গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ২৩।
লেখাঃ #মেহের।

কিছু কিছু সময় তো মারুফের নিজেকে অসহায় মনে হয়।
তার করা অন্যায় গুলো জেসিকার করা অন্যায়ের থেকে তখন বড় মনে হয়।
এদিকে জেসিকা তো মারুফের করা অন্যায় ভুলতেই চাইছে না।
কি করলে কি হবে মারুফ তা বুঝতেই পারছে না ।
কখনো কখনো এসব চিন্তা ভাবনা করে মারুফের নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
আবার কখনো কখনো মারুফ জেসিকার ভালোবাসার তৃষ্ণার্ত হয়ে মনে মনে বলে,বৌ তুমি সুস্থ্য হলে আমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার শোধ ঠিকই তুলব।
তখন দেখবো আমার হৃদয়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে তুমি থাকো কিভাবে?
মারুফ জেসিকার বুকে মাথা রেখে এসব ভাবছিল ।
তার মাঝে জেসিকা বলল,

আপনি এমন ঝাপটা ঝাপটি থামাবেন কখন?

জেসিকার কথা শুনে মারুফের ঘোর কেটে যায়।
জেসিকাকে বলে, বৌ তুমি এতো আন রোমান্টিক কেন?
তোমার বর ভালোবেসে জরিয়ে ধরেছে আর তুমি বলছো ঝাপটা ঝাপটি করছি এটা কোন কথা হলো!

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আজাইরা ঢং না করে আমায় ছাড়ুন তো ।

মারুফের জেসিকার মুখে বিরক্তের ছাপ দেখে মন খারাপ হয়ে গেল।
সেটা ওকে বুঝতে না দিয়ে
জেসিকার কপালে চুমু দিয়ে ওকে ছেড়ে দিল।

মারুফ জেসিকাকে ছেড়ে খাটে থেকে নেমে টি টেবিলে থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে বিছানায় বসল।
ভাত মেখে জেসিকা মুখের কাছে নিলে জেসিকা বলল, আমাকে দেন আমি হাত দিয়েই খেতে পারব।
আপনার অযথা কষ্ট করতে হবে না।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,সব সময় বেশি বুঝতে চাও কেন?
আমি তোমাকে একবারও বলেছি আমার কষ্ট হচ্ছে?

মারুফের কথা শুনে জেসিকা বলে, সবকিছু বলতে হবে কেন? আমি কি বাচ্চা নাকি!
আর কিছু কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখলেই বোঝা যায়।

জেসিকার কথা শুনে মারুফ বিরবির করে বলল, বাচ্চাও তোমার থেকে ভালো বুঝে।
যেটা খেয়াল করার দরকার সেদিকে তো নজর পরে না।
আবার সে বড় বড় কথা বলছে।

মারুফ কথা শুনে জেসিকা ওঁর স্বামীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে।

মারুফ তা দেখে বলল, এমন করে তাকিয়ে থেকে কোন লাভ নেই!
আমি খাওয়া নিয়ে আর একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না।
তোমার ইচ্ছে না থাকলেও তোমাকে আমার হাতেই খেতে হবে।
তাই কথা না বলে তাড়াতাড়ি চুপচাপ খাওয়া শেষ কর।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে আর কোনো কথা বলল না।

মারুফের হাতে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।

মারুফ জেসিকার মুখে লুকমা তুলে দিচ্ছে আবার মাঝে মাঝে নিজেও খাচ্ছে।
দুজনের খাওয়া শেষ হলে মারুফ কোমলকে ডেকে প্লেট বাটি নিয়ে যেতে বলল।

কোমল এসে সেগুলো নিয়ে গেল।
সে সময় ওদের রুমের দরজা খোলা ছিলো
তা দেখে রাশেদ দরজায় নক করে ওদের রুমে আসলো।

মারুফ রাশেদকে দেখে বলে উঠলো কিছু বলবি?
মারুফের কথা শুনে রাশেদ বলে,না ভাইয়া ,
ভাবীকে দেখতে এলাম ।
কোমলের কাছে শুনেছি ভাবী নাকি খুব অসুস্থ্য ।
সেজন্য তার খোঁজ খবর নিতে এসেছি।

মারুফ রাশেদকে বসতে বলল।
এদিকে রাশেদের কথা শুনেই জেসিকা ভালো করে শরীরে ওড়না জরিয়ে নেয়।

রাশেদ বসার পরে বলল, তা ভাবী আপনার এখন কি অবস্থা?
রাশেদের প্রশ্ন শুনে জেসিকার চোখে পানি এসে গেল।
এই ছেলেটির সাথে কত খারাপ আচরণ করেছে।
এমনকি ওঁর বন্ধুদের সামনেই রাশেদকে অপমান করেছে।
কিন্তু আজকে ওঁর অসুস্থতার কথা শুনে খোঁজ খবর নিতে এসেছে।
আর আমি ওদের মতো মানুষের সাথে এমন আচরণ কিভাবে করতে পারলাম।
জেসিকা এসব ভেবে রাশেদকে বলল, ছোট ভাই , আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।
তুমি কেমন আছো?
আর ছোট ভাই আমাকে মাফ করে দাও।
আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ আচরণ করেছি, তোমার বন্ধুদের সামনেও তোমাকে অপমান করেছি সেজন্য সরি।

রাশেদ ভাবীর কথা শুনে বুঝতে অসুবিধা হলো না কোমল সত্যি বলছে তার ভাবী ভালো হয়ে গেছে।
তাই রাশেদ ওঁর ভাবীকে বলল, ছিঃ ছিঃ ভাবী এসব কি বলছেন?
এটা কোন ব্যাপার না , আপনি সম্পর্কে এবং বয়সে দুই দিকেই আমার বড় তাই এভাবে মাফ চেয়ে লজ্জায় ফেলবেন না।
আর আগে কি হয়েছে না হয়েছে তা ভুলে যান!
আমিও তা ভুলে গেছি।

জেসিকা রাশেদের কথা শুনে বলল, ছোট ভাই তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেন?
লজ্জা পাওয়ার মত কাজতো করেছি আমি ।

জেসিকার কথা শুনে রাশেদ বলল, হয়েছে এ ব্যাপারে আর কোন আলাপ হবে না।
ভাবী আপনি রেষ্ট নেন আমি এখন যায়।
আর ভাইয়া তুমিও বিশ্রাম করো পরে আড্ডা দেওয়া যাবে।
একথা বলে রাশেদ চলে যায়।

জেসিকা রাশেদকে যেতে দেখে কাঁথা গায়ে দিয়ে মুখ বের করে শুয়ে পড়ল।

রাশেদ চলে গেলে মারুফ দরজা বন্ধ করে দিয়ে জেসিকার কাছে এসে শুয়ে আছে।
জেসিকা মারুফকে নিজের কাছে শুয়ে পড়তে দেখে চোখ বুজে রইলো।

মারুফ তা দেখে মুচকি হেসে দেয়।
মনে মনে বলল, চোখ বুজে থেকে কোনো লাভ হবে না বৌ।
আমার ভালবাসার জোরে একদিন তোমাকে আমার খুব কাছে নিয়ে আসবে।
তোমার হৃদয়ে আমার জন্য আবার আগের মত কাঁপন অনুভূত হবে।
আমার মন বলছে সেদিন খুব বেশি দূরে নেই।

অন্যদিকে জেসিকা চোখ বুজে মনে মনে বলছে, আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি আর দূর্বল হতে চায় না। আপনাকে ভালোবেসে শিক্ষা হয়ে গেছে।
যেখানে এঁকে অপরের হৃদয়ে সঙ্গীদের জন্য বিশ্বাস নেই সেখানে কোন ভালবাসা হতে পারে না।
তাই আর আমি আপনার চোখের মায়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চায় না।
একবার মনে যে কষ্ট পেয়েছি দ্বিতীয় বার সে কষ্ট ভোগ করতে চায় না।

এদিকে মারুফ বুঝতে পারছে জেসিকা ইচ্ছে করেই চোখ বুজে আছে।
তাই জেসিকাকে বিরক্ত করতে এবং
জ্বালাতে দুষ্টুমি শুরু করল।

মারুফ দুষ্টুমি করে কখনো জেসিকা গলায় ওঁর ওষ্ঠ দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে আবার কখনো গলার কিছুটা নিচে নাক ঘষে দিচ্ছে।

জেসিকার মারুফের করা এইসব দুষ্টুমি ওকে ভিতরে ভিতরে অস্থির করে তুলেছে তবুও তা পাত্তা না দিয়ে বাহিরে শক্ত হয়ে আছে।
দুর্বল হওয়ার ভয়ে চোখ মেলে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত।

মারুফ জেসিকার এমন নির্লিপ্ত ভাব দেখে কিছুটা জেদ চেপে গেলো।
তাই আর কিছু না ভেবেই জেসিকার ওষ্ঠ দখল করে নিয়েছে।
জেসিকার ওষ্ঠের স্বাদ পেয়ে মারুফের তৃষ্ণা যেনো বেড়ে গেছে।
না জানি মারুফ কতদিনের পিপাসু ছিলো জেসিকার ওষ্ঠের সুধা পান করে তার তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।

এদিকে জেসিকা মারুফের এমন হঠাৎ আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
জেসিকার দমবন্ধ হয়ে আসার অবস্থা হয়েছে।
এই লোক মনে হয় সবকিছু ভুলে কেবল ওঁর ঠোঁটের উপরে রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে।

এভাবে আরও কিছুক্ষণ থাকলে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে নয়তো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না।
কিন্তু জেসিকা নিজেকে সেচ্ছায় মারুফের কাছে ধরা দিতে চায় না।
যেখানে জেসিকা এখনও ওদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি হবে তা নিয়ে চিন্তিত।
এসব ভেবে জেসিকা হঠাৎ করে এমন কিছু করল।
যে তাতে মারুফ জেসিকার ওষ্ঠ ছেড়ে দিল।
মারুফ জেসিকার ওষ্ঠের সুধা পানে ঘোরে ভিতরে ছিলো।
সে সময় জেসিকা মারুফের ঠোঁটে কামড়ে ধরে।
মারুফ প্রথমে ভেবেছে ওঁর আদর পেয়ে ওঁর বৌ তাতে রেসপন্স করছে।
কিন্তু ঠোঁটে ব্যথা অনুভব হলে বুঝতে পারে এটা আদরের রেসপন্স না তাকে জেসিকা কামড়ে ব্যথা দিতে চাচ্ছে।
প্রথমে ব্যথা সহ্য করলেও পরে তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
মারুফ ব্যথা সহ্য করতে না পেরে জেসিকাকে ছেড়ে দিয়েছে।
মারুফ ওঠে বসে হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল।
মারুফের ব্যথায় মনে হচ্ছে জান যায় যায় অবস্থা।

মারুফ হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে জেসিকার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, রাক্ষুসী একটা আমার ঠোঁটটা কেটে শেষ করে দিলো।

মারুফের কথা শুনে জেসিকা বলল,তা এই রাক্ষুসীর কাছে এসেছিলেন কেন?
না এলে তো আর ঠোঁট কাটা পরতো না।

মারুফ জেসিকার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,ডাইনী একটা আমার রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
আর আমি আসবো না তো কে আসবে আজব!
এসব বলে ঠোঁটে হাত দিয়ে বরফ খুঁজতে রুমের বাহিরে গেছে।
কিছুক্ষণ পর বরফ নিয়ে ঠোঁটে বরফের সেঁক দিতে দিতে রুমে আসল।
কিছুক্ষণ সেঁক দেয়া শেষ হলে জেসিকার থেকে কিছুটা দূরে সরে শুয়ে পড়লো।

একমাস পর।

জেসিকা সুস্থ্য হয়েছে আরও আগেই।
সুস্থ্য হওয়ার পরে একবার ভেবেছিলো এখানে থেকে চলে যাবে।
কিন্তু শাশুড়ি মা ও কোমল ওকে অসুস্থতার সময়ে অনেক সেবাযত্ন করছে।
একটা সংসারে থাকতে হলে ভালো মন্দ মেনেই চলতে হয়।
হাড়ি পাতিল এক জায়গায় বেশি থাকলে শব্দ হবেই।
তেমনি পরিবারে একসাথে থাকলে এমন হতেই পারে।
এজন্য ভেঙে গেল চলবে না।
নিজের শক্ত করে গড়তে হবে।
এসব শাশুড়ি মা তো ওকে বুঝিয়ে বলেছেন ।

তাইতো এ বাড়িতে রয়ে গেছে।
সেই জীবন ছিল ভুলে ভরা।
নিজের জীবনে আর ভুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় না।

সবাই যেহেতু ওঁর আগের ভুল ত্রুটি মাফ করে দিয়েছে ।
ওকে আপন করে নিয়েছে।
তাহলে শুধু শুধু মারুফের করা কাজের শাস্তি এদের কেন দিবে।
এসব ভেবেই রয়ে গেছে।
তবে মারুফের সাথে সম্পর্ক এখনোও ঠিক হয়নি বা জেসিকা হতে দেয়নি।

এদিকে মারুফের দিনকাল নিরামিষের মত হয়ে গেছে।
একটু সময় পেলেই বৌয়ের পিছনে ঘুর ঘুর করে ও লাভ হচ্ছে না।
সুস্থ্য হওয়ার পরে থেকে জেসিকা সংসারে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছে।
সংসারের মাঝেই নিজেকে ব্যস্ত রাখছে।
মারুফের পরিবার আগের থেকে এখন বেশ হাসি খুশি থাকে।
মারুফ খেয়াল করে দেখেছে আজকাল জেসিকার সময় আনন্দেই কাটছে।
কোমল, ঝর্না ও রাশেদের সাথে কখনো কেরাম খেলছে আবার মা ,চাচী ও দাদুর সাথে লুডু খেলছে।
মোটামুটি বাসার সবার সাথে ওঁর বৌ হাঁসি খুশি থাকছে।
শুধু ওঁর কাছে এলেই বৌ মুখ ভার করে রাখে।
বৌ তো কখনও ওকে আদর দেয় না উল্টো মারুফ আদর করতে গেলেও কামড় দিয়ে শেষ করে দেয়।
বৌ নামক সিডরে মারুফের জীবন তেজপাতা হয়ে গেছে।

তবুও জেসিকার ভালোবাসায় পাগল হয়ে কখনো ঘোরের মাঝে জেসিকার ওষ্ঠের স্বাদ নিতে গেলেই ওঁর ঠোঁটে কামড় দিয়ে বারোটা বাজিয়ে দেয়।

সে ভয়ে বেচারা আজকাল জেসিকার কাছে যেতেও ভয় পায়।
তবে ওঁর প্রিয়সীকে দেখলেই সব ভয় আবার নিমেষেই দূর হয়ে যায়।
তখন বৌয়ের জন্য বুকের ভিতরে আনচান করে।
বৌকে কাছে পেতে বড্ড তৃষ্ণা জাগে।
বৌ সে কবেই সুস্থ্য হয়ে গেছে তবুও বেচারা বৌকে কাছে পাচ্ছে না।
ওঁর বৌটা দিনে দিনে বদ হয়ে যাচ্ছে।
মারুফের সামনে সেজেগুজে থাকে কিন্তু ধরতে গেলেই দূরে সরিয়ে দেয়।
যেমন এখন জেসিকা আয়নার কাছে দাঁড়িয়ে চোখে কি সুন্দর করে কাজল দিচ্ছে।
তা দেখে মারুফের ভালবাসা দিতে ইচ্ছে করছে।
জেসিকাকে সাজতে দেখে মারুফ মনে মনে বলল,বৌ তুমি রূপ দেখিয়ে আমার বুকের ভিতরে আগুন জ্বালিয়ে দূরে সরে মজা দেখো এটা তো ঠিক না।
বউ তোমাকে যেদিন হাতের মুঠোয় পাবো সেদিন তোমার দেয়া সব কামড়ের শোধ নিয়ে ছাড়বো।
মারুফ জেসিকা কে দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যখন এসব ভাবছিল।

সে সময় জেসিকা মারুফকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে ,আপনাকে চা দিবো ?
জেসিকার কথা শুনে মারুফের ধ্যান ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here