#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব_১১

গায়ের সাদা পাঞ্জাবি তার সাথে মানান সই চাদর গায়ে জড়িয়ে চুপচাপ কিছু ফাইল দেখছে আফীফ।তার পাশে বসে আছেন আহনাফ দেওয়ান।বাড়ির বাইরে মুনিফ এবং আফীফের বাবা মাসুম ট্রাকের মাল গুলো দেখভাল করছেন।শীতের মৌসুম অনুসারে আজ গরিব দুঃখিদের শীত বস্ত্র বিতরন করবেন আহনাফ দেওয়ান সাথে আফীফ।ফাইল গুলো চেক করে আহনাফ দেওয়ানকে নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে।

– দাদাজান আপনি গিয়ে গাড়িতে বসুন।
– তুমি আসবে কখন?
– আব্বা আর মুনিফের কাজের হিসাব নিয়ে আসছি।আপনি অপেক্ষা করুন।
– ঠিক আছে।

আহনাফ দেওয়ানকে গাড়িতে বসিয়ে আফীফ আবারো বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে।তখনি তার সাথে দেখা মিললো সেহেরিশের।গায়ে জিন্স,লং কুর্তি গলায় মাফলার,মাথায় ক্যাপ। পায়ে সু অন্যরকম সৌন্দয আজ যেন ভর করেছে তার মাঝে।আফীফ এবং সেহেরিশ দুজনেই দুজনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে সরে গেলো।

– ওয়াও ইউ লুক লাইক সো কিউট।
কেইনের কথায় কিঞ্চিৎ হাসলো সেহেরিশ।কেইনের হাতে হাত রেখে বললো,
– থ্যাংকস।আমরা কখন যাবো?
– ওয়েট আফীফ ব্রো’কে জিজ্ঞেস করি।

আফীফ এতক্ষন সেহেরিশ এবং কেইনের কান্ড দেখছিল।কেইন কিছু বলার আগেই আফীফ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
– এমন পাব্লিক প্লেসে আমাদের বাড়ির মহিলা সদস্যদের যাওয়া নিষেধ।সে হিসেবে মিস সেহেরিশ যেতে পারবেনা।
আফীফের কথায় কেইন স্তব্ধ হয়ে যায়।মুখ ফুটিয়ে কিছু বলার আগেই সেহেরিশ শুধালো,

– আপনাদের নিয়ম বাড়ির মেয়ে কিংবা মহিলাদের জন্য।কিন্তু আমি তো আপনাদের বাড়ির জাস্ট অতিথি সেই হিসেবে আমি যেতেই পারি।
– না পারেন না।যেহেতু এই বাড়ি থেকে যাবেন সেই সুত্রে আপনার পরিচয়ে এই বাড়ির নাম আসবেই।তাই আবারো বলছি আপনি যাবেন না।
– আজব!আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি যাবো।প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে যাবো না।এমন…

সেহেরিশের কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে তুন্দ্র এগিয়ে আসে আফীফের দিকে।
– দাদাভাই এমনিতেও আজ আমাদের গ্রামটা ঘুরে দেখার কথা ছিল কিন্তু পরে যখন যানতে পারি আপনারা আয়োজনটা করেছেন তখন ভেবে দেখলাম একসাথেই না হয় বের হবো।আমরা দুই বন্ধু যাবো সেহেরিশ যাবে না তা কি করে হয়।সেহেরিশ আমাদের সাথেই থাকবে কোন প্রবলেম হবে না।

তুন্দ্রের কথায় মাথা নাড়ালো আফীফ।হাতে থাকা কালো চশমাটা চোখে এঁটে দ্রুত গাড়িতে গিয়ে বসে আড় চোখে তাকায় সেহেরিশের দিকে।মুনিফ এবং মাসুম আসতেই তারা স্কুল মাঠের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়।তাদের যাওয়ার পর সেহেরিশ,তুন্দ্র,কেইন অন্য গাড়িতে যাত্রা শুরু করে।

স্কুল মাঠে আজ নানান মানুষের ঢল।চারদিকে কড়া পাহারায় আছে দৌবারিক।সেহেরিশ, তুন্দ্র কেইন মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আফীফের কার্যকলাপ দেখছে।গরীব ক্ষুদার্ত মানুষগুলোর হাতে শীতের বস্ত্র এবং খাবারের প্যাকেট তুলে দিচ্ছে আর সেই মূহুর্ত গুলো ক্যামেরায় বন্ধী করছে তুন্দ্র।
টানা চার ঘন্টা আয়োজন শেষে অবসর পেলো আফীফ।স্কুল মাঠ থেকে ভিড় কমতেই মুনিফ এগিয়ে আসলো সেহেরিশের সামনে।

– তারপর বলো কেমন দেখলে আমাদের আয়োজন?
– খুব ভালো।এলাহি কান্ড।
– হুম তা ঠিক।তোমরা কি বাড়ি যাবে নাকি গ্রাম ঘুরতে বের হবে?
– না গ্রাম দেখবো আজ।
– কিন্তু দুপুর শেষ হয়ে এসেছে কিছু খাওনি তোমরা আগে বাড়ি চলো।
– খিদে নেই আমাদের।আর টং দোকান থেকে পাউরুটি কলা নিয়ে নেবো তবুও আগে গ্রাম দেখে বাড়ি ফিরবো।
– ঠিক আছে চলো তবে আজ আমার সাথেই তোমরা ঘুরবে।

মুনিফের কথা শেষ হওয়াত আগেই বজ্রকন্ঠে ভেসে এলো আফীফের গলার আওয়াজ।
– তার দরকার নেই মুনিফ।তুই বরং আব্বা আর দাদাজানকে নিয়ে বাড়ি যা।
– কিন্তু
– কোন কথা নয় বাড়ি যেতে বলেছি বাড়ি যা।

মুনিফ আফীফের সাথে তর্ক করার সাহস আর পেলো না।সোজা মাথা নুইয়ে গাড়ির দিকে হাটা শুরু করলো।

—-
গ্রামের সরু পাকা রাস্তায় সাই সাই করে ছুটে চলছে গাড়ি।ড্রাইভিং সিটে আফীফ আর পাশেই কায়দা করে কেইনকে বসিয়ে দিয়েছে সে।পেছনে তুন্দ্র এবং সেহেরিশ।

– এই আমার খিদে পেয়েছে কেইন।কিছু একটার ব্যবস্থা কর দ্রুত।
সেহেরিশের কথায় তাল মেলালো তুন্দ্র।সবার সম্মোতিতে আফীফ সল্প পরিসরের ছোট একটি হোটেলের সামনে গাড়ি থামায়।আফীফকে দেখেই দ্রুত সেই দোকানের মালিক বেরিয়ে আসে।

– আরে ছুডো ভাইজান।এহানে কি মনে কইরা?
– আমাদের কিছু খাওয়ার লাগবে।দুপুরের আইটেম কি?
– ভাত,ডাল,মাংস,ভর্তা। চাইলে ভুনা খিচুড়ি ও আছে।
আফীফ ঘাড় ঘুরিয়ে তুন্দ্র এবং কেইনের দিকে তাকায়,
– ভুনা খিচুড়ি চলবে?
– চলবে মানে দৌড়াবে।
তুন্দ্রের সম্মোতিতে আফীফ ভুনাখিচুড়ি সাথে মাংস অর্ডার করলো।অবশেষে খাওয়ার আসায় সবাই গাড়িতে বসে গোগ্রাসে গিলতে থাকে।কিন্তু বিপত্তি ঘটলো সেহেরিশের বেলায়।

খিচুড়ি মাংসে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ স্থির নয়নে তাকিয়ে রইলো সেহেরিশ।
– এ মা এগুলো আমি খাবো কি করে?সব অয়েলি ফুড তেলে চিপচিপে করছে।
সেহেরিশের এমন নাক ছিটকানি কথায় ধমকে উঠে তুন্দ্র।
– জমিদারি পরে দেখাবি আগে পেট শান্তিকর।কি সব ডায়েট ফায়েট করিস।দুইদিন পর কঙ্কাল হিসেবে বিবেচনা করা হবে তোকে।আগামী বছর সাইন্স ল্যাবে তোকে খুজে পাবো আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর।আজ কাল সব কাউয়া গুলা ডায়েট করে খাদ্যকে কুখাদ্য বানিয়ে ছাড়ছে।
এক লোকমা খিচুড়ির সাথে কাঁচা মরিচের এক কামড় নে দেখবি অমৃত লাগবে।
– ট্রায় করবো?
– অবশ্যই।

তুন্দ্র আর সেহেরিশের কথায় চোখ ঘুরিয়ে তাকায় আফীফ।সে যানে সেহেরিশ ঝাল,অয়েলি ফুড খায় না।কিন্তু যা পারে না তা করার দুঃসাহসিকতা দেখে আফীফ কিঞ্চিৎ হাসে।
– মিস সেহেরিশ আপনার ঝাল সহ্য হয় না। তবে এখন মরিচ মুখে নেওয়া কি ঠিক হবে?
– কে বলেছে আমার ঝাল সহ্য হয় না?
– আম্মা কথার কথা বলেছেন।
– এখন সহ্য হবে এখন আমি খেতে পারবো।

সেহেরিশের দাম্ভিক কন্ঠে প্রত্যুত্তর করলো না আফীফ।বরং চুপচাপ নিজের খাওয়ার একে একে মুখে তুলে নেয়।কিছুক্ষণ পর তার কানে হাসে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কারো কান্নার আওয়াজ।কয়েক সেকেন্ডে কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলে তড়িৎ গতিতে পেছনে ঘুরে তাকায় আফীফ।

সেহেরিশ তীব্র ঝালের চোটে মুখে হাত দিয়ে চাপা আর্তনাদ করতে থাকে।তার অবস্থা দেখে কেইন অস্থির ভঙ্গিতে এগিয়ে আসে,
– হোয়াটিস ইউর প্রবলেম সেহেরিশ?
– কিরে ঝাল লাগছে এই নে পানি নে।

তুন্দ্র পানির বোতল এগিয়ে দিতে গেলেই ছো মেরে পানির বোতলটি কেড়ে নেয় আফীফ।
– খবরদার কেউ পানি দেবে না।আমি দেখতে চাই কতটা ঝাল খেতে পারে সে।এই মেয়ে বাকি মচির দুইটা শেষ করো।
ঝালের দরুনে সেহেরিশের চোখের পানি নাকের পানি প্রায় এক হয়ে গেছে।আফীফের এমন ধমকের কথায় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে বেল্লিক দৃষ্টিতে।

– কি হলো তাকিয়ে আছো কেন?দ্রুত শেষ করো।
-ম..মানে?
– প্লেটের খিচুড়ি আর কাচা মরিচ সবটা শেষ করো।একবার যখন বলেছো তুমি পারবে তখন তোমার করতেই হবে।
– ম..মানে?
– আমি বাংলা বলেছি আশা করি সব বুঝতে পারছো?
– আমার পানি চাই!
– নো নেভার আগে শেষ করো।
আফীফ আর সেহেরিশের তর্কে সবাই বিমূঢ় হয়ে যায়।তারা মুখ ফুটিয়ে কিছু বালার আগেই আফীফের ইশারায় সবাই চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।

অর্ধেক খাওয়ার শেষ করতেই সেহেরিশের যখন অসাড় অবস্থা তখনি আফীফ তার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দেয়।স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– সব সময় ত্যাড়ামো আমার পছন্দ নয়।যা পারো না তা করার সাহস না দেখানো ভালো।ইমম্যাচিউর বাচ্চাদের মতো আচরণ।

আফীফ তার কথা শেষ করেই বড় বড় পা ফেলে হেটে চলে যায়।এদিকে কেইন এবং তুন্দ্র দুজনেই আহাম্মক বনে সেহেরিশের দিকে তাকিয়ে আছে।

ঘুরাঘুরি প্রায় শেষ পর্যায়ে সন্ধ্যার পাখিরা তাদের নীড়ে ফেরার তাড়ায় ছুটে চলছে।মাগরিবের আযান দেওয়ার সময় হয়েছে।সেহেরিশ সহ বাকিরা একটি পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে।পুকুর পাড়ের চারিদিকেই লম্বা লম্বা নারিকেল গাছের সারি তাতে যেন সৌন্দর্য দিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।সেহেরিশ জুহির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছে তার সাথে কেইন।এদিকে তুন্দ্র সন্ধ্যার আকাশের বহুরূপী সজ্জার ছবি তুলতে ব্যস্ত।আফীফ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে আলাপচারিতা করছে।হুট করেই সে সেহেরিশের দিকে তাকালে বিরক্তে কপাল কুচকে যায়।

– মিস সেহেরিশ আপনি কি সাতার জানেন?পুকুর পাড়ের এত কিনারায় কি করছেন?সরে দাড়ান।

আফীফের কথায় পাত্তা দিলো না সেহেরিশ সে এখনো জুহির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।তার কাছে পাত্তা না পেয়ে বিষয়টি আফীফের কাছে অপমান বোধ লাগে যার দরুনে সেখান থেকে কিছুটা দুরে সরে এসে ফোন কলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।তখনি তার কানে আসে সেহেরিশের চিৎকার।মুহূর্তে কেইন এবং তুন্দ্রের চাপা আর্তনাদে পেছনে ঘুরে তাকায় আফীফ।এতক্ষণ সে যা ভেবেছিল ঠিক তাই হয়েছে বেচারি সেহেরিশ পানিতে পড়ে ধাপাধাপি করছে।আফীফ দ্রুত এগিয়ে এসে কেইনের সামনে দাঁড়ায়।

– আমরা কেউ সাঁতার জানিনা।দ্রুত সেহেরিশকে তোলার ব্যবস্থা করো।
– একটু আগেই বারণ করেছিলাম আর এখন!

আফীফ কথা না বাড়িয়ে দ্রুত পানিতে ঝাপ দেয়।তীব্র শীতের কারনে পানি গুলো যেন বরফের মতো ঠান্ডা।কয়েক মিনিটেই সেহেরিশ এবং আফীফ দুজনের কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়।আফীফ দ্রুত সেহেরিশকে নিয়ে গাড়িতে বসে।বিড়াল ছানার মতো আফীফের কোলে কুন্ডলী পাকিয়ে নিভু নিভু চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে সেহেরিশ।

দেওয়ান বাড়িতে আজ হইচই কান্ড।রাত যত গভীর হচ্ছে সেহেরিশের জ্বর তত বাড়ছে।আফীফের জ্বরের তীব্রতা বেশি হওয়া স্বত্তেও সে চুপচাপ সবার সামনে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করছে।কেননা একবার যদি বাড়ির সদস্যরা যানে আফীফের জ্বর হয়েছে তবে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নেবে তার দাদাজান।চুপচাপ নিজের রুমে পায়চারি করে থার্মোমিটারটা হাতে তুলে নেয়।কিছুক্ষণ মুখে রেখে জ্বর কতটা আন্দাজ করতে গেলে নিজেও মুষড়ে যায়।জ্বরের পরিমান ১০২°।

আফীফ বিরক্ত মনে গাঢ় করে শ্বাস ছাড়লো।ঔষধের বক্স থেকে দ্রুত ওষুধ নিয়ে মুখে পুরে নেয়।তখনি তার রুমে প্রবেশ করে সেঁজুতি,

– আব্বা কই তুই?
– আম্মা বলো,
– তোর তাকিয়ার জ্বর তো কমছে না আরো বাড়ছে।
– ডাক্তার আঙ্কেল কি বলেছেন যাওয়ার আগে?
– ওষুধ নিয়ম অনুযায়ী খেতে আর ঘন ঘন জল পট্টি দিতে।
– তো তাই করো।এই মূহুর্তে এত রাতে শহরের ডাক্তার আনা পসিবল না অলরেডি দশটা বেজে গেছে।তার বাড়ির সবাই কোথায়?
– তার মা,ভাই,ফুফি সবাই কাঁদছে।সবাই সেই রুমেই আছে।
– এত মানুষের ওই রুমে কী? শুধু মাত্র তিন জন থাকবে।আন্টি ফুফি আর তুমি থাকবে বাকিদের যার যার রুমে চলে যেতে বলো।
– আমি বলেছিলাম কেউ কথা শোনেনি।
– মুনিফকে বলো আমার নির্দেশ ব্যস বাকি কাজ হয়ে যাবে।এবার তুমি যাও।
– কিন্তু তোর গলা কাঁপছে কেন আব্বা?

সেঁজুতি সন্দেহ নিয়ে আফীফের হাত ধরতে এলেই কয়েক কদম পিছিয়ে যায় সে।
– কিছু হয়নি আম্মা তুমি যাও।
– আমি জানি তোর জ্বর চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে গেছে।কথা আমার শুনবিনা তাও জানি আমি আমান কে পাঠাচ্ছি তোকে জল পট্টি দিয়ে দেবে।
– কাউকে পাঠানো দরকার নেই।আমার কথা জানলে বাড়িতে বাকি হল্লা এখনি শুরু হবে।
– চুপ কর! আমি আমান কে পাঠিয়ে দিচ্ছি কেউ জানবেনা।

রাত বারোটার পর সেহেরিশের জ্বরের তীব্রতা কমে যায়।এদিকে সবার কান্নাকাটিতে বিরক্ত হয়ে সবাইকে রুম থেকে চলে যেতে বলে।সুস্থতার অজুহাতে রাতে তার সাথে থাকতে দেয়নি কাউকে।কিন্তু কে জানতো মধ্যে রাতে জ্বরটা আবার তার তীব্রতা নিয়ে হাজির হবে।

মধ্যে রাতে ধীর পায়ে আফীফ সেহেরিশের রুমে প্রবেশ করে।দরজাটা বন্ধ করে হাটু মুড়িয়ে সেহেশের পাশে বসে কপালে হাত দিতেই নিজেও আঁতকে ওঠে।তার নিজের জ্বর নিয়ন্ত্রণে এলেও সেহেরিশের জ্বরটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে।তাই দ্রুত বিছানার পাশে টেবিলে রাখা বাটি থেকে জল পট্টি নিয়ে সেহেরিশের মাথায় দিতে থাকে।

– সেহেরিশ ওও সেহেরিশ।
– হু
– শুনতে পাচ্ছো তুমি?
আফীফের কথায় সেহেরিশ পিট পিট চোখ খুলে তাকায়।আফীফকে দেখে কোন প্রতিক্রিয়া না করে বরং চুপচাপ আবার চোখ বন্ধ করে নেয়।
– কষ্ট হচ্ছে বুঝি?আগেই বলেছিলাম কিনারায় কি করছো তুমি পড়ে যাবে শুনলে না।এখন দেখো আমারো জ্বর তোমারো জ্বর।তোমার অসুস্থতা যে আমায় অসাড় করে দিচ্ছে তা কি তুমি বুঝবে?না বুঝবেনা।

সেহেরিশ কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না চুপচাপ আফীফের কথা গুলো শুনতে থাকলো।আফীফ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে জ্বরের তাড়নায় সেহেরিশের সৎবিৎ নেই।
– তাকিয়া..
– হু
আফীফ সেহেরিশের প্রতিক্রিয়ায় কিঞ্চিৎ হাসে।বহু বছর পর সে তাকিয়া হিসেবে সেহেরিশের সঙ্গে কথা বলছে।
– আমার কথা মনে পড়তো তোমার।রাগী উগ্র আফীফ দেওয়ানের কথা।
– হুম অনেক বার।
– পালিয়ে গেলে কেনো?
– তুমি ধমক দাও।আদর কম করো।
– তবে কে বেশি আদর করে?
– ফুফি,পাপা,মামনি।
-আড়ালে যে ভালোবাসি যানো তুমি?
– উহু’হ
– জানি তো জানবে না।

সেহেরিশের ঠোঁটে জড়িয়ে আসা কথায় আফীফের বার বার হাসি পাচ্ছে।তবুও চুপ থেকে আলতো করে সেহেরিশের হাতের তালুতে হাত রাখে।তাকে অবাক করে দিয়ে সেহেরিশ তার হাতটা শক্ত করে আকড়ে ধরে।তাতে আফীফের ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।
– তাকিয়া আনোয়ার সেহেরিশ ভালোবাসো কাউকে?
– না!
– কেইন কে?
– না
সেহেরিশের চোখ বার বার বুজে আসছে।তবুও আফীফের প্রতিটি কথার অস্পষ্ট ভাবে জবাব দিয়ে যাচ্ছে সে।আফীফ সেহেরিশের হাত টেনে গাঢ় করে চুমু খায়।তাতে সেহেরিশ পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়।

– আদর দেখাতে হবে না আমায় পানিতে ছুড়ে ফেলে এখন আদর দেখাচ্ছেন।
– আজব!আমি কখন তোমায় পানিতে ছুড়ে দিলাম।
সেহেরিশ প্রত্যুত্তর করলো না।ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে শুয়ে পড়লো তার আচরনের কারন আফীফ কিছুই বুঝলো না।তবুও অন্য পাশ ফিরে সেহেরিশের পাশে বসে পড়লো।সেহেরিশের চুলে মুখ ডুবিয়ে গাঢ় করে শ্বাস টানলো আফীফ।তার শুষ্ক ওষ্ঠে বৃদ্ধা আঙুল বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে,
– ছেড়ে যাবে আর আমায়?
– কদর করলে থেকে যাবো!
– সত্যি?
– হুম।
আফীফ কিঞ্চিৎ হেসে সেহেরিশের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়।সেহেরিশ তাতে কিঞ্চিৎ চমকালেও প্রতিক্রিয়া দেখালো না।তার সম্মোতিতে আফীফ গাঢ় করে কপালে তার অধর ছোঁয়ায়।
– ছেড়ে যাবি?
– না।
– কসম ছেড়ে যাবি না।
– কখনো না।
সেহেরিশের প্রত্যুত্তের আফীফের আট বছর আগে বুকে চাপা পড়া পাথরটা যেন সরে গেছে।আনন্দের তাড়নায় চোখের কোনে জল চিকচিক করছে।সেহেরিশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে আফীফ আবারো তার অধর ছুঁয়ে দেয়।
– তোমায় ভালোবাসলে আমি কি পাবো আফীফ দেওয়ান?
– আমার বাগানের সমস্ত ফুল তোমার করে দেবো ফুলপরি।
আফীফের উওরে সেহেরিশ শব্দ করে হেসে দেয়।

বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা কাটিয়ে আফীফ তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
– আট বছর আগে তোমায় এই বাড়ি থেকে বের হতে কে সাহায্য করেছিল তাকিয়া?
– পারভিন আন্টি।
– ওহ।ঘুমিয়ে যাও এবার।অনেক রাত হয়েছে।

সেহেরিশ চুপচাপ চোখ বন্ধ করে নিলো।আর তার দিকে তাকিয়ে মোহে আকৃষ্ট হয়ে তাকিয়ে আছে আফীফ দেওয়ান।চারদিক থেকে ভেসে আসছে ফজরের আযানের ধ্বনি।পাখিদের কিচিরমিচির কলরবে মুখরিত হয়ে উঠছে আরেকটি সকাল।আফীফ তার মাথাটা সেহেরিশের কানের সামনে গুজে বিড়বিড় করে বলে,

– তোমার শহরের ভোর তবে আজ আমায় নিয়ে শুরু হোক!
—-

অন্যদিকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কেউ একজন।হিংসাত্মক অনুভূতি নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে সে।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here