“#অদ্ভুত__মুগ্ধতা ”
পর্ব ২০
মিশু মনি
.
দুভাইয়ের মধ্যে থেকে একজন কে বেছে নেয়াটা খুবই কঠিন।এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই হবে যেকোনো উপায়ে!
মিশুর মাথায় হঠাৎ একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো।এই টেনশন আর ভালো লাগছে না।এখান থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার একটা ভালো উপায় পাওয়া গেছে।মিশুকে পাগলের অভিনয় করতে হবে।সবাই তো জানে ওর মেন্টাল ডিসঅর্ডার আছে।কাজেই পাগল হলে সেটা অস্বাভাবিক নয়।এটা করার ফলে কে কেমন ভালোবাসে সেটাও বোঝা যাবে আর দারুণ মজাও হবে!
আইডিয়াটা মন্দ নয়।মিশুর ব্যাপার টা ভাবতেই আনন্দ হতে লাগলো।এমনি তেই ঢঙী হিসেবে মিশুর তুলনা নেই।পাগলের অভিনয় করাটা খুব বেশি কষ্টের হবেনা।তাহলে এটাই করতে হবে।তাহলে অন্তত এই টেনশন থেকে রেহাই মেলার সম্ভাবনা আছে!
মিশু দ্রুত ভেবে মনে মনে একটা নকশা একে ফেললো।প্রথমে শুরু করতে হবে মৈত্রীকে দিয়ে।বেচারা তো পাগলের ডাক্তার,সত্যিকার পাগল আর নকল পাগলের মধ্যে তফাৎ টা বুঝতে পারে কিনা দেখা যাক।মিশু নেহাত কাচা অভিনেত্রী নয়।এবারে ভালোভাবে আয়নাবাজি করতে হবে!
ভাবামাত্রই মিশু মৈত্রীর রুমে ছুটে আসলো।মৈত্রীকে দেখেই ওর কাছে এসে বলল,মুত্রী সোনা কি করছো?
এমন কথা জীবনে বোধহয় কারো মুখে শোনেনি মৈত্রী।খানিক টা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,কাজ করছি।
মিশু ঢঙ্গী ঢঙ্গী গলায় বলল,আমিও কাজ করবো।
– করবে? এই নাও এই পেপারস গুলো পৃষ্ঠা অনুযায়ী সাজাও।
মিশু কাগজগুলো হাতে নিয়ে দেখল এলোমেলো পেজ গুলো সিরিয়াল অনুযায়ী গোছাতে হবে।কিন্তু ও তো এখন পাগল।আর পাগলের কাজই হচ্ছে পাগলামো করা।সবগুলো কাগজ উলটে উলটে দেখে তার মধ্যে সুন্দর প্রিন্ট করা কপিটা নিয়ে কাগজ টা দুহাতে দলাই মলাই করলো।তারপর পুরোটা মুখে পুরে দিলো।এমন কাজ দেখে মৈত্রি একেবারে থ! মিশু দুষ্টু হলেও অনেক বুদ্ধিমতী।দরকারি কোনোকিছু এভাবে নষ্ট করবে কেন?
মিশু কামড়ে কামড়ে কাগজ টা খেতে খেতে বলল,উফ কি মজা খেতে।খাবে মুত্রী সোনা?
এবারে মৈত্রী বেশ ভড়কে গেলো।মিশু এমন ভাবে কথা বলছে কেন? কি হলো ওর হঠাৎ? ও কি মজা করছে?
মিশু মৈত্রীর শার্টের কলার টেনে ধরে বলল,এই বাজে শার্ট টা পড়েছ কেন?
– এটা বাজে শার্ট?
– অবশ্যই বাজে শার্ট।গু কালারের সব জিনিস ই দেখতে কুৎসিত।
– কি কালার?
– গু কালার,গু।খুকে ফেলুন এটা।কালকের কালো শার্ট টা গায়ে দিন।ওটা পড়লে আপনাকে বেশ সুন্দর লাগে।একদম ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের মত।
বলেই ঝুনঝুনির মত শব্দ করে হাসতে লাগলো।কি হচ্ছে এসব? মৈত্রী পুরোপুরি থ হয়ে গেছে ব্যাপার টায়।মিশু ওর কলার ধরে টানছে আর বলছে, কি বিশ্রী শার্ট।গু কালার কেউ পড়ে নাকি?
মৈত্রী ভয়ে ভয়ে বলল,মিশু তুমি ঠিক আছো?
– সন্দেহ আছে নাকি? আমি ঠিক নেই।আমি ফিদা হয়ে গেছি।
– মানে!
– তোমার প্রেমে ফ হ্রস্ব ই কারে ফি,দ এ কারে দা।পুরাই ফিদা।
মিশুর কথাবার্তা কেমন অসংলগ্ন লাগছে।এভাবে কথা বলার মত মেয়ে ও নয়।কোথাও একটা সমস্যা নিশ্চিয় ই হচ্ছে।
মিশু মৈত্রীর শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,আরে খুলে ফেলুন তো।
এবারে আর স্থির থাকতে পারলো না মৈত্রী।মিশুকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল,আর ইউ ওকে মিশু?
– আই এম পারফেক্টলি ওকে।ইউ আর এবনরমাল।এত করে বলছি তাও শুনছো না।প্লিজ ওপেন ইয়োর শার্ট।
মৈত্রী কিছু না বলে দ্রুত শার্টের বোতাম খুলতে লাগল।মিশু মুখ থেকে কাগজের ছোবড়া গুলো বের করে মৈত্রীর মাথার উপর ছিটিয়ে দিলো।মিশু স্বাভাবিক নেই,কোথাও একটা গোলমাল হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।কথাটা ভাবতে ভাবতে মৈত্রী কালো শার্ট টা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।মিশুর খুবই হাসি পেলো।মৈত্রীর মুখ একদম শুকিয়ে গেছে।তারমানে অভিনয় টা বুঝতে পারেনি।বুঝতে পেরেছে কিনা সেটাও পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
মিশু ছুটে এসে বাথরুমের দরজায় জোরে এক লাথি কষালো।শব্দ শুনে মৈত্রী একটু ভয় পেয়ে গেলো।মিশুর সত্যিই মাথায় গণ্ডগোল হয়েছে।কথাটা ভেবে মৈত্রী বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে মিশুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নরম গলায় বলল,তোমার কি হয়েছে মিশু? কোনো সমস্যা?
– পুরাটাই সমস্যা।আমি না কিছু ভাবতে পারছি না।সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে মুত্রী।
মৈত্রী আরো নরম গলায় বলল,আমিতো আছি।কিচ্ছু ভেবো না।
– বাহ! এই কালো শার্টে তোমাকে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল ছাগল লাগছে।
– হ্যা মিশু।আমি হচ্ছি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা।
– তিন নম্বর নয়,এক নম্বর।
বলেই হাসতে লাগলো।মৈত্রীও হেসে উঠল মিশুর কথায়।মেয়েটার সত্যিই কি কোনো গণ্ডগোল হলো মাথায়? হলেই বা ক্ষতি কি? ভারি মজার মজার কথা বলছে।শুনতে দারুণ লাগছে।পাগল হলেও ওকে সুন্দর দেখাবে?
মিশু একটু ঢং করে দুহাতে নিজের মাথা চেপে ধরে বলল,ভাইয়া।আমার খুব মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে।আমি কিচ্ছু ভাবতে পারছি না।সবকিছু কেমন যেন লাগছে।উফফ অসহ্য!
মৈত্রী মিশুর কাঁধে হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,কিচ্ছু হবেনা।আমিতো আছি।
– আমি কি মরে যাবো?
– না।বড়জোর পাগল হয়ে পাবনায় থাকতে হবে।এর বেশি কিছুই হবেনা।কিন্তু আমি তোমাকে আমার বুকের কাছেই রাখবো, কোথাও যেতে দিবো না।
মিশু অভিমানী গলায় বলল,আমাকে পাগল সাজালেন?
– তাই তো মনে হচ্ছে।
– কই আমার তো মনে হচ্ছে না।
– পাগল রা কি বুঝতে পারে সে পাগল? কখনোই পারেনা।তুমি পাগল হতেও পারো, সেই চান্স আছে।কিন্তু পাগল হলেও তাতে তোমাকে দারুণ মানাবে।
– মানে!
– তুমি এমন একটা মেয়ে,যাকে আমার সব অবস্থাতেই ভালো লাগবে।
মিশু চমকে উঠল কথাটা শুনে।সত্যিই খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারে মৈত্রী! হয়ত ওকে ভালোবাসে বলেই এত সুন্দর করে বলে!
মিশু যথাসম্ভব চিন্তিত হয়ে বলল,আমি কি সত্যিই পাগল হয়ে যাবো?
– না,পাগলী হয়ে যাবা।
– পাগলী হয়ে গেলেও আপনি আমায় বিয়ে করবেন?
– দূর পাগলী।এ আর এমন কি? তুমি পুরোপুরি কোমায় চলে গেলেও আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
– কেন?
– কারণ আমার বিশ্বাস,আমি আমার সবটুকু দিয়ে তোমাকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারবো।তুমি পাগল হও আর যাই হও,আমাকে ভালবাসার সুযোগ দিও।তোমার ভালবাসা না পেলেও চলবে,আমি একাই ভালোবেসে সবটা পুষিয়ে দিবো।
মিশুর বিস্ময়ের সীমা নেই।কতটা ভালোবাসলে এত সুন্দর করে ভাবা যায়? ও অবাক হয়ে দেখল মৈত্রীর চেহারায় চিন্তার ছাপ থাকা সত্ত্বেও বেশ সুন্দর করে কথা বলছে।আসলেই তাই;মৈত্রীর খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে ঠিকই।কিন্তু মিশুর মুখে এমন আজগুবি কথাবার্তা শুনতে আর পাগলামি দেখতেই ভাল লাগবে মনে হচ্ছে।কেন যে মেয়েটাকে ওর এত ভালো লাগে! বুঝতে পারেনা মৈত্রী।
মিশু মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো ওর দিকে! সব অবস্থাতেই মিশুকে নিয়ে সুখী হওয়ার ক্ষমতা ওর আছে।মৈত্রিটা ওকে সত্যিই অদ্ভুত ভাবে ভালবাসে!
মিশু বলল,আমার খিদে পেয়েছে।ভাত খাবো আমি।
মৈত্রী বলল,আচ্ছা যাও খেতে বসো গিয়ে।আমি এখন আমার একজন স্যারের সাথে কথা বলবো তোমার ব্যাপারে।সন্ধ্যায় ওনার কাছে তোমাকে নিয়ে যাবো।দুজনে মিলে ভেবে চিন্তে তোমার ট্রিটমেন্ট করার ব্যবস্থা করবো।তুমি টেবিলে যাও,আমি আসছি।একটা মাথা ব্যথার ওষুধ নিয়ে আসছি।
মিশু এক পা এক পা করে হেটে বাইরে বেড়িয়ে আসল।ওর যা জানার দরকার তা জেনে গেছে ও।
মনে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে! এর আগে কেউ কখনো এভাবে সুন্দর করে ভালোবাসার কথা বলেনি ওকে।মৈত্রির প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো অনেক।মিশু পাগল হলেও নাকি ওর ভালো লাগবে! নিজের সবটুকু দিয়ে স্বাভাবিক করে তুলবে! বাব্বাহ!
★
বাইরে এসে দেখল মর্ম বারান্দায় বসে আছে।মিশু মনে মনে ভাবল,মর্ম’র কাছে গিয়ে একটু অভিনয় করা যাক।দেখি ওর রিয়েকশন কি হয়?
মর্ম মিশুকে দেখে বলল,খাইছো মিশু?
– হ্যা,কাগজ খাইছি।
– কি?
– কাগজ।খুব মিষ্টি খেতে।খাবা?
– নাহ।আমার সব খাবার হজম হয়না।
মিশু এগিয়ে এসে মর্ম’র পাশে বসতে বসতে বলল,আপনাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছি শুনবেন?
– হ্যা বলো।
– নিশিরাত,বাকা চাঁদ..
মর্ম ছাড়লো ঢুস পাদ..
বলেই মিশু হো হো করে হেসে উঠল।মর্মও হেসে বলল,হাও ফানি মিশু! দারুণ কবিতা! আমি ইমপ্রেসড।
– আরো লিখেছি, শুনবেন না?
– হ্যা অবশ্যই।
মিশু বলল,পাদে উরভুরি,
পাদে ভুড়ভুড়ি..
আঙিনা দিয়া,উঠান দিয়া
পাদ যায় ঠাকুরবাড়ি..
এবারও মর্ম জোরে জোরে হেসে উঠল।হাসতে হাসতে ঢলে পড়ে যাচ্ছে।মিশু খুব মজা করে কথা বলে তো!
মিশু বলল,আপনাকে হাসলে গাংগুয়ার মত লাগে।
– তাই নাকি!
মর্ম হাসছে আর ভ্রু নাচাচ্ছে।মিশুর জন্য মর্ম কতটা উদ্বিগ্ন হয় সেটা বুঝার জন্য ও দুহাতে নিজের মাথা চেপে ধরে বলল,খুব মাথা ব্যথা হচ্ছে।
– মাথা থাকলে ব্যথা করবেই।
মিশু কথাটা শুনে ক্ষেপে গেলেও প্রকাশ করলো না।স্বাভাবিক ভাবেই বলল,খুব যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়।
– ওষুধ খাওনি?
– না,এখনো ব্রেকফাস্ট করিনি।খেয়েদেয়ে ওষুধ খাবো।
– তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।আর শাড়ি পড়োনা দেখি।
মিশু মনে মনে খুব রেগে গেলো।ও যথাসম্ভব বুঝানোর চেষ্টা করেছে ওর খুবই মাথা ব্যথা।তবুও মর্ম’র কিছুই মনে হচ্ছেনা? বরং শাড়ি পড়া টাই ওর কাছে আগে? সেই গতকাল থেকেই শাড়ি পড়ো শাড়ি পড়ো করেই যাচ্ছে।সৌন্দর্য টাই মুখ্য নাকি? মৈত্রী একটু মাথা ব্যথার কথা শুনলেই অস্থির হয়ে ওঠে।আর মর্ম? ওর শুধু রোমান্টিকতা আর আড্ডা।ভালো সময় কাটানোই প্রেমে পড়ার জন্য যথেষ্ট নয়।একে অপরকে কতটা যত্ন করছে,কতটা মূল্যায়ন করছে,কেমন গুরুত্ব দিচ্ছে সবই এখানে প্রয়োজন।ভাবতে ভাবতে মিশুর মন খারাপ হয়ে গেলো।
মিশু আর কথা না বাড়িয়ে খাবার টেবিলে চলে আসলো।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব কিছুদিন সময় নিতে বলেছিলেন, সেটার আর দরকার হবেনা বোধহয়।সমস্ত ইন্দ্রিয়ের সব অনুভূতি মৈত্রিকেই সাড়া দিচ্ছে।ওই মানুষ টা মিশুর স্বপ্ন,ভালোলাগা,প্রতিভা,ইচ্ছে,সুস্থতা, ভালো থাকা সবদিক দিয়েই ভাবে! আর তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে,মৈত্রীর ওরকম কেয়ারের জন্য মিশুর নিজেকে খুবই ভাগ্যবতী মনে হয়।খুব কম মেয়ের ভাগ্যে এমন একজন অনন্য ব্যক্তিত্বের মানুষের কাছ থেকে অনন্য ভালোবাসা প্রাপ্তির সুযোগ হয়।আর অজান্তেই মৈত্রীর প্রতি ওর ও অনুভূতি তৈরি হচ্ছে।
সবটা ভাবার পর মিশু চিন্তা করলো,মৈত্রিকে ও ভালোবাসে সেটা জানতে পারলে মর্ম হয়ত কষ্ট পাবে।তাহলে পাগলের অভিনয় টাই চালিয়ে যাওয়া যাক।একটা পাগল মেয়ে একজন কে ভালবাসি বললেও কেউ মাথা ঘামাবে না।কষ্ট পেলেও ব্যাপার টা মেনে নেয়া সহজ হবে।আর মৈত্রী তো পাগলকেই গ্রহণ করতে রাজি।ওর সাথেও বেশ মজা করা যাবে।পাগলের উছিলায় দারুণ বিনোদন পাওয়াও যাবে!
♦
তানিনের কাছে সকালবেলা তেই একজন পরিচালকের কাছ থেকে ফোন এলো।পরিচালক ভাই তানিনের অভিনয়ের খুবই প্রশংসা করলেন।গত কয়েক দিনে তানিন তিনটা শর্টফিল্ম করেছে। তিন টাতেই খুব ভালো কাজ করেছে।দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য এরকম অভিনয় ই যথেষ্ট।উনি প্রস্তাব দিলেন একটা টিভি নাটকে কাজ করার জন্য।তানিন উৎসাহের সাথে বলেছে,আগে স্টোরি শুনবো।গল্প ভালো লাগলে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবো।মজার ব্যাপার হচ্ছে গত রাতেই একজন ভাই ফোন দিয়ে বলেছেন একটা কোম্পানির বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করতে পারবে কিনা।তানিন ওনাকেও আশ্বস্ত করেছে।ধীরেধীরে অভিনয়ের দিকে ঝুকে পড়ছে মেয়েটা! দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ওর ক্যারিয়ার!
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব অনেক আগ্রহ নিয়ে কয়েক টা গল্প লিখে ফেলেছেন।এর মধ্যে দুটো গল্পের কাহিনী এতটাই সুন্দর যে,আত্মবিশ্বাস আপনা আপনি এসে যায়।এই গল্প দিয়ে ফিল্ম বানানো হলে ফেস্টিভ্যালে প্রথম তিন জনের তালিকায় থাকার সম্ভাবনা থাকবে।এতে অবশ্যই পরিচালক কে খুব নিখুঁত ভাবে কাজ করতে হবে।কিন্তু মর্ম’র পা যেরকম উনজুরি হয়ে গেছে,কতদিনে হেটে বেড়াতে পারবে কে জানে! ওর উপরেই তো সবটা নির্ভর করছে।
তানিন ও সাফায়েত উল্লাহ সাহেব এসব ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছিলো।এমন সময় একটা ছেলে এসে হাজির হলো।
ছেলেটা সালাম দিয়ে মিষ্টি করে হাসল।তারপর একটা টিফিন বক্স সামনে রেখে বলল,সরষে ইলিশ।আম্মু রেঁধেছে, আপনার নাকি অনেক পছন্দ তাই নিয়ে এলাম।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব দারুণ চমকালেন! আজকালকার দিনে এরকম ছেলে পাওয়াই যায়না।সব তো শুধু নিজেকে স্মার্ট প্রমাণ করাতেই ব্যস্ত।কিন্তু এ যে সাধারণের মধ্যেই অসাধারণ দেখেই বুঝা যাচ্ছে! কিন্তু কে ছেলেটা?
উনি তানিন কে ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন, কে ও?
তানিন ও ইশারাতেই বোঝালো,সে জানেনা।
ছেলেটা হেসে বলল,কাকু আমি ইফতি।আমি একজন ফটোগ্রাফার।আপনাদের বাসার ওয়েডিং এ ফটোগ্রাফি করার জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ও প্রসন্ন হাসি দিয়ে বললেন, বেশ তো।অনেক ভালো করেছেন।বসুন।
– কাকু, আমি আপনার ছেলের মত।আমাকে তুমি বললেই হবে।
– আচ্ছা আচ্ছা।কে আসতে বলেছিল? মৈত্রী নাকি মর্ম?
ইফতি হেসে বলল,কাকু আমাকে খুজিন্তা আসতে বলেছিলো।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব তানিনের দিকে একবার তাকালেন।তারপর ইফতি কে বললেন,আচ্ছা।আমি সরষে ইলিশ পছন্দ করি এটা খুজিন্তাই বলেছে?
– জি।
– থ্যাংকস।অচেনা একজন মানুষের জন্য তুমি মায়ের হাতের ইলিশ নিয়ে এসেছ ভাবাই যায়না!
ইফতি লাজুক ভঙ্গীতে হাসলো।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব এসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললেন, আমাকে বন্ধু ভাব্বে কেমন? আমি খুবই খুশি হয়েছি।তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও,আমার একটু কাজ আছে।দেখি তোমার ইলিশ কেমন হয়েছে খেতে?
বলেই টিফিন বক্স খুলে একটু মুখে দিয়ে বললেন,অসাধারণ রান্না! তোমার আম্মুকেও থ্যাংকস।তানিন,এটা রেখে দে মা।এসে খাবো।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব নিজের কাজে চলে গেলেন।ইফতি দাঁড়িয়ে আছে।তানিন খুব মনোযোগ দিয়ে ইফতির দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে কি যেন ভাবলো।একটা মেয়েকে এভাবে তাকাতে দেখে ইফতি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো।
চলবে..