#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব_৩১
ঘুমন্ত সেহেরিশের পাশে বসে আছে জুহি।দরজা খোলা থাকায় বাড়ির সবার একসঙ্গে কান্নার শোরগোলের কারন বুঝলো না সে।এদিকে সেহেরিশকে রেখেও যেতে পারবেনা।তবুও মনের সংশয় কাটাতে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়।চন্দনা মুনিফের জন্য মুখে হাত দিয়ে বেশ শব্দ করে কাদঁছে।অন্যদিকে সেঁজুতি সহ বাড়ির সকলেই আহাম্মক বনে গেছে হঠাৎ কি হয়ে গেলো বুঝতে পারলো না কেউ।আফীফের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে মুনিফ সবসময় তার সাথে ছিল কিন্তু আজ হঠাৎ কি হলো?মুনিফ বা সেহেরিশের সাথে কি করেছে সব প্রশ্নের উওর খুঁজতে দৈর্য্যহারা হয়ে উঠছে সবাই।
.
ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমটায় ফ্লাশ অন করে মুনিফের দিকে তাক করতেই সহসা চোখ,মুখ কুচকে নেয় সে।
– কিরে মুনিফ আমার সাথে বেইমানি করলি কেন?নিজের ভাইয়ের মতো মূল্য দিয়েছি তোকে।
– আমি কি করেছি? মিথ্যা অভিযোগ একদম তুলবি না আফীফ ভাই।
– বাহ!এখনো নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইছিস?এই আফীফ যে প্রমাণ ছাড়া কথা বলেনা তুই ভালো করে জানিস।
মুনিফ উওর দিলো না বরং আফীফের দিকে তাকিয়ে রইলো বিরক্ত হয়ে।আফীফ বিদ্রুপ হেসে বলে,
– তুই জানতি আমি সেহেরিশের প্রতি দূর্বল কিন্তু সব জেনে শুনে সেহেরিশের প্রতি তোর উতলে ওঠা ভালোবাসা মোটেও মানায় না।
– কি বলছিস আফীফ,মাথা ঠিক আছে তোর?
– চুপ!সব ঠিক ঠাক আছে।শুধু তোকে ধরার যোগ্য সময় পাইনি আমি।সেহেরিশ এই বাড়িয়ে আসার পর রাতে আমি ছাড়াও তুই সেহেরিশের রুমে যেতি।রাতে আমান স্পষ্ট দেখেছে তোকে সেহেরিশের রুমে প্রবেশ করতে।আমি এর পরেও চুপচাপ ছিলাম।সেহেরিশের প্রতি কড়া নজর বাড়িয়ে দিলাম।মারুফা ফুফি সহ খুরশীদ আনওয়ারকে তুই পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিস এবং পারভিনের দলের সদস্যদের সঙ্গেও তোর যোগাযোগ আছে।সেদিন তুই তাদের খবর দিয়েছিলি পারভিনকে ব্লাক হাউজ থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।ব্লাক হাউজে অনন্য দরজার পিনের সাথে পারভিনের দরজার পিন কোডের মিল নেই। সেই দরজার পিন একমাত্র আমি আর তুই জানতাম তাহলে বল তোকে ছাড়া পারভিনের দরজা অক্ষত অবস্থায় খোলে কি করে?সবটা তুই আগে থেকেই প্লানিং করে রেখেছিস।
– তোর সমস্যা কি আফীফ?শুধু শুধু আমার ঘাড়ে দোষ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু।
– তাই নাকি?তোদের এইসব প্লানিং কিছুটা হলেও আমার শাশুড়ী জানেন।আজ তিনি আমার কাছে সবটা খুলে বলেছেন এবং দাবী করেছেন দুই পরিবারের সম্পর্ক যেন আগের মতো করে তুলি।
– তার মানে….
– এত চিন্তা করিস না মাথা ফেটে যাবে তোর।আমাকে আমার কাজটা করতে দে।
আফীফ উঠে দাঁড়ায়।দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সাতজন কর্মচারীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– যে করেই হোক পারভীন-পারু কোথায় আছে মুনিফের পেট থেকে বের কর।প্রয়োজনে মারবি,গায়ে গরম পানি ঢালবি তবুও যেন সত্যটা বের করে। অনেক হয়েছে নাটক আর না।
রাতে আফীফ বাড়ি ফিরতেই সবাই যখন জানতে চায় মুনিফের দোষটা কি?তখন আফীফ সবাইকে এড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়।মন,শরীর দুইটাই বড্ড ক্লান্ত।সেহেরিশের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে তাকে পাশে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
কেটে যায় দুইদিন এতদিনেও মুনিফের মুখ থেকে সত্য কথা বের হয়নি।কিন্তু আজ আফীফের অত্যাচারে পারভিন এবং পারুর ঠিকানা বলে দেয় সে।সবাইকে না জানিয়ে আফীফ লোক পাঠিয়ে তাদের খুঁজতে পাঠায়।অবশেষে পেয়েও যায়।বর্তমানে আফীফ পারু,পারভিন মুখোমুখি।
– আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন আপনারা?
আফীফের সালামের জবাব দিলো না পারভিন, পারু বরং তারা দুজনে দুজনের মুখ দেখাদেখি করছে।কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির দারপ্রান্তে প্রবেশ করে সেহেরিশের পুরো পরিবার।
ব্লাক হাউজ বাড়ির উঠানে সবাই মিলে উৎসুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।সেহেরিশ ক্লান্ত শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জুহির হাত ধরে।তার দিকে আফীফ পূর্ণ দৃষ্টি রেখে আফীফ গমগমে সুরে বলে,
– ঘরে যাও সেহেরিশ তুমি ক্লান্ত।
– না বাড়ির সবাই এখানে আছে আমি এখানেই থাকবো।
সেহেরিশকে ঘাড় ত্যাড়ামি করবে আফীফ ভালো করেই জানে তাই জুহিকে ইশারা করে তাকে নিয়ে যেতে কিন্তু নাছোড়বান্দা সেহেরিশ তাতেও রাজি হলো না।কোন উপায় না পেয়ে আফীফ সেহেরিশের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।আহনাফ দেওয়ান চিন্তিত গম্ভীর মুখ করে বসে আছেন তার দিকে তাকিয়ে আফীফ বলে,
– দাদাজান আমি কোথা থেকে শুরু করবো?পারু নাকি পারভিন থেকে?নাকি খুরশীদ আনওয়ার থেকে?
‘খুরশীদ আনওয়ার’ নামটা বলতেই সেহেরিশ সহ বাড়ির বাকিরা চমকে তাকায়।আহনাফ দেওয়ান কিঞ্চিৎ হেসে বিদ্রুপ সুরে বলে,
– অতীরের ক্ষত বর্তমানে এসে দাগ লেগেছে তবে অতীত থেকেই শুরু হোক।
আফীফ স্থির হেসে মারুফার দিকে তাকায়।
– ফুফি আপনার বাবা- মা,হাজবেন্ড মারা যান রোড এক্সিডেন্টে আপনি আমাদের এটা বলেছিলেন রাইট?
– হ্যা।
– কিন্তু আপনার তাদের যে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে এটা কি জানেন?
আফীফের কথায় সবাই ঝলকানিতে তাকালেও আহনাফ স্থির ভাবে বসে আছেন।
– আমরা পরবর্তীতে জানতে পেরেছি।
– আপনার বাবা মানে সেহেরিশের দাদা দুই বিয়ে করেন।আপনি এবং খুরশীদ আনওয়ার প্রথম পক্ষের সন্তান আর পারভিন, পারু দ্বিতীয় পক্ষের এটাও আপনারা জানেন?
সেহেরিশ চকিতে তাকায় সবার দিকে।তার দাদার মৃত্যুটা পর্যন্ত সে জানলেও বিয়ের বিষয়টি মোটেও জানেনা।
– আমাদের ব্যাক্তিগত কথাগুলো সবার সম্মুখে তোলা কি ঠিক হচ্ছে আফীফ?
মারুফার কথায় ঠাট্টা স্বরে হাসে আফীফ।
– আপনাদের ব্যাক্তিগত কথাগুলো আর ব্যাক্তিগত নেই।সেটা ১২/১৩ বছর আগেই আমার দাদার কানে বারি খাচ্ছিলো।কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ এবং সুযোগের অভাবে দাদাজান কিছুই করতে পারেনি।
– আফীফ এত সময় আমাদের নেই।খুব দ্রুত সবটা বলে দে।
আহনাফ দেওয়ান শেষ কথাটা বলে খুরশীদ আনওয়ারের দিকে একবার তাকান।
আফীফ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– সেহেরিশের দাদার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী জান্নাত।তাদের ঘরে যখন দুই জমজ মেয়ে পারু এবং পারভিন হলো তার কিছুদিন পরেই প্রথম পক্ষের বউ সেটা যানতে পারে।তখনো সেহেরিশ বাবা এবং ফুফি বেশ বড় হয়ে গেছে।ঝগড়া বিবাদে কেটে যায় বছর।পারু,পারভিন বেশ বড় হয়ে যায়।তারা যখন বাস্তবতা বুঝতে শেখে তখন সংসারে একমাত্র মায়ের আদর ছাড়া বাবার আদর ছিলনা।ছোট থেকেই রাগী ছিলো পারু।তার যখন উনিশ বছর বয়স তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় সৎ মায়ের কোন ক্ষতি করবে।কেননা ভালোবাসায় সমৃদ্ধ ছিল মারুফার পরিবার কিন্তু তাদের পরিবারে অভাব ছিল পিতার,সুখের। ঠিক তাই করলো।আমাদের বাড়ির ড্রাইভারের ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল পারুর আর তাকে হাত করে গাড়ি এক্সিডেন্ট করালো। সেদিন মারুফা বাদে গাড়িতে থাকা সবাই মারা যান।
সবাই যখন জানতে পারে এটি এক্সিডেন তখন আমাদের ড্রাইভারের তার ভাইয়ের সাথে গোপন আলাপে জানতে পারে এটি পরিকল্পিত।ঠিক তখন আমার দাদাজান সেহেরিশ এবং তাদের পরিবারকে নতুন করে চিনতে পারে।এবং পারুকে খুঁজতে লোক লাগায়।কিন্তু বিষয়টি জানতে পেরে পারু নিখোঁজ।
এদিকে বাবা মায়ের মৃত্যুতে শোকাহত থাকার পরিবর্তে মারুফা এবং খুরশীদ আনওয়ার সম্পত্তি ভাগাভাগিতে ঝগড়া লেগে যান।কেননা সম্পত্তির দাবিদার ছিলেন প্রথম স্ত্রী জান্নাত। নানান ভাবে ফোর্স করেও জান্নাত তার অংশ ছাড়তে রাজি হননি।তাই খুরশীদ আনওয়ার এবং মারুফা সবচেয়ে নিম্ন মানের কাজটা করেন।তারা জান্নাতকে মারার জন্য লোক ভাড়া করেন।কিন্তু তিনি পালিয়ে যান।চারিদিকে জান্নাতের খোঁজ না পাওয়ায় সবাই খুরশীদ আনওয়ারের দিকেই আঙুল তুলে তাই তিনি সব ফেলে দ্রুত বিদেশ পাড়ি জমায়।এদিকে মা, বোন বিহীন একা হয়ে যায় পারভিন তাই আমার দাদী নিজের সহযোগিতা হিসেবে তাকে দেওয়ান মঞ্জিলে নিয়ে আসেন।
কিন্তু বছরের পর বছর পারভিন আন্টি আমাদের কাছে থেকেও মারুফার কাছে টাকার বিনিময়ে সেহেরিশকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
আফীফ কথা শেষ করার আগেই আহনাফ দেওয়ান বলে,
– একদম ঠিক করেছে।তুমি আমার মেয়েকে বন্দি করেছো নিজের স্বার্থে ঠিক তেমন টাকার স্বার্থে পারভিন আমার মেয়েকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
খুরশীদের গমগমে সুরের কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো আফীফ।
– তাই নাকি, আপনার মেয়ে কি বাজারের পণ্য?মাত্র ৫০/৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে সেহেরিশকে দেওয়া হয়েছিল।
আফীফের কথায় মাথা নিচু করে নেয় খুরশীদ।বিষয়টি সেহেরিশের সম্মানে লাগে।
– যাই হোক পারভিন সেহেরিশকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার পর সে নিজেও পালিয়ে যায়।কিন্তু তার উপর আমার এতটাই জেদ চেপে যায় আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যেদিন সেহেরিশকে পাবো সেদিন পারভিন মুক্ত হবে।এত বছর তাকে বন্দি রেখে কয়েকদিন আগে আমি জানতে পারি যাকে বন্দি করেছি সে পারভিন নয় পারু।যাকে আমার দাদাজান এক যুগ থেকে খুঁজে চলেছে অথচ সে আমাদের কাছেই ছিল।অদ্ভুত!
আফীফ চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে চেয়ারটা নিয়ে সেহেরিশের সামনে রাখে আর সেহেরিশকে ইশারা করে চেয়ারে বসতে বলে।কিন্তু সেহেরিশ মাথা ইশারায় না করতেই আফীফ দাঁত কিড়মিড় করে ফিসফিসিয়ে বলে,
– কোলে ওঠার শখ করে লাভ নেই চুপচাপ বসে যাও।কোন সাউন্ড যেন না হয়।
– আরে….
– আবার সাউন্ড।
সেহেরিশ তর্ক করলো না এই মূহুর্তে তর্ক করা তার সাধ্যি নেই।তাই চুপচাপ বসে যায়।
আফীফ আহনাফ দেওয়ানকে ইশারা করে বাকি কথাটা শেষ করতে তাই আহনাফ দেওয়ান পারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– বন্দি করেছিল পারভিনকে অথচ তুমি সেখানে কি করে এলে?
পারু চুপ করে আছে তাকে চুপ থাকতে দেখে আফীফ দুইহাতে তালি দিয়ে তাড়া সুরে বলে,
– দ্রুত,দ্রুত বলুন আমার হাতে সময় নেই।আজকেই সবটা সমাধান করতে হবে।যত চুপ থাকবেন বিপদ তত বাড়বে।
– আসলে….
– নকল জানতে চাইনি আমি আসলটাই জানতে চেয়েছি।আর উলটা পালটা চালাকি করে লাভ নেই আজ সব পথ বন্ধ।
– আমার সৎ মা এবং বাবাকে মারার দায়ে আড়ালে আমাকে যখন সবাই খুঁজতে থাকে তখন আমি পালিয়ে যাই।কেননা আমি জানি একবার আহনাফ দেওয়ানের খপ্পরে পড়া মানে ভয়াবহ শাস্তি।এদিকে কয়েকমাস পর পারভিনের সাথে যোগাযোগ করলে সে আমাকে সেহেরিশকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করার বিষয়টি বলে তখন আমার মাথায় বুদ্ধি আসে।পারভিনের দেওয়া শাস্তি হবে সীমিত কেননা সেহেরিশকে একদিন না একদিন আফীফ খুঁজে পাবে আর আমার শাস্তি সারাজীবনের জন্য তাই ইচ্ছে করে পারভিন সেজে আফীফের লোকের হাতে ধরা পড়ার নাটক করি।আর আমি হয়ে যাই বন্দি।অন্যদিকে পারভিন লুকিয়ে বাচঁতে থাকে।আমার থেকেও তখন তার বিপদ বেশি ছিল। কেননা সবাই যানে পারভিন আফীফের কাছে বন্দি আর পারু পলাতক তাই তাকে যে কেউ দেখলে বলে ফেলবে সে পারু।দুই বোনের চেহারা মিল হওয়ায় কেউ সহজে বুঝতে পারবেনা।
– তাহলে বাড়িতে নিরবে হামলা সেহেরিশকে কিডন্যাপ,আমাকে চিরকুট দিয়ে ভয় দেখানো তা কে করেছে?
– পারভিন করেছে একমাত্র সেহেরিশের উপর জেদ করে।কেননা সেহেরিশের বাবার কারনে আমাদের মাকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি অন্যদিকে দু-বোন দুই দিকে।যা হয়েছিল সবটাই আড়ালে মিটে যেত কিন্তু অনন্তপুরের ঝামেলা চন্দনপুরে এসে সবটা এলোমেলো হয়ে যায় তাই লোক নিয়ে এমনটা করেছে পারভিন।
– তবে মুনিফ কার সাথে হাত মেলায়?
– সে সেহেরিশের প্রতি দূর্বল হয়ে ব্লাক হাউজে আমার সাথে সব প্লানিং করে।অন্যদিকে মারুফার সাথে মিলে সবাইকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।দেওয়ান বাড়ির সব আপডেট আমারা মুনিফের কাছ থেকে পেতাম।
আফীফ ঘড় ঘুরিয়ে তাকায় মুনিফের দিকে।মুনিফ তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয় অন্যদিকে।আফীফ একজন লোককে কিছু একটা ইশারা করে তখনি লোকটি ব্লাক হাউজ থেকে হুইল চেয়ারে করে একজন মহিলাকে নিয়ে আসে।আর তাকে দেখে পারু এবং পারভিন একসঙ্গে বলে,
– মা!
খুরশীদ, মারুফার চিনতে বেশ একটা সময় লাগে নি।সামনের মহিলাটি তাদের সৎ মা জান্নাত।
– আমাদের কাছে ছিলেন তিনি এতদিন।রক্তাক্ত অবস্থায় আমাদের কাছে সাহায্য চাইতে আসেন।তিনি চিকিৎসা অবস্থায় প্যারালাইজড হয়ে যান।পরবর্তীতে আমরা তার নিরাপত্তার জন্য সব কিছু ব্যাবস্থা করে ব্লাক হাউজে রাখি।ব্লাক হাউজের ডানের গলির রুমে ছিল পারু রূপি পারভিন আর বামে ছিল উনি।
সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আফীফের দিকে।আফীফ এগিয়ে আসে খুরশীদ আনওয়ারের কাছে।
– আব্বা আপনি জানতেন আমি আপনার এইসব কার্যকলাপ সম্পর্কে জানি।তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছিলেন এবং সেহেরিশকেও বিয়ে দিতে অসম্মতি জানান।কিন্তু শেষ জিৎটা আমার হয়েছে।যান আপনার মায়ের পা ধরে ক্ষমা চান।
– কি বলছো তুমি?তোমার কথা শুনতে বাধ্য আমি নই।
– অবশ্যই বাধ্য আপনি আর মারুফা ফুফু পা ধরে ক্ষমা চাইবেন।আপনাদের এই জঘন্য কাজের জন্য দুইটা অপশন দিলাম প্রথমত,ব্লাক হাউজে বন্ধি থাকবেন কয়েক বছর আর দ্বিতীয়ত,পা ধরে মাফ চাইবেন আপনার মায়ের কাছ থেকে।
.
কেটে গেছে বেশ কয়েক সাপ্তাহ।সেদিন খুরশীদ এবং মারুফা অবশেষ মাফ চায় তাদের মায়ের কাছ থেকে।পারভিনকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং আলাদা একটি বাড়িতে তার মাকে নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় আফীফ।পারুকে আবারো ব্লাক হাউজে বন্দি করা হয়।মুনিফকে কয়েক মাসের জন্য ব্লাক হাউজে বন্ধ করে রাখবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় আফীফ।তাতে তাল মিলিয়েছে মুনিফের মা চন্দনা কেননা যার বাড়িতে থাকছে তার সাথেই বেইমানি বিষয়টা হাস্যকর।
খুরশীদ আনওয়ার সহ বাকিরা আগের মতোই আছেন।সেহেরিশ এবং আফীফের সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক।
.
বিছানার সাথে হেলান দিয়ে আফীফের দিকে তাকিয়ে আছে সেহেরিশ।আফীফ ল্যাপটপের স্কিনে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুচকে।
– আফীফ শুনছেন?
– বলো।
– আমার সাথে আপনার দেখা না হলেও পারতো তবে আর এতটা ঝামেলা হতো না।মুনিফের সাথে আপনার বিবাদ থাকতো না।আসলে আমি অভিশপ্ত!
সেহেরিশের কথায় আফীফ শব্দ করে ল্যাপটপটা বন্ধ করে তার দিকে ঘুরে তাকায়।
– যার যে শাস্তি সে তা পাবে এতে তোমার নিজেকে অপরাধী ভাবার কিছু নেই।
– তবুও….
সেহেরিশ কথাটা প্যাচাতে নিলেই, ঠাসস করে শব্দ হয়।সেহেরিশ চমকে তাকাতেই দেখে আফীফ নিচে কফির মগটা ছুড়ে ফেলেছে।
– আরে কি করছেন?
– বুঝলে সেহেরিশ হাতটা বড্ড আনচান করছে।তাই কফির মগটা ছুড় মেরেছি।আনচান এখনো কমছে না কি করি বলতো?
ব্যস আফীফের কথায় সেহেরিশ শটান হয়ে শুয়ে যায় অন্য দিকে পাশ ফিরে। গায়ের কাথাটা মুড়িয়ে দোয়া – কালাম পড়তে থাকে।
কেননা সে ভালো করেই জানে আফীফ তার কথায় ক্ষেপেছে এবার চড় তার গালে পড়তে সময় নেবেনা।
– লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন।’
– কি পড়ছো সেহেরিশ?
– দোয়া কালাম পড়ছি।এই সময় দোয়া-কালাম পড়া ভালো।
– হ্যা বেশি বেশি পড় তোমার মাথা থেকে যেন উদ্ভট,বস্তাপঁচা চিন্তা গুলো চলে যায়।
– লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন।’আল্লাহ এবারের মতো বাঁচাও!
#চলবে…