গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৪৬।
লেখাঃ #মেহের।

মারুফ ওর প্রিয়তমাকে ছাদে থেকে নীচে পরতে দেখে , জেসিকা বলে চিৎকার করে ওখানে বসে পরল।

তারপর চারপাশে কেমন নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে।
একটু আগেও তো সূর্যের কিরণে রাতের আঁধার কেটে আলো ফুটতে শুরু করেছিলো ।
কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে চারদিকে আঁধারে ছেয়ে গেছে।
মারুফ চারদিকে তাকিয়ে ওদের না দেখে ছাদের কিনারে এসে নীচে তাকায়।
জেসিকাকে রক্তাক্ত অবস্থায় নীচে পরে থাকতে দেখে
বৌ বলে চিৎকার দেয়।
মারুফ চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো।

জেসিকা মারুফের চিৎকার শুনে মারুফকে বলল,এই কী হয়েছে তোমার?
আমি তো তোমার পাশেই আছি।
আমার নাম ধরে চিৎকার করলে যে!
এই খারাপ স্বপ্ন দেখেছো ?
মারুফ এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল।
জেসিকার আওয়াজ পেয়ে জেসিকাকে জরিয়ে ধরলো।

জেসিকা মারুফের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে কী হয়েছে স্বপ্নে কিছু দেখে ভয় পেয়েছো ?
জেসিকা কথা বলছে আর মারুফের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।
মারুফের পিঠে হাত বুলাতে গিয়ে বুঝতে পারছে মারুফ কেঁপে কেঁপে উঠছে জেসিকা মারুফের কাঁপন অনুভব করছে ।
আজ এক সপ্তাহ হয়েছে মারুফ মাঝরাতে জেসিকা বলে চিৎকার করে প্রতিদিন উঠে গিয়ে প্রথমে ওকে জরিয়ে ধরবে।
এরপর জেসিকার কাঁধে মাথা রেখে নীরবে কিছুক্ষণ কাঁদে।
তারপর তাহাজ্জুদের নামায আদায় করে ফযরের আজান না দেওয়া পর্যন্ত জায়নামাজে বসে দোয়া দরুদ পড়ে।

জেসিকা কতবার জিজ্ঞেস করেছে প্রতিদিন স্বপ্নে কি এমন দেখে যে ভয় পেয়ে ঘেমে জুবজবে অবস্থা হয়ে যায়?

মারুফ জেসিকার প্রশ্ন এরিয়ে যায়।
ইদানিং জেসিকার শরীর আগের তুলনায় একটু ভালো দিকে কিন্তু মারুফের প্রতিদিন ঘুম ভেঙ্গে চিৎকার দিয়ে উঠার কারণে জেসিকা ভয় পেয়ে আঁতকে উঠে।
জেসিকা সারাদিন এসব নিয়ে ভেবে আজকাল সুস্থ্য থাকতে পারছে না।

এদিকে মারুফের চোখ দিয়ে পানি পরছে ।
মারুফ মনে মনে ভাবছে, এ আমি কী দেখলাম।
স্বপ্ন এমন জীবন্ত হতে পারে!
আমার মনে হচ্ছিল সব কিছু আমার চোখের সামনে ঘটছে।
আমার চোখের সামনেই আমার প্রিয়তমা স্ত্রী ও সন্তানেরা পরে যাচ্ছিল।
আমি দেখেও কিছু করতে পারছিলাম না।
সে মুহূর্তের আমার অসহায় অবস্থা কল্পনায় ভাবলেও আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

জেসিকা যখন আমাকে প্রশ্ন করে কী হয়েছে আমার?
তখন তাকে কি করে বলবো প্রিয়তমা তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

আজ এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন শেষ রাতের দিকে স্বপ্নটা তাড়া করছে আমায়।
মা, দাদুর কাছে শুনেছি শেষ রাতের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।
মনে মনে দোয়া করছি এ স্বপ্ন যাতে সত্যি না হয়।
তবুও মনের কোনো এক কোনে বারবার বলছে, না জানি কোন বিপদ ধেয়ে আসছে আমার সুখের সংসারে‌!

তাইতো সবসময় আল্লাহ্কে ডাকি আগত বিপদের হাত থেকে আমার পরিবারকে রক্ষা করতে।
আল্লাহ্ তুমি আমার স্ত্রী ও অনাগত সন্তানদের সহি সালামতে রেখো।

মারুফ জেসিকাকে জরিয়ে ধরেই এসব ভাবছে।
এরমধ্যে মনে পরল জেসিকার এভাবে বসে থাকতে হয়তো কষ্ট হচ্ছে।
তাই মারুফ জেসিকার কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,চল ওযু করে এসে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করি।
কথাটা বলে মারুফ জেসিকাকে নিয়ে ওযু করতে যায়।

ওযু করে এসে নামাজে দাঁড়ায়।
জেসিকার দাঁড়াতে কষ্ট হয় তাই মারুফ ওকে বসে নামায আদায় করতে বললো।

সকালে নাস্তার পরে আজকে মারুফ আর দোকানে যায়নি ।
কারণ একটু পরেই জেসিকার বাবা আসবে।
তারপর চাচ্চুকে টাকা দিয়ে জমিগুলো রেজিস্ট্রি করবে।

মারুফের মন বলছে ওর চাচ্চু বেশি আশা করতে গিয়ে নিজেদের শেষ সম্বল না হারিয়ে ফেলে।
ইসহাকের সামনে বসেই চাঁদনী বানু মারুফকে বলল, দাদু ভাই এখনও সময় আছে , ওকে এগুলো বিক্রি করতে নিষেধ কর?
ও যে সোনার হরিণের খোঁজে বাপ দাদার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বিক্রি করছে।
সে সোনার হরিণ না আবার ওর কাল হয়ে দাঁড়ায়।

চাঁদনী বানু কথা শুনে দোলা ক্ষেপে গিয়ে বলল,আম্মা আপনি আপনার ছেলের মুখে মুখেই শুধু ভালো চান,
কিন্তু অন্তরে তার জন্য বিষ নিয়ে ঘুরেন।
নাহলে যেই দেখছেন ছেলে জমি বিক্রির করে সে টাকা দিয়ে ব্যাবসা করে মারুফের থেকে এবং ওর শ্বশুরের থেকেও বড়লোক হয়ে যাবে।
অমনি কোমরে আঁচল গুঁজে বাঁধা দিতে আসছেন।

কিছুদিন ধরে পর পর একেই স্বপ্ন দেখে মারুফের মন মেজাজ এমনিতেই ভালো নেয়।
এরমধ্যে চাচীর কথা শুনে রাগ উঠে যাচ্ছে।
তবুও নিজেকে শান্ত রেখে দাদুকে বলল, দাদু তোমার ছেলে ছোট না বা অবুঝ নয় যে নিজের ভালো মন্দ বুঝতে পারবে না।
তাই সে যা করছে করতে দাও।
এ বিষয়ে আমি মনে করি তোমার কথা না বলায় ভালো।

চাঁদনী বানু এসব কথা শুনে মনের কষ্টে নিজের রুমে চলে গেল।

দুপুরের ১২টার সময় জেসিকার বাবা আসলেন।
সাথে দুজন গার্ড নিয়ে।
এতগুলো টাকা নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে একা আসার সাহস পায়নি।
সে যে পেশায় আছেন তাতে তো তার শত্রুর অভাব নেই।
তাই একা আসার সাহস ইচ্ছে করেই দেখায়নি।

উকিল সাহেব আগেই রেজিস্ট্রার অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে রেখেছে।
তারা মারুফের বাসায় আসবে।
তারজন্য বেশকিছু টাকাও গুনতে হয়েছে।
জেসিকার শরীর খারাপ সেজন্য তাকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে পারবে না তাই এ ব্যাবস্থা।

বাড়ির উঠানে কয়েকটি চেয়ার ও দুটি টি-টেবিল দেওয়া ।
উঠানের চেয়ার গুলোতে দুজন অফিসার ও বাড়ির পুরুষেরা সবাই বসেছে।
এবং মেয়েরা বসেছে ভিতরের দিকে।
টেবিলে কাগজ পত্র রাখা হয়েছে।
অফিসার আসার আগেই জেসিকার বাবা ইসহাকের হাতে টাকা দিয়েছে।
এখন শুধু সাইন করা বাকি আছে।
অফিসার ইসহাক এবং জেসিকার বাবাকে বলল,সাইন করতে।

ইসহাক উকিল সাহেবকে বলল, ভাই জেসিকা তো এখানেই আছে কিন্তু আপনার যে বোনের নামে জমি নিচ্ছেন সে তো এখনো এলো না?
দেরি হয়ে যাচ্ছে সাইন করতে হবে তো!
ইসহাকের কথা শুনে উকিল সাহেব বললো, আপনাদের একটা কথা বলা হয়নি আমি জমি গুলো জেসিকা ও ওর শ্বাশুড়ির নামে মানে মায়া আপাকে দিবো।
কথাটা শুনে , মারুফ, ইসহাক কী বলে উঠল?

তাদের মুখে কী শুনে?
উকিল সাহেব বলল, আমি দুঃখিত,মায়া আপার কথা আগে জানায়নি কারণ মারুফ বা আপা জানতে পারলে বাঁধা দেওয়ায় চেষ্টা করতো।

মারুফ জেসিকার বাবার কথা শুনে বলল,আব্বু এটা হয়না ।
আপনি টাকা দিচ্ছেন তো আপনার নামে কিনা উচিত।
মারুফের কথা শুনে উকিল সাহেব বললেন, মারুফ আমার নামে বা জেসিকার নামে কিনলে তা ভবিষ্যৎতে তোমাদের দুজনের হবে।

কিন্তু আমিতো সেদিন বলেছি তোমাদের তিন ভাই বোন আমার চোখে সমান।
তাই আপার নামে জমি নিলে কোমল ও রাশেদ পাবে।
তা ভেবে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মারুফ শ্বশুরের কথা শুনে বলল,তা হয়না বাবা।
উকিল সাহেব মারুফকে বলল,এ বিষয়ে আর কিছু বলে আমার কথার অপমান করো না।
জেসিকা এমনিতেই রাজি না ওর নামে জমি রাখছি সেজন্য।
তাই এ নিয়ে আর কোন কথা না হলেই ভালো।
শ্বশুরের কথা শুনে এরপর মারুফ আর কিছু বলতে পারে না।
উকিল সাহেব মায়া বেগমকে অনেক অনুরোধ করে রাজি করাতে পারেনি ।
পরে জেসিকার কথায় মায়া বেগম রাজি হন।
তারপর দুই পক্ষের সাইন নেয় অফিসারের একজন ইনচার্জকে দিয়ে।

এখানকার সব কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় আজকে উকিল সাহেব মেয়েকে নিজের সাথে নিতে চায়লো।

কথাটা শুনে জেসিকা তার বাবাকে বলে,বাবা আমি মা ও কোমলকে সাথে না নিয়ে যাবো না।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে সস্থিবোধ করেছে।
মারুফ জেসিকাকে এই মুহূর্তে নিজের কাছে থেকে অন্য কোথাও পাঠাতে চাচ্ছে না।
জেসিকার কোথাও যাওয়ার নাম শুনলেই স্বপ্নের দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

মারুফ ভেবেছে কালকে সকালে বড় পায়কারী বাজারে গিয়ে বেশি করে থান কাপড় কিনে রাখবে।
এই সপ্তাহের মধ্যে দোকানের কাজ কিছুটা গুছিয়ে রেখে আগামী সপ্তাহে জেসিকাকে নিজের সাথে করে ওদের বাসায় যাবে।
অবশ্য মারুফ কথাটা সকালে ওর মা’কেও বলে রেখেছে।

এদিকে জেসিকার কথা শুনে উকিল সাহেব মায়া বেগমের সাথে তাদের নেওয়ার কথা বলেন।

মারুফের কাজ আছে এই সপ্তাহে তা তো মারুফ তাকে সকালেই বলেছে।
তাই মায়া বেগম জেসিকার বাবাকে বললেন,ভাই সাহেব এ সপ্তাহ পরেই না হয় বৌমাকে নিয়েন।
যেহেতু আপনি প্রথম নাতি নাতনি আসার আগে আপনার ওখানে বৌমাকে রাখতে চাচ্ছেন।
তাই আগামী সপ্তাহে জেসিকাকে আমি সাথে করে আপনার বাসায় দিয়ে আসবো। তাহলে আর আপনার মেয়ে মানা করতে পারবে না।

জেসিকার বাবা মায়া বেগমের কথা শুনে মেয়েকে তো রেখে যাচ্ছে কিন্তু মনের ভিতরে কেমন অস্থির লাগছে।
মনে হচ্ছে কিছু একটা খারাপ হয়ে যাবে।

অন্যদিকে দোলা ও রেশমা এতো গুলো টাকা একসাথে দেখে খুশি ধরে রাখতে পারছে না।
তারা এই টাকা দিয়ে কি কি করবে তা ভাবতেই ব্যস্ত ছিল!

এরমধ্যে রিফাত তার শ্বাশুড়িকে বলল,আম্মা ফালু ভাইকে কালকে কিছু টাকা দিয়ে এসে ব্যাবসা কর্নফম করে ফেলি কি বলেন?
দোলা রিফাতের কথা শুনে বলল,তা কাল কত টাকা দিতে হবে তোমাকে?
রিফাত দোলার কথা শুনে বলল,আম্মা কালকে ত্রিশ লাখ দিলেই হবে।
আর কথা বার্তা বলে আমারয় ওখানে থেকে আসতে রাত হয়ে যাবে।
তাই দেরি দেখলে আপনাদের আমার জন্য চিন্তা করতে হবে না।
দোলা এই কথা শুনে বলল, ঠিক আছে।
রিফাত বলল,আম্মা বাকি টাকা গুলো সাবধানে রাইখেন।
রিফাতের কথা শুনে দোলা বলল,সে নিয়ে তুমি ভেবো না বাবা।
আমার রুমে ডেসিং টেবিলের পিছনে একটা সিন্দুক আছে না!
সেখানে টাকাগুলো রাখবো কেউ টেরও পাবে না।

রিফাত দোলার কথা শুনে বলল,আম্মা ধীরে বলেন দেওয়ালেও কান আছে।
কথাটা বলে রিফাত তার কাজে চলে যায়।

পরের দিন

মারুফ ভোরে নামাজ পড়ে নাস্তা না করেই বড় বাজারে চলে গেল দোকানের মালপত্র কিনতে।
যাওয়ার আগে মারুফ ওর মা’কে নিজের ও জেসিকার খেয়াল রাখতে বলল।
মায়া বেগম মারুফকে জিজ্ঞেস করে রাশেদ ও কোমল কবে আসবে?

মারুফ মায়ের কথা শুনে বললো, কালকের মধ্যে ওরা এসে পড়বে।

আলোর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে ,আলোর বাবা এসে মাফ চেয়েছে বোন ও সবার কাছে।
আর তার মেয়ের বিয়েতে সবাইকে যেতে বলেছেন।

মারুফের মনে হয়েছে মামা মুরব্বি হয়ে মাফ চেয়েছে তাই তার মান রাখতে কাউকে পাঠানো দরকার।
তাইতো কোমল ও রাশেদকে বিয়ে খেতে পাঠিয়েছে গতকাল।
একটু আগে মারুফ ফোন করে বলেছে আজকে রাতে অনুষ্ঠান শেষ হলে
আগামীকাল সকালে যেনো ওরা চলে আসে।

মারুফ আজকেও একেই স্বপ্ন দেখে ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়।
এদিকে
দাদু কালকে থেকে মন খারাপ করে বসে আছে।
এসব ভাবলে মারুফের মাথায় জট পেকে যাচ্ছে।

মারুফ জানে মার্কেটে যাচ্ছে তাই মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে কিন্তু এদিকে মা, দাদু ও জেসিকার জন্য মারুফের চিন্তা হচ্ছে।

বিকালে দিকে
জেসিকা ঘুমিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।
তা দেখে নার্স খালা ছাদে যায় একটু হাঁটাহাঁটি করতে।

আর এ সময়ে মায়া বেগম ও চাঁদনী বানু এক রুমে বসে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।

এদিকে বারবার কে যেনো দরজার টোকা দিচ্ছে আবার বেলও দিচ্ছে।
রেশমা সামনের রুমে ছিলো বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলতে যায়।
দরজা খুলে ভয় পেয়ে দ্রুত দরজা লাগিয়ে দিতে নিলে বাহিরে থাকা লোকগুলো ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

তাদের মধ্যে একজন এসেই রেশমার মুখ চেপে ধরলো।
আরেকজন হাত পা বেঁধে ফেলেছে ।
রেশমার মুখোশধারী চারজন দুর্বৃত্তদের অস্ত্র হাতে দেখে গলা শুকিয়ে গেছে।

এরমধ্যে দোলা বেলের শব্দ পেয়ে বাহিরে এসেছে ।
দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে হাত,পা ও মুখ বেধে দেয়।
এরপর দুর্বৃত্তরা রেশমা ও দোলার রুমের তল্লাশি চালিয়ে গহনা, টাকা পয়সা যা পাচ্ছে সব নিচ্ছে।
এরপর দুর্বৃত্তদের মধ্যে একজন জেসিকার রুমে এসে তল্লাশি করে তেমন কিছুই পায়নি।

জেসিকাকে ঘুমানো ছিলো শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো।
রুমের ভিতরে মুখোশধারী লোকটি দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল।

লোকটি জেসিকার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কি যেনো ভেবে !
ওর উপরে ঝাপিয়ে পড়ল।

এদিকে জেসিকার চিৎকার শুনে ঝর্না দৌড়ে জেসিকার রুমের দিকে আসলো।

ঝর্নাকে এদিকে আসতে দেখে ওর পিছনে দুর্বৃত্তরাও আসে।

ঝর্না জেসিকার রুমে এসে ওর ভাবীকে বাঁচাতে চেষ্টা করলে পিছনে থেকে একজন ঝর্নকে ঝাপ্টে ধরে ফেলে বলল, দোস্ত যা ওটা তোর আর এটা আমার কথাটা বলেই ঝর্নাকে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে লোকটি ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এদিকে ঝর্না ও জেসিকার চিৎকার শুনে চাঁদনী বানু ও মায়া বেগম এখানে কি হয়েছে দেখতে আসে!
মায়া বেগম ও চাঁদনী বানু জেসিকার রুমে আসলে , তাদেরকে অন্য দুইজন দুর্বৃত্ত ধরে ফেলল।

অন্যদিকে নিচে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নার্স ভয় পেয়ে দৌড়ে নীচে নেমে এসেছে।

নীচে এসে ডাইনিং রুমে মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের দেখে নার্স খালার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না এখানে কি হচ্ছে!

তাই নার্স চুপি চুপি রান্না ঘরে ঢুকে ছুরি নিয়ে জেসিকার রুমের দিকে যায়।

এদিকে জেসিকা লোকটির কাছে থেকে ছাড়া পেতে হাত পা ছুটাছুটি করছে।
কিন্তু লোকটা জেসিকাকে ছাড়ছে না।

জেসিকা ছটফট করতে গিয়ে খাটের পাশে তাকিয়ে কাঁচের গ্লাস দেখে।
জেসিকা গ্লাসটা ধরতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে।
একসময় গ্লাসটা হাতের নাগালে পেলে গ্লাস দিয়ে দুর্বৃত্ত লোকটির মাথায় জোরে আঘাত করে।

তাতে দুর্বৃত্ত লোকটার কপালে ব্যথা পেয়ে জেসিকা ছেড়ে দিল।

জেসিকা ছাড়া পেয়ে দুর্বৃত্ত লোকটির কাছে থেকে নিজেকে বাঁচাতে বিছানায় থেকে উঠতে নেয়।

তা দেখে দুর্বৃত্ত লোকটা জেসিকাকে অনেক জোরে থাপ্পর মারে।

জেসিকা থাপ্পর খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে নিচে ফ্লোরে পরে গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট ও চিৎকার করতে করতে এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললো
মূহুর্তের মধ্যেই ফ্লোর রক্তে রঙিন হয়ে যায়।

এদিকে নার্সটা রুমে এসেই পিছনে থেকে দুর্বৃত্ত লোকটির হাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।

বাথ্য পেয়ে দুর্বৃত্ত লোকটি চিৎকার করে উঠল।

সেই সুযোগে নার্সটি জেসিকার পাশে ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে বললো, আজকে এদিকে যে আসবে তাকে খুন করে ফেলবো।

দুর্বৃত্ত লোকটির চিৎকার শুনে ওদের সাথীরা ভিতরে এসে এই অবস্থা দেখে বলল,চল এখানে থাকা আর ঠিক হবে না।
আর
এরমধ্যে আরেকজন বললো এই শালীকে এভাবে দেখে যেতে ইচ্ছে করছে না।

একজন দুর্বৃত্ত আহত দুর্বৃত্ত লোকটাকে ধরে রেখেছে যাতে পরে না যায়‌।
আরেকজন ঝর্নার কাছে যে ছিলো তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে এর থেকেও ভালো একটা এনে দিব এখন চলতো ।

এরপর ওরা গহনা, টাকা পয়সা যা পায় সব নিয়ে চলে যায়।

এদিকে ঝর্নাকে দুর্বৃত্ত লোকটা বিবস্ত্র করে নিজের লালসার স্বীকার করতে এগিয়ে যাচ্ছে।
ঝর্না মাথায় আঘাত পাওয়াতে বিবস্ত্র অবস্থাতেই অজ্ঞান হয়ে
পড়ে আছে।

নার্স খালা জেসিকার চারপাশে এতো রক্ত দেখে ভয় পেয়ে গেল।
এই মুহূর্তে জেসিকাকে হসপিটালে না নিতে পারলে হয়তো বাঁচাতে পারবে না।
তা ভেবে তিনি জেসিকা তুলার চেষ্টা করে ।
কিন্তু একা তুলতে না পেরে দৌড়ে বাহিরের রুমে আসে।

বাহিরে এসেই তাড়াহুড়ো করে মায়া ও চাঁদনী বানুর বাঁধন খুলে দিল।
মায়া বেগম বাঁধন খুলার সাথে সাথে দৌড়ে জেসিকা রুমে যায়।
রুমে এসে তার প্রিয় বৌমার এই অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
মায়া বেগম জেসিকাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল,মা তোর কি হয়েছে চোখ খোল?
মা আমার সাথে কথা বল না।

এদিকে চাঁদনী বানু ভিতরে যাওয়ার আগে রেশমা ও ওর মা’কে বাঁধা অবস্থায় দেখলো।
তা দেখে চাঁদনী বানু রেশমার ও দোলার বাঁধন খুলে দিল।

চাঁদনী বানু, রেশমা ও দোলা জেসিকার রুমে আসলো।

রুমে এসে এতো রক্ত দেখে ভয় পেয়ে যায়।
জেসিকাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে দোলা ও রেশমা ঝর্নাকে খোঁজতে রুমের অন্য পাশে তাকালো।

দোলা খাটের পাশে নিচে ফ্লোরে মেয়েকে রক্তাক্ত ও বিবস্ত্র অবস্থায় পরে থাকতে দেখে ঝর্না বলে চিৎকার দিয়ে উঠল।

রেশমা তাড়াহুড়ো করে ঝর্নাকে বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে দিলো।
এদিকেনার্স আরও আগেই জেসিকার বাবাকে ফোন করেছে ।
জেসিকার অবস্থা ভালো না শুধু এতটুকু বলেই ফোন কেটে দিয়েছে।
তারপর মায়া বেগম ও নার্স খালা জেসিকাকে পাতালে কোলে নিয়ে রুমের বাহিরে নিয়ে আসে উদ্দেশ্য হসপিটালে নেওয়া।
এরমধ্যে,,,

নোটঃ একজনের লোভ একটি পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়।
খারাপ কাজের সাথে যে মানুষটি যুক্ত থাকে তার থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার আশেপাশের আপনজনের।
আর একজন চরিত্রহীন ধর্ষকের কাছ শিশু বৃদ্ধ,জোয়ান গর্ভবতী কেউ রেহাই পায় না।
তাদের কাছে মা বোন সব সমান।

বিঃদ্রঃ আমার লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।
আর লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here