ষে এ জীবনে সম্ভব না।
তাই “অনিদ্রা” আইডি থেকেই আপনাকে শুভেচ্ছা জানালাম।
কিন্তু দূর্ভাগ্য আমার।
একটা রিপ্লাই যদি আপনি দিতেন।
ভালোবাসি কথাটা বলার সাহস আর করলাম না।
আপনার টাইমলাইনে অনিদ্রা আইডিটা থেকেই শুধু শুভেচ্ছা জানালো হলো অথচ আপনার কোনো আকর্ষনই নেই।
জানেন কাল সারাটা রাত আপনাকে দেখে দেখেই কাটিয়ে দিয়েছি।
সৃষ্টিকর্তার কাছে খুব করে চেয়েছি, এর পরের জন্মদিনে আপনাকে যেনো সামনে থেকে শুভেচ্ছা জানাতে পারি।
অথচ এখন যদি আপনি আমাকে দেখতেন, তবে আমাকে শুধু মাত্র আপনার জন্যই বিচলিত দেখতে পেতেন।

🥀
🥀
🥀

প্রায় সন্ধ্যে ছুঁই ছুঁই।
আজকে লাল আকাশের নজরকারা সৌন্দর্যও যেনো আমাকে শান্ত করতে পারছে না।
শুনেছি খালামনির নাকি মেয়ে পছন্দ হয়েছে।
বাবা এবার কি করবেন কে জানে।
আচ্ছা রেহান ভাইয়ারও কি মেয়ে পছন্দ হয়েছে?
উনি কি খালামনিকে আমার কথা বলেন নি?
কে জানে, খুব ভয় হচ্ছে আমার।
ভালোবাসার মানুষটা অন্যের হয়ে যাবার আশংঙ্কা নিয়ে কে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারে কে জানে!
এই ভয় নিয়ে যে আমি আর বসে থাকতে পারছিনা।
ভালোবাসি আপনাকে রেহান ভাইয়া, খুব ভালোবাসি।
আপনার ভালোবাসা পাবার অপেক্ষায় আমি নেই সত্যিই, আমার ভালোবাসা আপনাকে দেয়ার অপেক্ষায় প্রহরের পর প্রহর গুনছি।
প্রহর কি তবে শেষ হতে চলেছে?
কিন্তু এই অপেক্ষার প্রহর কাকে নিয়ে শেষ হবে রেহান ভাইয়া!

🥀
🥀

রাত প্রায় আটটা বাজে, ফোনের ওপাশ থেকে খবর এলো রেহান ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে।
মায়ের কিছুটা চিৎকার করে বলা কথাটা আমার কানে আসতেই আমার শরীর বরফের মতো জমে গেলো।
আমি কি ঠিক শুনেছি!
রেহান ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে!
না আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না, রেহান ভাইয়া আমাকে ফেলে কিছুতেই বিয়ে করতে পারেন না।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমি ভুল শুনেছি।

🥀

মাকে গিয়ে যে জিজ্ঞেস করবো সে শক্তিটাও এখন আমার নেই।
রুমের ভেতর দরজা আটকে নিরবে অশ্রু বিষর্জন দিচ্ছি।
মায়ের বলা কথাটা কোনো একভাবে যদি মিথ্যে হয়ে যেতো তাহলে কতই না ভালো হতো।

.

প্রায় রাত দশটার পর বাবা বাড়ি এলেন।
আমি দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে বাবার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম।
বাবার মুখে স্বস্তির হাসি, চোখে মুখে খুশির বহিঃপ্রকাশ স্পষ্ট।
মাকে হাসিমুখে বলছেন–

— রেহানকে বিয়ে দিয়ে এলাম।
তোমার আপারা তো আজকে বিয়ে দেয়ার জন্য রাজিই ছিলেন না।
আমিই বুঝিয়ে শুনিয়ে এক প্রকার জোড় করেই ছোট খাটো আয়োজন করে বিয়েটা করিয়ে দিলাম।
রেহানের তো বিয়েতে কোনো মত-ই ছিলো না।
কিন্তু আমাদের কথার উপর তো আর কোনো কথা বলতে পারবে না।
ঝামেলাটা উপড়ে ফেলেছি, এবার উপমার জন্য দ্রুত ছেলে দেখা শুরু করে দিতে হবে।
রেহানের মতো ছেলের সাথে তো আর উপমার বিয়ে দিতে পারিনা।
উপমাকে আমি যোগ্য পাত্রের হাতেই দেবো।

.

বাবার কোনো কথাই আর শুনতে ইচ্ছে করছে না আমার।
ইচ্ছে বললে বোধহয় ভুল হবে, মূলত শোনার শক্তি নেই।
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না আমি।
দেয়াল ধরে ধরে চলে এলাম আমার রুমে।
ওয়াশরুমে গিয়ে পানি ছেড়ে ইচ্ছে মতো কাঁদছি।
সত্যিই কি রেহান ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে!
উনি কি আটকাতে পারেন নি বিয়েটা!
বিয়ে করার সময় কি উনার আমার কথা একবারও মনে পড়েনি?

আমি কি সত্যিই আপনাকে হারিয়ে ফেলেছি!
দীর্ঘ চার বছর প্রতিটা মোনাজাতে আপনাকে চেয়েও আমি পেলাম না।
আমাদের ভালোবাসায় তো কোনো অশ্লিলতা ছিলো না, কোনো বেহায়াপনাও ছিলো না।
ভুল না হলে আপনি আমার হাত দুই থেকে তিনবার ধরেছেন, আর আমাদের ভালোবাসায় সেই হাত ধরাই ছিলো প্রথম এবং শেষ স্পর্শ।
খুব বেশি হলে বছরে একবার কিংবা দু’বার দু’জনার দেখা হতো।
নিজেকে সংযত করেছি কারন বিশ্বাস ছিলো আমার ভালোবাসায়।
ভাগ্যে বিশ্বাসি হয়ে বোধহয় ভুল করে ফেললাম।
এবারের আত্মহত্যায় আমার মৃত্যুটা নিশ্চিত হলো!
কতটাকাল ধরে চেষ্টা করছি
তা শুধু আমার এবারকার মৃত্যুটাই জানে!
ভেবেছিলাম এর পর যখনই আপনার সাথে দেখা হবে কিংবা কথা হবে আমি প্রথম সুযোগেই বলে দেবো স্ট্রেটকাটঃ “ভালোবাসি”।
সেই সুযোগটা আপনি আমাকে দিলেন না রেহান ভাইয়া।
আপনি তো পারতে, এই এক জীবনে তো আপনি আমার হয়ে থেকে যেতে পারতেন!
আমাকে আমার মতো করে একটু ভালোবাসতে পারতেন!
দু একটা নিয়ম কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, লড়াই করে আমার হয়ে থাকতে পারতেন!
কেনো থেকে গেলেন না রেহান ভাইয়া কেনো!
এই পৃথিবীর কোথাও আর আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে নেই।
শুধু আপনিই ছিলেন, আজ আপনাকেও হারিয়ে ফেললাম রেহান ভাইয়া।
এখন আমি সম্পূর্ণ একা হয়ে গিয়েছি।
এই বোধটুকুই এখন আমার প্রচন্ড মন খারাপের কারন হয়ে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

🥀
🥀
🥀

রাতের খাবার না খেয়েই রুমের বাড়ান্দায় বসে আছি।
না না কাঁদছি না, তবে চোখের পানি গাল বেয়ে ঠিকই গড়িয়ে পড়ছে।
মা এসে একবার খাবারের জন্য ডেকে গিয়েছিলো, যাইনি; আমার যে আজ ক্ষুধা নেই!
আচ্ছা রেহান ভাইয়া কি একবারও আমাকে উনার জীবনের এতো বড় একটা খবর জানানোর প্রয়োজন মনে করেন নি।
উনি তো বলেছিলেন আমাকে ভালোবাসেন, তবে কি উনার বলা ভালোবাসি কথাটা মিথ্যে ছিলো!
একবারও কি আমাকে জানাবেন না উনি!
উনার সাথে কি আমার আর কোনোদিনও কথা হবে না!

🥀

রেহান ভাইয়ার দেয়া রবী ঠাঁকুরের সেই “মালঞ্চ” উপন্যাসটা বুকে শক্ত করে ধরে বসে আছি।
চোখের সামনে রেখে দেয়ার মতো রেহান ভাইয়ার এই একটা স্মৃতিই এখন আছে।
হ্যাঁ স্মৃতিই তো, কিছুক্ষণ আগেই উনি আমার জন্য স্মৃতি হয়ে গেছেন।
রেহান ভাইয়া আপনি কিন্তু ঠিকই আমার অথচ, আপনি আমার না।
অাবার, ভেতর ভেতর আপনি আমারই।

হুট করেই ফোনের স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠলো।
সাইলেন্ট ছিলো ফোন তাই রিংটোনের শব্দ হয়নি।
নাম্বারটা আননোন কিন্তু দেখে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে।
রিং হচ্ছে অথচ আমার সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।
আমি তো অশ্রু বিষর্জন দিতেই ব্যস্ত।
অন্ধকার বাড়ান্দায় ফোনের অল্প আলোটাই এই মুহূর্তে আমার বিরক্তের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক হাতে বইটা শক্ত করে ধরে রেখে আরেক হাতে চোখের পানি মুছে ফোনটা বন্ধ করতে যাবো তখনই আমার হাতের স্পর্শে কলটা রিসিভ হয়ে গেলো।
কি মনে করে ফোন কানে নিতেই পরিচিত কণ্ঠ শুনে আমি একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে যাই।

ফোনের ওপাশ থেকে রেহান ভাইয়ার কন্ঠ ভেসে আসছে।
আমার নাম ধরে উনি সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছেন।
অথচ আমার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।
গলায় সব কথা দলা পাকিয়ে আটকে আছে।
শ্বাস নিতে পারছি না আমি, খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।
বড় বড় শ্বাস নিয়ে উনাকে বললাম–

কেমন আছেন রেহান ভাইয়া!

ওপাশ থেকে একদম নিরব!
বোধহয় উনি ভাবছেন কি উত্তর দিবেন!
উনার এ উত্তরের আশা না রেখেই আমি জিজ্ঞেস করলাম–

ভাবির নাম কি?

— রাহি

আমি চুপ করে আছি।
ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছি।

— মেয়ে দেখতে যাবো বলে আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে ঐ পিচ্ছি মেয়েটার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো।
ভাবছিস আমি তোর কাছে সাফাই গাইবো।
না, আমি যে অপদার্থ ছেলে; তোর যোগ্য আমি নই।
তাইতো শত চেষ্টা করেও তোকে নিজের করতে পারলাম না।
বাসায় বলেছিলাম তোর কথা, তোকে বিয়ে করতে চাই সে কথা মাকে বলেছিলাম।
মা তোর বাবাকে বললে তোর বাবা সাফ মানা করে দিলো।
বললো আমার যায়গায় যদি রাফি থাকতো তবে ভেবে দেখতো।
সেদিন নানু বাড়িতেও তোর বাবাকে বলেছিলাম তোর কথা, বোঝেনি আমাকে।
তারপর প্রায় দিনই তোর বাবাকে ফোন করে বলতাম, যেনো রাজি হয়ে যায়।
প্রতিবারই আঙ্কেল আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
মাকে বললাম যেনো কোনো একভাবে রাজি করায়, মাও আমাকে বুঝলোনা রে।
কি ভেবেছিলি তুই, আমি কিছু বুঝতাম না, তুইও যে আমায় ভালোবাসতি আমি সেটা আগে থেকেই জানতাম।
কিন্তু দেখ, ভাগ্য আমাদের সহায় হলো না।
পরিস্থিতি পরিবেশ সমাজ সবই আমাদের বিপক্ষে চলে গেলো।
চাইলেই তোকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে পারতাম রে উপমা।
কিন্তু পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে নিয়ে সংসার করবো এমন ছেলে অন্তত আমি নই।
এতে যে তোরও মত থাকতো না তা আমি জানি।
চেয়েছিলাম দুই পরিবারকে মানিয়ে নিয়ে তোকে নিয়ে ছোট্ট একটা সংসার করবো।
ভালো একটা চাকরি, গায়ের রং কালো, যোগ্যতা কম বয়সটা ভারি এগুলোই বোধহয় তোকে না পাওয়ার একমাত্র কারন।
আজ রাফিকে নিয়ে খুব হিংসে হচ্ছে জানিস।
রাফির মতো ভালো চাকরি, যোগ্যতা, আর গায়ের রংটা একটু ফর্সা হলে বোধহয় ঐ রাহি মেয়েটার যায়গায় আজ তুই থাকতি।

.

জানিস উপমা, মা বাবা রেনু আপু সবার পছন্দ হয়েছিলো মেয়েকে।
কেউ রাজি ছিলোনা আজ বিয়ের জন্য।
কিন্তু তোর বাবা…
তোর বাবা বোধহয় জাদু জানেন।
কথার জালে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়েটা আজকে করিয়েই ছাড়লেন।
আমার বার বার নিষেধ করার পরও তারা কেউ আমার কথা শোনেনি।
বিয়ের মামলায় চিৎকার চেঁচামেচি করে তো আর কথা বলা যায়না।
আঙ্কেলকে বললাম- আঙ্কেল আমি এখন বিয়ে করবো না।
আঙ্কেল বললেন- এখন করো আর পরে করো, বিয়ে তো করবেই।
তোমার বাবা মায়ের পছন্দ যেহেতু হয়েছে দেরি করে আর লাভ নেই।
তাছাড়া বয়সটা তো আর কম হলো না তোমার।
এবার বিয়েটা ভালোয় ভালোয় করে নিলেই তোমার বাবা মা বেঁচে যাবে।
আমি চুপ করে রইলাম, সত্যিইতো বলেছেন তোর বাবা।
বাবা মা খুব টেনশনে ছিলেন তোর আর আমার ব্যপারটা জানার পর থেকে।

খুব করে চাইছিলাম যেনো মেয়েটার সাথে আমাকে আলাদা কথা বলতে দেয়।
ভেবেছিলাম, একবার কথা বলতে দিলে বলে দেবো আমি তোকে ভালোবাসি বিয়েটা যেনো সে ভেঙে দেয়।
আঙ্কেল, মানে তোর বাবা সেটাও হতে দিলেন না।
খুব দ্রুত ছোট খাটো আয়োজন করে বিয়েটা দিয়ে দিলেন।
অবশ্য আলাদা করে কথা বলতে দিলেও খুব একটা যে লাভ হতো না তাও বুঝে গিয়েছি।
মেয়েটার বয়স কম, আমার বয়সের প্রায় অর্ধেক।
আঠারো পেরোয়নি এখনও, কাজি বিয়ে পড়ানোর সময় বলেছিলেন মেয়ের বয়স কম আইনি সমস্যা হতে পারে।
আঙ্কেল কাজির সাথে আলাদা কথা বলে বিয়েটা চুপচাপ করিয়ে দিলেন।
কোথাও একটা আশা ছিলো, মেয়ে পক্ষ হয়তো আমার বয়স দেখে বিয়ে ভেঙে দেবে।
কিন্তু কিছুই হলো না, বিয়েটা কোনো ভাবেই আটকাতে পারলাম না।
খুব হাসি পাচ্ছে জানিস, সব সময় শুনে এসেছি মেয়েদেরকেই নাকি জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়।
অথচ আমাকে দেখ, সবাই মিলে বিয়েটা দিয়ে দিলো আমার একটা বারনও কেউ শুনলো না।

উপমা, আমি কিভাবে থাকবো তোকে ছাড়া!
বলনা উপমা, কিভাবে থাকবো তোকে ছাড়া।
সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পেরেছি তোর জন্য সব করেছি, তবুও কেনো তোকে পেলাম না!
তোর মনে আছে পরীক্ষার দিনগুলির কথা?
প্রথম দু’দিন আঙ্কেল তোকে সাথে করে নিয়ে কলেজে দিয়ে এসেছে।
তারপর থেকে তুই একাই পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলি।
সেদিন থেকে তোকে কেউ ফলো করতো।
তোকে একা কি করে ছাড়তাম বল?
আমি জানতাম, পরীক্ষা হলেও তুই একাই যাওয়া আসা করবি।
তুই কেমন সেটা তোর পরিবার থেকে আমিই বোধহয় বেশি জানি।
আঙ্কেল দু’দিন এসেই তোকে একা ছেড়ে দিলো, আমি কি করে ছাড়ি বল!
ভয় হতো, হোস্টেলে ছিলি সে এক নিশ্চিন্তে ছিলাম।
কিন্তু ব্যস্ত রাস্তায় তোকে একা ছাড়তে খুব ভয় হয়।
প্রতিদিন আমার বন্ধু রাকিবের মোটরসাইকেল নিয়ে তোর রিকশার পেছনে পেছনে যেতাম।
সেই একটা মাস, রাকিবের বাড়িতেই ছিলাম।
মেসেজগুলোও আমারই ছিলো।
এই নাম্বার থেকেই সেই মেসেজগুলো করতাম।
তারপর সেদিন তোর রুমে বসেই নাম্বারটা ডিলিট করে দিয়েছিলাম।
আজ হয়তো আমার ফোন থেকেই তোর নাম্বারটা চিরজীবনের জন্য ডিলিট করে দিতে হবে রে উপমা।
কেনো এমন হলো আমার সাথে, বলনা উপমা।
তোকে তো খুব ভালোবাসি আমি, তবুও কেনো পেলাম না!
খোদার কাছে কতবার তোকে চাইলাম, তবুও কেনো পেলাম না।

.

রেহান ভাইয়ার কোনো কথার জবাব দিতে আমার একদমই ইচ্ছে করছেনা।
চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে।
ওপাশ থেকে হালকা কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি, বোধহয় উনি কাঁদছেন।
বার কয়েক বড় বড় ঢোক গিলে উনাকে বললাম–

রাহি ভাবি কি এখন আপনার সাথেই আছে, নাকি আপনার শশুর বাড়িতেই রেখে এসেছেন ভাবিকে?
এতরাতে জেগে আছেন ভাবি কিছু বলবে না!
আপনার জন্য বোধহয় ভাবি অপেক্ষা করছেন।
ফোনে সময় নষ্ট না করে ভাবির কাছে যান।

— ওই মেয়েকে নিয়ে আসিনি আমি।
কিভাবে আনবো তাকে, ওর সাথে আমি থাকতে পারবো না উপমা।
তোকে ছাড়া আমি….

এখন এ কথা আপনার মুখে আনাও পাপ রেহান ভাইয়া, সে আপনার স্ত্রী।

— হা হা স্ত্রী, হ্যাঁ তাইতো।
সে তো আমার স্ত্রী, কাগজে কলমে নাম লিখে মুখে তিনবার কবুল বলেই সে এখন আমার স্ত্রী।

যেভাবেই হোক, সে এখন আপনার স্ত্রী রেহান ভাইয়া।
তাকে ফেলে অন্য একটা মেয়ের সাথে এত রাতে কথা বলা আপনার মানায় না।
আপনি এখন পবিত্র একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছেন।
আস্তে আস্তে সব মানিয়ে নিতে হবে আপনাকে।
তবে কি জানেন, একজনের শূন্যস্থান কখনো অন্যজন পূরণ করতে পারে না।
শূন্যস্থানের নিচে যেমন দাগ থাকে; অন্তরেও থাকে।
ভালো থাকবেন আপনি, আমার সাথে না হোক অন্যকারো সাথে।
আমার আর ভালো থাকা হয়ে উঠেনি, আর কখনও হবেও না।
আপনি একটু পর হয়তো আমাকো বলবেন- “সবকিছু নতুন করে শুরু করে নিস” কিংবা “ভুলে যাস সবকিছু যত তাড়াতাড়ি পারিস”।
আমার আর নিজের মাঝে নতুনত্ব আনা হবেনা কিংবা আপনাকেও ভুলে যাওয়া হয়ে উঠবেনা!
ভয় পাবেন না উল্টা পাল্টা কিছু করবো না।

এই যে আপনি আজ বিয়ে করে নিলেন, খুব তাড়াতাড়িই এবার আমাকে ভুলতে শুরু করবেন।
বউ শশুরবাড়ি কাজ নিয়ে ব্যস্ততায় আমার কথা আপনার খুব কমই মনে হবে।
ধরে নিন,অনেকগুলো বছর পর কোন এক শ্রাবণে আপনার সাথে দেখা হলো!
আমি জানি আমি এক পা এগিয়ে সামনে চলার শক্তিটুকু হারিয়ে স্থির হয়ে যাবো।
যেনো কোটি বছরের অদেখার তৃষ্ণা বরফের মতোন জমে যাবে।
আপনি কি করবেন তখন জানেন!
আপনার হাতে থাকবে অন্য আরেক হাত!
জানিনা আপনি সেদিন আমাকে দেখে থামবেন কিনা।
আমার চোখে চেয়ে আপনি বলবেন কিনা কেমন আছিস? নাকি কেমনে বাঁচিস?
আরো একবার হয়তো বলেই দিবেন-
কেমন আছিস উপমা।
অনেকগুলো বছর পর যদি দেখা হয়ে যায় রেলের কোনো বগিতে!
রেলের উল্টোদিকে রেললাইনের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার মতোই আপনি হারিয়ে যাবেন।
অবশ্য হারিয়ে তো গিয়েছেনই।
কেমন পাগলের মতোই প্রলাপ বকছি আমি তাইনা।
তখন আপনার পাশের সিটে নতুন কেউ থাকবে।
আপনি তখন পাক্কা সংসারী পুরুষ হয়ে যাবেন।
আপনার সংসার ঠিকই হবে, কর্তব্য পালন দায়িত্ব সব নিয়ম ভাবেই হবে।
রেহান ভাইয়া, মানুষ কেমন সয়ে গিয়ে বেঁচে থাকে তাই না।
কেমন অভিনয় গিলে হাসির উদগীরণ করে।
কেমন “আমার এ একজনই দরকার ” বলা মানুষটাও পাশে অন্যজন নিয়ে দিব্যি ভালো থাকবে।
কেমন সংসারী আর নতুন মানুষকে ভালোবাসি বলার পরও, অনেকবছর পরে আমার সাথে হঠাৎ দেখাতে বলে দিবে হাজারটা মিথ্যে কথা।
আমিও হয়তো একরাশ অভিমানের তোপে, মিথ্যেটাই বলে দিবো— “সংসারের এতো এতো কাজের মাঝে আপনাকে মনেই পড়ে না”
কিন্তু আমি তো জানি আমি কেমন থাকবো।
রেহান ভাইয়া, আমরা ভালোই থাকি।
কেউ অভ্যাসে কেউ অভিনয়ে, কেউবা হাজার না বলার মাঝেই।
বহুবছর পর যদি দেখা হয়, হয়তো কোন কথাই হবে না, হয়তো দু’জোড়া চোখ নিরব রবে।
রেলের হুইসেল বাজবে —
আপনি নেমে যাবেন নতুন এক স্টেশনে।
আমিও ছুটে যাবো অন্য এক স্টেশনে।
তারপর আর দেখা হবে না আমাদের।
সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা রং বদলায়!
একসময়ের গভীর ভালোবাসা সময়ের সাথে হারিয়ে যায় রেহান ভাইয়া।
আপনারটা তো জানিনা, তবে আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অস্তিত্ব বাতাসের সাথে মিশে যাবে কোন একদিন।
মিলিয়ে নিবেন, আপনার সমস্ত অনুভূতি দলেদের এক পরিত্যক্ত রাফখাতা হয়ে পরে থাকবো আমি একসময়।
আসলে কি জানেন তো; যে যাবার সে চলেই যায়, শুধু স্মৃতিটুকু রেখে যায়।
আমিও নাহয় ওটা নিয়েই আমৃত্যু ভালোবাসাটা টিকিয়ে রাখবো।
চাওয়া পাওয়া গুলো না হয় অপূর্ণই থাকলো আমার।
কিছু মানুষ বহুদূরে সরে গেলেও তাদের প্রতি মোহ কাটে না।
আমার আর কি, সমস্ত জীবনই আমার ভাঙতে ভাঙতে কেটে যাবে।
জানেন রেহান ভাইয়া, সব ইচ্ছে পুরোন হতে নেই। পুরোন হয়ে গেলেই তো শেষ।
কিছু ইচ্ছেদের ছেড়ে দিতে হয়, তবেই বেঁচে থাকার কষ্টটা উপভোগ করা যায়।
কিন্তু আমাকে দেখুন, কষ্টটাই শুধু পেয়েছি।
ভালো থাকবেন, ভাবিকে কষ্ট দিবেন না প্লিজ।

— উপমা, শেষ একবার ভালোবাসি বলবি!

লাইনটা কেটে দিলাম আমি।
ভালোবাসি বলে যদি কোনো লাভ হতো, তবে হাজারবার বলতাম আপনাকে ভালোবাসি।
নাম্বারটা রেহান ভাইয়া নামে সেভ করে রাখলাম।
এই ফোন থেকে নাম্বারটায় আর কোনোদিন কল যাবে না, শুধু চুপচাপ দেখে যাবো নাম্বারটা।
যোগাযোগ মাধ্যম তো থাকবে, তবে অধিকারটাই শুধু থাকবে না।
যোগাযোগহীনতায় কেটে যাবে বছরের পর বছর।
তাতেও অজানা এক তৃপ্তি পাবো আমি।
তবু্ও মায়া না কাটুক, বয়ে যাক সে না থাকা জুড়ে।
দুর্বিষহ হোক সব স্মৃতি, আমি’ই রবো না-হয় বিষাদে।
আপনি আর কোনোদিনও আমার পাশে থাকবেন না কিন্তু আপনার স্মৃতিরা ঘুরপাক খাবে বিষাদের ছোঁয়ায়।

🥀
🥀
🥀

আজ দু’বছর পর আমি আবারও রেহান ভাইয়াদের বাসায় যাচ্ছি।
এই দু’বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
আমাদেরও আর দেখা হয়নি, অবশ্য দেখা না হলেও সব খবরই রাখি আমি এখন।
আমি আর সেই আগের আমি নেই।
ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করবো, কিন্তু আমাকে এতোটাই রোবট বানিয়ে দেয়া হয়েছে যে আত্মহত্যার কথাও মুখে আনতে পারিনি।
রাহি ভাবি এখন রেহান ভাইয়ার সাথেই থাকেন।
বড় করে আয়োজন করে রাহি ভাবিকে নিয়ে আসা হয়নি, যেভাবে বিয়ে হয়েছিলো ঠিক সেভাবেই নিরবে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন রেহান ভাইয়া।
রেহান ভাইয়ার বিয়ের পর রাফি ভাইয়া বাবার কাছে আমার জন্য যখন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলেন তখন আমি সাফ মানা করে দিলাম।
কোন মুখে হ্যাঁ বলবো!
একই ছাদের নিচে রেহান ভাইয়ার আশে পাশে আর যাই হোক আমি থাকতে পারবো না।
উনাকে অন্য মেয়ের সাথে দেখলেই আমি চুরমার হয়ে যাবো।
খুব কষ্ট করে নিজেকে সামলে নিয়েছি তো তাই আর ভাঙতে চাইনা।
বাবা সেদিন রেগে গেলেও তেমন কিছু বলেন নি।
আমি সেদিনও মুচকি হেসে বাবার কাছ থেকে সরে এসেছিলাম।
নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ি।
গান গল্প কবিতা জীবনটাকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করলো।
আমিও আর আটকাইনি, এই নগন্য জীবনটাকে ছেড়ে দিয়েছি পাখির খাঁচার মতো।
অনিদ্রা আইডিটা থেকে এখনও রোজ আমি উনাকে দেখি।
ভালো লাগে দেখতে খুব, প্রতিটা আপলোড দেয়া ছবি একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা দেখি।
কিন্তু রাহি ভাবিকেই কেনো জানি ভালো লাগে না।
দু’জনের ছবি যখন একসাথে দেখি, বুকে কেমন ব্যাথা হয় আমার।
নাহ্ এখন আর কষ্ট হয়না, শুধু মাঝে মাঝে উনার স্মৃতিগুলো মনে পড়লে থমকে দাড়াই।
উনার ছবিগুলো ডিলিট করিনি, আর ঐ মালঞ্চ বইটা; ওটাও খুব যত্নে সংগ্রহ করে রেখেছি।
মাসে বোধহয় এক আধবার বইটা খুলে দেখা হয়।
উনার বিয়ের দু’মাস পরেই বাবার পোস্টিং হয়ে যায়।
চলে এলাম বগুরা!
তারপর শুরু হলো আমার জন্য পাত্র খোঁজা।
বাবাতো উঠে পরে লেগেছেন আমার জন্য পাত্র খুঁজতে।
এই দুই বছরে উনি আমার জন্য এখনও যোগ্য পাত্রের সন্ধান পাননি।
শুনলাম ঢাকা গিয়ে রেহান ভাইয়াদের বাসায় উঠবো আমরা, সেখানেই নাকি আমাকে ছেলে পক্ষের সামনে যেতে হবে।

🥀

রাফি ভাইয়াও আজ বিবাহিত।
নতুন বিয়ে করেছেন উনি, সুখেই আছেন অবশ্য।
বাড়িটা এখনও আগের মতোই আছে।
এখন অবশ্য পাঁচতলা হয়েছে।
রেহান ভাইয়াও বদলেছেন খানিকটা।
বড় ব্যবসায় হাত দিয়েছেন, কাজের ফাঁকে নিজের দিকে তাকানোর সময়ই খুঁজে পান না।
এখন এ বাড়িতে উনার অনেক দাম।
শুনেছি রাহি ভাবি নাকি পাঁচ মাসের প্রেগনেন্ট।
রেহান ভাইয়া এখন রাহি ভাবির খুব যত্ন নেন।
ছেলেরা আর যাই হোক, নিজের সন্তান আর সন্তানের মায়ের খুব যত্ন নেয়।

আজকে প্রায় একদিন হয়ে গেলো রেহান ভাইয়ার সামনে পড়িনি আমি।
উনিও আসেন নি আমার কাছে।
ভালোই হয়েছে অবশ্য, উনাকে দেখলে হয়তো পুরোনো কষ্টটা আবার নতুন করে নড়ে উঠবে।
আজ বাবা মা আমান ভাইয়া ছেলের বাড়িতে যাবে, শুনেছি ছেলেপক্ষরা নাকি অনেক বড়লোক।
তাই হয়তো বাবা তাকেই আমার যোগ্য পাত্র মনে করেছেন।
একবার অবশ্য না করেছিলাম, বাবা বললেন- এ বাড়ির দাসী হওয়ারও তুই যোগ্য না সেখানে বউ হয়ে যাবি তোর তো কপাল চাপড়ানো উচিত।
আর কিছু বলিনি আমি, চোখ নামিয়ে চলে এসেছি।

.

ছেলে বাড়ি যাবার সময় বাবা রেহান ভাইয়াকে সাথে করে নিয়ে গেলেন।
রেহান ভাইয়া প্রথমে কিছুতেই যেতে চাননি, ব্যস্ততার বাহানা দিয়েছিলেন প্রচুর।
কিন্তু আমার একরোখা বাবা রেহান ভাইয়াকে ছাড়া যাবেই না!
সবটা পর্দার আড়াল থেকে দেখেছি আমি।
আজ বড্ড হাসি পাচ্ছে আমার।
যেই রেহান ভাইয়া আমাকে বিয়ে করার জন্য বাবার কাছে হাত পেতেছিলো, কান্না করেছিলো বার বার।
কতো অনুনয় করেছিলো, সেই রেহান ভাইয়াই আজ আমার জন্য ছেলে দেখতে যাচ্ছেন।
জীবন যেনো আমার সাথে ঠিক কৌতুক করছে।

বিয়েটা এখানেও হয়নি, ভেঙে গেছে এবারও।
বাবার মুখটা তখন চুপষে গিয়েছিলো।
যোগ্য পাত্র বোধহয় বাবা এবারও হাত ছাড়া করলেন।
আজ চলে যাচ্ছি এ বাড়ি থেকে, কিইবা লাভ এখানে থেকে?
রাস্তায় নেমে একবার পেছনে ফিরে তাকিয়ে রেহান ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।
খুব কষ্ট করে বোধহয় একটা হাসি দিলেন।
ঐ হাসিতে যে হাজারো কথা লুকোনো আছে সেটা আমার বুঝতে বেগ পেতে হলো না।
আপনি হাসলে, দুটি ঠোঁটে যে দূরত্ব তৈরি হয়, তার কেন্দ্রবিন্দুতে আমার নবজাতক স্বপ্নগুলো বিধস্ত হয়ে নিরবে বংশবিস্তার করে আছে সেটা বোধহয় আপনি জানেন না রেহান ভাইয়া।
উনার ঐ চোখের ভাষা আমি পড়তে চাইনা, পড়লে বোধহয় শত শত আর্তনাদ শুনতে পেতাম।
চোখ নামিয়ে নিলাম আমি, উনি বোধহয় ঠোঁট নেড়ে কিছু একটা বললেন, খুব সম্ভবত “ভালো থাকিস” হ্যাঁ এই দুটো নির্জিব শব্দই বোধহয় বলেছেন উনি।

🥀

বাসে জানালার পাশের এক সিটে বসে আছি আমি।
কেনো জানিনা আজ খুব হাসি পাচ্ছে আমার।
জোরে জোরে হাসতে ইচ্ছে করছে।
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে-
আপনাকে ভাবতে আজও বড্ড ভালো লাগে।
আমার আপনির জায়গাটা কেউ নিতে পারেনি ভাইয়া
কিন্তু জীবন থেকে আপনার সাথে সাথে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু!
এ জীবনে আপনাকে নাহয় আপনিতেই আবদ্ধ করে রাখি, পরের জীবনে আপনি নাহয় আমার তুমিটা হবেন।
বিচ্ছেদের ক্লান্তি শেষ হয়েছে কবে নিজেই জানিনা।
আপনার উপর অভিমান কিংবা অভিযোগ পুষে উঠার আগেই আপনি অন্য কারো হয়ে গেলেন।
তবুও আমি একা বেঁচে আছি, ভালোই আছি।
এই যে দেখুন, আজও কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে।
বৃষ্টি আর আমাদের মাঝে খুব মিল তাইনা!
আজকের বৃষ্টির শীতলতা কি আপনাকেও ছুঁয়ে গিয়েছে?
ভিজেছেন কি আজকের এই ঝিরিঝিরি বারি ধারায়?
আজও কি সেই ঝুম বৃষ্টির সময় জানালার পাশে বৃষ্টির জল ছোঁয়ার চেষ্টা করেছেন?
একটু একটু করে জল ছুঁয়ে দেয়ালে কি আজও লিখেন কারো নাম?
কিংবা বৃষ্টির ঝাপটায় ঝাপসা হয়ে যাওয়া কাঁচে হাত ঘুরিয়ে আমার নাম লিখে দেখেন যে উল্টো করে কেমন দেখায়?
জানালা খুলে দিয়েছি আমি,
দু হাত ভরে গাঁয়ে মেখেছি হিম কোমলতা।
আজ আমি একা নই সাথে আছে আপনার স্মৃতি, সেই বৃষ্টি, বৃষ্টি ভেজা আকাশ, সেই অসাধ্য সাধনের স্বপ্নবাজ দুটি চোখ।
যদি আপনি বৃষ্টি ছুঁয়ে থাকেন তবে জেনে রাখুন
এই বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি নয় এতে আমার চোখের পানিও আছে।

কানে হেডফোন গুজে ইউটিউবে গান সার্চ করছি।
হুট করেই সামনে এলো একটা গান।

একা বেঁচে থাকতে শেখো প্রিয়
তোমার নামে শিরনি দিয়েছি তারার মাজারে,
আশা রাখি সুস্থ্য হয়ে উঠবে তাড়াতাড়ি
আমার নিরাগ লাগে ভারি
কবে ছোঁব সাদা শাড়ি..
আমায় নিয়ে আর ভেবো না আরামপ্রিয়
মনে স্বস্থি জেনো
শুধুই ফুর্তি মেনো
দোলোনচাপার মৌসুমে আমি টানছি ইতি এবার
তোমার বদ্ধ ঘরে শোবার স্বভাব
না করেছি কবার…
তোমায় কে দিয়েছে
নিকশ কালো রাতের জোগান….
তোমার মনের গতি…
রাতের দূর পাল্লার গাড়ি
আমি ধরতেও না পারি
আমি কেমনে যাবো বাড়ি…
টিকেট কেটে রেখে ছিলাম যাত্রা সময় ভুলে
এখন ইষ্টিশনে বেজায় অন্ধকার
তোমায় কে দিয়েছে নিকশ কালো রাতের জোগান..
একা বেঁচে থাকতে শেখো প্রিয়…

সত্যিই গানের সাথে আমার জীবনের বড্ড মিল।
কমেন্টে দেখলাম হাজার হাজার না পাওয়া ভালোবাসার কথা লেখা।
ভাবলাম আমিও আমার গল্পটা ছোট্ট করে কমেন্ট করে দেই–
চোখে চোখে হাজারো না বলা কথা বলা হয়ে যেতো আমাদের। আপনি কখনই আমার সাথে কথা বলেননি, আমিও বলিনি। আসলে আমাদের কথা বলা হয়েই উঠেনি কখনও। তবুও ছিলো আমাদের এক সমুদ্র ভালোবাসা। অতঃপর যখন আপনি আমায় ছাড়া আর থাকতে পারছিলেন না! তখন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলেন আমার বাবার কাছে। আপনাকে আমার অযোগ্য ভেবে বাবা রাজি হলো না। সব কিছুই ছিলো আমার গোপনে। আজ আপনার অর্ধাঙ্গিনীর পেটে আপনার সন্তান। আর আমার বাবা এখনও আমার যোগ্য পাত্রের সন্ধানে। আপনিই ছিলেন আমার প্রথম ভালোবাসা। আমি কোনোদিনও চাইবোনা আপনি এই কমেন্টটা দেখুন। ভালো থাকবেন প্রিয়, নিজের খেয়াল রাখবেন। অনিদ্রা…

চুপচাপ সিটের সাথে মাথা এলিয়ে দিলাম আমি।
একা বেঁচে থাকার আস্তো একটা গল্প যে আমার জীবনেও আছে।
শিখে গিয়েছি আমি, একা বেঁচে থাকতে আমিও আজ শিখে গিয়েছি!
আমার এই গোপন ভালোবাসাটা এভাবে গোপনেই থেকে যাবে।
ঐ যে একতরফা ভালোবাসায় একটা কথা আছেনা dying for love is too easy.
But living without love and fighting against what caused the death of love is harder than anything in the world.

(সমাপ্ত,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here