গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ১৬।
লেখাঃ #মেহের।
মারুফ যখন জেসিকার নেশায় আসক্ত হয়ে ভালবাসতে মক্ত।
ঠিক সে সময় তাদের ঘোর কাটাতে কারো আগমন ঘটে।
সে আর কেউ নয় মারুফের একমাত্র আদরের ছোট বোন কোমল রানি।
বাহিরে থেকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতে ডাকতে কোমল ওদের রুমে ঢুকেছে ।
কোমলের ডাকার শব্দে মারুফের ধ্যান ভঙ্গ হয়।
ধ্যান ভঙ্গ হওয়াতে হুস ফিরে মারুফ মনে বলল,ছি্ ছি্ এ আমি কি করলাম!
নিজেকে কেন আরেকটু সংযত করতে পারলাম না।
এখন তো জেসিকা আমার দূর্বলতা জেনে নিজেকে আমার সামনে উন্মুক্ত করতে চেষ্টা করবে ।
মারুফ যখন এসব ভাবছিল সে সময়ে আবারও কোমলের আওয়াজ পেয়ে জেসিকাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে একপাশে সরিয়ে দেয়।
এরপর তাড়াহুড়ো করে ওয়াশ রুমের দরজা বন্ধ করে।
ছোট বোনের সামনে দুজনে ভেজা কাপড়ে একসাথে ওয়াশ রুমে আছে এমন অসস্থিকর অবস্থায় কোন মতেই পড়তে চাচ্ছে না।
জেসিকা মারুফকে দরজা বন্ধ করতে দেখে বলল,আরে কোমল আপনাকে ডাকছে শুনতে পাচ্ছেন না!
মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল, আমি বয়রা না যে কিছু শুনতে পাব না।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলে, তাহলে দরজা লক করলেন কেন?
জেসিকার কথা শুনে এই মুহূর্তে মারুফের বিরক্ত লাগছে।
জেসিকা মারুফকে আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই মারুফ জেসিকার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরল।
কোমল তার ভাবীর রুমে এসে ভাইয়াকে না পেয়ে ফিরে যেতে নিলে।
ওয়াশ রুমে থেকে কথা বলার আওয়াজ পেয়ে দাড়িয়ে গেল।
এরপর ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
তবে এখন কথা বলার কোনো শব্দই পেল না।
শুধু পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে।
কিন্তু তখন মনে হচ্ছিল দুজনের কথা শুনতে পেয়েছে।
তাই নিশ্চিত হতে ওয়াশরুমে টোকা দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ভাইয়া তুমি কী এখানে আছো?
মারুফ কোমলের ডাক শুনে বলে,হ্যাঁ ছুটকি আমি এখানে কেন কিছু বলবি?
কোমল ভাইয়ের আওয়াজ পেয়ে নিশ্চিত যে এখানে আর কেউ নেই।
সে হয়তো ভুল শুনেছে।
এসব তো ভাইয়াকে বলতে পারবে না।
তাই ওঁর ফালতু ভাবনাকে একপাশে রেখে মারুফকে বলল, নাহ্ ভাইয়া।
তোমার নাকি আজকে তাড়াতাড়ি দোকানে যেতে হবে
সেজন্য মা আমাকে দেখতে পাঠিয়ে ছিল তুমি ঘুম থেকে জেগেছো কিনা ?
মারুফ কোমলের কথা শুনে হম বলে।
কোমল আর কিছু না বলেই চলে যায়।
কোমল যাওয়ার পরে মারুফ জেসিকার মুখে থেকে হাত সরিয়ে নেয়।
জেসিকা বড় বড় নিঃশ্বাস ছাড়ছে ।
জেসিকার মনে হচ্ছে আরেকটু হলেই সে অক্কা যেত(মারা যেত)।
কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস ছেড়ে জেসিকা কিছুটা শান্ত হয়ে মারুফকে বলল,আরে ভাই এভাবে কেউ নাক মুখ একসাথে চেপে ধরে!
এমন ভাবে আরও কিছুক্ষণ থাকলে তো আমি পটল তুলতাম।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলে, তাহলে তো ঝামেলা চুকেয় যেত।
জেসিকা এ কথা শুনে বলল,কী বললেন আমি ঝামেলা?
জেসিকার কথা শুনে মারুফ বলে, ঝামেলা না তো কি!
আর এই মেয়ে তুমি জানো না আমি এখানে গোসল করছিলাম তারপরও কোন বুদ্ধিতে ওয়াশ রুমে ঢুকতে গেলে।
যত্তসব ফালতু মেয়ে মানুষ।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল।
মারুফকে বলতে নেয় সে তোয়ালে দিতে এসেছিল কিন্তু তোয়ালে দেওয়ার আগেই হঠাৎ দরজা খুলে যাওয়াতে পা পিঁছলে তার উপরে পড়ে।
সে ইচ্ছে করে এমন …..
মারুফ জেসিকার পুরো কথা সম্পূর্ণ করতে দেয়না তার আগেই বলে,এই তুমি আমার কাছে আসার জন্য এসব ইচ্ছে করে করোনি তো?
তোমাদের মত বড় লোকের বেটির কাছে এগুলো তো ডাল ভাত ।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে।
জেসিকা ভেবে পাচ্ছে না এখন কি এমন করছে যে তার স্বামী তাকে এতগুলো কথা শুনাচ্ছে!
তারপর মারুফ ওয়াশ রুমে থেকে বের হওয়ার সময় জেসিকাকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিজেকে বলে, মারুফ সাবধান থাক এই বড় লোকের বেটির কাছে থেকে কোনদিন না আবার তোর ইজ্জত লুটে নেয়।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
এদিকে মারুফ ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বলল,সরি সোনা তোমার কাছে তো এত সহজে ধরা দিবো না।
তবে তুমি যে আমার কথা শুনে মন খারাপ করেছো তা বেশ বুঝতে পেরেছি।
সোনা আর কিছুদিন সহ্য করো। এরপর আমার ভালবাসা দিয়ে তোমার সব অভিযোগ অভিমান কষ্ট দূর করে দিব।
মারুফ ভেজা কাপড়ে রুমে এসেছে।
সেদিকে তার খেয়াল নেই।
আলমিরা থেকে শার্ট ও প্যান্ট বের করার সময় খেয়াল করে ওঁর শরীর থেকে পানি পড়ে ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে।
তাই পোশাক হাতে নিয়ে যলদি করে ভেজা পোশাক ছেড়ে শার্ট ও প্যান্ট পরে নিল।
এরপর মারুফ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে মায়ের কাছে যায়।
যাওয়ার সময় অবশ্য জেসিকাকে ফ্লোরে পানি আছে তা বলে যায়।
এদিকে জেসিকা ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে আগে নিজের কাপড় চোপড় ওয়াশরুমে রেখে তারপর ফ্লোরের পানি মুছে নিল।
ফ্লোর মুছা শেষ হলেই ফ্রেস হতে যায়।
যলদি ফ্রেস হয়ে বাহিরে এসে মারুফকে খাবার দিতে গেল।
জেসিকা ডাইনিং রুমে এসে দেখে সবাই টেবিলে বসে টুকটাক কথা বলছে।
জেসিকাকে দেখে চাঁদনী বানু বলে, হ্যাঁ গো তুমি কেমন মেয়ে মানুষ ?
আমার নাতি কী তোমার মত আজায়রা থাকে ?
কখন থেকে বসে আছে নাস্তা করে দোকানে যাবে।
আর তুমি তার বৌ হয়ে রুমে বসে কী করছিলা?
জেসিকা চাঁদনী বানুর কথা শুনে আমতা আমতা করে বলল,সরি দাদু একটু দেরি হয়ে গেছে।
মারুফ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে চাঁদনী বানুর দিকে!
কারণ মারুফ মাকে নিয়ে টেবিলে মাত্র এসে বসেছে।
জেসিকার সাথে ওঁর দাদু ভালই পার্ট নিচ্ছ তা মানতে হবে।
জেসিকা লেট করে এসে যেহেতু ভুল করেছে সেজন্য তাড়াহুড়ো করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিল।
আলো জেসিকার ভেজা
চুলের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, আজকে আমার এ অবস্থান থাকার কথা ছিল।
মারুফ ভাইয়ের সব ভালবাসার পাওনা তো আমার কথা ছিল
কিন্তু সেখানে জেসিকা নামের আপদটা উরে এসে জুড়ে বসেছে।
তবে বেশি সময় জুড়ে বসে থাকতে পারবে না।
সবাই নাস্তা খেতে শুরু করলো।
মারুফ আর ওর বোনেরা পরোটা ডিম পোঁচ দিয়ে খাওয়া শুরু করল।
চাঁদনী বানু ও দোলা আগে রুটি সবজি দিয়ে মুখে দিল ।
প্রথমে হালকা ঝাল লাগলেও তা খেয়াল করেনি পরে বুডের ডাল মুখে নিয়ে দোলা ঝাল ঝাল বলে চিৎকার করে উঠল।
ঝাল শুনে মারুফ তার চাচি কাছে না গিয়ে মাকে বলল চাচিকে দেখতে কি হয়েছে।
আর মারুফ যলদি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাদুর কাছে গেল।
এদিকে বুডের ডালে বোম্বে মরিচের কিছু আস্ত অংশ ছিল যা চাঁদনী বানু না দেখেই মুখে দিয়েছে।
এরপর থেকে চাঁদনী বানু ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে।
কোন কথা মুখ দিয়ে বের করতে পারছে না।
চাঁদনী বানুর মনে হচ্ছে সে মারা যাচ্ছে।
মারুফ তার দাদুর কাছে এসে এই অবস্থা দেখে বলল,মা তাড়াতাড়ি মিষ্টি জাতীয় কিছু দাও।
আর কোমল তুই যলদি ডাক্তার আঙ্কেলকে ফোন করে এখানে আসতে বলে দে ।
সবাই হতবাক হয়ে গেছে কি থেকে কি হয়ে গেল হঠাৎ করে!
চাঁদনী বানুর বেশি ঝালে এলার্জি আছে।
চাঁদনী বানু এজমার রোগী তাই তার কোন কিছু থেকে সামন্য এলার্জির সমস্যা হলেও সাথে সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
আর বেশি ঝাল হচ্ছে তার জন্য বিষ এটা এই বাসার প্রতিটা মানুষ জানে।
মারুফ দাদুর অবস্থা দেখে দাদুকে কোলে করে রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল।
মারুফের মা শাশুড়ির মুখে একটু পায়েস দিল।
কিন্তু চাঁদনী বানু তা গিলতে পারলো না মুখ দিয়ে গাল বেয়ে তা পরে যায়।
এবার সবাই ভয় পেয়ে গেল!
এরমধ্যে ডাক্তার নিয়াজউদ্দিন এসে পরেছে।
মারুদের দুই বাড়ির পরেই থাকেন নিয়াজউদ্দিন সাহেব।
তাকে আরেকটু পরে ফোন করলে পাওয়া যেত না।
দশটার দিকে হসপিটালে যান তিনি।
মারুফ ডাক্তারকে দেখেই বলল, আঙ্কেল দেখেন তো দাদু যেন কেমন করছে।
নিয়াজউদ্দিন সাহেব চাঁদনী বানু কে দেখে বলল, মারুফ খালাম্মার অবস্থা বেশি ভালো না।
তাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে অক্সিজেন দিতে হবে নাহলে তাকে বাঁচানো কষ্টকর হয়ে যাবে।
এ কথা শুনে বাড়ির সবাই চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল।
মারুফ হতভম্ব হয়ে গেছে একটু আগেও তো ওঁর দাদু সুস্থ ছিল তাহলে হঠাৎ করেই কি হয়ে গেল তার।
সবার মানুষিক অবস্থা দেখে নিয়াজউদ্দিন সাহেব বললেন,প্লিজ তোমারা কান্না কাটি করে সময় নষ্ট কর না।
আর আল্লাহ সহায় হলে খালাম্মা যলদি সুস্থ্য হয়ে যাবে চিন্তা কর না।
ডাক্তারে কথা শুনে মারুফ চাঁদনী বানুকে কোলে নিয়ে বলল, আঙ্কেল আপনার হসপিটালে চলুন।
আর আপনি আগে গিয়ে একটা গাড়ি ঠিক করুন।
আমি দাদুকে নিয়ে আপনার পিছনে পিছনে আসছি।
দাদুর অবস্থা দেখে মারুফের হাত পা দরদর করে কাঁপছে মনে হচ্ছে এই বুঝি ওঁর হাত ফসকে দাদু পরে যাবে।
মারুফের অবস্থা দেখে জেসিকা মারুফের সাথে দাদুকে সামলাতে এলে মারুফ জেসিকার দিকে রেগে বলে,এই তুই ছুবি না আমার দাদুকে।
আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ্।
জেসিকা অবাক হয়ে,,,,,