#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_২৩

তুলি ক্লান্ত শরীরে রাবেয়ার পাশে শুয়ে আছে।আজকের খাটুনি সবাইকে ক্লান্ত করে দিয়েছে।সবাই এখন ঘুমে বিভোর।শুধু ঘুম নেই রাবেয়ার চোখে।তাই সময় নষ্ট না করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নিল সে।আজকের দিনের জন্য আল্লাহকে শুকরিয়া আদায় করতে ভুললনা সে।আমরা বান্দারা অনেক সময় সুখ কে হাতে পেয়ে সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে যায় অথচ বিপদের সময় পাগল হয়ে এই সৃষ্টিকর্তার কাছে দৌড়ে যায়।গায়ে শাল জড়িয়ে বারান্দায় এসে দাড়ালো রাবেয়া।আজ নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী ব্যাক্তি মনে হচ্ছে তার।বারান্দায় দাড়িয়ে যখন আসাদের বলা কথাগুলো ভাবছিলো তখনই ফোনটা বেজে উঠলো রাবেয়ার।রুমে এসে ফোনটা রিসিভ করল সে,”আসসালামু
আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।এখনো জেগে আছো?কি করছিলে?” ফোনের ওপাশ থেকে আসাদের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো রাবেয়া,”আপনি!”
“নাম্বার এখনো সেইভ করো নি?”
“না মানে,আমার কাছে ছিলোনা আপনার নাম্বার।”
“আর এদিকে তোমার নাম্বার নিতে আমার কত টাকা খরচ করতে হলো সেটা জানো?”
“জ্বি বুঝলাম না।”
“তোমার নাম্বার আমার কাছে ছিলোনা।সাফা থেকে খুঁজতেই সে বড় একটা এমাউন্ট দাবী করল।সেই দাবী মিটিয়ে তোমার নাম্বার পেলাম।উফ কি কষ্টই না করতে হলো বউয়ের নাম্বার পেতে।”
আসাদের কথা শুনে হেসে উঠলো রাবেয়া।আর সেই হাসি ঝংকার তুললো আসাদের হৃদয়ে।
“আচ্ছা বলতো আমি ওয়ালিমা দুই সপ্তাহ পরে করার কথা কেন বললাম?”
“কেন?”রাবেয়া হাসি থামিয়ে বলল।
“প্রেম করবো বলে।”আসাদের এমন কথায় হাসি সম্পূর্ন থামিয়ে দিল রাবেয়া।এইবার তাকে লজ্জা গ্রাস করে চলছে।এইভাবে শুরু হলো তাদের প্রথম প্রেমময় কথোপকথন।যেখানে নেই কোন বাধা,নেই কোন বৈধ-অবৈধে,হালাল-হারামের দেয়াল।আছে শুধু ভালোবাসার ছড়াছড়ি।যেখানে একজনের বলা কথা অন্যজনকে দিচ্ছে অনাবিল শান্তি আর সুখময় অনুভূতি।

সকালে কলেজের জন্য রেডী হয়ে নিচে নামতে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বাবা মায়ের কথা কানে আসলো সাফার।তারা যেন কার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছেন।কিন্তু ভাইয়ার বিয়ে তো মাত্র গতকাল হলো।ওয়ালিমা হতে এখনো অনেক দেরী।তাহলে কার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছেন তারা?পরমুহূর্তে মায়ের কথা শুনে সেখানেই জমে গেল সে।
“আমি সাফার সাথে আজকেই কথা বলে আপনাকে জানাবো।আপনি রফিকুল সাহেবকে তারপর না হয় আসতে বলুন।আমার মনে হয় সাফার অমত থাকবেন না।”
“তবুও তুমি ওর সাথে আগে কথা বলো।” কথাটা বলে সেখান থেকে উঠে অফিসে চলে গেলেন শামীম সাহেব।
নিজেকে সামলে নিয়ে মা থেকে বিদায় নিয়ে কলেজে চলে গেল সে।মনটা তার আজ একদম ভালো না।কলেজে না গেলে ভালো হতো।শুধুমাত্র মায়ের সাথে কথা বলানো এড়াতে বাধ্য হয়ে কলেজে যেতে হচ্ছে তার।

তুলি কিছুক্ষন আগে বের হয়ে গেল কলেজের জন্য সেটা রাবেয়া নিচে নেমে জানতে পারলো।তাই আজ তাকে একাই যেতে হবে।বাড়ি থেকে বের হবে এমন সময় ফোন আসলো রাবেয়ার।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো আসাদের ফোন।একদমে একটা নিশ্বাস নিয়ে সালাম দিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো সে।রাবেয়ার সালামের উত্তর দিয়ে আসাদ বলল,”কোথায় তুমি?”
“এই তো হসপিটালের জন্যই বের হচ্ছিললাম।”
“তাড়াতাড়ি বের হও।আমি তোমাদের বাসার গেটের সামনে অপেক্ষা করছি।”এই কথা শুনে একপ্রকার দৌড়ে গেইটের কাছে গেল রাবেয়া।দেখতে পেল আসাকে।ডার্ক মেরুন শার্টে আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে তাকে।হাত ভাঁজ করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো আসাদ।রাবেয়ার তার সামনে আসাতেই চোখের সানগ্লাসটা খুলে মুচকি হেসে গাড়ির দরজা খুলে দিল সে।রাবেয়া এক পলক আসাদকে দেখে বিনা বাক্য গাড়িতে উঠে গেল।আসাদও গাড়িতে ওঠে সিট ব্যাল্ট লাগিয়ে নিয়ে বলল,”ব্যাল্টা বেধে নাও।চাইলে আমি বেধে দিতে পারি। আসবো?”
রাবেয়ার মাথা নাড়িয়ে নিজেই ব্যাল্টা লাগিয়ে নিল।তা দেখে ঠোঁট কামড়িয়ে হাসলো আসাদ।

কলেজে এসে মন বসাতে পারলোনা সাফা।তা দেখে তুলি ওকে জিজেসা করল,”কিরে এমন মনমরা হয়ে আচ্ছিস কেন তুই?” সাফা সকালের ঘটনা সব খুলে বলল তুলিকে।সেসব শুনে তুলি বলল,”দেখ সাব্বির ভাইয়ের কোন মাথা ব্যথা নেই তোকে নিয়ে।তাহলে তুই এতো পেইন নিচ্ছিস কেন?আমার মনে হয় ছেলে ভাল হলে তোর রাজি হয়ে যাওয়া উচিত।কতদিন এইভাবে আর উনার জন্য আবেগ ভাসাবি।হয়তো আবেগের নৌকাকে পাড়ে লাগা না হলে ছেড়ে দে তাকে তার নিজের হালে।”

কয়েকদিন থেকে শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা হাসান সাহেবের।বুকের বা পাশটায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব হয় তার।ব্যবসার কারনে ডাক্তারও দেখাতে যেতে পারছেন না তিনি।মেয়ে দুইটাও শ্বশুরবাড়িতে ব্যস্ত।মা-বাবার খোঁজ নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনা তারা।অথচ প্রয়োজন মোতাবেক ঈদ,কোরবানে সব চাই তাদের।হাসান সাহেবও সাধ্যমতো মেয়েদের শ্বশুরবাড়ির সব আবদার পূরণের চেষ্টা করেন।আজ ছয়টা বছর নিলুফা বেগম ভালো করে কথা বলেন না হাসান সাহেবের সাথে।কিন্তু স্ত্রীর সব দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন নিঃশব্দে।প্রয়োজন ছাড়া কথাই বললেন না তিনি হাসান সাহেবের সাথে।

রাতে কথার ফাঁকেতলে সেলিনা মীর সাফাকে তার জন্য আসা বিয়ের প্রস্তাবের কথা বললেন সাথে ছেলের ও তার পরিবারের সুনামও করতে ভুলেননি।সাফা চুপচাপ বসে ছিলো।আর সেলিনা বেগম তাকে বুঝিয়ে যাচ্ছিলেন।যাবার আগে এই কথাটা বলতে ভুলননি তিনি,”আরে দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি!”সারা রাত টেনশেনে আর ঘুম হয়নি সাফার।কোনমতে মন স্থির করতে পারেনি সে।শেষরাতে নামাজে বসে দুইহাত তুলে আল্লাহর কাছে নিজের সব বেদনার কথা তুলে ধরলো সে।কারন সে জানে এই সময়ের দু’আ কখনো বিফলে যায় না।নামাজ পড়ে উঠে সে ঠিক করলো শেষবারের মতো একবার কথা বলবে সে সাব্বিরের সাথে।

চলবে….
®নওশিন সালসাবিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here