#হলদে_চিঠির_প্রেম
# পর্ব_০৪
# রিয়াদ_আহম্মদ_ভূঁঞা

মেয়েটি অপলক তাকিয়ে রইলো। আর আমিও। মনে হচ্ছিলো, আসমানের নিচে জমীনের উপরের তামাম সৌন্দর্যই যেনো তার সামনে ম্লান। কোথায় যেনো হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজেকে। ঠিক সে মুহুর্তে আরো কেউ একজন তায়েফকে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে গেলো। আর সে দাঁড়িয়েই রইলো। তখনি সাদিক সাহেব তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

– বাদল দিনে ছাদে কি করছো তোহফা? নেমে এসো। তায়েফকেও নিয়ে এসো।

আমি দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম। সাদিক সাহেব বললেন,
– ও তোহফা। আমার মেজো মেয়ে। মেট্রিক পরীক্ষা দিবে সামনে।

বললাম,
– আর আপনার বড় মেয়ে?

অনিচ্ছা সত্ত্বেও কি করে যেনো বড় মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করে ফেললাম। কিন্তু জিজ্ঞেস করার পর উনি যেভাবে আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকালেন তাতে মনে হলো আমি যেনো উনার ঘরের সিন্দুকের চাবি চেয়ে বসেছি! জবাব দিলেন না কোন। পানি সেঁচতে লাগলেন। আমিও শুরু করলাম সেঁচ। তবে এতে মন বসছিলো না। বালতিতে একবার পানি উঠছিলো তো আরেকবার উঠছিলো না। আবার খারাপও লাগছিলো খুব। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সাদিক সাহেব বললেন,

– তুমি চলে যাও এখন। রাতে চা-নাশতার দাওয়াত রইলো। এসো। ছাদে বসে আলাপ করবোনে।

কথাগুলো কিছুটা ভারী গলায় বললেন। রহস্যের আভাস পেলাম। পেলাম বেদনারও। হয়তো রাগও ছিলো কিছুটা – আড়ালে! কিন্তু এমুহূর্তে এখান থেকে চলে যাওয়াটাই আমার জন্য যথার্থ মনে হলো। চলে আসলাম। গোসল সেরে ভাবলাম কয়টা চিড়া ভাজা খাওয়া যাক। মা দিয়েছিলেন কাঁচের বৈয়ামে করে। কয়টা কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ কুঁচি করে কেটে একটি বাটিতে নিলাম। সাথে একটু আদা। তারপর নানার বাড়ি থেকে আনা খাঁটি ঘানির হালকা সরিষার তেল ঢেলে চিড়াগুলোর সাথে ভালোভাবে মাখিয়ে নিলাম। এরপর কসকো সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিলাম যা সহজেই হাত থেকে পেয়াজের গন্ধ দূরীভূত করে দিলো।

পিতলের চামচ দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর চিড়া ভাজা মুখে নিচ্ছি আর পাণ্ডুলিপিটায় চোখ বোলাচ্ছি। ঝালটাও বেশ উপভোগ করছি। আমার গভীর মনোযোগে বিঘ্নতা ঘটিয়ে কেউ দরজায় টকটক করে শব্দ করলো। পরক্ষণেই মনে প্রশ্ন জাগলো, কি ব্যাপার! কলিংবেল থাকতে এভাবে কেউ নক করবে কেন? তাকালাম দরজার দিকে। হলদে রঙের ভাজ করা কাগজ রেখে গেছে কেউ। নিয়ে এসে ভাজ খুলে পড়তে লাগলাম,

‘দুঃখিত আজকের ঘটনার জন্য। তবে এরচেয়েও ভয়াবহ কিছুর আশংকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ডুবে আছি আমি যেকারণে এখনই চিঠি লিখতে হলো।’

এটুকু পড়ার পর নড়েচড়ে বসলাম আমি। পাণ্ডুলিপিটা টেবিলে রেখে দিলাম যা আমার হাতেই ছিল। আবারো পড়তে লাগলাম,

‘আপনি যখন বাবার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছিলেন তখন বিপরীত দিকের কক্ষের দরজায় আমার মেজো বোন তোহফা দাঁড়িয়েছিলো। আমি জানতাম ও তায়েফের সাথে চোর-পুলিশ খেলছে। কিন্তু পরে বিষয়টি বুঝতে পারি। ও আপনাকে কাছে থেকে দেখতেই সেখানে গিয়েছিল এবং দেখছিলো। আপনার সামনের দিকে একটি পেইন্টিং ছিলো যা গ্লাস সমেত বাঁধাই করা। এটা মূলত আমিই এখানে সরিয়ে রেখেছিলাম। এট একটা কৌশল ছিলো। কিন্ত এর সদ্ব্যবহার করলো ও। আমি ছাদে যেতে চাইনি। তোহফার পীড়াপীড়িতে যেতে হয়েছিলো। আর ও যখন সেখান থেকে আপনাকে দেখছিলো তখনি তায়েফ এটা করে বসে। ও পানিতে নামতে চাচ্ছিলো। যাক বাদ দিন এসব। একটি অনুরোধ করবো আপনাকে। আশা করি রাখবেন। আমি জানি আপনি আমার অনুরোধ ফেলবেন না। এটুকু বিশ্বাস আছে। আর সেই বিশ্বাসের জোর থেকেই বলছি, দয়া করে আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের এখান থেকে চলে যান। অনেক দূরে কোথাও চলে যান। এতেই সকলের জন্য মঙ্গল হবে হয়তো। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন এভাবে বলার জন্য। অবশ্য কেন বলেছি তা বুঝার ক্ষমতা আপনার আছে। আর সেজন্যই বলেছি।

ইতি
তানহা’

আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। অথচ আমি সেভাবে কাঁদিইনি। আমি তো মানুষকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেছি বহুবার। বিলাপ আর মাতম করেও কাঁদে মানুষ। সেটাই তো কান্না। চোখ দিয়ে তখন পানি পড়ে। আমি তো চুপচাপ বসে আছি। আমি তো সেভাবে কাঁদিনি। তাহলে যে চোখ থেকে পানি পড়ছে এভাবে! কেন? পুরুষ মানুষের কান্না বুঝি এমনই হয়! এভাবেও বুঝি কাঁদা যায়!

হৃদপিণ্ডের স্পন্দন যেনো থেমে আসছে। এমন হচ্ছে কেন আমার। যাকে আজ অবদি কখনো দেখিনি। যার সাথে মুখোমুখি কথোপকথন হয়নি। তার বিষাদেই এতো বিষক্রিয়া কেন হচ্ছে হৃদয়ে। চিঠিটা রেখে দিলাম পাশে। টেবিলে থাকা গ্লাসে জগ থেকে পানি নিয়ে পান করলাম। মনে হয়েছিল কিছুটা স্বস্তি মিলবে। মেলেনি। পানিতে গলা ভিজেছে অন্তর নয়। যে আগুন দৃশ্যমান তা তো নেভানোর প্রয়াস করা যায় কিন্ত যা দেখা যায়না তা নেভাই কি করে।

কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙলো। চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে গিয়ে দরজা খুললাম। তায়েফ এসেছে। হাতে থালা। ঢেকে রাখা হয়েছে কিছু। বললাম,

– কি ব্যাপার তায়েফ, তুমি! হাতে কি?

ছোট হলেও ও খুব মিষ্টি করে কথা বলে। বাচনভঙ্গিও ভালো। যথাযথ পারিবারিক শিক্ষা পেলে এবয়সের বাচ্ছারা যেমন হয় আরকি। বললো,

– হাতে গরম লাগছে খুব।

আমি ওর হাত থেকে থালাটা নিলাম। বললাম,
– ভেতরে এসো।

থালাটা টেবিলে রেখে চেয়ারে বসতে বললাম ওকে। আমিও বসলাম বিছানায়। বললাম,
– তা কি নিয়ে এসেছ?
– খিচুড়ি। ভুনা খিচুড়ি। সাথে হাঁসের গোশত।
– তা কে রান্না করলো?
– মেজো আপু।
– ওহ্ আচ্ছা। তাহলে তোমার মেজো আপু খিচুড়ি রান্না করে পাঠিয়েছেন। ভালো। তুমি খেয়েছ?
– জ্বী খেয়েছি।

খাবার মতো তেমনকিছু ছিলোনা কক্ষে ওকে দেয়ার। কলা ছিলো এক হালি। বললাম,
– কলা খাবে?

ও হাসলো। দুটো কলা এনে দিলাম। খুব যত্নসহকারে কলাগুলো খেলো ও। এরপর উঠে দাঁড়ালো। বললাম,
– বসো আর কিছুক্ষণ।
– না। চলে যাব।
– আচ্ছা।

ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলাম। বিছানায় বসে ভাবছি খিচুড়িটা খাবো নাকি খাবো না। খিদেও পেয়েছে খুব। খেয়ে নিতে মন্দ কি। খেলাম। তেমন না হলেও একেবারেই যে খারাপ তা নয়।

এশার নামাজ শেষে গলির মোড়ে দেখা হয়ে গেলো সাদিক সাহেবের সাথে। এখানে একটি দোকানে টেলিভিশন রয়েছে। আছে ভিসিয়ারও। যখনি এর সামনে দিয়ে আসা যাওয়া করি তখনি কানে ভেসে আসে সিনেমার ডিশুম ডিশুম আওয়াজ। সেই ফজর থেকে রাত এগারোটা অবদি ভিড় জমেই থাকে। এখানে যাদের নিয়মিত দেখি এদের কাউকে জুমার নামাজ ছাড়া আর কখনো মসজিদের ত্রিসীমানায় দেখিনা। আবার মসজিদে যাদের নিয়মিত দেখি তাদের কাউকে প্রয়োজন ছাড়া এর দ্বারে কাছেও দেখিনা। এ এক অদ্ভুত অদৃশ্য দেয়াল।

সাদিক সাহেব চোখের ইশারায় আমায় অপেক্ষা করতে বললেন। এক ভদ্রলোকের সাথে কথা বলতে থাকায় এমনটি করলেন তিনি। উনাদের থেকে আমার দূরত্ব তিন চার ফিটের। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। ভদ্রলোক একপর্যায়ে সাদিক সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

– তবে যাই বলুন না কেন, আপনার বড় মেয়েকে আমার ছেলের বউ বানাতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতাম। যাক, আপনার যেমন খুশি।

সাদিক সাহেব বরাবরের মতোই হাসলেন। মুচকি হাসিতে দারুণ দেখায় উনাকে। বললেন,
– আমি আমার মেয়ের জন্য পাত্র পেয়ে গেছি। দোয়া করি আপনার ছেলের জন্যেও যেনো ভালো কোন মেয়ে পান। এবার তাহলে আসি। আবার কথা হবে অন্য কোন সময়।
– জ্বী আচ্ছা।

ভদ্রলোক চলে গেলেন। সাদিক সাহেব আর আমি বাসার দিকে রওয়ানা হলাম। উনি আগে আগে আমি পাশে থেকে উনার কিছুটা পিছুপিছু হাঁটছি। ভদ্রলোকের কথাগুলোয় দারুণভাবে আহত হলাম। তারমানে উনি তানহাকে পুত্রবধূ হিসেবে চেয়েছিলেন। সাদিক সাহেব রাজি হননি। আবার উনি বলছিলেন যে পাত্র নাকি পেয়ে গেছেন! কার কথা বলছিলেন। কাকে পেয়েছেন। প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খেতে লাগলো মনে। আমাকে এভাবে চুপচাপ হয়ে চলতে দেখে সাদিক সাহেব বললেন,

– কি ব্যাপার! শরীর ঠিক আছে তো?
– জ্বী। ঠিক আছে।
– ডিনার করেছ?
– না।
– রান্না?
– না।
– তাহলে খাবে কি?
– বাসায় গিয়ে রান্না করবো। তারপর খাবো।
– এভাবে কষ্ট হয়না?
– তা তো বটেই।
– আমি বলি কি, তোমার উচিত বিয়ে করে ফেলা। এবয়সে বিয়ে শাদি না করে থাকাটা ঠিক না।
– ছোটখাটো কোন চাকরীর বন্দোবস্ত হয়ে গেলেই তা নিয়ে ভাববো।
– এটাও ঠিক। একদম কিছু না করেও তো বিয়ে করাটা সমীচীন হবেনা।
– জ্বী।

বাসার সামনে চলে এসেছি। বললাম,
– চা খেতে কি আসতেই হবে?
– শুধু চা নয়। আমরা ডিনার একসাথে করি। তুমিও আমাদের সাথে খাবে। চলো। এখন আর রান্না করতে হবেনা।

উনার আন্তরিকতায় মুখের উপর না করতে পারলাম না। রাজি হয়ে গেলাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কলিংবেল চাপলেন উনি। কয়েক মুহুর্ত পর দরজা খুলে দেয়া হলো। তোহফা। মাথায় ওড়না পরে আছে। তার সৌন্দর্য কলমে বর্ণনা করা অসম্ভব। নজর নামিয়ে ফেললাম আমি। সে দরজার হাতল ধরে পাশ কেটে দাঁড়ালো। আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। সাদিক সাহেব বললেন,

– তুমি বসো এখানে। আমি দেখছি।

এই বলে উনি চলে গেলেন ভেতরের দিকে। আমি সোফায় বসলাম। তোহফা যে অদূরেই দাঁড়িয়ে তাতে কোন আগ্রহ দেখালাম না। চুপচাপ বসে রইলাম। ড্রয়িংরুমে পিনপতন নীরবতা নেমে এলো। কামনা করছিলাম ও যেনো এখান থেকে দ্রুত অন্য কক্ষে চলে যায়। বরঞ্চ এর উল্টো ঘটলো। আমার ঠিক বিপরীত দিকের সোফায় এসে বসে পড়লো ও! উঠে দাড়িয়ে গেলাম আমি। বললো,

– কি ব্যাপার! উঠে দাঁড়ালেন যে!

আমি আমতা আমতা করে বললাম,
– না এমনি। আপনি বসুন আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।
– পরে যাবেন। বসুন তো এখন।

কথার ওজনে মনে হচ্ছে সে আমার সাথে কয়েক যুগ ধরে পরিচিত। বসে পড়লাম। বললো,

– খিচুড়িটা কেমন লেগেছিলো বললেন না তো কিছু। নাকি খাননি।
– খেয়েছি। খাবনা কেন। খুব ভালো লেগেছে।
– আমাকে খুশি করতে মিথ্যা বলছেন না তো আবার?
– মিথ্যা কেন বলবো বলুন। তাছাড়া, আপনাকে খুশি করার প্রয়াসই বা কেন করবো।
– জানেন, আমি খুব চেষ্টা করি আপুর মতো করে রান্না করতে। কিন্তু পারিনা। আপুর হাতে যেনো জাদু আছে যা আমার হাতে নেই। এজন্য হিংসেও হয় অনেক। কেন যে আমি ভালোভাবে রান্না করতে পারি না।

ও আরো কিছু বলবে তখনি তায়েফ এসে হাজির। তায়েফকে দেখে তোহফা বললো,
– এখানে কি করিস?
– খাবার খেতে এসো৷ বাবা যেতে বলেছেন।

তায়েফের জবাব।

তায়েফ চলে গেলো৷ আমি ও তোহফা উঠে দাঁড়ালাম। এবার ডাইনিংয়ের দিকে পা বাড়ালাম দু’জনেই। সাদিক সাহেবের স্ত্রীকে দেখে অবাক হলাম। আবার ভালোও লাগলো তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতে পেরেছেন দেখে। শুরুর দিকে যখন বাসায় উঠেছিলাম তখন একবার দেখা হয়েছিল কেবল। আর আজ দেখলাম। সালাম দিলাম উনাকে,

– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুমুসসালাম। এসো বাবা।
– খুব ভালো লাগছে আপনাকে দেখে।
– মেয়েদের পীড়াপীড়িতে উঠে আসতে হলো। কেমন আছো তুমি?
– জ্বী আলহামদুলিল্লাহ্।
– চাকরী পেয়েছ?
– না। চেষ্টা করছি।
– আচ্ছা বসো।

টেবিলের দুপাশে তিনটি করে চেয়ার। আরেক দিকে একটি। একদিক খালি। আমি উনার বরাবর বিপরীত পার্শ্বে বসলাম। তায়েফ উনার ডানপাশে। তায়েফের পর এসে বসলো আরেকজন। সেই সম্ভবত সাদিক সাহেবের ছোট মেয়ে। আমার বাঁদিকের চেয়ারে তোহফা বসলো। এরপর আসলো আরেকজন। তাকে উদ্দেশ্য করে তোহফা বললো,

– আপু তুমি আমার পাশে বসো।

জামার হাতা একেবারে কব্জি পর্যন্ত ঢেকে আছে। ওড়নার কারণে মুখ মণ্ডল দেখার কোন সুযোগ নেই। এত কাছে তবুও দেখতে পারছিনা মানুষটাকে! নিরব তাঁর চলন। অনেকেই হাঁটার সময় ধপাধপ্ আওয়াজ করে হাঁটেন। বলতে, পা খুব জুড়ে জুড়ে ফেলেন।

সাদিক সাহেব আসলেন এবার। তিনি মাঝের চেয়ারটায় বসলেন। ভাত নয়, রুটি ও ভুনা গোশতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবারটা ভালো ছিলো। আসলেই, তোহফার হিংসে করার যৌক্তিকতা আছে। সে হিংসে করতেই পারে।

ছাদে আমি আর সাদিক সাহেব। সারাদিনে পরে আর বৃষ্টি না হলেও আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো। রাতে আজো বৃষ্টি নামতে পারে। এমন পরিবেশে চায়ে চুমুক দিলে একধরনের উষ্ণতা কাজ করে। আমাকে কিছু না বলতে দেখে চা খেতে খেতে তিনিই আগ বাড়িয়ে শুরু করলেন। বললেন,

– ধরো, তুমি হঠাৎ করেই এমনকিছু পেয়ে গেলে যা অপ্রত্যাশিত ছিলো। এবং সেটা অনেক মূল্যবান কিছু। তখন তোমার অনুভূতি কেমন হবে?

বললাম,
– আমি সবসময় সবকিছুর জন্য নিজেকে প্রস্তত রাখতে পছন্দ করি। এরপরও যদি অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে, যার যোগ্য আমি নই তা পেয়ে যাই, তবে এর যথাযথ মূল্যায়নে যত্নবান হবো।

– ভালো বলেছ। আমি আমার বড় মেয়ের বিয়ের কথা ভাবছিলাম। তার পছন্দ অপছন্দের কথা জানার চেষ্টা করছিলাম। চেষ্টার কোন ঘাটতি আমি রাখিনি। কিন্তু…….

তিনি এপর্যন্ত বলে থেমে গেলেন। ততক্ষণে আমার হাতে থাকা চায়ের কাপে খরা নেমে এসেছে। উৎকণ্ঠ আর উদ্বিগ্নতার ভারে নিস্তেজ হয়ে আসছিলাম। ভাবছিলাম, উনি কি তানহার বিয়ের ব্যাপারে সত্যিই পাত্র হিসেবে কাউকে ঠিক করে ফেলেছেন। করলে সে কে। আর তানহার পছন্দ অপছন্দের কথা কেন বলছেন। এ-ই যে চিঠিতে আমাদের এতো কথোপকথন হলো এসবের কোনটির বিষয়ে তিনি আবার জেনে যাননি তো! না না, এ কি করে সম্ভব। এমন হাজারটা প্রশ্ন এসে ভিড় করছিলো মনে যেগুলোর কোনটিরও যথার্থ জবাব আমার কাছে এমুহূর্তে নেই।

সাদিক সাহেব নিজেকে কিছুটা অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেলেন। আমি এগোলাম না সেদিকে। এরপর বললেন,

– ঘরে বিবাহ উপযুক্ত আমার দুই মেয়ে রয়েছে। যদিও তাদের একজন ছোট আরেকজন বড়। তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করি তাদের মধ্যে কাকে বিয়ে করতে চাও তখন তুমি কাকে চাইবে? তোহফা নাকি তানহাকে?

প্রশ্ন শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম আমি। মনের অজান্তেই বলে উঠলাম, হায়! এ আবার কোন ধরনের পরীক্ষা!

——–চলবে——–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here