#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ৬
#ফারজানা_আক্তার

সবাই এসে দেখে শোভা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আদিবা দাঁড়িয়ে আছে যে টেবিলে গ্যাসের চুলা রাখা আছে সেই টেবিলে। রাহিল আদিবার সামনে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে “কি হচ্ছে এসব আদিবা? তুমি কি ছোট বাচ্চা? কমনসেন্স নেই তোমার?

আদিবা কিছু বলেনা। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চোখেমুখে প্রচুর ভয় দেখা যাচ্ছে আদিবার। রোকেয়া বেগম রাহিলকে বলে ” আহ্ বাবা কেনো বকছিস মেয়েটাকে শুধু শুধু? দেখ তো ভয়ে আছে মেয়েটা, দেখি নামা ওকে টেবিল থেকে?

~আমি কেনো নামাবো? যেভাবে উঠছে সেভাবে নামবে।
শক্ত গলায় বলে রাহিল, মনে মনে ভাবে “রেশমাকে প্রমিস করেছি আদিবাকে আর কখনো স্পর্শ করবো নাহ।

নিহান গিয়ে নামায় আদিবাকে, জোরে জোরে শ্বাস নেই আদিবা। সবাই জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, কেন সে টেবিলের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আদিবা কিছু না বলে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে, শোভা এগিয়ে এসে আদিবার পাশে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বলে “ইঁদুরের ভয়ে ভাবি এক লাফে টেবিলে উঠে গেছে, দুই টা ইঁদুর নাকি ভাবির দিকে এগিয়ে আসছিলো আর সেই ভয়ে ভাবি “আর কিছু বলতে পারছেনা হাসির জন্য শোভা। রমজান সাহেব সহ সবাই কুটকুট করে হাসতে লাগলো। কিন্তু হাসি নেই রাহিলের মুখে, বেশ গম্ভীর হয়ে আছে রাহিল, আদিবা রাহিলের দিকে তাকাতেই রাহিল হনহন করে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।



রাহিল বেলকনিতে বসে বসে ফেসবুকে নিউজফিড দেখছিলো এমন সময় আদিবা এসে কাঁপা কাঁপা হাতে কফির মগ টা এগিয়ে দেয় রাহিলের দিকে, রাহিল শান্তভাবেই জিজ্ঞেস করে “এতো দেরি হলো কেন?

” আসলে আমি মানে……
~থাক আর তোমার আসলে মানে বলতে হবেনা, যাও সকালে যে ফোন দিয়েছিলাম সেটা নিয়ে আসো।

আদিবা বাধ্য মেয়ের মতো ফোনটা এনে রাহিলের হাতে দেয়। রাহিল কফি খেতে খেতে সব শিখিয়ে দিলো আদিবাকে, আদিবা খুব খুশিমনে শিখে নিলো সব।



খাবার টেবিলে সবাই বসে রাতের খাবার খাচ্ছিলো, আদিবা তুলিকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে এসে সেও বসলো সবার সাথে। রমজান সাহেব বলল “আদিবা মা তোমার কি এখানে ভালো লাগছে? কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো তোমার?

” নাহ আব্বু ঠিক আছি আমি।
রাহিল খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আঁড়চোখে তাকায় আদিবার দিকে।

“রাহিল
রমজান সাহেব মুখে ভাত পুরে দিয়ে ডাকলো রাহিলকে।
” জি আব্বু।
মাথা তুলে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে রাহিল।
“আগামীকাল অফিসে যাওয়া লাগবেনা তোর, তুই বরং আগামীকাল বউমা কে নিয়ে একটু ওর বাবার বাসা থেকে ঘুরে আয়। মনটা ফুরফুরে থাকবে ওর।
” বাবা নিহান তো ফ্রী আছে, নিহান নিয়ে গেলে হবেনা?
“নাহ হবেনা, আদিবা নিহানের নয় তোর স্ত্রী, তাই তোকেই নিয়ে যেতে হবে।

আর কিছু না বলে দ্রুত খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায় রাহিল, আদিবা এতক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিলো।
খাওয়া শেষে আদিবা রুমে এসে দেখে রাহিল নেই, বেলকনি ওয়াশরুম সব জায়গা দেখেছে, কোথাও নেই।
কোথায় গেলেন উনি, সবসময়ই তো বেলকনিতে থাকেন তবে আজ কোথায় গেলো। ছাদে নয় তো, একবার গিয়ে দেখে আসি নয়তো মনটা ছটপট করবে ভীষণ।



আদিবা ছাদে গিয়ে দেখে রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাহিল।

“বিশ্বাস করুন আমি রেশমা আপুর জায়গা নিতে চায়না, শুধু নিজের জন্য আলাদা একটা জায়গা বানাতে চায় আপনার মনকুটিরে। আমি জানি আপনি রেশমা আপুকে অসম্ভব ভালোবাসেন, আমি চায়না সেই ভালোবাসার ভাগ, শুধু এইটুকু চায় যে আমাকেও একটু ঠাঁই দিন আপনার হৃদমাজারের কোনো এক কোণে।

রাহিল কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে পেঁছনে ফিরে তাকায় আদিবার দিকে, পানি টলমল করছে আদিবার চোখে। রাহিল কিছু না বলে আবার আকাশের দিকে তাকায়।
আদিবা আবারো বলে “থাক আপনার ইচ্ছে না করলে যেতে হবেনা আমাদের ভাঙাচোরা বাসায়,, আমি আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবোনা,, ঘুমাতে আসুন

বলেই আদিবা রুমে চলে যায়। রুমে এসে তুলিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরে আদিবা। কিছুক্ষণ পর রাহিল এসে বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে সোফায় চলে যায়, আবার চোখ যায় তুলির দিকে। তুলির কপালে আলতোভাবে একটা চুমু দিয়ে আবার সোফায় গিয়ে শুয়ে পরে রাহিল। আদিবার চোখেমুখে কান্নার দাগ লেগে আছে, চোখ এড়ালো না রাহিলের।



পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে আদিবার, চোখ ডলতে ডলতে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে যায় আদিবা। ওয়াশরুম থেকে এসে বেলকনিতে চলে যায় সে, সকালের ঠান্ডা বাতাস গায়ে না মাখলে যেন তার দিন শুরু হয়না তবে আজ ওড়না নিতে ভুলেনি।
কিছুক্ষণ পর তুলির কান্নার শব্দ পেয়ে দৌড়ে রুমে আসে আদিবা, দেখে রাহিল আগেই গিয়ে কোলে তুলে নেই তুলিকে, আদিবা সামনে আসতেই ওর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তুলি আর কান্নাও বন্ধ হয়ে যায়, রাহিল আদিবার আর বুঝতে বাকি রইলো না তুলি কেন কান্না করছিলো, চোখ মেলে আদিবাকে পাশে দেখতে না পেয়েই তুলির এতো কান্না।

রাহিল কিছু না বলে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়। আদিবা তুলিকে নিয়ে নিচে চলে যায়।



রাহিল অফিসে যেতে চাইলেও রোকেয়া যেতে দেয়না, আদিবা অনেক বলেছে সে নিহান আর শোভাকে নিয়ে চলে যেতে পারবে কিন্তু কার কথা কে শোনে, রোকেয়া বেগম এর একটাই কথা রমজান সাহেব যেটা বলেছে সেটাই হবে, রাহিলকেই যেতে হবে আদিবার সাথে।

তুলি তো মহা খুশি বেড়াতে যাবে, শোভা তুলিকে নিয়ে যায় তৈরি করে দেওয়ার জন্য। আদিবাও যায় তৈরি হতে।
হালকা বাদামি রংয়ের একটা গাউন পড়েছে আদিবা, জামার রংয়ের সাথে যেন গায়ের রং মিলে গেছে।
আদিবা জামা পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই রাহিলের চোখ আঁটকে যায় ওর দিকে তাকিয়ে। নিজের অজান্তেই রাহিল বলে “নিদারুণ ”

আদিবা রাহিলের দিকে না তাকিয়েই আয়নার সামনে গিয়ে তৈরি হয়ে নেই, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখে কাজল, ব্যাস এইটুকুতেই অপূর্ব লাগছে আদিবাকে। চুলগুলো খোঁপা করে নেই আদিবা, বেশ গরম পরছে এই কয়দিন।

শোভা তুলিকে কোলে নিয়ে রুমে আসতেই বলে “এমা… ভাবি তুমি খোঁপা করছো কেনো? ভাইয়া তো খোলা চুল পছন্দ করে।
” আমাকেই তো পছন্দ করে না, আমার চুল তো অনেক দূরের কথা।
বিড়বিড় করে কথাটি বলে আদিবা, শোভা খেয়াল করেনি আদিবার কথাটি কিন্তু রাহিল ঠিকই খেয়াল করেছে।

তুলি শোভার কোল থেকে নেমে বিছানায় বসে পুতুল দিয়ে খেলতে লাগলো।
শোভা চলে যেতে নিয়ে আবার পেঁছন ফিরে আদিবার দিকে তাকিয়ে বলল “ভাবি আপনাকে তো আম্মু শাড়ী একটা দিয়েছে ওখানে পড়ে যাওয়ার জন্য তবে আপনি এটা কেন পড়েছেন?

” আসলে আমি তো শাড়ী পরতে পারিনা।
আমতাআমতা করে বলে আদিবা।
“তাতে কি ভাইয়া তো পারে, ভাইয়া ভাবিকে সুন্দর করে শাড়ীটা পরিয়ে দাও নয়তো কিন্তু আম্মু ভীষণ বকবে।

~শোভা আপু তুমি এখনো তৈরি হওনি কেন? তুমি না গেলে কিন্তু আমিও যাবোনা।
বায়না করে বলে আদিবা।
~এই তো ভাবি এখনই তৈরি হতে যাচ্ছি, এই পিচ্চিটারে তৈরি করতেই তো যত সময়।
হাসে দুজনে।

এটা বলেই শোভা চলে যায় সেখান থেকে আর তুলিকেও নিয়ে যায় আবার।

রাহিল রাগী চোখে আদিবার দিকে তাকাতেই আদিবা বলে “থাক লাগবেনা, এমনিতেই শাড়ী পড়ে হাঁটতে কষ্ট হয় আমার। আমি নিচে আছি, আপনি আসুন।
এটা বলেই আদিবা রুম থেকে বের হতে নিলেই রাহিল বলে উঠে ” আর এক পা-ও এগোবেনা, দরজা বন্ধ করে আসো।
ভয়ে ঢুক গিলে আদিবা,

“কি বলছি কানে দিয়ে যায়না? দ্রুত দরজা বন্ধ করে শাড়ীটা বের করো।
একটু চিল্লিয়ে বলে রাহিল কথাটি। ভরকে যায় আদিবা।

আদিবা দরজা বন্ধ করে কাবাড থেকে শাড়ীটা বের করে।
” যাও ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে আসো ওয়াশরুম থেকে।
আদিবা সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। শাড়ী রাহিলের হাতেই রয়ে গেছে। ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে গায়ে একটা ওড়না জড়িয়ে রুমে আসে আদিবা, রাহিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে, পুরো শরীর কাঁপছে তার।

“ওড়না সরাও।
“এ্যাঁ
” ষ্টুপিড, ওড়না না সরালে শাড়ী পরাবো কিভাবে?
দাঁত গিজগিজ করে বলে রাহিল।
“আগে ওইদিনের মতো চোখ বাঁধুন।
” তার প্রয়োজন নেই।
রাহিলের কথাটি শুনেই রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখ করে রাহিলের দিকে তাকায় আদিবা।
রাহিল কিছু না বলে আদিবার ওড়না টান দিতেই______

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here