গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ১২।
লেখাঃ #মেহের।

জেসিকা মনে মনে বলছে,কিন্তু মারুফ যে বলল,সে নাকি আমার সাথে কথা বলতে এসেছে।
আচ্ছা মারুফ আবার আমাকে এ বাড়িতে থেকে বের করে দিতে চাইছে না তো?

আমি তো ওকে ছাড়া থাকতেই পারব না।
ও আমাকে বের করতে চাইলেও আমি কিছুতেই এ বাড়ি ছেড়ে যাব না।

আমাকে যদি এ বাড়ি থেকে যেতেই হয় তো আমি না আমার লাশ যাবে।
জেসিকা মনে মনে এসব ভাবছিল এরমধ্যে মারুফ বলে উঠল , আচ্ছা তুমি কি করতে চায়ছো ঠিক করে বলতো?
আমাকে ছোট না করলে বুঝি তোমার চলছে না।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে ভয় পেয়ে বলল, বিশ্বাস করেন আমি এইবার এমন কিছুই করিনি।
যা আপনাকে ছোট করবে।

কিছুই করনি নাহ্ , তাহলে তুমি ভার্সিটিতে যাচ্ছো না কেন?
লেখা পড়ায় ইস্তেফা দিলে নাকি?
যেন সবাই বলতে পারে মারুফ মেয়েটার পড়াশোনাই বন্ধ করে দিয়েছে।
এই চাইছো তো তুমি?

মারুফ এ কথা বলে রুমের চারপাশে নজর দিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে!
মারুফ কিছু বলতে যাবে তার আগেই জেসিকা বলল, এখন তেমন ক্লাস হয়না আর আমি ভার্সিটিতে না গেলেও বান্ধবীদের কাছে থেকে ফোনে নোট কালেক্ট করি তো।

মারুফ হম বলল, মারুফের চোখ এখনো বিছানার দিকে।
সেদিকে চোখ রেখেই বলল, আমার জামাকাপড় তোমার রুমে কী করে এলো?

জেসিকা এমন প্রশ্ন শুনে চমকে গেল!
মারুফ জেসিকাকে আবার বলে,কী করে এলো বলছো না যে?

জেসিকা মনে সাহসে জুগিয়ে আমতা আমতা করে বলল, আগে যেহেতু এটা আপনার রুম ছিল ।
তাই হয়তো বুয়া ভুলে এ রুমে কাপড়চোপড় রেখে গেছে।

মারুফের জেসিকার কথা বিশ্বাস হলো না।
কিন্তু এ বিষয়ে এখন কথা বলতে চাচ্ছে না।
তাই মারুফ জেসিকাকে বলল, এখন থেকে ঠিক মত ভার্সিটিতে যাবে ।
আমার কথা বুঝতে পেরেছো?
আর শুন পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি দেওয়া কিন্তু কোন ভালো বিষয় নয়।

এ কথা শুনে জেসিকা বলল,জী কিন্তু আজকে থেকে তো ভার্সিটি ১৫ দিনের বন্ধ।

এ কথা শুনে মারুফ বলল, ঠিক আছে ছুটি শেষে হলে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করবে এই বিষয়ে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না ।

মারুফ এ কথা বলে বিছানা থেকে নিজের জামাকাপড় গুলো নিয়ে বের হতে নিল।

জেসিকা তা দেখে দৌড়ে মারুফের পায়ের কাছে গিয়ে দুই হাত দিয়ে পা ধরে বসে পরে।
হঠাৎ এমন কান্ডে মারুফ হকচকিয়ে গিয়ে বলল,আরে কি ব্যাপার পায়ে ধরছো কেন?
এই কি হচ্ছে এসব তোমার তামাশা বন্ধ কর!

জেসিকা তবুও মারুফের পা ছাড়ল না।
পায়ে ধরেই বলল,প্লিজ আমায় মাফ করেন।
আমার দ্বারা যে ভুল গুলো হয়েছে জীবন থাকতে তা আর কখনো হবে না।

এদিকে মারুফ চরমবিপদে পড়ছে জেসিকা নাছোড় বান্দার মত পা ধরে আছে তো আছেই ছাড়ার নাম নেই
বারবার মাফ চাচ্ছে।
তাই মারুফ উপায় না পেয়ে বলল, ঠিক আছে তোমাকে মাফ করলাম এবারতো আমার পা ছাড়ো।
এমনিতেই আমি ক্লান্ত ‌দাড়িঁয়ে থেকে আর অসুস্থ্য হতে চাচ্ছি না।
তাও জেসিকা পা ছাড়ছে না।

মারুফ বিরক্ত হয়ে বলল,এই মেয়ে পা ছাড়তো আমি ঘুমাতে যাব।
জেসিকা মারুফের পা ধরে রেখেই বলছে ,আপনি এখানেই থাকেন ।
অন্য রুমে যাইয়েন না প্লিজ।

মারুফ জেসিকাকে বলে,দেখো সবাই ঘুমিয়ে আছে ।
আস্তে কথা বলো
এখন একদম কোন ক্যাচাল চাচ্ছি না।
এমনিতেই সারাদিন পরিশ্রম করে আমি ক্লান্ত।

মারুফের কথা শুনে জেসিকা বলে ,প্লিজ এখানে থেকে যান।

ইস্ কি কথা এখানে থেকে যান!
শুন এখানে থেকে আমি বারান্দার কষ্ট করে ঘুমাতে পারব না।
তাই এসব নাটক বন্ধ কর।

এ কথা শুনে জেসিকা আমতা আমতা করে বলল, বারান্দায় থাকবেন কেন!
বিছানা‌টাই তো অনেক বড় তাই দুজনে অনায়াসে ঘুমানো যাবে।

এ কথা শুনে মারুফ হেসে বলল,তা এই ছোট লোকের বাচ্চার সাথে এক বিছানায় শুলে বড় লোকের বেটির সম্মান থাকবে তো?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আমি বিয়ের পরে কাজেই এমন করেছি যে তা হয়তো ক্ষমার অযোগ্য।
তাই আপনার যা ইচ্ছে বলতে পারেন সমস্যা নেই।
তবুও প্লিজ এই রুমে থেকে চলে যাবেন না।
এই দাসীর উপরে একটু দয়া করুন।
জেসিকার আকুতি শুনে মারুফের খারাপ লাগছে।
মেয়েটা ভুল করেছে ঠিক তা আবার বিনাবাক্যে স্বীকারও করছে।
এসব ভেবে মারুফ মনে মনে বলল,এক রুমে থেকেও তো ওকে শাস্তি দিতে পারব।
এবং আমি ওঁর সাথে একরুমে থাকলে দাদু ও আলোও বুঝতে পারবে আমি জেসিকাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি তাতে ওঁর উপরে তারা অত্যাচার করতে কিছুটা ভয় পাবে।
মারুফ যখন এসব ভাবছিল তখন জেসিকা মারুফকে চুপচাপ দেখে কেঁদে বলল, ঠিক আছে আপনি যেহেতু থাকবেন না তাহলে চলেই যান।
আমার মত দাসীর কী আর সাধ্য আছে আপনাকে বেঁধে রাখার?

মারুফ জেসিকার কথা শুনে আওয়াজ করেই বলল,বাহ্ মারুফ তোর কত উন্নতি হয়েছে একদিন যে তোকে ছোট লোক , মূর্খ বলতে দ্বিধা করতো সে আজ নিজেকে তোর দাসী বলছে তা কি ভাবা যায়!

জেসিকা মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে মারুফ তাকে পিছনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো এজন্য।
মারুফ জেসিকার মুখের দিকে তাকিয়ে সেটা বুঝতে পেরে বলল, আমি কোথাও যাচ্ছি না এবারতো আমার পা ছাড়ো।

জেসিকা এ কথা শুনে মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ হাতের মুঠোয় পেয়েছে।
সে খুশিতে মারুফকে জরিয়ে ধরল।

জেসিকা জরিয়ে ধরায় মারুফের ভালো লাগলেও সেটা প্রকাশ করল না।
উল্টো জেসিকাকে ধমক দিয়ে বলল, তোমার সাহস তো কম না আমাকে জরিয়ে ধরেছো?
এমন করলে আমি কিন্তু এখনেই এই রুমে থেকে চলে যাব।

জেসিকা ভয় পেয়ে বলল,সরি সরি আমাকে মাফ করবেন।
আমার ভুল হয়ে গেছে।
এরপর জেসিকা বিছানা পরিষ্কার করে মশারী টাঙিয়ে বাহিরে এসে মারুফকে ঘুমানোর জন্য বলল।

মারুফ চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরেছে।
তা দেখে জেসিকাও মারুফের পাশে গিয়ে শুয়ে পরল।
জেসিকা মারুফের শরীর ঘেঁষে শুয়েছে।
কিন্তু বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে পারলো না।
মারুফ জেসিকাকে ধমকে বলল, আমার দিকে চেপে শুয়েছো কেন খাটে কি জায়গায় অভাব রয়েছে।

এক্ষুনি দূরে যাও আর কান খুলে শুনে রাখ ভুলেও যেন আমার শরীরের সাথে তোমার শরীরের ছোঁয়া না লাগে।
তাহলে কিন্তু খাটে থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো
তখন বুঝবে মজা।

জেসিকা ভয় পেয়ে সরে গিয়ে চোখে বন্ধ করে আছে।
এদিকে মারুফ মনে মনে বলছে, তুমি কেন বুঝ না।
তুমি আমার এতো কাছে এলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না।
দিনশেষে আমিও তো একজন পুরুষ মানুষ।
তোমাকে টানার জন্য আমার কিছুটা সময় প্রয়োজন।
কারণ আমি এখনো আমাকে করা তোমার অপমান এবং রাহুলের সাথে ফোনালাপ ভুলতে পারছি না।
আমি বুঝতে পারছি তুমি বদলে গেছ তবুও তোমাকে পুরোপুরি আপন করতে পারছি না।
আমার যে একটু সময় প্রয়োজন বৌ।
মারুফ যখন চোখ বুজে এসব ভাবছিল।
তখন মারুফের চোখ বন্ধ দেখে এদিকে জেসিকা ভেবেছে মারুফ ঘুমিয়ে আছে।
তাই জেসিকা সাহস করে মারুফের বুকে হালকা ভাবে মাথা রেখে শুয়ে রইলো কিছুক্ষণ।

মারুফ জেগে আছে তবুও কিছু বলছে না।
কারণ মারুফ বুঝতে পেরেছে জেসিকা তাকে ঘুমে ভেবে এমন সাহস দেখাচ্ছে।
তাই মারুফ ঘুমের অভিনয় করেছে জেসিকা আর কি করে তা দেখার জন্য ।
এদিকে জেসিকা মারুফের বুকে শুয়ে মারুফের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থেকে জেসিকা কিছুটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।
মারুফকে এতো কাছে পেয়ে তার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছে না।
যার ফলে জেসিকা মারুফের বুকে থেকে মাথা উঠিয়ে আস্তে আস্তে ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ।

মারুফ জেসিকার নিঃশ্বাসের শব্দ কাছে পেয়েও চোখ বন্ধ করে আছে।

জেসিকা ঘোরের মাঝে কোন কিছু চিন্তা না করেই মারুফের ঠোঁট দখল করে নেয়।
এদিকে মারুফ বেচারা তো ঘুমের অভিনয় করে ফেসে গেছে।
জেসিকা তো মারুফের ওষ্ঠের স্বাদ নিতে ব্যস্ত।
মারুফের সহ্য ক্ষমতা দূর্বল হয়ে পরেছে।
এই মুহূর্তে জেসিকাকে না থামালে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না ।
সেজন্য মারুফ বুদ্ধি করে নড়াচড়া দিয়ে ,,,,,,

বিঃদ্রঃ এতো কষ্ট করে গল্প দেখি আপনাদের তেমন রেসপন্স পাচ্ছি না।
দয়াকরে নেক্সট না লিখে গঠন মূলক মন্তব্যে করুন।
গল্পে ভুল ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দিতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here