গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৪৯
লেখাঃ #মেহের।
মারুফের ইচ্ছে করে না এই লোকগুলোর সাথে কোন কথা বলতে।
যাদের জন্য ওর স্ত্রী ও সন্তানরা ওর কাছে নেয়।
মারুফের কষ্ট হয় ওর যখন দেখে জেসিকার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো পুরো শরীরে যন্তপাতি দেয়া। বুকের ভিতরে অস্থির হয়ে থাকে প্রিয়তমাকে একটি বার জরিয়ে ধরতে কিন্তু ধরতে পারে না।
দূর থেকে প্রিয়তমাকে দেখে একটু বুকে নিতে না পেরে মনের পিপাসা হাহাকার করে ওঠে।
এদিকে কলিজার টুকরো গুলো আজকে ১৬ দিন হলো পৃথিবীতে এসেছে তাদেরকে বুকে নিতে পারেনি।
তাদের চোখের দেখাটাও ডাঃ দেখতে দেয় না ,
কতটা অভাগা পিতা আমি।
ওরাও ওদের মায়ের মত আমাকে দূরে সরে আমার বুকের ভিতরের হাহাকার বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তবে আর বেশিদিন বাকি নেয় যখন ওরা মারুফের বুকে এসে হাহাকার বুকের মধ্যে স্বিগ্ধতায় ভরিয়ে দিবে।
সেজন্য মারুফ আল্লাহর কাছে হাজারবার শুকরিয়া করে তার ভালোবাসার অংশ গুলোকে সুস্থ্য করে দেওয়াতে।
মারুফের বাচ্চারা এখন অনেকটাই সুস্থ্য তাইতো মারুফ নফল রোজা ও নামায করে আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করছে।
আজকে সাতদিন হয়েছে বাচ্চারা সুস্থ্য হয়েছে।
তবে মারুফ এখনও ওদের কোলে নিতে পারেনি।
ডাক্তার বলেছে ,জন্মের পরে যেসব বাচ্চাদের এমন অবস্থা হয় তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।
আর জন্মের পর যে সব বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট হয় বা কিছুক্ষণের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ থাকে সেসব বাচ্চাদের এর থেকে বড় কোন সমস্যা হতে পারে ।
তাই ডাঃ ওদের আরও কিছুদিন অবজারভেশনে রাখবে এবং সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে।
তারপর রিপোর্ট ভালো থাকলে বাচ্চাদের রিলিজ করে দেয়া হবে।
এদিকে সে ঘটনার পরে জেসিকা দুইদিন জীবনের সাথে বাঁচা মরার লড়াই করে একসময় কোমায় চলে যায়।
ডাঃ বলেছে জেসিকা সুস্থ্য হতে পারে আবার নাও হতে পারে।
ডাক্তারে কথা শুনে ও জেসিকার অবস্থা দেখে সবাই নিরাশা হলে মারুফ হয়নি।
মারুফের বিশ্বাস জেসিকা এক সময় সুস্থ্য হয়ে যাবে।
ওর নিঃশ্বাস থাকতে জেসিকার নিঃশ্বাস বন্ধ হতে পারে না।
এদিকে জেসিকার মা মেয়ে কোমায় চলে গেছে খবরটা শুনার পরে থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করেছে।
জেসিকার বাবা মেয়ের বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
তবে জেসিকার বাবা মারুফকে জানিয়েছে তার নাতি ও নাতনিকে হসপিটালে থেকে রিলিজ দিলে সে জেসিকা ও তাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে।
কারণ মারুফের চাচার ফ্যামেলি যেখানে আছে সেখানেই কখনো তার মেয়ের বাচ্চাদের রাখবে না।
আর জেসিকার সাথে যা হয়েছে তারপর থেকে ওদের সাথে সে আর কোন সম্পর্ক রাখবে না।
মারুফ তাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায়লে রাখতে পারে।
সেটা তার ইচ্ছে।
তবে মারুফ যদি তার মেয়েকে একটুও ভালোবাসে তাহলে কোমল, রাশেদ,মায়া বেগম মারুফসহ তাদের বাসায় থাকতে বলেছে।
কারণ মেয়েকে আগলে রাখতে না পারলেও মেয়ের ভালোবাসার মানুষদের আগলে রাখতে চান তিনি।
মারুফ শ্বশুরের কথা শুনে কিছুই বলেনি।
তবে মারুফ মনে মনে ভেবেছে জেসিকা যে কয়দিন সুস্থ্য না হবে সে মাকে অনুরোধ করবে জেসিকা দের বাসায় থাকতে।
শ্বাশুড়ি মা, মানে জেসিকার মা অসুস্থ্য সেজন্য চেষ্টা করলেও সে বাচ্চাদের খেয়াল ঠিক ভাবে রাখতে পারবে না।
আর কাজের লোকদের উপরে ভরসা করে তার কলিজার টুকরো দের রাখতে পারবে না।
আর মা যেহেতু জেসিকার সাথে থাকবে তাই কোমল ও রাশেদকে আপন বেসে শত্রুর ভিতরে রাখার প্রশ্নই উঠে না।
অন্যদিকে মারুফের মা ছেলের মনের কথা বুঝাতে পেরেছে।
তাইতো নিজে থেকেই মারুফকে বলেছে জেসিকা সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত সে ওদের বাড়িতে থাকবে।
১৬তম দিন।
আজকে সারারাত মারুফ ঘুমায়নি।
ফযরের নামাযের পর থেকে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছিল।
আজকে কতদিন পরে ওর প্রিয়তমাকে কাছে থেকে দেখতে পারবে।
সকাল সকলে মারুফ তৈরি হয়ে বের হওয়ার আগেই কোমল , রাশেদ এবং ওর মাকে ব্যাগ গুছিয়ে রেডি রাখতে বলেছে।
মারুফ দোকানে থেকে এসেই ওদের নিয়ে হসপিটালে যাবে।
আর সেখানে থেকে জেসিকার বাসায়।
আজকে প্রথম বাচ্চাদের ছুঁয়ে দেখতে পারবে কোলে নিতে পারবে ।
এটা মারুফের জন্য খুশির দিন হলেও সে খুশি হতে পারছে না ।
নিজের বাচ্চাকে আজকে বুকে নিতে পারবে সে আনন্দ মারুফের কাছে পানসে লাগছে।
কারণ একটাই যে এত কষ্ট করে ওর বাচ্চাদের পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে আজকে সেই মানুষটি অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে আছে কেবিনে।
কষ্টগুলো দলা পাকিয়ে বুকে ভিতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে মায়া বেগম চাঁদনী বানু কাছে এসে বলল,আম্মা আমরা এখন থেকে জেসিকাদের বাসায় থাকব।
আপনিও চলেন আমাদের সাথে।
চাঁদনী বানু মায়া বেগমকে বলল, স্বামীর ভিটা রেখে ছেলের শ্বশুর বাড়িতে থাকবা এটা কেমন কথা?
মায়া বেগম চাঁদনী বানুকে বলল, আজকে জেসিকা ও বাচ্চাদের ওই বাসায় নেওয়া হবে তাই আমাকেও যেতেই হবে কারণ জেসিকাও আমার আরেকটা সন্তান।
এত বছর অন্যের কথা ভাবতেই গিয়ে তো আমার সব শেষের দিকে।
দোলার অন্যায় দিনের পর দিন দেখে গেছি কখনো প্রতিবাদ করেনি।
দোলা আমার ছেলের জীবন তছনছ করে আমার সহ্যের প্রতিদান দিয়েছে।
তাই আম্মা আমি এখন আর কে কি ভাবছে তা দেখাবো না!
আমি শুধু ৎআমার পরিবারের শুরক্ষা দেখবো।
আপনার জন্য চিন্তা হবে তাই আপনাকে আমাদের সাথে যেতে বললছি।
এখন যাবেন নাকি থাকবেন তা আপনার উপর নির্ভর করে।
চাঁদনী বানু মায়া বেগমকে বলল, আমি আমার স্বামীর ভিটা রেখে যাব না।
তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যাও।
এরপর মায়া বেগম আর কিছু বলল না।
মারুফ দোকানে থেকে এসেই গোসল করে মা ভাই বোনকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলো।
হসপিটালে এসে দেখলো জেসিকার বাবা সব ফর্মালিটিজ সেরে রেখেছে।
নার্স বাচ্চাদেরকে মায়া বেগম ও উকিল সাহেবের কোলে দিল।
দাদু আর নানা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে কেঁদে দেয়।
মায়া বেগম ও উকিল সাহেব নাতি নাতনিকে আদর করা শেষে মারুফের কাছে বাচ্চাদের দিলো।
মারুফ হাত পেতে দুজনকে একসাথে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের কানে আযান দিয়ে ওদের মাথায় চুমু দেয়।
মারুফ ওর বাচ্চাদের বুকে হালকা চেপে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিল।
তারপর মারুফ বাচ্চাদের কানের কাছে ফিসফিস করে আযান দেয়।
আযান দেওয়া শেষ হলে বাচ্চাদের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,সোনারা আল্লাহকে বলনা তোদের আম্মুকে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য করে দিতে।
আমি যে আর তাকে এভাবে দেখতে পারছি না।
মারুফ বাচ্চাদের নিয়ে মগ্ন।
কিছুক্ষণ এভাবেই সময় চলে যাচ্ছে।
তারমধ্যে রাশেদ ও কোমল বলল, ভাইয়া আমাদের কোলে দাও না।
আমরাও তো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।
মারুফ ওদের কথা শুনে বাচ্চাদেরকেও ওদের কোলে তুলে দেয়।
এদিকে উকিল সাহেব সব কিছু রেডি এখন শুধু ওদের নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
উকিল সাহেব মেয়ের জন্য বাসায় একটা রুমকেই হসপিটালের কেবিনে বানিয়ে ফেলেছে।
সেখানে জেসিকার চিকিৎসার যাবতীয় সরঞ্জাম রাখা হয়েছে।
এখন শুধু বাড়িতে যাওয়ার তাড়া তারপর বাচ্চাদের সব ঠিক করতে হবে।
এদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই বাচ্চাদের এবং আর সবাইকে নিয়ে উকিল সাহেব মাইক্রোতে উঠলো।
জেসিকাকে নিয়ে ওর এম্বুলেন্সে নার্স এবং মারুফ এসেছে।
গাড়ির ভিতর বসেই জেসিকার হাত ধরে রাখে।
তখন থেকে সারাটা রাস্তা মারুফ জেসিকার একটি হাত ধরে বুক জরিয়ে রেখেছে।
আর বিরবির করে বলছে তোমাকে আমার জন্য সুস্থ্য হতে।
আমাদের বাচ্চাদের জন্য তোমাকে বাঁচার লড়াই করতে হবে ।
বৌ আমাদের মুহিব ও জেরিন এসেছে আর তুমি ঘুমিয়ে আছো এটা কি ঠিক?
মারুফ নিচু হয়ে জেসিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,বৌ তোমার ছেলের নাম মুহিব খান জাইফ রেখেছি ভালো হয়েছে না বলো।
আর শুনো বৌ আমাদের রাজকুমারী নাম কিন্তু তুমি অনেক আগেই জেরিন খান মারুফা বলেছিলে।
আমি কিন্তু তা ভুলিনি।
বৌ আমি বাচ্চাদের তোমার ঠিক করা নামেই রেখে দিয়েছি।
আর তুমি কিছু না করে অলসের মত পরে পরে ঘুমাচ্ছো!
বৌ তুমি উঠছো না কেন?
নার্স টা মারুফের কথা শুনে ও জেসিকার সাথে ব্যাবহার দেখে ভয় পাচ্ছে।
নার্স ভাবছে মেয়েটা তো কোমায় আছে তারপরও গাড়িতে উঠে থেকে এই লোকটা মেয়েটার সাথে কথা বলছে লোকটি আবার পাগল হয়ে গলো না তো?
ইস কখন এই পাগলের
নোটঃ তাড়াহুড়ো করে লেখেছি ভুল থাকার সম্ভাবনা আছে।
সেজন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
বিঃদ্রঃ আমার লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।
আর লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।