গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ১৫।
লেখাঃ#মেহের।
এরপরেও যে মারুফ তাকে মাফ করেছে এটাই ওঁর ভাগ্য।
জেসিকা এসব ভাবছে আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখছে।
কত রাত হয়ে গেছে মারুফ এখনও বাসায় আসছে না।
জেসিকা ইদানিং খেয়াল করেছে মারুফ আগের মত দুপুরে বাসায় খেতে আসে না ।
এবং রাতেও লেট করে বাসায় আসে ।
জেসিকা চিন্তা করল,একটা মানুষ আমাদের ভালো রাখতে কত কষ্ট করছে।
আর আমি সেই মানুষটিকে একসময় কত অপমান করেছি এমনকি ওনার মনে আঘাতও দিয়েছে।
এসব এখন ভাবলেও লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়।
জেসিকা যখন এসব ভাবনায় বিভোর সে সময় মারুফ বাসায় এসেছে মাত্র।
মারুফ ওদের রুমে গিয়ে দেখে জেসিকা এক ধ্যানে বসে রয়েছে।
মারুফ তা দেখে কোন শব্দ না করেই ফ্রেস হতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
ফ্রেস হয়ে এসে দেখে জেসিকা এখনোও সে ভাবেই বসে রয়েছে।
তা দেখে মারুফ জেসিকাকে ডেকে বলে,এই জেসিকা কোথায় হারিয়ে গেছো?
জেসিকা হঠাৎ করে নিজের নাম শুনে চমকে উঠল।
নিজের সামনে মারুফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে, আপনি কখন এলেন ?
আমিতো কিছুই টেরও পেলাম না!
মারুফ তা শুনে বলে, তুমি তো কারো ধ্যানে মগ্ন হয়ে ছিলে ।
তাই কিছু টের পাওনি।
এ কথা শুনে জেসিকা লজ্জা পেয়েছে।
কারণ জেসিকা এতক্ষণ তো তার স্বামীর ধ্যানে মগ্ন ছিল।
সে কথা তো মারুফকে বলতে পারবে না ।
এদিকে মারুফ জেসিকার লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখে প্রেমে পড়ে যাচ্ছে।
মারুফের ইদানিং তার বৌয়ের সান্নিধ্যে পেতে মনে ইচ্ছে জাগে।
মাঝে মাঝে অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে।
তাকে তো এতো সহজেই দূর্বল হলে চলবে না।
এসব ভেবে মারুফ জেসিকা কে পাশ কাটিয়ে ওদের রুমের বাহিরে যেতে নেয়।
তখন জেসিকা মারুফকে জিজ্ঞেস করে ফ্রেস হয়েছে কিনা?
মারুফ হ্যাঁ বলে।
এরপর জেসিকা জানতে চায় টেবিলে কী খাবার দিবে কিনা?
জেসিকার কথা শুনে মারুফ বলল, ঠিক আছে দাও।
ততক্ষণে আমি মায়ের সাথে দেখা করে আসি।
মারুফ মায়ের সাথে দেখা করে ডাইনিং রুমে এসে দেখে জেসিকা প্লেটে খাবার সাজিয়ে রাখছে।
মারুফ হাত ধুয়ে খেতে বসে পরল।
মারুফের মন একবার বলছে তোর সাথে মেয়েটাকেও খেতে বল!
আরেক বার মন বলছে , নিশ্চয়ই এতো রাত পর্যন্ত জেসিকা তোর জন্য না খেয়ে থাকবে না।
মারুফ ভাবলো জেসিকা আগেই খেয়েছে । তাই ওঁর সঙ্গে আর খেতে বলল না।
জেসিকা মারুফকে পাতে এটা ওটা তুলে দিচ্ছে।
মারুফ খেয়াল করল , জেসিকা আজকে প্রথম এমন যত্ন করে খাবার দিচ্ছে।
মারুফের খাওয়া শেষ হলে হাত ধুতে যায়।
ওঁর হাত ধোয়া শেষ হলে রুমের দিকে যাওয়া সময় কিছু দেখে থেমে যায়।
মারুফ রুমে যাওয়ার সময় দেখলো জেসিকা মারুফের এঁটো প্লেটে খাবার নিচ্ছি।
তা দেখে মারুফ ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।
জেসিকা এঁটো প্লেটে খাবার নিয়ে কি করছে দেখার জন্য!
জেসিকা মারুফের প্লেটে খাবার নিয়ে তা খাচ্ছিল।
এটা দেখে মারুফের কিছুটা খারাপ লাগছিল।
মেয়েটা তার জন্য এতো রাত পর্যন্ত না খেয়ে ছিল।
কিন্তু সে খাওয়ার সময়ে মেয়েটাকে একবার খেতেও বলেনি।
সেজন্য মারুফের মনে অনুসুচনা হচ্ছে।
মারুফ বিরবির করে বলল, কাজটি আসলেই খুব খারাপ হয়েছে।
এসব ভেবে মারুফ সেদিকে আর না তাকিয়ে রুমে চলে আসে।
জেসিকা খাওয়ার পরে সব গুছিয়ে রেখে রুমে এসে দেখে মারুফ ঘুমিয়ে আছে।
জেসিকা মারুফকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
সারাদিন এই মুখটা দেখতে জেসিকার মনটা অস্থির হয়ে থাকে।
জেসিকার এই মুহূর্তে মনে চাচ্ছে মারুফকে জরিয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকতে।
কিন্তু সবসময় সব ইচ্ছে পূরণ হয়না।
তা ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।
তবে একদিন মারুফ নিজেই ওকে বুকে টেনে নিবে ।
তখন মারুফকে বুকে একমাত্র তার রাজত্ব থাকবে এ কথা বলে নিজের মনকে শান্তনা দিচ্ছিল।
অন্যদিকে মারুফ সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করায়।
শরীর ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়েছে।
জেসিকা মারুফের দিকে তাকিয়ে থেকে একসময় ঘুমিয়ে গেল।
আজকে ভোরে জেসিকা মারুফের আগেই ঘুমে থেকে জেগে উঠে।
তারপর মারুফের চুলে বিলি কেটে আস্তে আস্তে তাকে নামাজের জন্য ডেকে তুললো।
মারুফ চোখ মেলে জেসিকার দিকে তাকিয়ে আছে।
আজকাল জেসিকার ব্যাবহারে মারুফকে চমকে দিচ্ছে।
দিনে দিনে জেসিকার এই পরিবর্তনে মারুফকে আরও মুগ্ধ করছে।
এই মুগ্ধতা জেসিকার প্রতি যেনো দিন দিন বেড়েই চলছে।
মারুফ তো একসময় ওঁর ভবিষ্যৎ বৌকে নিয়ে এমন স্বপ্নই দেখতো।
জেসিকার সাথে বিয়ে হওয়ার পরে ভেবে ছিল ওঁর এ স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে যাবে।
কিন্তু না আর বেশি দিন মনে হয় দেরি নেই।
মারুফের বৌকে নিয়ে দেখা সব স্বপ্ন পূরণের।
মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে বিভোর হয়ে তাকিয়ে আছে।
ডাকার পরও মারুফকে শুয়ে থাকতে দেখে জেসিকা তাকে নামাজের জন্য তাড়া দিল।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে ধ্যান ভাঙল।
দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই তাড়াতাড়ি উঠে ওযু করে মসজিদে চলে যায়।
এদিকে জেসিকা মারুফ মসজিদে যাওয়ার পরে ওযু করে নামাজ আদায় করতে বসল।
মারুফ নামায পড়ে এসে শুয়ে পড়লো।
তা দেখে জেসিকা গোসল করে নাস্তা বানাতে রান্না ঘরে ঢুকে।
রান্না ঘরে ঢুকে দেখে সেখানে আলো চা বানাচ্ছে।
জেসিকা আলোকে দেখে বলল,আপু আমাকে দিন আমি করে দিচ্ছি।
তুমি করবে কেন?
আমার কি হাত নেয় যে আমি করতে পারব না!
নাকি এখন আমায় রান্না ঘরে আসতেও নিষেধ করবে?
আলোর কথা শুনে জেসিকা বলল,ছি্ ছি্ আপু এটা কেমন কথা!
আপনাকে রান্না ঘরে আসতে নিষেধ করার আমিতো কেউ না।
এ কথা শুনে আলো বলল,বেশ তাহলে বুঝতে পেরেছে যে এই বাড়ির তুমি কেউই না।
দুইদিন পরে মারুফ ভাই তোমাকে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে এ বাসায় থেকে বের করবে দেখে নিও।
জেসিকা এসব শুনে কষ্ট হলেও আলোর সাথে আর কোন কথা বলেনি।
জেসিকা চাচ্ছে না আলোর কথার জবাব দিয়ে ঝগড়া করতে।
বা সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করতে।
তাই জেসিকা আপন মনে নাস্তা বানাতে লাগলো।
এদিকে আলো তা দেখে চা ঢেলে ফ্লাক্সে রেখে দিল।
তারপর রান্না ঘরে থেকে এসে বাগানে গেল।
সেখানে গিয়ে বোম্বে মরিচ গাছে থেকে তিনটি মরিচ ছিঁড়ে আনলো।
জেসিকা সবাইকে চা বিস্কুট দিয়ে আসল।
নাস্তার জন্য সবজি ও বুডের ডাল আগের করেছিল।
এখন শুধু পরোটা ও রুটি বানানোর বাকি আছে।
জেসিকার শাশুড়ি ও দাদু শাশুড়ি রুটি খায়
বাকিরা পরোটা।
রুটি ও পরোটা বানানো শেষ হলে।
জেসিকা নিজের রুমে আসল।
মারুফ জেগেছে কিনা দেখতে,
রুমে এসে দেখে মারুফ ওয়াশ রুমে থেকে কিছুর জন্য ডাকাডাকি করছে।
আর বলছে, রুমে কে আছে?
আমাকে তোয়ালেটা একটু দিতে পারবে?
জেসিকা এ কথা শুনে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল মারুফ খাটের উপরে ভুলে তোয়ালে রেখে গেছে।
জেসিকা তোয়ালে নিয়ে মারুফকে দিতে দরজা নক করবে যাবে তার আগেই মারুফ দরজা খুলে দিল।
হঠাৎ করে দরজা খুলে যাওয়ায় জেসিকা হুড়মুড়িয়ে মারুফের বুকে আছড়ে পড়ে।
হঠাৎ করে জেসিকা মারুফের বুকে আছড়ে পড়ায মারুফ় নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না।
মারুফ জেসিকাকে বুকে নিয়ে পিছিয়ে ওয়ালের সাথে ওঁর পিঠ ঠেকে গেছে।
পড়া ঠেকাতে হাত দিয়ে কলের চাবি ধরেছে।
হাতের চাপ লেগে কলের চাবি ঘুরে গেলে ঝর্না দিয়ে পানি পড়ে দুজনে ভিজে একাকার হয়ে গেছে।
মারুফ জেসিকাকে ভেজা কাপড়ে দেখে মোহে পড়ে যায়।
ঝর্নার পানি জেসিকার সারা মুখের পড়াতে জেসিকা চোখ বুজে আছে।
মারুফ খেয়াল করে দেখে যখন পানি জেসিকার চোখে ও ঠোঁটের পড়ছে তখনেই জেসিকার চোখ ও ঠোঁটকেঁপে কেঁপে উঠছে।
তবে জেসিকার বন্ধ চোখের চেয়ে ভেজা ঠোঁট মারুফকে বেশি আকর্ষন করছে।
তা দেখে মারুফ ঘোরে মধ্যে চলে গেল।
কখন নিজের অজান্তেই জেসিকার ওষ্ঠ দখল করে নিয়েছে খেয়াল নেই।
মারুফ এমন ভাবে জেসিকা ওষ্ঠের স্বাদ নিচ্ছে মনে হচ্ছে সে কতদিনের তৃষ্ণা নিবারণ করছে।
এদিকে জেসিকা মারুফের প্রথম ছোঁয়া পেয়ে মনে হচ্ছে জমে বরফ হয়ে গেছে।
জেসিকা কল্পনা করেনি সকাল সকাল মারুফের কাছে থেকে এতো সুন্দর উপহার পাবে।
মানুষ কখনো কখনো বেশি খুশি হলে তা প্রকাশ করতেই ভুলে যায়।
জেসিকার এখন তেমন অবস্থা।
মারুফ যখন জেসিকাকে ভালবাসতে মত্ত সে সময় মারুফ কে বাহিরে থেকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতে ডাকতে কোমল ওদের রুমে ঢুকে ……
আজকে সারাদিন মনটা খারাপ ছিল।
আম্মু ও আব্বুকে মনে পড়ে শুধু কান্না পাচ্ছিল।
মনে কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না।
আজকে গল্প লিখতে ইচ্ছে করছিলো না।
কিন্তু আপনারা অপেক্ষা করছেন তাই কোন রকমে লেখে পোস্ট করে দিলাম।
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।