অতিথি
পর্ব: ১৩
লেখা: মিশু মনি
.
মর্ম প্রচণ্ড রেগে তাকালো।
মিশু হেসে বেড়িয়ে আসলো।
রাতের খাবার খাওয়ার পর যে যার রুমে চলে গেল।মর্ম’র শরীর কিছুটা ভালো হয়েছে।
.
মর্ম বিছানায় শুয়ে শুয়ে মিশুর কথা ভাবছে।হঠাত মিশুর আইডি তে লগ ইন করে বসলো।
কিন্তু মিশুর আইডিতে অসংখ্য ছেলে মেসেজ পাঠিয়েছে।আর অনেক কমেন্ট, যেগুলোতে মিশুর প্রশংসা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মর্ম ইনবক্সে মেসেজ গুলা দেখতে লাগল।
প্রায় অনেক ছেলের ই মেসেজ এর রিপ্লে দেওয়া হয়েছে।মর্ম পুরো কনভারসেশন না দেখে শুধু মেসেজ গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিলো। মর্ম’র খুব মেজাজ গরম হয়ে গেল।মিশু এত ছেলের সাথে চ্যাটিং করবে কেন? মেসেজ দিলেই কি রিপ্লে দিতে হবে? মেয়েদের আইডিতে মেসেজ তো আসবেই।তাই বলে সকলের মেসেজ উত্তর করার কি দরকার?
মিশু কারও সাথেই বিশেষ কথা বলেনি।কেউ দুয়েক টা প্রশ্ন করলে সেটার উত্তর দিয়েছে মাত্র।কিন্তু মর্ম সেসব ভালো ভাবে খেয়াল করলো না।মর্ম শুধু মাত্র মেসেজের রিপ্লে দেয়া দেখেই তিক্ত হয়ে উঠল। মিশুর প্রতি কেমন যেন অধিকার জন্মে গেছে।আর অন্যকারো সাথে কথা বলবে এটা মর্ম কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।মিশুর প্রতি রাগে মেজাজ বিগড়ে গেল মর্ম’র।
কমেন্ট গুলো দেখে আরও মন খারাপ হয়ে গেল।
মর্ম রাগে ফুঁসতে লাগলো।
.
বাইরে খুব জোরে বৃস্টি নেমেছে।অঝোর ধারায় বৃস্টি পড়ছে। মিশু জানালার পাশে দাড়িয়ে বৃস্টি দেখছে।খুব ভালো লাগছে ওর বৃস্টি দেখতে।মনটা উদাস হয়ে উঠছে এই রিমঝিম ধারা দেখে।ভিজতে পারলে খুব ভালো লাগত।
ভাবামাত্রই মিশু মর্ম’র রুমের দিকে ছুটলো।
.
মিশুকে দেখে মর্ম আরও রেগে গেল।
মিশু বলল,সারমর্ম।পাতলা পায়খানা কমেছে তো?
বলেই হাসতে লাগল।মর্ম রেগে বলল,হাসবা না একদম।
– ওরে বাবা,এত রেগে আছো কেন? কি হইছে?
মর্ম অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
মিশু বলল,এই দেখো বাইরে খুব সুন্দর বৃস্টি হচ্ছে।চলোনা ভিজি।খুব ভালো লাগবে।ভিজবা?
মর্ম ভয়ানক রেগে গর্জন করে উঠল, চুপ করো ফালতু মেয়ে।
মিশু ভয় পেয়ে গেল।মর্ম এত রেগে আছে কেন?
মিশু হেসে বলল,আহা এত রাগ করেনা বাবু।
– মিশু,আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা।
– আচ্ছা কথা বলতে হবেনা।চুপ করেই থেকো কিন্তু চলো ভিজবো। খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে।বৃস্টিতে নাচবো একসাথে।একদম সিনেম্যাটিক হবে ব্যাপার টা। চলো ভিজি।প্লিজ,
মর্ম চেঁচিয়ে বলল,স্টপ।
মিশু অবাক হয়ে তাকাল।মর্ম সত্যিই অনেক রেগে আছে।
মিশু কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু মর্ম চেঁচিয়ে বলল,তোমার মত মেয়ের সাথে আমি কথা বলতে চাইনা।বেড়িয়ে যাও আমার ঘর থেকে।
– এত রাগ করেছ? আহা বাবু এত রাগ করেনা।
– ন্যাকামি ছারো।তোমার ন্যাকামিতে মর্ম ভুলবে না।আমি ভেবেছিলাম তুমি অবুঝ মেয়ে।পাগলী পাগলী। কিন্তু আমার কনসেপ্ট রঙ।তুমি একটা ঢপবাজ মেয়ে।সবার চোখে টুপি পড়াও।সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকো। আই হেট দিস হ্যাবিট।
মিশু হতভম্ব হয়ে তাকাল।মর্ম এভাবে কথা বলছে কেন? খুব খারাপ লাগছে শুনতে।
মর্ম আবারো বলতে আরম্ভ করলো, সবকিছুর লিমিট থাকে মিশু।তুমি নিজেকে কি ভাবো? তুমি যা বলবা আর যা করবা সবাই সেটাই মেনে নিবে? সবাই কি বোকা? আসলে তুমি একটা বোকা মেয়ে।আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত বাচ্চা স্বভাবের মেয়ে।কিন্তু তুমি একটা দুমুখো সাপ।ঢং আর ন্যাকামি করা টাই তোমার স্বভাব। এমন ভাব করো যেন কিচ্ছু বুঝোনা।আবার সানির গান ও মুখস্থ! মেরা পিছে হিন্দুস্থান। যত্তসব ফালতু মেয়ে কোথাকার।
মিশুর চোখে পানি এসে গেছে।এই ধরনের কথা শুনতে হবে কখনো তা মিশু দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি।
মিশুর চোখ থেকে পানি ঝরে পড়ল।
মর্ম বলল,মেয়েদের এই একটা স্বভাব অসহ্য লাগে।কথায় কথায় চোখ দিয়ে লেবুর রস বের হয়।ন্যাকা কান্না আমার সামনে করবা না মিশু।আমি তোমাকে চিনে গেছি।হাজার টা ছেলে ফ্রেন্ড লাগবে তাই না? একসাথে অগণিত ছেলে লাগে তোমার? আমাদের দুভাই কে জব্দ করছ,আমার সাথে রীতিমত প্রেম শুরু করে দিয়েছ তবুও শখ মিটছে না? অসংখ্য ছেলের সাথে চ্যাটিং করতে হবে? প্রেমালাপে মত্ত হয়ে গেছে একেবারে।
মিশু কাঁদছে আর ভাবছে মর্ম অযথা বকছে কেন? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
মর্ম বলল,আর কান্না করতে হবেনা।বের হও আর নিজের ঘরে যাও।ফেসবুকে অসংখ্য ছেলে ফ্রেন্ড পাইছো না,তাদের সাথে টাইম পাস করো গিয়ে যাও।আমাকে তো আর তোমার প্রয়োজন নাই।
মিশু কাঁদতে কাদতে বের হয়ে যাচ্ছিলো।মর্ম বলল,এসব আবার কাউকে বলে বলে বিচার দিতে যেও না।তোমার তো অভ্যাস ই হচ্ছে ঢোল পিটিয়ে বেড়ানো।কিছুই তো পেটে রাখতে পারো না।বিয়ের পরদিন কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, বাসর রাতে কি কি হলো? আমার মনে হয় তুমি সেই ইতিহাস ও প্রকাশ করে দিবে।
মিশু আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে না।বুক ফেটে কান্না আসছে।ও নিজের রুমে চলে আসলো।
রুমে এসেই মোবাইল টা হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখল তার ভুল টা কোথায়?
মেসেঞ্জার চেক করে মিশু নিজেই অবাক হয়ে গেল।অনেক ছেলের সাথে চ্যাটিং করা হয়েছে বলে মর্ম বাজে মেয়ে ভেবেছে।কিন্তু মিশু খুব সরল মনেই সকলের সাথে কথা বলেছে।মর্ম তবুও খারাপ মেয়ে ভাবল।ফালতু মেয়ে বলে গালি দিলো!
মিশুর খুব কষ্ট হতে লাগল।ও নিজের মোবাইল টা দেয়ালে ছুরে মাড়ল। ফোনটা কয়েক টুকরা হয়ে মেঝেতে পড়ল। মিশু আবারো মোবাইল টা তুলে একটা আছাড় দিলো। এবার একেবারেই ভেঙে গেছে।
মিশুর চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে।মর্ম”র জন্যই এ বাড়িতে এসেছে ও।মর্মকে ও সবচেয়ে ভালো বন্ধু ভাবে।আর মর্ম ই বাজে মেয়ে ভাবলো!
.
বাইরে রিমঝিম বৃস্টি হচ্ছে।
মিশু মেঝেতে শুয়ে কাঁদছে।
কাঁদতে কাঁদতে উঠে এক ছুটে বাইরে এলো মিশু।আজ প্রথম কেউ তাকে বকা দিয়েছে ফালতু, বেয়াদব মেয়ে বলে।মিশুর খুব কষ্ট হচ্ছে।
মিশু বাইরে দাড়িয়ে বৃস্টিতে ভিজতে লাগলো। জোরে বর্ষণ হচ্ছে।মিশুর দুঃখে আকাশ ও কাঁদছে।
মিশুকে কেউ কখনো বকা দেয়নি।বাবা মা, আত্মীয়,প্রতিবেশী সকলেই খুব ভালবাসে মিশুকে,মিশুর সরলতাকে।আর মর্ম আজ এভাবে বকা দিলো। মিশু কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না।অন্ধকারে বৃস্টিতে দাড়িয়ে ভিজতে লাগলো।
.
মৈত্রীর বাবা মা নিজেদের রুমে খোশগল্পে ব্যস্ত।
মৈত্রী সুজানার সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত।
মর্ম ঘুমিয়ে পড়েছে।
কারোরই মিশুর দিকে খেয়াল নেই।
.
প্রায় এক ঘণ্টা তীব্র বর্ষণে ভেজার পর মিশু রুমে আসলো।
পোশাক বদলে শুয়ে পড়ল।
মিশুর আর কান্না পাচ্ছে না।ও বিছানায় শুয়ে ভাবছে,আমার জন্য কেউ ভাবছে না।আজ যদি আমার আব্বু আম্মু এখানে থাকত, মর্মকে খুব বকা দিতো।আমাকে কেউ কষ্ট দিলে আব্বু সহ্য করতে পারেনা।আজ যে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।খুব কেঁদেছি। কখনো এতবেশি কাদিনি আমি।আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু মর্ম আজ আমাকে অপমান করেছে,গালি দিয়েছে।আব্বুও সহ্য করতে পারতো না।
মিশুর খুব ইচ্ছে করছে আম্মু,আব্বুর সাথে কথা বলতে।কিন্তু মোবাইল টা তো ভেঙে মেঝেতে পড়ে আছে।
কেউই বাবা মায়ের মত হয়না।আম্মু থাকলে এখন মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিতো। কারন আজ মিশু খুব কেঁদেছে। মাত্রার মা তো বলেছিল তিনি মিশুর মা।কিন্তু মিশুর এত টা কষ্ট হচ্ছে তিনি তো একবার খোজ নিতেও আসলেন না।সবাই যে যার মত ব্যস্ত।আগে মৈত্রী মিশুর খেয়াল রাখত,এখন সে ও নিজের গার্ল ফ্রেন্ড কে নিয়ে ব্যস্ত।
মিশুর নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।এ বাড়িতে কেউ নেই তার।
প্রচুর জ্বর এসে গেল মিশুর।মিশু কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।চোখ জ্বালা করছে ভীষণ।
.
রাত যত বাড়তে লাগল,মিশুর জ্বর ও তত বেড়েই চলেছে।গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা আর জ্বরের প্রভাবে একরকম অচেতন অবস্থায় পড়ে রইলো মিশু।দেখার মত কেউ নেই।
( চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here